‘কোরাস রিইনভেনশন অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’-এ ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের উদ্ভাবনী সেবার জন্য স্বর্ণপদক পেয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য আর্থিক খাত ও মার্কেটে প্রবেশাধিকার আরও সহজ করার স্বীকৃতিস্বরূপ এই সম্মাননা দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গেটস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যৌথভাবে পরিবর্তনমূলক উদ্যোগের মাধ্যমে নারীদের জন্য ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সম্প্রসারণে অসামান্য অবদান রাখায় এই আন্তর্জাতিক সম্মাননা অর্জন করেছে ব্যাংকটি। পুরস্কারটি প্রযুক্তি ও কৌশলগত সহযোগিতার মাধ্যমে আর্থিক ক্ষমতায়ন বৃদ্ধির ব্যাপারে ব্র্যাক ব্যাংকের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।

১৯ ফেব্রুয়ারি থাইল্যান্ডের ব্যাংককে আয়োজিত এক জমকালো অনুষ্ঠানে ‘ডিস্ট্রিবিউশন’ ক্যাটাগরিতে এই গোল্ড অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন ব্র্যাক ব্যাংকের হেড অব ইমার্জিং করপোরেট ইন্দ্রজিৎ সুর এবং হেড এসএমই বিজনেস সাপোর্ট মহসিনুর রহমান। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই স্বর্ণপদক প্রাপ্তি ব্যাংকিং এক্সেলেন্স এবং উদ্ভাবনে গ্লোবাল লিডার হিসেবে ব্র্যাক ব্যাংকের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে।

গেটস ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ‘ট্রান্সফরমেটিভ জার্নি টুওয়ার্ডস ফাইন্যান্সিয়াল অ্যান্ড ডিজিটাল ইনক্লুশন ফর দ্য আন্ডারসার্ভড পপুলেশন’ শীর্ষক এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো নারী এবং প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষের ক্ষমতায়ন।

এই উদ্যোগে নারী মালিকানাধীন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার জন্য আরও ভালো সুযোগ-সুবিধা তৈরি, ডিজিটাল সমাধানের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করা এবং নারী এসএমইদের জন্য উদ্যোক্তা দক্ষতা, আর্থিক সাক্ষরতা ও ডিজিটাল সক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে কাজ করা হয়।

সম্মাননার অংশ হিসেবে খরাপ্রবণ এলাকায় ব্র্যাক ব্যাংকের নামে একটি বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে টেকসইয়ের প্রতি নিজেদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির বিষয়টি তুলে ধরেছে কোরাস। পরিবেশের প্রতি এটি ব্র্যাক ব্যাংক ও কোরাসের সমমূল্যবোধ ও প্রতিশ্রুতির উদাহরণ।

কোরাস রিইনভেনশন অ্যাওয়ার্ড হলো কোরাস-ইনফোসিস ফিনাকল ব্যাংকিং ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ডের অংশ, যা ব্যাংকিং ও আর্থিক সেবার শ্রেষ্ঠত্ব উদ্‌যাপন করে থাকে। এই সম্মাননা অর্জনের মধ্য দিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক আধুনিক ও দূরদর্শী সলিউশন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধিযাত্রায় ব্যাংকটির শীর্ষস্থান বজায় রেখেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর থ ক র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ঢেকে রাখা সেই মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরালে শেখ মুজিবের স্মৃতিচিহ্ন ভেঙে ফেলা হলো   

লালমনিরহাট শহরের শিশুপার্ক সংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিমঞ্চে স্থাপিত ম্যুরালের কিছু অংশ ভেঙে ফেলেছে জেলা প্রশাসন। ২৬ মার্চ জেলা প্রশাসন ওই ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে অনুষ্ঠান পরিচালনা করে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি ও গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কাপড় দিয়ে ম্যুরাল ঢেকে দেওয়ার ঘটনায় মুখোমুখি অবস্থান নেয় জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম পার না হতেই রোববার জেলা প্রশাসন মুক্তিযুদ্বের স্মৃতিচিহ্ন  ম্যুরাল ভাঙার কাজে হাত দেয়। 

এর আগে শনিবার দুপুুরে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মঞ্চে দু’টি পক্ষ একই সময়ে সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দুপুর সাড়ে ১১টায় ওই এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করলেও জাতীয় নাগরিক পার্টি করতে পারেননি। 

মুক্তিযুদ্ব স্মৃতি মঞ্চে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লালমনিরহাট শাখার প্রধান সমন্বয়ক হামিদুর রহমান ম্যুরাল অপসারণ ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরাতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন। এ সময় তিনি দাবি করে বলেন, ‘এই ম্যুরালটি স্বাধীন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস বহন করে না। বাকশাল প্রতিষ্ঠাকারী স্বৈরাচার শেখ মুজিবুর রহমানকে অতিরঞ্জিত উপস্থাপন ও ইতিহাস বিকৃতি করায় এর আগেও ১৬ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসন ম্যুরালটি ঢেকে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫২, ৭১ এর সকল সত্য ইতিহাস অক্ষুণ্ণ রেখে অতিরঞ্জিত অংশ ও স্বৈরাচারের চিহ্ন ঢেকে দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পুরো দেয়াল ঢেকে দেয়, যা অনাকাঙ্খিত। কিছু স্বৈরাচারের দোসর তাদের ব্যক্তিগত  আক্রোশ, স্বার্থ উদ্ধার ও বর্তমান সরকারের কার্যক্রমকে বিতর্কিত করতে জেলা প্রশাসনের কার্যক্রমকে ভুলভাবে প্রচার করতে থাকে এবং বিদ্বেষবশত মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ম্যুরাল ঢেকে দেওয়ার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অবগত ছিল না, তাঁরা এমন কোনো দাবিও করে নাই। স্বৈরাচারের সকল চিহ্ন ও ম্যুরাল অপসারণ ছাত্রজনতার দাবি ও গণআকাঙ্খা।’ 

সংবাদ সম্মেলন শেষে জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের মুক্তিযোদ্ধারা স্মৃতিসৌধ এলাকায় যান। সেখানে জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি হাফিজুর রহমান হাফিজ জানান, ম্যুরালের মধ্যেই বৈষম্য রয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানে যেমন অবদান রয়েছে তেমনি স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানেরও অবদান রয়েছে। অথচ ম্যুরালে জিয়াউর রহমানের কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। এটা বৈষম্য। এই ম্যুরাল রাখা ঠিক নয়।   

শনিবার জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) রাসেল আহমেদ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে গেলে তোপের মুখে পড়েন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই ম্যুরালে ৫২ ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার গঠন, চরমপত্র পাঠ, ৭১ এর গণহত্যা, বিজয় উল্লাসে মুক্তিযোদ্ধা, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ ও পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মৃতিচিহ্ন ঢেকে দিয়ে চরম ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছেন জেলা প্রশাসন। পরে তাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর দায় চাপিয়েছেন। ৭১ ও ২৪কে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে জাতিকে বিভাজিত করে আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্র চলছে। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ৭১ এর অস্তিত্ব ধরে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাদ দিয়ে অন্যগুলোর সঙ্গে আমাদের কোনো মতানৈক্য নেই। 
 
২৬ মার্চ বুধবার সকালে সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্বাঞ্জলি দিতে গেলে কাপড় দিয়ে মুরাল ঢেকে রাখার বিষয়টি চোখে পড়ে। সনাক সদস্যরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ফিরে যান। পরে লালমনিরহাট রেলওয়ে শহীদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্বাঞ্জলি দেন তাঁরা। গত ১৬ ডিসেম্বরও একই রকম ঘটনা ঘটায় জেলা  প্রশাসন। ১৪০ ফুট দীর্ঘ ওই ম্যুরালে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ, মুজিবনগর সরকার গঠন, চরমপত্র পাঠ, উদিত সূর্য, ৭১ এর গণহত্যা, মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানি, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ ও পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে।  

এ ব্যাপারে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দারের বক্তব্য জানতে তাঁর ফোনে মেসেজ এবং ফোন দিলে কোনো সাড়া মেলেনি।  

সম্পর্কিত নিবন্ধ