Prothomalo:
2025-02-26@20:59:13 GMT

মেলায় শেষ বিকেলে ভাবসংগীত

Published: 26th, February 2025 GMT

বইমেলার শিশু কর্নারে রক্তিম ফুলে ফুলে ভরে আছে পলাশের শাখা। তার পাশেই খোলা মঞ্চে চর্যাপদের পদগুলো পরিবেশন করছিলেন সাধক শিল্পীরা, ‘কায়া তরুবর পঞ্চবি ডাল...।’ বসন্তের শেষ বিকেলে মেলায় আসা শিশু আর তাদের অভিভাবকেরা আগ্রহ নিয়ে উপভোগ করছিলেন সেই গান। আজ বুধবার মেলায় প্রবেশ করতেই এ দৃশ্য চোখে পড়ল।

ভাবনগর সাধুসঙ্গ এখানে প্রতি বুধবার বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চর্যাপদের গানের আসর করে থাকে বলে জানালেন লোক–গবেষক ও ভাবনগর ফাউন্ডেশনের সভাপতি সাইমন জাকারিয়া। আজ ছিল ৫৩৭তম আসর, ১২ বছর ধরে চলছে এ আয়োজন। শাহ আলম দেওয়ান, সাধিকা সৃজনী তানিয়া, বাউল অন্তরসহ অনেকে শ্রোতাদের গানে গানে মাতিয়ে রেখেছিলেন সন্ধ্যা অবধি।

শেষ পর্যায়ে এসে আজ বিক্রিতে কিছুটা গতির সঞ্চার হয়েছে। বেড়েছে লোকসমাগম আর নতুন বইয়ের প্রকাশনাও। মোড়ক উন্মোচন চলছে নতুন বইয়ের। ইতি প্রকাশন তাদের প্যাভিলিয়নের নাম দিয়েছে ‘জিয়া বাড়ি’। সেখানেই সন্ধ্যায় শামা ওবায়েদের তিনটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে এসেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ইতি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত বই তিনটি হলো ‘হৃদয় জুড়ে একটি নাম: জিয়াউর রহমান’, ‘জিয়াউর রহমানের নির্বাচিত ভাষণ’ এবং ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নির্বাচিত ভাষণ’। অনুষ্ঠানে লেখিকাসহ আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিমসহ বিএনপির নেতারা।

তথ্যকেন্দ্রে আজ ১৬৬টি নতুন বইয়ের নাম জমা পড়েছে। বাংলা একাডেমি এনেছে বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আবদুল হকের রচনাবলি’র প্রথম খণ্ড। সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন সৈয়দ আজিজুল হক। অন্যপ্রকাশ এনেছে শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের ‘ছোটকাকু’ সিরিজের ৪০টি কিশোর উপন্যাসের সংগ্রহ ‘ছোটকাকু চল্লিশ’, প্রথমা এনেছে মো.

তৌহিদ হোসেনের ভ্রমণগদ্য ‘আফ্রিকা দক্ষিণ’। ইউপিএল এনেছে শওকত হোসেন মাসুমের ‘কেলেঙ্কারির অর্থনীতি: বাংলাদেশের অর্থনীতির পেছনের অর্থনীতি’, নবযুগ এনেছে কামরুল হায়দারের গবেষণা গ্রন্থ‘নজরুল সঙ্গীতের ভাবসন্ধান’, স্বপ্ন’৭১ এনেছে মোহিত কামাল সম্পাদিত ‘শতবর্ষ পেরিয়ে নজরুলের ধূমকেতু’, ঐতিহ্য এনেছে আবুল আহসান চৌধুরীর প্রবন্ধ ‘আমার মীর মশাররফ’, উৎস এনেছে লোকসংগীতবিষয়ক বই সুমনকুমার দাশ সংগৃহীত ও সম্পাদিত ‘শফিকুন্নূর সমগ্র’, কাকাতুয়া এনেছে আবদুল মান্নান সৈয়দের ‘ছোটদের রচনা সমগ্র’, পাঞ্জেরী এনেছে দন্ত্যস রওসনের ‘প্রেমের অণুকাব্য-২’, পাঠক সমাবেশ এনেছে প্রত্নতত্ত্ববিষয়ক স্থপতি ড. সাজিদ বিন দোজার ‘রেখাচিত্রে প্রাচীন পুণ্ড্রনগর’, অ্যাডর্ন এনেছে হারুন-উজ-জামানের ইতিহাসবিষয়ক ‘জিন্নাহ্‌র প্রেম: বাংলা ও ভারত ভাগ’, সুচয়নী এনেছে এস এম শামসুদ্দিনের ছড়ার বই ‘গাঁয়ের নামটি মেষ্টা’, মাওলা ব্রাদার্স এনেছে মুরাদুল ইসলামের জীবনী–বিষয়ক ‘ফকির ফয়জুল্লাহ’, বেঙ্গল পাবলিকেশন এনেছে পাপড়ি রহমানের উপন্যাস ‘ঊষর দিন ধূসর রাত’, ঋদ্ধি এনেছে আলমগীর সাত্তারের শিশুতোষ ‘ছোটদের এরোপ্লেন আবিষ্কারের কাহিনি’, জ্ঞানকোষ এনেছে শাহাদুজ্জামানের ‘নির্বাচিত গল্প’ ও সুপর্ণা এলিস গমেজের মুক্তিযুদ্ধের গল্প ‘নয় মাস’। আগামী এনেছে পলাশ মাহমুদ অনূদিত ও সাখাওয়াত টিপু সম্পাদিত ‘নির্বাচিত নোবেল বক্তৃতা’, অবসর এনেছে ড. এম দেলোয়ার হোসেনের ইতিহাসবিষয়ক ‘ইতিহাসচর্চার প্রবেশপথ’, পুণ্ড্র এনেছে সালেহা চৌধুরীর গল্প ‘ঈশ্বর মানুষ ও জীবনযাপন’।

তথ্যকেন্দ্রের হিসাব অনুসারে আজ পর্যন্ত মেলায় নতুন বই এসেছে ২ হাজর ৭৮৮টি। মেলার দুই দিন বাকি। নতুন বই যেমন আসবে, তেমনি বইয়ের অনুরাগীরাও কেনাকাটায় গতির সঞ্চার করবেন—এ আশা প্রকাশকদের।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ষয়ক বইয় র

এছাড়াও পড়ুন:

ঘরের সঙ্গে আয়ের উৎসও হারিয়েছে ৩৬ পরিবার

রাঙামাটির সাজেকের রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে ভয়াবহ আগুনে রিসোর্ট-কটেজ, রেস্তোরাঁ, দোকানঘরের সঙ্গে পুড়ে ছাই হয়েছে স্থানীয় ত্রিপুরা ও লুসাই জাতিগোষ্ঠীর মানুষের অনেক বসতঘরও। এসব পরিবারের বেশির ভাগের আয়ের উৎস ছিল রিসোর্ট ও হোটেল মালিকদের কাছে জমি লিজ দিয়ে পাওয়া ভাড়ার টাকা।

কেউ কাজ করতেন হোটেল-রিসোর্টগুলোয়। ফলে আগুনের ভয়াবহতা শুধু হোটেল-রিসোর্ট মালিকদেরই নিঃস্ব করেনি, অবর্ণনীয় দুরবস্থায় ফেলেছে স্থানীয়দেরও। ঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করতে হচ্ছে তাদের অনেককে। 

গত সোমবার দুপুরে রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে আগুন লাগে। মাত্র কয়েক ঘণ্টায় পুড়ে ছাই হয় ৯৭টি কটেজ-রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ, দোকানঘর ও বসতঘর। এর মধ্যে ৩৬টি বসতঘর ত্রিপুরা ও লুসাই সম্প্রদায়ের মানুষের। তা ছাড়া ৩৪টি কটেজ ও রিসোর্ট, ২০টি দোকানঘর ও ৭টি রেস্তোরাঁ পুড়েছে। ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক শতকোটি টাকার বেশি। 

গতকাল বুধবার রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে সরেজমিনে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া হোটেল-রিসোর্ট ও বসতঘরগুলোর ধ্বংসস্তূপ এখনও আগুনের ভয়াবহতার সাক্ষী দিচ্ছে। ঘর হারিয়ে স্থানীয় অনেকের আশ্রয় হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। কেউ পোড়া টিন দিয়ে কোনো রকমে ঝুপড়ি তুলে মাথা গোজার ঠাঁই বানিয়েছেন। 

এমনই একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী ওয়াইতুই রাম ত্রিপুরা। পোড়াভিটায় ক্ষতিগ্রস্ত টিন জড়ো করে কোনোমতে তৈরি করা ঝুপড়িতে বসে ছিলেন তাঁর বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান। ওয়াইতুই জানান, ঘরের পাশের জমি তরুছায়া নামে একটি রিসোর্টকে লিজ দিয়েছিলেন। সেই ভাড়ার টাকায় চলত তাঁর সংসার। আগুনে ওই রিসোর্টসহ তাঁর ঘরও পুড়েছে। তিনি এখন নিঃস্ব। মা, স্ত্রী, দুই সন্তান, বোন ও তাঁর দুটি সন্তান নিয়ে কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। 

ওয়াইতুইয়ের স্ত্রী ভারতী ত্রিপুরা জানান, আগুনের সময় তাঁর এক সন্তান ঘরের বাইরে ছিল। তাঁকে খুঁজে আনার সময় আগুন ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। কোনোমতে বৃদ্ধ শাশুড়িকে ঘর থেকে বের করে পাশের জঙ্গলে আশ্রয় নেন। আগুন থেকে ঘরের কিছুই রক্ষা করতে পারেননি। 

আরেক ক্ষতিগ্রস্ত সাংপুই লুসাই জানান, আগুনের ঘর পুড়ে যাওয়ার পর গির্জায় আশ্রয় নিয়েছেন। পাশের কংলাক ও খগেনপাড়ার লোকজন যে খাবার পাঠাচ্ছেন তা দিয়ে কোনোরকমে দিন পার করছেন। রোয়াত্তি লুসাই নামে ক্ষতিগ্রস্ত আরেকজন জানান, আগুনে বসতঘর, রিসোর্ট ও চায়ের দোকান হারিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব। কী করে ঘুরে দাঁড়াবেন বুঝে আসছে না। 

এদিকে সাজেকের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। গতকাল দুপুরের দিকে তিনি সাজেক পৌঁছান। পরে ক্ষতিগ্রস্ত রিসোর্ট-কটেজ মালিক, কর্মচারী ও ঘর হারানো স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন। 

এ সময় ক্ষতিগ্রস্তরা উপদেষ্টার কাছে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। উপদেষ্টা এ সময় বসতবাড়ি হারানো প্রতিটি পরিবারকে দুই টন করে চাল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের জেলা পরিষদ থেকে খাদ্যশস্য ও জেলা প্রশাসন থেকে ঢেউটিন দেওয়ার কথা জানান।

পরে সাংবাদিকদের উপদেষ্টা বলেন, সাজেকে অতিদ্রুত একটি বিশেষায়িত ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অনুরোধ করবেন। ক্ষতিগ্রস্ত কটেজ ও রিসোর্ট মালিকদের করপোরেট ঋণের ব্যবস্থা করে দিতে কথা বলবেন অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে। এ ছাড়া সাজেকে পানি সংকট নিরসনে জলাধার স্থাপন ও ক্ষতিগ্রস্ত বসতঘর পরিবারকে যতটুক সম্ভব পুনর্বাসনের কথা জানান। 

এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান সুদত্ত বিকাশ চাকমা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরাসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে দুপুরে জেলা প্রশাসনের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরে কমিটির প্রধান রাঙামাটির স্থানীয় সরকার প্রকৌশলের প্রধান প্রকৌশলী মোবারক হোসেন জানান, ইকো ভ্যালি নামের রিসোর্ট থেকে আগুন ধরেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিদ্যুতের শর্টসার্কিট, সিগারেট অথবা দাহ্য পদার্থ থেকে আগুন লেগেছে। বিস্তারিত তথ্য অনুসন্ধান করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। 

ক্ষতিগ্রস্ত ৩৬ পরিবারকে সহায়তা আগুনের ঘটনার দুই দিন পর ক্ষতিগ্রস্ত ৩৬ পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল, সাড়ে ৭ হাজার টাকা, শুকনো খাবার ও কম্বল দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার গতকাল এ ত্রাণ বিতরণ করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ