বগুড়ার শিবগঞ্জে নাগরিক ঐক্যের ৯ নেতা-কর্মীকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও সাতজনকে। আজ বুধবার উপজেলা যুবদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রনি মিয়া বাদী হয়ে শিবগঞ্জ থানায় এ মামলা করেছেন। মামলায় রনি মিয়ার বাড়িতে পেট্রলবোমা হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ করা হয়েছে।

এ ছাড়া বিএনপি ও জামায়াত একত্রে শিবগঞ্জ উপজেলায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমানকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন।

শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুজ্জামান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন উপজেলা নাগরিক ঐক্যের নেতা পিয়াল (৫৫), লিপি বেগম (৩৫), শিবগঞ্জ উপজেলা নাগরিক ঐক্যের যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক সরকার (৪৫), উপজেলা নাগরিক যুব ঐক্যের সভাপতি অমিত হাসান (৩৫), শিবগঞ্জ উপজেলা নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈকত আমিন বিদ্যুৎ (৩২), নাগরিক ঐক্যের কর্মী তোফা (৫৫), সাগর (৩৫), মোকাররম হোসেন খোকন (৩২) এবং হারুনুর রশিদ (৫০)।

এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিতে গেলে নাগরিক ঐক্যের নেতাদের ওপর হামলা হয়। এ সময় নাগরিক ঐক্যের উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলামকে ছুরিকাহত করা হয়। তিনি বর্তমানে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ হামলায় শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম জড়িত বলে দাবি করে আসছে নাগরিক ঐক্য।

এ ঘটনায় নাগরিক ঐক্য শিবগঞ্জ উপজেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক সরকার বাদী হয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলমকে ১ নম্বর ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওহাবকে ২ নম্বর আসামি করে ৩০ জনের নামে শিবগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগ মামলা হিসেবে রেকর্ড করেনি পুলিশ।
শিবগঞ্জ থানার ওসি দাবি করেন, নাগরিক ঐক্যের কেউ সশরীর মামলা দিতে থানায় আসেননি। অনলাইনে পাঠানো অভিযোগ মামলা হিসেবে রেকর্ড করার সুযোগ নেই।

এদিকে শহীদ মিনারের ওই হামলার প্রতিক্রিয়ায় গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে শিবগঞ্জ সদর ইউনিয়নের আবদুল বাহাপুর গ্রামে যুবদল নেতা রনি মিয়ার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে মোকামতলা-জয়পুরহাট সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। আজ যুবদল নেতার মামলাটি রেকর্ড করল পুলিশ।

নাগরিক ঐক্যের জেলার অন্যতম সমন্বয়ক সাইদুর রহমান সাগর আজ বগুড়া প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক শহীদুলের ওপর হামলা ও তাঁকে ছুরিকাঘাত করেছেন বিএনপি নেতা মীর শাহে আলমের লোকজন। থানায় মামলা করা হলেও পুলিশ তা রেকর্ড করেনি।

শিবগঞ্জে বিএনপি ও জামায়াতের একত্রে মাহমুদুর রহমানকে প্রতিহত করার ঘোষণার নিন্দা জানিয়ে সাইদুর রহমান বলেন, মাহমুদুর রহমান জাতীয় নেতা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শিবগঞ্জের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁকে শিবগঞ্জের মাটিতে ঠেকানো যাবে না।

বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নাগরিক ঐক্যের এই উত্তেজনা শুরু হয়েছে মূলত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। এর আগে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সমর্থনে এই আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। আগামী সংসদ নির্বাচনেও তিনি বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী হতে চান। অন্যদিকে এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম।

‘মান্নাকে শিবগঞ্জে ঢুকতে দেওয়া হবে না’

যুবদল নেতা রনি মিয়ার ওপর হামলার প্রতিবাদে বিএনপি ও জামায়াত–সমর্থিত ইউপি চেয়ারম্যানেরা গতকাল মঙ্গলবার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা বর্জন করেন। একই সঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) নির্বাচনী এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা করেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম।

গতকাল শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির এই সভা আহ্বান করা হয়। সেখানে বিএনপি নেতা মীর শাহে আলম, জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা শাহাদাত-উজ-জামানসহ বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা এবং ১২টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানেরা উপস্থিত ছিলেন।

ইউএনও জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় মীর শাহে আলম বলেন, মাহমুদুর রহমান মান্না একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একেকবার একেক দল করেন। তিনি ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতা-কর্মীদের তাঁর দলে নিয়ে তাঁদের প্রতিষ্ঠিত করছেন। মান্না বদলি করবেন এই ভয়ে ইউএনও এবং থানার ওসি রনির ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করছেন না।

রনির বাড়িতে হামলার জন্য নাগরিক ঐক্যের নেতা-কর্মীদের দায়ী করে মীর শাহে আলম বলেন, হামলার ঘটনার উপযুক্ত বিচার না হওয়া পর্যন্ত মান্নাকে শিবগঞ্জে ঢুকতে দেওয়া হবে না। একই সঙ্গে প্রশাসনকে বিএনপি ও জামায়াত কোনো প্রকার সহায়তা করবে না। প্রশাসনের কোনো সভায় আর যোগও দেবে না।

মীর শাহে আলম  বলেন, নাগরিক ঐক্যের কোনো কর্মসূচি আর শিবগঞ্জে করতে দেওয়া হবে না। নাগরিক ঐক্যের যাঁকেই পাওয়া যাবে, তাঁকেই ধরে থানায় সোপর্দ করা হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রনির ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। উপজেলা প্রশাসনের সভাগুলোতে এরপর থেকে বিএনপি ও জামায়াত ছাড়া অন্য দলের কাউকে আমন্ত্রণ না জানাতে ইউএনর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

মীর শাহে আলম বক্তব্য শেষ করেই সভায় উপস্থিত সবাইকে নিয়ে সভা বর্জন করে বের হয়ে যান।

মাহমুদুর রহমান মান্নার নিন্দা

শহীদ মিনারে নাগরিক ঐক্যের শিবগঞ্জ উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলামের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার। এই হামলার জন্য বিএনপি ও যুবদল নেতা-কর্মীদের দায়ী করে এক বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, ৫ আগস্ট-পরবর্তী বাংলাদেশে এই ধরনের হামলা কেবল কাপুরুষদের দ্বারাই সম্ভব। এই হামলা নারকীয় ও পৈশাচিক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে যাওয়া নাগরিক ঐক্যের নেতা-কর্মীদের ওপর এই হামলা সভ্যতা ও মানবিক মূল্যবোধের চরম বিরোধী এবং রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রমাণ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ বগঞ জ উপজ ল শ বগঞ জ থ ন য বদল ন ত র কর ড কর কর ম দ র কম ট র

এছাড়াও পড়ুন:

‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে তোপের মুখে বীর মুক্তিযোদ্ধা

পিরোজপুরের নেছারাবাদে (স্বরূপকাঠী) ২৫ মার্চের গণহত্যা দিবসের আলোচনা সভায় ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে তোপের মুখে পড়েছেন কাজী সাখাওয়াত হেসেন নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা। আজ বুধবার সকালে উপজেলার সরকারি স্বরূপকাঠি পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আলোচনা সভায় এ ঘটনা ঘটে। অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সহকারী কমিশনারসহ (ভূমি) উপস্থিত উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তার সামনে এ নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা সাখাওয়াত হোসেন নেছারাবাদ উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার।

জানা গেছে, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাজী সাখাওয়াত হোসেন তার বক্তব্য শেষে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলেন। মুহূর্তে সেখানে উপস্থিত কয়েকজন এর বিরোধিতা করলে তখনই ক্ষমা চান সাখাওয়াত হোসেন। আজ বুধবার উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে বীর মুক্তিযোদ্ধা সাখাওয়াত হোসেনসহ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা উপজেলার নবাগত ইউএনও মো. জাহিদুল ইসলামকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এ সময় বিএনপি সমর্থিত স্থানীয় সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা ২৫ মার্চের আলোচনা সভায় বলা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান নিয়ে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। পরে ইউএনও মো. জাহিদুল ইসলাম বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পুরস্কার দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করেন।

এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা কাজী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের আলোচনা সভায় ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলেছিলাম। এটা আমার ভুল হয়েছিল।’ ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান বলা কি আপনি অপরাধ মনে করেছেন, এমন প্রশ্ন করে আবারও জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব পরিবেশে ‘জয় বাংলা’ বলা ঠিক না। পরিবেশ বুঝে সবকিছু বলতে হয়। আমি ওই দিন ‘জয় বাংলা’ বলার কারণে বুধবার স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্থানীয় সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছিল।’

নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘২৬ মার্চের অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়া হয়নি। ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে উপজেলা অডিটোরিয়ামে একটি আলোচনা সভার অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী সাখাওয়াত হোসেন ‘জয় বাংলা’ বলেছিলেন। তখন অনেকে তার বিরোধিতা করেন। তখনই ভুল বুঝতে পেরে তিনি ক্ষমা চেয়েছিলেন। আসলে বিষয়টি নিয়ে আমিও বিব্রত হয়েছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আ’লীগ নেতাদের নিয়ে ঈদ উপহার বিতরণ ইউএনওর
  • মাটি ও বালু খেকো সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স : ইউএনও
  • জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে ঈদগাহে প্যান্ডেল নির্মাণে বাধার অভিযোগ
  • ঈশ্বরদীর ইউএনওর মোবাইল নম্বর ক্লোন করে চাঁদাবাজি
  • ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে তোপের মুখে বীর মুক্তিযোদ্ধা