২০০৭ সালে ‘ওম শান্তি ওম’ সিনেমায় নায়িকা শান্তিপ্রিয়া চরিত্রে অভিনয় করে পরিচিতি পেয়েছেন বলিউড তারকা দীপিকা পাড়ুকোন। সিনেমায় স্টাইলিস্ট ভঙ্গিতে শান্তিপ্রিয়ার গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে চলার দৃশ্যটি ‘রিক্রিয়েট’ করেছেন পাকিস্তানি তারকা হানিয়া আমির।

হানিয়ার ইনস্টাগ্রামে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, সোনালি রঙের গাউনে নিজেকে সাজিয়েছেন হানিয়া। শান্তিপ্রিয়ার মতো উৎসুক দর্শকের সামনে আলোর ঝলকানি ছড়িয়ে গাড়ি থেকে নামছেন তিনি। অনুরাগীদের প্রতি উড়ন্ত চুমু দিচ্ছেন হানিয়া।

‘ওম শান্তি ওম’ সিনেমা দিয়েই ভারতের গণ্ডি পেরিয়ে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের দর্শকদের মধ্যে পরিচিতি পেয়েছেন দীপিকা। শান্তিপ্রিয়া চরিত্রটি করেই রাতারাতি তারকাখ্যাতি পেয়েছেন তিনি। দীপিকার বিপরীতে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান।
দীপিকার শান্তিপ্রিয়া চরিত্রের আদলে হানিয়াকে দেখে অনেকে প্রশংসা করেছেন। একজন লিখেছেন, ‘আইকনিক’। আরেকজন লিখেছেন, ‘সুপারস্টার’।

হানিয়া আমিরকে বলিউডের সিনেমায় দেখা যাবে কবে, তা নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। হানিয়ার অনুরাগীরা তাঁকে বলিউডের সিনেমায় দেখতে মুখিয়ে আছেন।
বিষয়টি নিয়ে হানিয়া কী বলছেন? বলিউডের সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পেলে করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে এর আগে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ভালো কোনো কাজের প্রস্তাব পেলে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবেন।

সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে পাকিস্তানি তারকাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনুসারীর রেকর্ড গড়েছেন দেশটির জনপ্রিয় অভিনেত্রী হানিয়া আমির। এই মুহূর্তে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা ১ কোটি ৭০ লাখের বেশি।

আলোচিত পাকিস্তানি ধারাবাহিক ‘কাভি মে কাভি তুম’-এ অভিনয় করে পরিচিতি পেয়েছেন হানিয়া আমির। ফাহাদ মুস্তাফা ও হানিয়া আমির অভিনীত ধারাবাহিকটি পাকিস্তানের গণ্ডি পেরিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের দর্শকের কাছেও প্রশংসা কুড়িয়েছে।

আরও পড়ুনআবেদনময়ী লুকে হানিয়া১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

একীভূত শিক্ষায় আনতে হবে প্রতিবন্ধী শিশুদের

শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু সামিয়া আক্তার এখন নরসিংদীর ভেলানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। অথচ পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুটি অন্য শিশুদের সঙ্গে বাড়ির বাইরে খেলাধুলা ও চলাফেরা করতে পারত না। শিশুটির দাদি রহিমা বেগম বললেন, এক শিক্ষকের নজরে আসার পর তিনি সামিয়াকে বাড়িতে থেরাপি দিয়ে ও পড়াশোনা করিয়ে বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রস্তুত করেন। এখন সামিয়া একাই বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে পারে। একীভূত শিক্ষার সুফলের বড় একটি উদাহরণ সামিয়া। গতকাল বুধবার সাইটসেভার্স ও প্রথম আলো আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে দাদির সঙ্গে এসেছিল সামিয়া।

‘প্রতিবন্ধী শিশুদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্তি: সম্ভাবনা, বাস্তবতা ও করণীয়’ শিরোনামের গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে। বৈঠকে বক্তারা বলেন, পরিবার ও সমাজের উদাসীনতা এবং মূলধারায় একীভূত শিক্ষার সুযোগ না পাওয়ার কারণে অনেক প্রতিবন্ধী শিশু শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ে। একীভূত শিক্ষায় সব ধরনের প্রতিবন্ধী শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করতে অবকাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা, শিক্ষা কার্যক্রমে সহায়ক উপকরণ ও যন্ত্রের অভাব, শিক্ষক প্রশিক্ষণের দুর্বলতা মোকাবিলা করতে হবে এবং সমাজের প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। তাঁরা প্রতিবন্ধিতা নিয়ে কাজ করার জন্য সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম তৈরি এবং কে কোন দায়িত্ব পালন করবে, তার জন্য নির্দেশিকা তৈরির ওপর জোর দেন।

বৈঠকে বলা হয়, দেশে প্রতিবন্ধী শিশুর সংখ্যা ৫ লাখ ২৪ হাজার ২৮৮। এর মধ্যে মেয়েশিশু ২ লাখ ৭ হাজার ৮৫৮। গত বছর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্‌-প্রাথমিক শাখায় ২৫ হাজার ৫৬৪ প্রতিবন্ধী শিশু ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ছেলেশিশু ১৪ হাজার ৪৫৯ জন এবং ১১ হাজার ১০৫ জন মেয়েশিশু।

জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের পরিচালক (পরিকল্পনা, উন্নয়ন) ফজলে ছিদ্দীক মো. ইয়াহিয়া বলেন, ‘একীভূত শিক্ষাব্যবস্থার জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাকে অধিকার হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে দাতব্য ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে অধিকারভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে।’ তিনি জানান, সারা দেশে ফাউন্ডেশন ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সহায়তা কেন্দ্র পরিচালনা করছে। সব উপজেলায় সেবাকেন্দ্র স্থাপন ও ১০ হাজার জনবল নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে ফাউন্ডেশন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (পিইডিপি-৪) মো. ফরহাদ আলম বলেন, পিইডিপি–৪–এ ১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে ৯৮ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষিত শিক্ষকেরা যেন প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি সহনশীলতা দেখান, সেই প্রত্যাশা রয়েছে। অনেক স্কুল প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নিতে চায় না। এসব বিষয়ে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করতে হবে। আসন্ন পিইডিপি–৫–এ শিশুদের শারীরিক–মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও কল্যাণের বিষয়গুলো আরও জোরদার করা হবে বলে তিনি জানান।

উপাত্ত সংগ্রহের ওপর জোর দিয়ে ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের সামাজিক উন্নয়ন উপদেষ্টা তাহেরা জাবিন বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেসব প্রতিবন্ধী শিশু পড়ছে না, তাদের কতজন শিক্ষা নিচ্ছে, কতজন শিক্ষার বাইরে রয়েছে—সে উপাত্ত রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এ বছর জার্মানির বার্লিনে অনুষ্ঠেয় বৈশ্বিক প্রতিবন্ধিতা সম্মেলনে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অঙ্গীকার কী হবে তা নিয়ে করণীয় ঠিক করা প্রয়োজন।

সাইটসেভার্সের কান্ট্রি ডিরেক্টর অমৃতা রেজিনা রোজারিও বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়হীনতা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যতটুকু সম্পদ রয়েছে, তার মধ্য থেকে অগ্রাধিকার ঠিক করে কাজ করা দরকার। ২০১৮ ও ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত বৈশ্বিক প্রতিবন্ধিতা সম্মেলনে যথাক্রমে ৮টি ও ১১টি অঙ্গীকার করেছিল বাংলাদেশ। সেই অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে, তা জানা দরকার। প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাদানে শিক্ষকদের মধ্যে যেন সক্ষমতা গড়ে ওঠে, সে লক্ষ্যে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

ইউনিসেফের শিশুবিশেষজ্ঞ লায়লা ফারহানা আপনান বানু বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় যাওয়ার ক্ষেত্রে মানসিকতা ও সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। যথাযথ উপাত্ত না থাকলে কার্যকর পরিকল্পনা নেওয়া কঠিন। মৃদু মাত্রার প্রতিবন্ধিতা যাদের রয়েছে, তারা মূলধারার শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে সব ধরনের প্রতিবন্ধিতাকে মূলধারায় আনার সক্ষমতা নেই। কোন শিশু শিক্ষার্থীর কী ধরনের প্রতিবন্ধিতা রয়েছে, তা শনাক্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত পদক্ষেপ দরকার—শুধু শিক্ষকের ওপর নির্ভর করলে হবে না।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষা কর্মকর্তা (তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ) মো. শরীফ উল ইসলাম বলেন, প্রতিটি শিশুর ইউনিক আইডি (একক পরিচয়পত্র) দেওয়ার কাজ শেষ হলে প্রতিবন্ধী শিশুদের কারা পড়াশোনা করছে, কারা পড়াশোনার বাইরে রয়ে গেছে, তা নির্ণয় করা সম্ভব হবে। শারীরিক, বাক্‌, শ্রবণ, অন্যান্যসহ মোট ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতার শ্রেণিবিভাগ করা থাকলেও ৭টির বেশি শনাক্ত হচ্ছে না স্কুলে। বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারি বা এপিএসসি ফরম পূরণের সময় শিক্ষকেরা প্রতিবন্ধিতার ধরন বুঝতে না পেরে অনেক সময় অন্যান্য শ্রেণিবিভাগভুক্ত করে ফেলেন শিশুকে।

অনুষ্ঠানে সাইটসেভার্সের কারিগরি বিশেষজ্ঞ (একীভূত শিক্ষা) এওয়ানা মার্জিয়া মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন এডিডি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ কর্মসূচি দলের প্রধান (প্রোগ্রাম টিম লিড) গোলাম ফারুক হামিম, উইনরক ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক রনক চন্দ্র মোহন্ত, সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্টের (সিডিডি) জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী মো. জাহাঙ্গীর আলম, নরসিংদী জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মাসুদুল হাসান তাপস, নরসিংদীর ফারুক আজিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়শ্রী সাহা, রাইটস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্টের প্রেসিডেন্ট মো. মোতাহার হোসেন এবং সাইটসেভার্সের ব্যবস্থাপক মৃণাল কান্তি দাস।

গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ