চীনের সামরিক মহড়ার জবাবে সেনা পাঠাল তাইওয়ান
Published: 26th, February 2025 GMT
তাইওয়ানের দক্ষিণ উপকূলে অনেকটা যুদ্ধের আদলে সামরিক মহড়া (লাইভ-ফায়ার) শুরু করেছে চীন। এর প্রতিক্রিয়ায় বুধবার নিজেদের জলসীমায় নৌ, বিমান ও সেনাবাহিনী পাঠিয়েছে তাইওয়ান। এক বিবৃতিতে চীনের এ মহড়াকে ‘বিপজ্জনক’ বলে মন্তব্য করেছে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, সমন্বিতভাবে যুদ্ধ মহড়ার অংশ হিসেবে তাইওয়ানের কাছাকাছি দূরত্বে যুদ্ধজাহাজসহ ৩২টি যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে চীন। তাইওয়ানের দক্ষিণ উপকূলের ৪০ নটিক্যাল মাইল দূরে তারা যুদ্ধের আদলে মহড়ার ঘোষণা দিয়েছে।
জবাবে ওই এলাকার আশপাশে নৌ, বিমান ও সেনাবাহিনী পাঠিয়েছে তাইওয়ান। পরিস্থিতি ‘পর্যবেক্ষণ ও সতর্কতা এবং যথাযথ পদক্ষেপ নিতে’ এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘চীনের সেনাবাহিনী আমাদের না জানিয়ে কাওশিউং ও পিংতুং উপকূলের ৪০ নটিক্যাল মাইল দূরে একতরফাভাবে সামরিক মহড়া ঘোষণা করে স্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে।’ তাইওয়ান বলছে, এ পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ও জাহাজ চলাচলের জন্যই শুধু বড় ধরনের ঝুঁকিই তৈরি করবে না, এটা আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার প্রতি সুস্পষ্ট উসকানি।
কাওশিউং ও পিংতুং প্রশাসনিক উপকূলে তাইওয়ানের নৌ ও বিমানবাহিনীর ঘাঁটি রয়েছে।
কয়েক বছর ধরে তাইওয়ানের চারপাশে মহড়া এবং যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন বাড়িয়েছে চীন। সার্বভৌমত্বের দাবি ছেড়ে দিতে তাইওয়ানের ওপর চাপ তৈরি করতে এসব পদক্ষেপ নিচ্ছে তারা। তবে বেইজিংয়ের এমন দাবির কাছে নতি স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে তাইপে।
বিবৃতিতে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, চীনের পদক্ষেপ তাদের বারবার বলে আসা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতির সম্পূর্ণ বিরোধী। নিজেদের ‘বাহিনী শক্তিশালী করা ও প্রস্তুতির চেষ্টা অব্যাহত’ রাখার ঘোষণা দিয়েছে স্বশাসিত দ্বীপটি।
এদিকে তাইওয়ানের বিবৃতি নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান সাংবাদিকদের বলেছেন, এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়।
একই বিষয়ে জানতে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বার্তা সংস্থা এএফপি। কিন্তু তারা তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি। চীনের এ সামরিক মহড়া কত দিন চলবে, তা জানা যায়নি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত ইওয় ন র পদক ষ প উপক ল
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদ নিরাপত্তায় ডিএমপির ৬৬৭ টহল দল দায়িত্ব পালন করবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক বলেছেন, পবিত্র ঈদুল ফিতর উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশে উদযাপনের লক্ষ্যে ও ঈদে বাসা-বাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণি বিতানের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। পবিত্র রমজানে নগরবাসী যাতে নিরাপদে ইবাদত বন্দেগী করতে পারে; সেজন্য যেমন ডিবি সবসময় পাশে ছিল, তেমনি নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ উদযাপনে নগরবাসীর পাশে থাকবে।
আজ শনিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গৃহীত কার্যক্রম সংক্রান্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে ঢাকা মহানগর এলাকায় পুলিশি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে মহানগরীতে চেকপোস্ট ও টহল কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের ৫০টি থানা এলাকায় প্রতিদিন জননিরাপত্তা বিধানে দুই পালায় ডিএমপির ৬৬৭টি টহল টিম দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া মহানগর এলাকার নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত স্থানে ডিএমপি কর্তৃক ৭১টি পুলিশি চেকপোস্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। পুলিশকে সহায়তা করার জন্য ইতোমধ্যে অক্সিলিয়ারি ফোর্স নিয়োগ করা হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তারা কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। ইউনিফর্মড পুলিশের পাশাপাশি মহানগরীর নিরাপত্তায় ডিবির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক টিম মাঠে ক্লান্তিহীন কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, নগরবাসীর নিরাপত্তায় ডিবি ‘ভ্যানগার্ড’ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে ও যাবে। পবিত্র ঈদ উপলক্ষ্যে বিপণিবিতান, রেল স্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে ডিবির কার্যক্রম আরও বেগবান করা হয়েছে। নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে যে কোনো প্রয়োজনে ডিবি সর্বদা নগরবাসীর সঙ্গে রয়েছে। নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে যে কোনো অপতৎপরতা রুখে দিতে ডিবি প্রস্তুত।
রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিপণিবিতান, রেল স্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে কেউ যাতে নাশকতা করতে না পারে সেজন্য ডিবির গোয়েন্দা নজরদারি পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়াও ডিবির সাইবার টিম তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। সাইবার স্পেস ব্যবহার করে আসন্ন ঈদ উপলক্ষে যে কোন অপপ্রচার রোধে ডিবি তৎপর রয়েছে। প্রোএকটিভ পুলিশিং এর অংশ হিসেবে ডিবির জাল সর্বত্র বিস্তৃত করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরীকে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা দিতে ডিবি সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) বলেন, রোজা শুরুর দিন থেকে এখন পর্যন্ত ডিবির অলআউট অ্যাকশনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছিনতাইকারী, ডাকাত, চাঁদাবাজ ও বিভিন্ন অভ্যাসগত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাছাড়া ডিবির মাদকবিরোধী অভিযানে বিপুল পরিমাণ অবৈধ মাদকসহ উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পেশাদার মাদক কারবারি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছোট বড় যে কোনো অপরাধীর ক্ষেত্রে ডিবি জিরো টলারেন্স নিয়ে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। যে কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে ডিবি ‘ইন্টারসেপ্টর বা প্রতিবন্ধক’ হিসেবে কাজ করবে। ডিবির সব সদস্যের মনোবল পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে দৃঢ় রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নগরবাসীর ‘ভরসার কেন্দ্রবিন্দুতে’ পৌঁছতে ও অপরাধীদের জন্য ‘মূর্তিমান আতঙ্ক’ হিসেবে পরিগণিত হতে ডিবির আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ডিবি তার কার্যক্রমের মাধ্যমেই থাকতে চায় নগরবাসীর ভরসার কেন্দ্রস্থলে, জনগণের দোয়ায় ও প্রার্থনায়। কোন ফাঁকা বুলি নয়; বরং ‘দৃশ্যমান এ্যাকশনের’ মাধ্যমেই ডিবি ক্রমাগত নগরবাসীর আস্থার প্রতীকে পরিণত হচ্ছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ঈদ শেষে মহানগরবাসী যাতে নিরাপদে ও স্বস্তিতে ঘরে ফিরতে পারেন এবং কোনো ধরনের বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন না হন; সেজন্য ঈদ পরবর্তী সময়ে ডিবির ‘বিশেষ অভিযান’ পরিচালিত হবে। ছিনতাইকারী, চোর, চাঁদাবাজ ও বিভিন্ন অভ্যাসগত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে ডিবির আটটি বিভাগের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক টিম কর্তৃক মহানগরের বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে এ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে জাল টাকা তৈরি ও সরবরাহ রোধে ডিবি অত্যন্ত তৎপর রয়েছে। ইতোমধ্যে ডিবির অভিযানে বিপুল সংখ্যক জালনোট ও জালনোট তৈরির সরঞ্জামসহ চক্রের বেশ কয়েকজন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া অনলাইনে জালনোট বিক্রয় ঠেকাতে ডিবির সাইবার টিম সার্বক্ষণিক অনলাইনে নজরদারি করছে। জালনোট তৈরি, বিক্রয় ও সরবরাহ রোধে পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে ডিবি।
রেজাউল আরও বলেন, ঈদ উপলক্ষে ডিএমপির ইউনিফর্মড পুলিশ ও ডিবির কার্যক্রমের পাশাপাশি নিরাপত্তা সচেতনতার অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানের দায়িত্বে নিয়োজিত নিরাপত্তা রক্ষীদের ডিউটি জোরদার করতে হবে এবং যেকোন অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা নজরদারির ব্যবস্থা রাখতে হবে। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারিক করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পুলিশের পাশাপাশি মালিক পক্ষকে স্ব স্ব মার্কেট বা শপিংমলের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে হবে এবং এলাকার থানা বা ফাঁড়ির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে।
ডিবির ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ঈদে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে বা ঘটার আশঙ্কা থাকলে তা স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি, থানা বা ডিবিকে অবহিত করবেন। তাছাড়া ডিএমপির কন্ট্রোল রুমের নম্বর অথবা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ যোগাযোগ করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে বিপণিবিতানসহ যে কোন স্থানে নাশকতা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও নিরাপত্তাঝুঁকি সম্পর্কিত যে কোন তথ্য থাকলে ডিবিকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে হবে এবং তার পাশাপাশি তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রেখে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।