Prothomalo:
2025-03-29@05:41:24 GMT

মেলায় শেষ বিকেলে ভাবসংগীত

Published: 26th, February 2025 GMT

বইমেলার শিশু কর্নারে রক্তিম ফুলে ফুলে ভরে আছে পলাশের শাখা। তার পাশেই খোলা মঞ্চে চর্যাপদের পদগুলো পরিবেশন করছিলেন সাধক শিল্পীরা, ‘কায়া তরুবর পঞ্চবি ডাল...।’ বসন্তের শেষ বিকেলে মেলায় আসা শিশু আর তাদের অভিভাবকেরা আগ্রহ নিয়ে উপভোগ করছিলেন সেই গান। আজ বুধবার মেলায় প্রবেশ করতেই এ দৃশ্য চোখে পড়ল।

ভাবনগর সাধুসঙ্গ এখানে প্রতি বুধবার বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চর্যাপদের গানের আসর করে থাকে বলে জানালেন লোক–গবেষক ও ভাবনগর ফাউন্ডেশনের সভাপতি সাইমন জাকারিয়া। আজ ছিল ৫৩৭তম আসর, ১২ বছর ধরে চলছে এ আয়োজন। শাহ আলম দেওয়ান, সাধিকা সৃজনী তানিয়া, বাউল অন্তরসহ অনেকে শ্রোতাদের গানে গানে মাতিয়ে রেখেছিলেন সন্ধ্যা অবধি।

শেষ পর্যায়ে এসে আজ বিক্রিতে কিছুটা গতির সঞ্চার হয়েছে। বেড়েছে লোকসমাগম আর নতুন বইয়ের প্রকাশনাও। মোড়ক উন্মোচন চলছে নতুন বইয়ের। ইতি প্রকাশন তাদের প্যাভিলিয়নের নাম দিয়েছে ‘জিয়া বাড়ি’। সেখানেই সন্ধ্যায় শামা ওবায়েদের তিনটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে এসেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ইতি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত বই তিনটি হলো ‘হৃদয় জুড়ে একটি নাম: জিয়াউর রহমান’, ‘জিয়াউর রহমানের নির্বাচিত ভাষণ’ এবং ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নির্বাচিত ভাষণ’। অনুষ্ঠানে লেখিকাসহ আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিমসহ বিএনপির নেতারা।

তথ্যকেন্দ্রে আজ ১৬৬টি নতুন বইয়ের নাম জমা পড়েছে। বাংলা একাডেমি এনেছে বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আবদুল হকের রচনাবলি’র প্রথম খণ্ড। সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন সৈয়দ আজিজুল হক। অন্যপ্রকাশ এনেছে শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের ‘ছোটকাকু’ সিরিজের ৪০টি কিশোর উপন্যাসের সংগ্রহ ‘ছোটকাকু চল্লিশ’, প্রথমা এনেছে মো.

তৌহিদ হোসেনের ভ্রমণগদ্য ‘আফ্রিকা দক্ষিণ’। ইউপিএল এনেছে শওকত হোসেন মাসুমের ‘কেলেঙ্কারির অর্থনীতি: বাংলাদেশের অর্থনীতির পেছনের অর্থনীতি’, নবযুগ এনেছে কামরুল হায়দারের গবেষণা গ্রন্থ‘নজরুল সঙ্গীতের ভাবসন্ধান’, স্বপ্ন’৭১ এনেছে মোহিত কামাল সম্পাদিত ‘শতবর্ষ পেরিয়ে নজরুলের ধূমকেতু’, ঐতিহ্য এনেছে আবুল আহসান চৌধুরীর প্রবন্ধ ‘আমার মীর মশাররফ’, উৎস এনেছে লোকসংগীতবিষয়ক বই সুমনকুমার দাশ সংগৃহীত ও সম্পাদিত ‘শফিকুন্নূর সমগ্র’, কাকাতুয়া এনেছে আবদুল মান্নান সৈয়দের ‘ছোটদের রচনা সমগ্র’, পাঞ্জেরী এনেছে দন্ত্যস রওসনের ‘প্রেমের অণুকাব্য-২’, পাঠক সমাবেশ এনেছে প্রত্নতত্ত্ববিষয়ক স্থপতি ড. সাজিদ বিন দোজার ‘রেখাচিত্রে প্রাচীন পুণ্ড্রনগর’, অ্যাডর্ন এনেছে হারুন-উজ-জামানের ইতিহাসবিষয়ক ‘জিন্নাহ্‌র প্রেম: বাংলা ও ভারত ভাগ’, সুচয়নী এনেছে এস এম শামসুদ্দিনের ছড়ার বই ‘গাঁয়ের নামটি মেষ্টা’, মাওলা ব্রাদার্স এনেছে মুরাদুল ইসলামের জীবনী–বিষয়ক ‘ফকির ফয়জুল্লাহ’, বেঙ্গল পাবলিকেশন এনেছে পাপড়ি রহমানের উপন্যাস ‘ঊষর দিন ধূসর রাত’, ঋদ্ধি এনেছে আলমগীর সাত্তারের শিশুতোষ ‘ছোটদের এরোপ্লেন আবিষ্কারের কাহিনি’, জ্ঞানকোষ এনেছে শাহাদুজ্জামানের ‘নির্বাচিত গল্প’ ও সুপর্ণা এলিস গমেজের মুক্তিযুদ্ধের গল্প ‘নয় মাস’। আগামী এনেছে পলাশ মাহমুদ অনূদিত ও সাখাওয়াত টিপু সম্পাদিত ‘নির্বাচিত নোবেল বক্তৃতা’, অবসর এনেছে ড. এম দেলোয়ার হোসেনের ইতিহাসবিষয়ক ‘ইতিহাসচর্চার প্রবেশপথ’, পুণ্ড্র এনেছে সালেহা চৌধুরীর গল্প ‘ঈশ্বর মানুষ ও জীবনযাপন’।

তথ্যকেন্দ্রের হিসাব অনুসারে আজ পর্যন্ত মেলায় নতুন বই এসেছে ২ হাজর ৭৮৮টি। মেলার দুই দিন বাকি। নতুন বই যেমন আসবে, তেমনি বইয়ের অনুরাগীরাও কেনাকাটায় গতির সঞ্চার করবেন—এ আশা প্রকাশকদের।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ষয়ক বইয় র

এছাড়াও পড়ুন:

মিয়ানমারে নিহত হাজার ছাড়াল, নিখোঁজ ৩০

মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। নিহতের সরকারি সংখ্যা ১০০২ জনে পৌঁছেছে। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। খবর-বিবিসি

নিহতদের বেশিরভাগই মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের। মান্দালয় ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের সবচেয়ে কাছের শহর।

ভূমিকম্পে আহতের সংখ্যা ২,৩৭৬ জন। এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন ৩০ জন। মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের উদ্ধারকর্মীরা এখনও জীবিতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে মিয়ানমারে। এর কেন্দ্রস্থল ছিল দেশটির উত্তর-পশ্চিমের শহর সাগাইং থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে। এলাকাটি রাজধানী নেপিদো থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে। ভূমিকম্পটির তীব্র প্রভাব অনুভূত হয় প্রতিবেশী বাংলাদেশ, চীন, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে।

ভূকম্পন এতটাই শক্তিশালী ছিল, প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে জোরালো কম্পন অনুভূত হয়। মিয়ানমারের জান্তা সরকারের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি জানায়, দেশটিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রাজধানী নেপিদোতে। সেখানে কমপক্ষে ৯৬ জন নিহত হয়েছেন। সাগাইংয়ে ১৮ জন ও মান্দালয়ে ৩০ জন নিহত হন। এর মধ্যে জুমার নামাজের সময় দুটি মসজিদ ধসে পড়ে কমপক্ষে ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। 

থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, তাদের একটি নির্মাণাধীন ভবনে শতাধিক শ্রমিক কাজ করছিলেন। এটি ধসে পড়লে অন্তত ৯০ জন নিখোঁজ আছেন। ৬ জন নিহত ও ২২ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে রাজধানী ব্যাংককের কর্তৃপক্ষ। শক্তিশালী ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত মিয়ানমারের সামরিক সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আবেদন করেছে। 

সামরিক শাসক মিন অং হ্লাইং ভূমিকম্পের পর বলেন, ‘মিয়ানমারের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করতে চাওয়া যে কোনো দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে সহায়তা গ্রহণ করতে আমরা প্রস্তুত।’ সামরিক শাসনের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া মিয়ানমারের জন্য এটি একটি বিরল ঘোষণা। সেনা মুখপাত্র জাও মিন তুন বলেছেন, ‘আমরা চাই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যত দ্রুত সম্ভব মানবিক সহায়তা দিক।’

ভয়াবহ এ ভূমিকম্পের পর জাতিসংঘ তাদের আঞ্চলিক সহায়তা কার্যক্রম সক্রিয় করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দুবাই থেকে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। ভূমিকম্প-পরবর্তী সর্বাত্মক সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল বারো নিশ্চিত করেছেন, সহায়তা পাঠাতে প্রস্তুত ফ্রান্স। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাও ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা করছে। তবে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রবেশের সীমাবদ্ধতায় ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার কার্যক্রম।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ফুটেজে দেখা যায়, ভূমিকম্প শুরুর পর ব্যাংককে নির্মাণাধীন ভবন ধসে পড়ে। আশপাশের লোকজন আতঙ্কে পালাচ্ছেন; ধুলোয়-ধোঁয়ায় ছেয়ে যাচ্ছে আশপাশ। হোটেলে থাকা অনেকে গোসলের পোশাক ও সুইমিংয়ের পোশাক পরে দৌড়ে বেরিয়ে আসেন। থাইল্যান্ডের চিয়াং মাইয়ের বাসিন্দা ৭৬ বছরের সাই ভূমিকম্পের সময় একটি দোকানে কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি দ্রুত অন্য গ্রাহকদের সঙ্গে দোকান থেকে বের হয়ে যাই। এটা আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প।’ 

থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা এক্সে লেখেন, তিনি ভূমিকম্পের পর জরুরি বৈঠক করতে দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ ফুকেটে তাঁর নির্ধারিত সরকারি সফর স্থগিত করেছেন। বিকেলে ব্যাংকক থেকে আলজাজিরার ইমরান খান জানান, ভূমিকম্পের কারণে শহরটিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। লোকজন রাস্তায় নেমে আসেন। কোনো মেট্রোরেল চলাচল করছে না। শহরজুড়ে যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে। 

মিয়ানমারের অনেক স্থানে ভূপৃষ্ঠে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। অনেক সড়কে ফাটল ও মাটি দেবে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক ভবনের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারে তৎপরতা চলছে। মান্দালয় উদ্ধারকারী দলের এক সদস্য বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা শুধু এটুকু বলতে পারি, মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। এ সংখ্যা কয়েকশ হতে পারে। উদ্ধার অভিযান চলছে।’ মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার জানিয়েছে, ছয়টি অঞ্চল– সাগাইং, মান্দালয়, ম্যাগওয়ে, বাগো, ইস্টার শান রাজ্য ও নেপিদো অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। 

মিয়ানমার দমকল বিভাগের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, তারা অনুসন্ধান শুরু করেছেন। হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যাচাইয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে মিয়ানমারের ইয়াংঙ্গুনে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘সবকিছু কাঁপতে শুরু করলে আমরা সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে আসি। চোখের সামনে পাঁচতলা ভবন ধসে পড়তে দেখেছি। আমার শহরের সবাই রাস্তায় নেমে এসেছে। কেউ ভবনের ভেতরে ফিরে যেতে সাহস পাচ্ছে না।’ 

বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, ভূকম্পন মিয়ানমার সীমান্ত লাগোয়া চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রদেশ ইউনান ও সিচুয়ান প্রদেশেও অনুভূত হয়েছে। সেখানেও ভবন ধসে কয়েকজন আহত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত দুই দশকে মিয়ানমারে এমন শক্তিশালী ভূমিকম্প আর হয়নি। বৈশ্বিক ভূকম্পন ঝুঁকির ‘রেড জোনে’ রয়েছে মিয়ানমার। সাগাইং ফল্ট লাইনের মধ্যে এর অবস্থান। এর আগে সাগাইং ফল্টেই ১৯৩০ ও ১৯৫৬ সালে শক্তিশালী ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ২০১৬ সালে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে মিয়ানমারে তিনজন নিহত হন।
 

 

 

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ