চাঁদপুরে বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে ছোট ভাইকে হত্যার অভিযোগ
Published: 26th, February 2025 GMT
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় আমগাছের চারা রোপণকে কেন্দ্র করে বড় ভাইয়ের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ছোট ভাই নিহত হয়েছেন বলে স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন। আজ বুধবার দুপুরে উপজেলার সদর ইউনিয়নের সুবিদপুর আমিনুল হক মেম্বার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম জহির হোসেন (৪৮)। তিনি একই বাড়ির মৃত আবদুল জলিলের ছেলে।
নিহত জহিরের স্ত্রী জান্নাত আক্তার বলেন, ‘ঘরের সামনে আমার স্বামী আমগাছের চারা রোপণ করতে যান। আমার ভাসুর বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে আমার স্বামীর সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তিনি আমার স্বামীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন। পরে আমরা তাঁকে উদ্ধার করে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
স্বজন ও স্থানীয় লোকজন জানান, আজ সকালে বাড়ির পাশে আমগাছের চারা রোপণ নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে কথা-কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি হয়। এ সময় বড় ভাই বিল্লাল হোসেন তাঁর ছোট ভাই জহির হোসেনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন। এতে জহির মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। গুরুতর আহত অবস্থায় জহিরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আহমেদ তানভীর হাসান বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই জহিরের মৃত্যু হয়েছে।
নিহত জহিরের প্রতিবেশেী আবদুল হাই বলেন, জমি নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধ চলছে অনেক দিন ধরে। সেই বিরোধের জেরেই এ ঘটনা ঘটেছে।
হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ঘরের সঙ্গে আয়ের উৎসও হারিয়েছে ৩৬ পরিবার
রাঙামাটির সাজেকের রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে ভয়াবহ আগুনে রিসোর্ট-কটেজ, রেস্তোরাঁ, দোকানঘরের সঙ্গে পুড়ে ছাই হয়েছে স্থানীয় ত্রিপুরা ও লুসাই জাতিগোষ্ঠীর মানুষের অনেক বসতঘরও। এসব পরিবারের বেশির ভাগের আয়ের উৎস ছিল রিসোর্ট ও হোটেল মালিকদের কাছে জমি লিজ দিয়ে পাওয়া ভাড়ার টাকা।
কেউ কাজ করতেন হোটেল-রিসোর্টগুলোয়। ফলে আগুনের ভয়াবহতা শুধু হোটেল-রিসোর্ট মালিকদেরই নিঃস্ব করেনি, অবর্ণনীয় দুরবস্থায় ফেলেছে স্থানীয়দেরও। ঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করতে হচ্ছে তাদের অনেককে।
গত সোমবার দুপুরে রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে আগুন লাগে। মাত্র কয়েক ঘণ্টায় পুড়ে ছাই হয় ৯৭টি কটেজ-রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ, দোকানঘর ও বসতঘর। এর মধ্যে ৩৬টি বসতঘর ত্রিপুরা ও লুসাই সম্প্রদায়ের মানুষের। তা ছাড়া ৩৪টি কটেজ ও রিসোর্ট, ২০টি দোকানঘর ও ৭টি রেস্তোরাঁ পুড়েছে। ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক শতকোটি টাকার বেশি।
গতকাল বুধবার রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে সরেজমিনে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া হোটেল-রিসোর্ট ও বসতঘরগুলোর ধ্বংসস্তূপ এখনও আগুনের ভয়াবহতার সাক্ষী দিচ্ছে। ঘর হারিয়ে স্থানীয় অনেকের আশ্রয় হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। কেউ পোড়া টিন দিয়ে কোনো রকমে ঝুপড়ি তুলে মাথা গোজার ঠাঁই বানিয়েছেন।
এমনই একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী ওয়াইতুই রাম ত্রিপুরা। পোড়াভিটায় ক্ষতিগ্রস্ত টিন জড়ো করে কোনোমতে তৈরি করা ঝুপড়িতে বসে ছিলেন তাঁর বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান। ওয়াইতুই জানান, ঘরের পাশের জমি তরুছায়া নামে একটি রিসোর্টকে লিজ দিয়েছিলেন। সেই ভাড়ার টাকায় চলত তাঁর সংসার। আগুনে ওই রিসোর্টসহ তাঁর ঘরও পুড়েছে। তিনি এখন নিঃস্ব। মা, স্ত্রী, দুই সন্তান, বোন ও তাঁর দুটি সন্তান নিয়ে কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।
ওয়াইতুইয়ের স্ত্রী ভারতী ত্রিপুরা জানান, আগুনের সময় তাঁর এক সন্তান ঘরের বাইরে ছিল। তাঁকে খুঁজে আনার সময় আগুন ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। কোনোমতে বৃদ্ধ শাশুড়িকে ঘর থেকে বের করে পাশের জঙ্গলে আশ্রয় নেন। আগুন থেকে ঘরের কিছুই রক্ষা করতে পারেননি।
আরেক ক্ষতিগ্রস্ত সাংপুই লুসাই জানান, আগুনের ঘর পুড়ে যাওয়ার পর গির্জায় আশ্রয় নিয়েছেন। পাশের কংলাক ও খগেনপাড়ার লোকজন যে খাবার পাঠাচ্ছেন তা দিয়ে কোনোরকমে দিন পার করছেন। রোয়াত্তি লুসাই নামে ক্ষতিগ্রস্ত আরেকজন জানান, আগুনে বসতঘর, রিসোর্ট ও চায়ের দোকান হারিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব। কী করে ঘুরে দাঁড়াবেন বুঝে আসছে না।
এদিকে সাজেকের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। গতকাল দুপুরের দিকে তিনি সাজেক পৌঁছান। পরে ক্ষতিগ্রস্ত রিসোর্ট-কটেজ মালিক, কর্মচারী ও ঘর হারানো স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন।
এ সময় ক্ষতিগ্রস্তরা উপদেষ্টার কাছে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। উপদেষ্টা এ সময় বসতবাড়ি হারানো প্রতিটি পরিবারকে দুই টন করে চাল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের জেলা পরিষদ থেকে খাদ্যশস্য ও জেলা প্রশাসন থেকে ঢেউটিন দেওয়ার কথা জানান।
পরে সাংবাদিকদের উপদেষ্টা বলেন, সাজেকে অতিদ্রুত একটি বিশেষায়িত ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অনুরোধ করবেন। ক্ষতিগ্রস্ত কটেজ ও রিসোর্ট মালিকদের করপোরেট ঋণের ব্যবস্থা করে দিতে কথা বলবেন অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে। এ ছাড়া সাজেকে পানি সংকট নিরসনে জলাধার স্থাপন ও ক্ষতিগ্রস্ত বসতঘর পরিবারকে যতটুক সম্ভব পুনর্বাসনের কথা জানান।
এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান সুদত্ত বিকাশ চাকমা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরাসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে দুপুরে জেলা প্রশাসনের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরে কমিটির প্রধান রাঙামাটির স্থানীয় সরকার প্রকৌশলের প্রধান প্রকৌশলী মোবারক হোসেন জানান, ইকো ভ্যালি নামের রিসোর্ট থেকে আগুন ধরেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিদ্যুতের শর্টসার্কিট, সিগারেট অথবা দাহ্য পদার্থ থেকে আগুন লেগেছে। বিস্তারিত তথ্য অনুসন্ধান করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।
ক্ষতিগ্রস্ত ৩৬ পরিবারকে সহায়তা আগুনের ঘটনার দুই দিন পর ক্ষতিগ্রস্ত ৩৬ পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল, সাড়ে ৭ হাজার টাকা, শুকনো খাবার ও কম্বল দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার গতকাল এ ত্রাণ বিতরণ করেন।