পাহাড় কাটলে শ্রমিক নয়, মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করুন
Published: 26th, February 2025 GMT
পাহাড় কাটলে শ্রমিক নয়, মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, পাহাড় কাটলে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা হবে না, মালিকের (মূল হোতা) বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। মালিককে আইনের মুখোমুখি করলে কেউ পাহাড় কাটার সাহস পাবে না। পাহাড় যদি না থাকে, তাহলে চট্টগ্রামের পরিচয় কী থাকে– আক্ষেপ করেন উপদেষ্টা।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম চত্বরে অমর একুশে বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১৪ বিশিষ্ট নাগরিককে একুশে সম্মাননা স্মারক পদক ও সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। বইমেলা শুক্রবার পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়।
কেউ পাহাড় কাটলে জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানানোর অনুরোধ জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, যদি জেলা প্রশাসক কাজ না করেন, তাহলে সিটি মেয়রকে জানাতে হবে। সমাপনীতে সভাপতিত্ব করেন চসিক মেয়র ডা.
সম্মাননা পদকপ্রাপ্তরা হলেন– ভাষা আন্দোলনে বদিউল আলম চৌধুরী (মরণোত্তর), সমাজসেবা ও গবেষণায় ড. সুকোমল বড়ুয়া, চিকিৎসাবিজ্ঞানে অধ্যাপক ইমরান বিন ইউনুস, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আন্দোলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, সমাজসেবায় কামরুন মালেক, সংগীতে নকীব খান, সাংবাদিকতায় জাহেদুল করিম ও ক্রীড়ায় তামিম ইকবাল খান। এ ছাড়া সাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছেন কথাসাহিত্যে অধ্যাপক আসহাব উদ্দিন আহমদ (মরণোত্তর), প্রবন্ধ ও গবেষণায় অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান, শিশুসাহিত্যে মিজানুর রহমান শামীম, শিশু-চিকিৎসা সাহিত্যে অধ্যাপক প্রণব কুমার চৌধুরী, কবিতায় জিললুর রহমান ও অনুবাদে ফারজানা রহমান শিমু।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদের আনন্দ রোজাদারের প্রথম পুরস্কার
প্রখ্যাত সাহাবি হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন রোজাদারের জন্য দুটি (প্রধান) আনন্দ আছে। একটি ইফতারের সময় অথবা ঈদুল ফিতরের দিন। অপরটি বেহেশতে আপন পরওয়ারদেগারের সাক্ষাৎ লাভের সময়। (তারগীব-১৪৪৯)
এ কারণে ঈদের দিন মুমিনের কথা, কাজ, সাক্ষাৎ- সবক্ষেত্রেই আনন্দের প্রকাশ ঘটে থাকে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনটাই করতেন।
হযরত আনাস রা. বলেন, বিশ্বনবি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মদিনায় আসলেন; দেখলেন মদিনাবাসী নির্দিষ্ট দুটি দিনে আনন্দ করে। নবি সা. বললেন, এ দুটি কোন দিবস? তারা বললো, আমরা জাহেলি যুগে এ দিবস দুটিতে খেলাধুলা ও আনন্দ ফূর্তি করতাম। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের সেই দিবস দুটিকে আরো উত্তম দুটি দিবসের মাধ্যমে পরিবর্তন করে দিয়েছেন। তা হলো; ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর। (আবু দাউদ)
ঈদের দিনে বিশ্বনবি মুহাম্মাদ সা. নিজে আনন্দ উপভোগ করতেন, অন্যদেরকেও আনন্দ করার সুযোগ করে দিতেন। এর প্রমাণ মিলে হযরত আয়েশা রা. এর বর্ণনায়। তিনি বলেন, বিদায় হজে মিনায় অবস্থানকালে হযরত আবু বকর রা. তার কাছে উপস্থিত হলেন। এমতাবস্থায় আনসারদের দুটি বালিকা সেখানে দফ বাজিয়ে গান গাচ্ছিল। নবি করিম সা. তখন চাদর আবৃত অবস্থায় শুয়েছিলেন। এ অবস্থা দেখে হযরত আবু বকর রা. বালিকাদের ধমক দিলেন। এ সময় নবি করিম সা. চাদর থেকে চেহারা মুবারক বের করলেন এবং বললেন, এদেরকে কিছু বলো না আবু বকর! আজতো ঈদের দিন। অপর বর্ণনায় আছে, নবি সা. বললেন, হে আবু বকর। প্রত্যেক জাতির একটি আনন্দ আছে, আর এটা হল আমাদের আনন্দের দিন। (মুয়াত্তা; ১৪৩২) আয়েশা রা. বলেন, আনসার মেয়ে দুটি বুআস যুদ্ধের দিন আনসারিরা পরস্পর যা বলেছিলেন সে সম্পর্কে কবিতা আবৃত্তি করছিল। তিনি বলেন, তারা পেশাজীবি গায়িকা ছিল না।
মুমিনকে এ আনন্দের অনুমতি দিয়েছে ইসলাম। এ আনন্দের ঘোষণা আল্লাহ ও তার রসূল সা. এর পক্ষ থেকে। এদিন থেকেই সিয়াম পালনকারীকে প্রতিদান দেওয়া হতে থাকে।
হযরত সাঈদ বিন আউস আল-আনসারি রা. তার পিতার কাছ থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন: ‘যখন ঈদুল ফিতরের দিনটি আসে অর্থাৎ ঈদুল ফিতরে ফেরেশতারা বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে যান। আহবান করতে থাকে আর বলতে থাকে হে মুসলিম জাতি, তোমরা সকাল সকাল তোমাদের রবের দিকে বের হও (ঈদের জামাতের জন্য)। তিনি তোমাদেরকে তার উত্তম প্রতিদান দিবেন। অতঃপর তাদেরকে ঢের পুরস্কার প্রদান করা হয়। তারা বলতে থাকে তোমাদেরকে তারাবি ও কিয়ামুল লাইল পড়ার কথা বলা হয়েছে। তোমরা তা পড়েছ। রোজাকে ফরজ করা হয়েছে, তোমরা তা আদায় করেছ। আজ তোমাদের রব তোমাদেরকে আপ্যায়ন করিয়েছেন (রোজা না রাখার অনুমতি দিয়েছেন)। তোমরা তোমাদের প্রতিদান গ্রহণ কর। ঈদের নামাজ যখন আদায় করা হয়ে যায়, তখন ফেরেশতারা ঘোষণা করতে থাকে: নিশ্চয়ই তোমাদের রব তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তোমরা তোমাদের বাড়ি-ঘরে হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে যাও। এটা তোমাদের (প্রাথমিক) প্রতিদান দিবস। আজকের দিনকে সপ্ত আকাশেও প্রতিদান দিবস বলে’। (মু’জামুল কুবরা, তাবরানী) প্রকৃত পক্ষে ঈদ হলো এ সব নেককার, আল্লাহর প্রিয় মানুষদের জন্য।
তবে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে লক্ষ্য রাখার বিষয় হলো: ঈদের আনন্দ উদযাপন করতে গিয়ে নাজায়েজ বা ইসলামে নিষিদ্ধ কোনো কাজে লিপ্ত হওয়া যাবে না। যেমন-গান, বাজনা, বেপর্দা, অশ্লীলতা, উচ্চ আওয়াজে গান-বাজনার মাধ্যমে অন্যকে কষ্ট দেওয়া ইত্যাদি। সারা রোজায় অনেক কষ্টে অর্জিত নেকগুলো যেন ইবলিস একদিনের আনন্দে নিঃশেষ করে দিতে না পারে। রোজার মাসে গড়ে ওঠা ভালো অভ্যাসগুলো যেন হারিয়ে না যায়। রোজার ফরজ হুকুম আগামী রোজার আগে নেই। কিন্তু একটি বছরে রমজান শেষ হওয়ার পরেও নামাজের ফরজ হুকুম থেকে যায়, পর্দার বিধান, হালাল হারামের বিধান, গান-বাজনা নিষিদ্ধের বিধান, অশ্লীলতা পরিত্যাগের বিধান থেকে যাযয়। এগুলো ভুললে চলবে না। ইসলামের সব নির্দেশনা মেনে চলার অভ্যাস অব্যাহত রাখতে পারলেই মাহে রমজানের প্রাপ্তি আমাদের জন্য স্বার্থক হবে।
ঈদুল ফিতরে করণীয়:
১.ঈদের দিন ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা।
২.উত্তমরূপে গোসল করে উত্তম কাপড় পরিধান করা।
৩.সুগন্ধি ব্যবহার করা।
৪.ঈদের নামাজে যাওয়ার আগেই কিছু মিষ্টান্ন খাওয়া। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনটা করতেন।
৫.ঈদের নামাজে যাওয়ার আগেই সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা।
৬.ঈদের নামাযে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ঘরে ফেরা।
৭.ঈদুল ফিতরের জামাতে যাওয়ার সময় তাকবির মনে মনে বলা।
৮.ঈদের নামাজের আগে-পরে আত্মীয়-স্বজনের খোঁজখবর নেওয়া, দেখা-সাক্ষাৎ করা।
৯.অসহায় গরীবদের খোঁজখবর নেওয়া। সাধ্য মোতাবেক তাদের পাশে দাঁড়ানো।
১০.মৃ আত্মীয়-স্বজনদের কবর সুন্নত তরিকায় জিয়ারত করা। তাদের জন্য বিশেষভাবে দোয়া করা।
১১.দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর জন্য বিশেষ করে ফিলিস্তিনের মুসলামনদের জন্য বিশেষভাবে দোয়া করা আমাদের দায়িত্ব।
ঈদ আমাদের জীবনে হয়ে উঠুক আনন্দময় ও সুখকর, আমিন।
ঢাকা/শাহেদ