বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনকে (বিটিভি) স্বায়ত্তশাসিত করার উদ্দেশ্যে ‘জাতীয় সম্প্রচার কমিশন’ গঠন ও নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছিল প্রায় ২৮ বছর আগে। সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে প্রায় ২৫ বছর আগে হাইকোর্ট রুল দিয়েছিলেন। এই রুলের ওপর আজ বুধবার শুনানি শুরু হয়েছে।

বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ ও বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ শুনানি গ্রহণ করেন। আদালত আগামী ৪ মার্চ পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।

নথিপত্র থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে সৃজনশীলতা, জবাবদিহি ও শৃঙ্খলা আনাসহ অধিকতর স্বায়ত্তশাসন প্রদানসংক্রান্ত নীতিমালার বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য ১৯৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ আসাফ্উদ্দৌলাহ্‌কে চেয়ারম্যান করে ১৪ সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়। ওই বছরের ২৩ অক্টোবর আরও দুজনকে সদস্য হিসেবে কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ‘বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্বায়ত্তশাসন নীতিমালা প্রণয়ন কমিশন’ নামে ১৬ সদস্যের এই কমিশন ১৯৯৭ সালের ৩০ জুন তৎকালীন সরকারের কাছে সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন জমা দেয়।

ওই প্রতিবেদন বাস্তবায়ন বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকারসংক্রান্ত বেসরকারি সংগঠন অধিকারের পক্ষে ২০০০ সালের ১৭ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করা হয়। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে সুপারিশসংবলিত কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়নের বিষয়টি বিবেচনার জন্য কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এই রুলের ওপর আজ শুনানি হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রুহুল আমিন ভূঁইয়া শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো.

আহসানুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খান জিয়াউর রহমান শুনানিতে ছিলেন।

ঘটনা ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরে রিট আবেদনকারীর আইনজীবী রুহুল আমিন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে স্বায়ত্তশাসন না থাকায় সরকারে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মন্ত্রী–নেতা ও তাঁদের পরিবারের গুণগানই করতে দেখা যেত, বিশেষত বিটিভিতে। এ অবস্থায় নব্বইয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। তখন পাঁচ দল, আট দল ও সাত দল নামে পরিচিত রাজনৈতিক জোট—সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয়, বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের স্বায়ত্তশাসন দরকার।

রুহুল আমিন ভূঁইয়া আরও বলেন, ‘এর আলোকে ১৯৯৬ সালে তৎকালীন সরকার একটি কমিশন গঠন করে। কমিশন ১৯৯৭ সালের ৩০ জুন তৎকালীন সরকারের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের স্বায়ত্তশাসনের জন্য জাতীয় সম্প্রচার কমিশন গঠন এবং নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়। তবে সুপারিশ বাস্তবায়িত না হওয়ায় ২০০০ সালের ১৭ আগস্ট রিটটি করে অধিকার। হাইকোর্ট রুল দেন। তবে ভ্যাগের নির্মম পরিহাসে এত দিনেও রুল শুনানি করতে পারিনি। রুলের ওপর আজ শুনানি শুরু হয়। শুনানির জন্য আগামী মঙ্গলবার পরবর্তী দিন রেখেছেন আদালত।’

জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, জনগণ বিটিভি দেখে এবং রেডিও শোনে। জনগণ প্রকৃত ঘটনা জানতে চায়। তবে বেতার ও বিভিটিতে স্বায়ত্তশাসন না থাকায় যখন যে সরকার ছিল, তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন হতে দেখা যেত, বিরোধী মতের কোনো কিছুর প্রতিফলন হতো না বললেই চলে। শুনানিতে বেতার ও বিটিভির স্বায়ত্তশাসনের জন্য জাতীয় সম্প্রচার কমিশন গঠন ও নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন বাস্তবায়ন চেয়েছেন বলে জানান তিনি।

২৮ বছর আগের কমিশনের সুপারিশ

২৮ বছর আগে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্বায়ত্তশাসন নীতিমালা প্রণয়ন কমিশন বেশ কিছু সুপারিশ করেছিল। সুপারিশে বলা হয়েছিল, বেতার ও টেলিভিশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় দিকনির্দেশনা প্রদান এবং দেশের সম্প্রচারমাধ্যমকে যথাযথ ধারায় প্রবাহিত করার লক্ষ্যে একটি স্থায়ী কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। এই কমিশনের নাম হবে জাতীয় সম্প্রচার কমিশন।

সুপারিশে আরও বলা হয়, প্রস্তাবিত কমিশন হবে ৯ সদস্যের। কমিশনের চেয়ারম্যান সার্বক্ষণিক ও অন্যান্য সদস্য খণ্ডকালীন সদস্য হিসেবে কমিশনের দায়িত্ব পালন করবেন। কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা পরপর দুই মেয়াদের জন্য মনোনয়নযোগ্য হবেন না। কমিশন তথ্য মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে জবাবদিহি করবে। কমিশনের কাজ হবে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ল র ওপর প রণয়ন র ন র জন য আইনজ ব সদস য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

রিট খারিজ, জোটে গেলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান বহাল

নির্বাচনে নিবন্ধিত একাধিক দল জোটভুক্ত হলেও নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে—গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধিত এমন বিধানের বৈধতা নিয়ে করা রিট খারিজ (রুল ডিসচার্জ) করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।

এর আগে নতুন ওই বিধান যুক্ত করে গত ৩ নভেম্বর আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ জারি করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার। আগে কোনো রাজনৈতিক দল জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে জোটের শরিক যেকোনো দলের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পেত। ওই বিধানসংবলিত অধ্যাদেশের ৯ অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) মহাসচিব মোমিনুল আমিন গত ৩০ নভেম্বর ওই রিটটি করেন।

রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো. আবদুল ওয়াহাব প্রথম আলোকে বলেন, শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ অর্থাৎ রিট খারিজ করে দিয়েছেন। এতে করে গণপ্রতিনিধিত্ব (সংশোধন) অধ্যাদেশের ৯ অনুচ্ছেদ বহাল থাকল। ফলে নির্বাচনে নিবন্ধিত একাধিক দল জোটভুক্ত হলেও নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে।

রিট আবেদনকারীর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, আলোচনা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এর আগে রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে গণপ্রতিনিধিত্ব (সংশোধন) অধ্যাদেশের ওই বিধানসংবলিত ৯ অনুচ্ছেদ সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের (২৮, ৩৮ ও ৩৯ অনুচ্ছেদ) সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, রুলে সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। আইনসচিবসহ বিবাদীদের ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় শুনানি নিয়ে আজ রুল ডিসচার্জ (খারিজ) দেন আদালত।

আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম ও রাশনা ইমাম, সঙ্গে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রেশাদ ইমাম ও আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো. আবদুল ওয়াহাব এবং নির্বাচন কমিশনের পক্ষে আইনজীবী কামাল হোসেন মিয়াজী উপস্থিত ছিলেন।

এ মামলায় বিবাদী হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বাংলাদেশ কংগ্রেস পক্ষভুক্ত হয়। এনসিপির পক্ষে আইনজীবী জহিরুল ইসলাম মুসা এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের পক্ষে আইনজীবী মো. ইয়ারুল ইসলাম শুনানিতে অংশ নেন।

উল্লেখ্য, জোট করলেও দলীয় প্রতীকেই নির্বাচন করা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল বিএনপি। দলটি নির্বাচন কমিশন ও আইন মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে তাদের আপত্তির কথা তুলে ধরে। তবে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি এই সংশোধনের পক্ষে। জোট করলেও নির্বাচনে অংশ নিতে হবে নিজ দলের প্রতীকে—শেষ পর্যন্ত এমন বিধান যুক্ত করেই ৩ নভেম্বর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।

আরও পড়ুনজোটে গেলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান প্রশ্নে রুল০১ ডিসেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তিউনিসিয়ার গুপ্তহত্যা, ওসমান হাদিকে গুলি ও বিপজ্জনক রাজনীতি
  • সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সব কার্যক্রম স্থগিত
  • নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তির নীতিমালা প্রণয়নে কমিটি গঠন
  • মন্ত্রিপরিষদ সচিব‌কে বাদ দেওয়াসহ আইন‌ঢেলে সাজানোর আহ্বান: টিআইবি
  • বিপিএলে ফিক্সিং: অভিযুক্তদের বিচার হবে ট্রাইব্যুনালে
  • মানিকগঞ্জ শহরে ককটেল বিস্ফোরণ
  • কম্বাইন্ড ডিগ্রি কারিকুলাম বিলম্বে উদ্বেগ বাকৃবিতে
  • রিট খারিজ, জোটে গেলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান বহাল
  • রিয়ালের ৪ তারকা ফুটবলার নিষিদ্ধ
  • ২০২৭ সালে কি নতুন শিক্ষাক্রম পাওয়া যাবে