সীতাকুণ্ডে শিবচতুর্দশী মেলায় ভিড়ের চাপে ৩ পুণ্যার্থীর মৃত্যু
Published: 26th, February 2025 GMT
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ ধামে শিবচতুর্দশীর মেলায় তীর্থযাত্রা আসা তিন পুণ্যার্থী ভিড়ে চাপা পড়ে মারা গেছেন। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা ও বেলা ১টার দিকে চন্দ্রনাথ মন্দিরের সামনে পুণ্যার্থীদের মৃত্যু হয়। নিহতদের দুইজনই নারী।
নিহতদের একজনের নাম বান্টু দাস (৫০)। তিনি চট্টগ্রাম জেলার চকরিয়া থানার বাসিন্দা। এছাড়া অপর দুইজনের নাম পরিচয় জানা যায়নি। তবে তাদের একজন পঞ্চাশোর্ধ নারী ও একজন কিশোরী বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মো.
কলি যুগের আদি তীর্থ নামে পরিচিত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধাম মহাতীর্থে তিন দিনব্যাপী শিবচতুর্দশী মেলার দ্বিতীয় দিন আজ এবং পূণ্য তিথি। বুধবার সকাল ১০টা ১১ মিনিট ২৫ সেকেন্ডে শুরু হয়ে তিথি থাকবে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৫৯ মিনিট ৫০ সেকেন্ড পর্যন্ত। এ সময়ে কয়েক লাখ পূণ্যার্থীর সমাগম ঘটে চন্দ্রনাথ ধামে।
পূণ্যার্থীরা যেন নিরাপদে তীর্থ দর্শন ও পূজা-অর্চনা সম্পন্ন করতে পারেন সে লক্ষ্যে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি মেলা কমিটির পক্ষ থেকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
সীতাকুণ্ড মোহন্ত আস্তানায় আশ্রয় নেওয়া সচন্দা দাশ এক পূণ্যার্থী বলেন, বরিশাল থেকে পরিবারের সাথে এসেছি। বুধবার শিবচতুর্দশী তিথি শুরু হলে ব্যাসকুন্ডে পুণ্যস্নান শেষে মন্দিরে পূজা ও তীর্থদর্শন করে মনের আশা পূরণ করতে চাই।
সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধাম পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক চন্দন দাশ বলেন, দেশ-বিদেশ থেকে আগত পূণ্যার্থীদের তীর্থ যাত্রীদের নিরাপত্তা জোরদার করতে আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা করছি।
সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবর রহমান বলেন, এই সময়ে সর্বাধিক ভক্তের আগমনের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রশাসন ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফকরুল ইসলাম বলেন, মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে যাবতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কাশিমপুর কারাগারের পলাতক ১৪৬ আসামির একজন আবরার হত্যা মামলার মুনতাসির
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গত ৬ আগস্ট গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালানো আসামিদের একজন বুয়েটশিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুনতাসির আল জেমি (২৬)। তাঁর বন্দী নম্বর ৫১৭৭। তাঁর বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায়।
এ বিষয়ে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সবাই মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। পলাতকদের মধ্যে আবরার হত্যা মামলার একজন আসামি ছাড়া আলোচিত আর কোনো মামলার আসামি নেই।
পুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর কাশিমপুর কারাগার থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১৯৯ আসামি পালিয়ে যান। তাঁদের মধ্যে স্বেচ্ছায় ফিরে আসা ও গ্রেপ্তার আসামির সংখ্যা ৫৩ জন। বাকি ১৪৬ আসামি এখনো পলাতক।
আরও পড়ুনমৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কারাগার থেকে পালানোর খবরে মধ্যরাতে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ১১ ঘণ্টা আগেপুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ আগস্ট বন্দীরা কারাগারের ভেতর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। বিশৃঙ্খলা ও দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে কারাবিধি অনুযায়ী প্রথমে তাদের সতর্ক করা হয়। বন্দীরা দাঙ্গা-হাঙ্গামা করে ২৫-৩০ কারারক্ষীকে গুরুতর আহত করেন। একপর্যায়ে তাঁরা কারাগারের দেয়াল ভেঙে ফেলেন এবং বৈদ্যুতিক পোল উপড়ে মই বানিয়ে দেয়াল টপকে পালিয়ে যান। বিশৃঙ্খলা ও দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে ছয়জন বন্দী নিহত হন।
কারাগার থেকে আসামি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় গত ১৫ আগস্ট কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের জেলার মো. লুৎফর রহমান বাদী হয়ে গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানায় একটি মামলা করেন। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৫৩ জনকে কোনাবাড়ী থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আবরার ফাহাদের ছোট ভাই ও বুয়েটশিক্ষার্থী আবরার ফাইয়াজ গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় তাঁর ফেসবুক পোস্টে মুনতাসির আল জেমির পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আবরার ফাহাদ হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জেমি জেলখানা থেকে পালিয়ে গেছে ৫ আগস্টের পর। অথচ আমাদের জানানো হচ্ছে আজকে, যখন ওর আইনজীবী কোনো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে আসেনি, তখন। ফাঁসির আসামির তো কনডেমড সেলে থাকার কথা ছিল, সে পালায় কীভাবে! পালানোর পরও এ তথ্য বাইরে না আসা তো এটাই প্রমাণ করে যে তাঁকে ধরতেও কোনো চেষ্টা করা হয়নি। পূর্বে থেকেই আরও তিনজন পলাতক আছে।’
২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর রাতে বুয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী পিটিয়ে হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর বুয়েটের ২০ শিক্ষার্থীকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এ মামলায় আরও পাঁচ শিক্ষার্থীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।
কাশিমপুর থানায় করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি। অন্যদের গ্রেপ্তার করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’