গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোবিপ্রবি) আন্তঃবিভাগ টি-১০ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট-২০২৫ এ ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগকে ৫ উইকেটে হারিয়ে দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তুলেছে হয়েছে গণিত বিভাগ।

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে আন্তঃবিভাগ টি-১০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়।

ফাইনাল ম্যাচে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ। প্রথম ইনিংসে ১০ ওভার ৭৩ রানের টার্গেট দেয় তারা। জবাবে ৮ ওভার ৩ বলে ৫ উইকেট হারিয়ে ১ ওভার ৩ বল হাতে রেখেই জয়সূচক ৭৩ রান তুলে নেয় গণিত বিভাগ। টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন গণিত বিভাগের মো.

ইয়াসিন আরাফাত এবং ম্যাচ সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন একই বিভাগের মাহমুদুল মুহিব।

ম্যাচ শেষে আয়োজিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর। বিশেষ অতিথি ছিলেন, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসান, সহকারী প্রক্টর ও  ক্রীড়া কমিটির আহ্বায়ক ড. মো. রাজিউর রহমান, শরীর চর্চা দপ্তরের সহকারী পরিচালক বাবুল মণ্ডল প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, “খেলায় হারা বা জেতা নয়, অংশগ্রহণ করাই বড় কথা। যদিও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা শারীরিক শিক্ষা বিভাগ বা ক্রীড়া কোটায় ভর্তি হয় না। তারপরও আশা করি এখান থেকে তারা জাতীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ তৈরি করে নেবে। আমাদের কৃতি শিক্ষার্থীরা সমাজের বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করবে, যাতে আমরা তাদের নিয়ে গর্ব করতে পারি।”

এর আগে, ২০২২ সালে আন্তঃবিভাগ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল গণিত বিভাগ।

ঢাকা/রিশাদ/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণ ত ব ভ গ

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশে ইসলামী উগ্রপন্থার উত্থান নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনকে ‌বিভ্রান্তিকর বলল সরকার

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ যখন তার গণতন্ত্র পুনর্গঠন এবং দেশের সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের জন্য একটি নতুন ভবিষ্যৎ তৈরির চেষ্টা করছে, তখন দেশের ধর্মনিরপেক্ষ মুখোশের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে লুকিয়ে থাকা ইসলামী চরমপন্থার ধারাটি ফুটে উঠছে। নারীর শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্যাপারটি শুরু করে ইসলামী উগ্রপন্থীরা। আজ মঙ্গলবার অনলাইনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে নিউইয়র্ক টাইমস। তবে এই প্রতিবেদনকে বিভ্রান্তিকর বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ সরকার। সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টসের ফেসবুক পেজে বলা হয়, একতরফা দৃষ্টিভঙ্গি ও ভুল চিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ও একপক্ষীয় ধারণা তৈরি করছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ যখন তার গণতন্ত্র পুনর্গঠন এবং দেশের সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের জন্য একটি নতুন ভবিষ্যৎ তৈরির চেষ্টা করছে, তখন দেশের ধর্মনিরপেক্ষ মুখোশের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে লুকিয়ে থাকা ইসলামী চরমপন্থার ধারাটি ফুটে উঠছে। রাজধানী ঢাকায় এক সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা সতর্ক করে বলেছেন, ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে এমন কাউকে সরকার যদি মৃত্যুদণ্ড না দেয়, তাহলে তারা নিজের হাতেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করবে। এর কয়েকদিন পর একটি নিষিদ্ধ গোষ্ঠী ইসলামী খেলাফতের দাবিতে বিশাল মিছিল করে। 

এক সাক্ষাৎকারে ইসলামপন্থী বেশ কয়েকটি দল ও সংগঠন যার মধ্যে কয়েকটি আগে নিষিদ্ধ ছিল- এসব সংগঠনের নেতারা স্পষ্ট করে বলেছেন, তারা বাংলাদেশকে আরও মৌলবাদের দিকে ঠেলে দেওয়ার কাজ করছেন। তারা এমন এক ধরনের পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করছেন, যা দেশের বাইরে খুব কমই লক্ষ্য করা দেখা গেছে।ইসলামপন্থী এ নেতারা জোর দিয়ে বলছেন, বাংলাদেশে এমন একটি ‘ইসলামি সরকার’ প্রতিষ্ঠা করা হোক, যে সরকার ইসলাম ধর্মকে অবমাননাকারীদের শাস্তি দেবে এবং ‘শালীনতা’ প্রতিষ্ঠা করবে। এই অস্পষ্ট ধারণাগুলো অন্যান্য জায়গায় রক্ষণশীল বা ধর্মতান্ত্রিক শাসনের পথ তৈরি করেছে। নতুন সংবিধান তৈরিতে কাজ করছেন এমন নেতারাও স্বীকার করেছেন, এই খসড়ায় বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয়টি বাদ দেওয়া হবে। সেখানে বহুত্ববাদ প্রতিস্থাপন করা হবে। দেশকে আরও ধর্মীয় ভিত্তিতে পুনর্গঠন করা হবে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যেসব নারী শিক্ষার্থী পথে নেমেছিলেন, তাদের জন্য মৌলবাদীদের এই বিশেষ উত্থান বিশেষভাবে বেদনাদায়ক। তারা তার একদলীয় শাসনের পরিবর্তে বৈচিত্রপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও উন্মুক্ত পরিবেশ প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশা করেছিলেন। কিন্তু তাদের এখন ধর্মীয় জনপ্রিয়তার বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে। তাদেরকে লড়াই করতে হচ্ছে এমন এক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে, যারা নারী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু ও ইসলামের ছোট ছোট সম্প্রদায়ের অনুসারীদের ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা ২৯ বছর বয়সী শেখ তাসনিম আফরোজ এমি বলেন, ‘আমরা বিক্ষোভের সামনের সারিতে ছিলাম। আমরা রাস্তায় আমাদের ভাইদের রক্ষা করেছি। এখন পাঁচ-ছয় মাস পর দেখছি, পুরো ব্যাপারটা উল্টে গেল।’ সমালোচকরা বলছেন, ৮৪ বছর বয়সী নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। অধ্যাপক ইউনূস অপেক্ষাকৃত নমনীয়, গণতান্ত্রিক সংস্কারের ছায়ায় হারিয়ে যাওয়া ও সংঘাত‑বিমুখ হওয়ার কারণে স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করতে পারেননি। ফলে ইসলামী চরমপন্থীরা আরও বেশি জনসাধারণের স্থান দখল করে নিয়েছে। তাঁর সহকারীরা একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্যমূলক পদক্ষেপের কথা বলছেন। তাঁরা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে একটি কর্তৃত্ববাদী শাসন জারি ছিল। এখন অবশ্যই বাকস্বাধীনতা ও প্রতিবাদের অধিকার রক্ষা করতে হবে। কিন্তু এটি করলে মূলত চরমপন্থী দাবির জন্য একটি দরজা উন্মুক্ত হয়ে যায়।

শেখ হাসিনার পতনের পর পুলিশের মনোবলও ভেঙে পড়েছে। তারা আজ নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পারছে না উল্লেখ করে ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সামরিক বাহিনী কিছু ‘পুলিশিং দায়িত্ব’ গ্রহণ করেছে বটে, তবে তারাও অন্তর্বর্তী সরকার ও ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে ক্রমশ বিরোধে লিপ্ত হচ্ছে। কারণ ছাত্ররা অতীতের নৃশংসতার জন্য অফিসারদের জবাবদিহি করতে চায়। বাংলাদেশে এখন যা ঘটছে, তা মৌলবাদের এক ঢেউকে প্রতিফলিত করে, যা এই অঞ্চলকে গ্রাস করে ফেলেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তান একটি চরম জাতিগত ধর্মীয় রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সেখানে নারীদের মৌলিক স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। পাকিস্তানে উগ্র ইসলামপন্থীরা বছরের পর বছর সহিংসতার মাধ্যমে তাদের চাওয়া‑পাওয়া বাস্তবায়ন করে আসছে। ভারতে একটি প্রতিষ্ঠিত হিন্দু ডানপন্থী দল দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের ঐতিহ্যকে ক্ষুণ্ন করেছে। মিয়ানমার বৌদ্ধ চরমপন্থীদের দখলে রয়েছে, যারা জাতিগত নির্মূল অভিযান চালাচ্ছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম, যিনি সম্প্রতি একটি নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দেওয়ার আগে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন, তিনি স্বীকার করেছেন যে, দেশ চরমপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ার ‘ভয় আছে’। তবে নাহিদ ইসলাম আশাবাদী যে, সংবিধানে পরিবর্তন আনা হলেও গণতন্ত্র, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং ধর্মীয় উগ্রবাদের প্রতি ঘৃণা করার মতো মূল্যবোধগুলো টিকে থাকবে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না বাংলাদেশে এমন কোনো রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব, যা এই মৌলিক মূল্যবোধগুলোর বিরুদ্ধে যায়।’

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীরা গভীরভাবে জড়িত উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, নারীদের ৩৭ শতাংশ আনুষ্ঠানিক শ্রমশক্তিতে আছেন, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ হারের একটি। এই নারীদের জোর করে ঘরে ঢোকানোর চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। কেউ কেউ ঐতিহ্যের সঙ্গে বাঙালি সংস্কৃতির সংযোগের দিকে ইঙ্গিত করেন। আবার কেউ কেউ দেশের অর্থনীতির আকার নিয়ে আশার আলো দেখতে পান। ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনা এই চরমপন্থী শক্তিগুলোকে একই সঙ্গে দমন ও তোষণ করার চেষ্টা করেছেন। আর এই দীর্ঘ সময়ে চরমপন্থী শক্তিগুলো তাদের ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছে। শেখ হাসিনা একটি পুলিশি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর সরকার ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছিল, যার মধ্যে মূলধারার কাছাকাছি থাকা ব্যক্তিরাও ছিলেন, যারা রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। একই সঙ্গে তিনি হাজার হাজার অনিয়ন্ত্রিত ইসলামী ধর্মীয় মাদ্রাসা অনুমোদন দিয়েছেন এবং শত শত মসজিদ নির্মাণে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেন। এর মাধ্যমে তিনি ইসলামী দলগুলোর ধর্মীয় রক্ষণশীল ভিত্তিকে জয় করার চেষ্টা করেছিলেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার বিদায়ের পর ছোট ছোট চরমপন্থী দলগুলো, যারা এই ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে উল্টে দিতে চায় এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে কাজ করতে চাওয়া মূলধারার ইসলামপন্থী দলগুলো- উভয়ে আরও মৌলবাদী বাংলাদেশের একটি যৌথ লক্ষ্যে একত্রিত হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। বৃহত্তম ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামী এখন একটি বড় সুযোগ দেখতে পাচ্ছে। বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা বলছেন, উল্লেখযোগ্য ব্যবসায়িক বিনিয়োগের অধিকারী এই দলটি দীর্ঘমেয়াদী খেলা খেলছে। যদিও বছরের শেষের দিকে যে নির্বাচন প্রত্যাশা করা হচ্ছে, সেই নির্বাচনে তাদের জয়লাভের সম্ভাবনা কম। তারপরও দলটি মূলধারার ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর প্রতি মানুষের মনে সৃষ্ট অসম্মানকে পুঁজি হিসেবে দেখার আশা করছে।

এতে আরও বলা হয়, জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক মিয়া গোলাম পারওয়ার বলেছেন, দলটি একটি ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র চায়। তাদের কাছে ধর্ম ও রাজনীতির মিশ্রণে তুরস্ক হলো সবচেয়ে কাছের মডেল। তিনি বলেন, ‘ইসলামে নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য আচরণ ও নীতিশাস্ত্রের দিক থেকে নৈতিক দিকনির্দেশনা রয়েছে। এই নির্দেশনাগুলোর মধ্যে নারীরা যেকোনো পেশায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। যেমন খেলাধুলা, গান, থিয়েটার, বিচার বিভাগ, সামরিক বাহিনী, আমলাতন্ত্র ইত্যাদিতে নারীদের অংশগ্রহণে বাধা নেই।’ তবে বর্তমানে রাজনৈতিক শূন্যতার মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে পুরুষরা ইসলামী শাসনব্যবস্থার নিজস্ব ব্যাখ্যা নিয়ে আসছেন।

দেশের উত্তরের উপজেলা তারাগঞ্জে গত মাসে একদল আয়োজক দুটি নারী দলের মধ্যে একটি ফুটবল ম্যাচ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। লক্ষ্য ছিল স্থানীয় মেয়েদের অনুপ্রাণিত করা। মেয়েরা যখন খেলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন শহরের এক মসজিদের নেতা আশরাফ আলী ঘোষণা দেন, নারী ও মেয়েদের ফুটবল খেলতে দেওয়া উচিত নয়। ক্রীড়া সংগঠকরা সাধারণত শহরের বিভিন্ন স্থানে রিকশায় লাউডস্পিকার বেঁধে খেলার বিস্তারিত ঘোষণা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আশরাফ আলীও তাঁর নিজস্ব লোকদের পাঠিয়ে লাউডস্পিকার লাগিয়ে খেলা দেখতে না যাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষদের সতর্ক করতে থাকেন। ৬ ফেব্রুয়ারি যখন নারী খেলোয়াড়রা ড্রেসিংরুমে জার্সি পরছিলেন, তখন স্থানীয় কর্মকর্তারা খেলাটি নিয়ে একটি সভা করছিলেন। আয়োজকদের একজন সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ফুটবল ম্যাচটি হতে না দেওয়ার জন্য প্রয়োজনে আশরাফ আলী শহীদ হবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।’ পরে স্থানীয় প্রশাসন নতি স্বীকার করে, খেলা বাতিল ঘোষণা করে এবং এলাকায় কারফিউ জারি করে।

ওই ম্যাচে ফুটবল খেলার জন্য বাসে চার ঘণ্টা ভ্রমণ করে এসেছিলেন ২২ বছর বয়সী তসলিমা আক্তার। তিনি বলেন, তিনি অনেক গাড়ি, সেনাবাহিনী এবং পুলিশ দেখেছেন। তারা খেলোয়াড়দের বলেছিলেন যে, ম্যাচটি বন্ধ। তসলিমা আক্তার আরও বলেন, তাঁর এক দশকের ফুটবল খেলোয়াড়ের জীবনে এই প্রথম তিনি এত বিরোধিতার মুখোমুখি হলেন। তসলিমা বলেন, ‘কী হতে পারে, তা নিয়ে আমি এখন একটু ভীত।’

এর কয়েক সপ্তাহ পর নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েক ডজন সদস্যের উপস্থিতিতে আয়োজকরা নারীদের একটি ম্যাচ পরিচালনা করেন। কিন্তু সতর্কতা হিসেবে তাঁরা তরুণীদের তাদের হাফপ্যান্টের নীচে স্টকিংস পরতে বলেছিলেন। উগ্রপন্থীদের অবিরাম হুমকির মুখে আয়োজকরা বলেছেন, তাঁরা নিশ্চিত নন যে, তাঁরা আবার ঝুঁকি নেবেন কিনা। একটি সাক্ষাৎকারে মসজিদের ইমাম আশরাফ আলী গর্বিত কণ্ঠে বলেন, তিনি জাগতিক কিছুকে বিতর্কিত কিছুতে পরিণত করেছিলেন। তাঁর মতে, তারাগঞ্জের মতো গ্রামীণ এলাকায় নারীদের ফুটবল ‘অশ্লীলতা’ বাড়াবে।

নারীদের খেলাধুলা ছিল তার সর্বশেষ লক্ষ্য। বছরের পর বছর ধরে তিনি নির্যাতিত সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় আহমদিয়ার ৫০০ সদস্যকে ওই এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের রাতেই আহমদিয়াদের উপাসনালয়ে একদল জনতা আক্রমণ করে। এই আক্রমণটি মূলত সংখ্যালঘু ধর্মীয় স্থান, বিশেষ করে হিন্দুদের ধর্মীয় স্থানগুলোকে লক্ষ্য করে জাতীয় অরাজকতার ঢেউয়েরই অংশ। আহমদিয়া সম্প্রদায় এখনও ভয়ের মধ্যে বাস করছে। তাদের প্রার্থনা কক্ষে উপস্থিতি প্রায় অর্ধেক কমে গেছে।

আহমদিয়াদের উপাসনালয়ের ধ্বংস হয়ে যাওয়া সাইনবোর্ডটি পুনর্নির্মাণ করতে বা লাউডস্পিকার থেকে তাদের আজান সম্প্রচার করতে দেওয়া হচ্ছে না। আশরাফ আলী এসব সহিংসতার জন্য দায় এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু তাঁর মতো প্রচারকদের ধর্মোপদেশ, যারা ‘আহমদিয়া ধর্মদ্রোহীদের’ বহিষ্কার করা প্রয়োজন বলে ঘোষণা করে, ক্রমাগত প্রচারণা চালিয়ে গেছে। স্থানীয় আহমদিয়া শাখার সভাপতি এ কে এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু এই ধর্মীয় নেতারা আমাদের বিরুদ্ধে।’

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন বিভ্রান্তিকর: প্রেস উইং 

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং বিবৃতিতে বলেছে, নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক গতিশীলতাকে অতিসরলভাবে দেখছে এবং ১৮ কোটি মানুষের সমগ্র জাতিকে অন্যায়ভাবে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রগতি এবং বাস্তব পরিস্থিতির জটিলতাকে স্বীকার করার বদলে শুধুমাত্র বাছাই করা কিছু ঘটনা তুলে ধরে ভ্রান্ত ধারণা ছড়ানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়-

১. বাংলাদেশের অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জের বাস্তবতা: প্রবন্ধটিতে কিছু ধর্মীয় উত্তেজনার ঘটনা এবং রক্ষণশীল আন্দোলনের কথা বলা হয়েছে; কিন্তু এর বিপরীতে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও সমাজের অগ্রগতির দিকটি উপেক্ষিত হয়েছে। বাংলাদেশ নারীদের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিশেষভাবে তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নারী অধিকার ও সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া এই সরকারকে যে চিত্রে উপস্থাপন করা হয়েছে তা বাস্তবতার সাথে মেলে না। একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হলো ‘যুব উৎসব ২০২৫’, যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ২৭ লাখ মেয়ে অংশ নিয়েছে এবং তিন হাজার খেলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়েছে। এই বিশাল অংশগ্রহণ -যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, আদিবাসী তরুণী ও বিভিন্ন স্তরের নারীরা যুক্ত হয়েছে-বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের প্রাণবন্ততা প্রমাণ করে। একটি মাত্র ফুটবল খেলা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়া মানে এই নয় যে, বাকি দুই হাজার ৯৯৯টি সফল আয়োজনের মূল্য নেই। একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামগ্রিক অগ্রগতিকে খাটো করে দেখানো প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে। আরেকটি ভুল তথ্য হলো, ‘প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চরমপন্থী শক্তির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেননি’— এটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর এবং তার দীর্ঘদিনের নারী ক্ষমতায়নের কাজকে অস্বীকার করে। ইউনূস সবসময় নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। গ্রামীণ ব্যাংক ও তার ক্যারিয়ারজুড়ে তিনি নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য কাজ করেছেন, যা তাকে নোবেল পুরস্কার এনে দিয়েছে। তিনি নারী অধিকারের প্রতি আজীবন অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন এবং সেটিই তার কাজের মূল ভিত্তি।

২. ধর্মীয় সহিংসতা সম্পর্কে বিভ্রান্তি দূর করা: বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে ধর্মীয় সহিংসতা হিসেবে চিত্রিত করা বিভ্রান্তিকর। শেখ হাসিনার বিদায়ের পর যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে তা মূলত রাজনৈতিক এবং এর অনেকগুলো ঘটনাকে ধর্মীয় সংঘাত হিসেবে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো প্রায়ই জনসমর্থন পেতে ধর্মকে ব্যবহার করে, যা সমস্যাটিকে আরো জটিল করে তুলে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতাকে ধর্মীয় নিপীড়ন বলে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়।

৩. বাংলাদেশ চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে: অন্তর্বর্তী সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এই লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। বাংলাদেশ যে সামাজিক সংস্কার ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, তা ভুল তথ্য ছড়িয়ে ঢেকে ফেলা উচিত নয়। 

৪. বাংলাদেশের বৈশ্বিক অগ্রগতি: বাংলাদেশ এখন এশিয়ার অন্যতম সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। বিগত কয়েক মাসে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল হয়ে উঠেছে এবং রপ্তানি প্রবৃদ্ধি প্রায় ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও ব্যাংকিং খাত অক্ষুণ্ণ রয়েছে এবং স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে (১ ডলার = ১২৩ টাকা)। ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে তা বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজার হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আন্তর্জাতিক ৮ মাসের প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশ বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। শুধুমাত্র গত সপ্তাহে তার চীন সফরের সময় বাংলাদেশ ২.১ বিলিয়ন ডলারের ঋণ, বিনিয়োগ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। আগামী সপ্তাহে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘ইনভেস্টরস কনফারেন্স’, যেখানে ৫০টি দেশের দুই হাজার ৩০০ প্রতিনিধিসহ মেটা, উবার, স্যামসাং-এর মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। এই অগ্রগতি কি ধর্মীয় উগ্রবাদ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কোনো রাষ্ট্রের চিত্র হতে পারে? দ্য নিউইয়র্ক টাইমস এই আশাব্যঞ্জক বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশকে ভুলভাবে চিত্রিত করছে।

৫. বাংলাদেশকে একপাক্ষিকভাবে বিচার করা উচিত নয়: প্রবন্ধে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা তুলে ধরে ১৮ কোটি মানুষের একটি জাতির পরিচয় গঠনের চেষ্টা করা হয়েছে, যা নৈতিকভাবে অনুচিত। বাংলাদেশ একটি বৈচিত্র্যময়, গতিশীল ও সংস্কৃতির দিক থেকে সমৃদ্ধ দেশ। ধর্মীয় উগ্রবাদ শুধুমাত্র বাংলাদেশে নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যা। কিন্তু বাংলাদেশ আইন প্রয়োগ, সামাজিক সংস্কার ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী কার্যক্রমের মাধ্যমে এর মোকাবিলায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই জাতি সংখ্যালঘু, নারী ও যুবসমাজের সুরক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কিছু উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর বক্তব্য ও কার্যকলাপকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নীতি ও ভবিষ্যতের পরিচায়ক হিসেবে উপস্থাপন করা বিভ্রান্তিকর। এছাড়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর উগ্রপন্থার উত্থানকে অনিবার্য ধরে নেওয়া একেবারেই ভুল ধারণা। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক চেতনা, শক্তিশালী নাগরিক সমাজ ও যুবসমাজের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাস, গণতন্ত্রের প্রতি প্রতিশ্রুতি এবং নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা প্রমাণ করে যে, দেশটি সামনে এগিয়ে যাবে এবং যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের উচিত বিচ্ছিন্ন নেতিবাচক ঘটনাগুলোর পরিবর্তে বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও আশা-ভরসার চিত্র বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ