ছিনতাইকারী সন্দেহে মঙ্গলবার রাতে গাজীপুরের টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। একই রাতে রাজধানীর উত্তরায় ছিনতাইয়ের অভিযোগে দুজনকে পিটিয়ে ফুটওভারব্রিজে ঝুলিয়ে রাখে লোকজন। সিলেটেও একই অভিযোগে এক যুবককে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এর আগে ১৬ জানুয়ারি টাঙ্গাইলে চোর সন্দেহে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
শুধু এই চারটি ঘটনাই নয়, সাম্প্রতিককালে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গণপিটুনির ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান বলছে, গত আগস্ট থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসে দেশে অন্তত ১১২ জন গণপিটুনিতে মারা গেছে। ২০২৩ সালে এমন ঘটনায় ৫১ জনের মৃত্যু হয়। সেই তুলনায় গেল ছয় মাসেই দ্বিগুণের বেশি মৃত্যু হয়েছে।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের ডিন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড.
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছিনতাই–চুরি–ডাকাতির মতো ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ কারণে কোথাও সন্দেহভাজন অপরাধীকে আটক করতে পারলে কেউ আর আইন মানছেন না। তাদের বেধড়ক পিটুনিতে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। যদিও আইন অনুযায়ী গণপিটুনিতে মৃত্যুও হত্যাকাণ্ড। অনেক ক্ষেত্রেই এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হয় না। শনাক্ত করা যায় না জড়িতদের। আবার সন্দেহের বশে নিরপরাধ মানুষকে পিটিয়ে মারার ঘটনাও প্রায়ই ঘটে।
এর আগে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক মানসিকভারসাম্যহীন যুবক এবং একই রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
উত্তরা পূর্ব থানার ওসি শামীম আহমেদ বলেন, ছিনতাইয়ের অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে উত্তরার বিএনএস সেন্টারের সামনের ফুটওভারব্রিজে বকুল ও নাজিম নামে দুজনকে রশি দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
প্রাথমিকভাবে জানা যায়, উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় মোবাইল ফোন ছিনতাই বা ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালায় ওই দুজন। কিন্তু এখনও ভুক্তভোগীর কোনো খোঁজ পায়নি পুলিশ। ফলে এ ঘটনায় কোনো মামলাও হয়নি।
উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় কোনো ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছিল কি না জানতে ওই থানার ওসি হাফিজুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
এদিকে টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় পিটুনিতে নিহত যুবকের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি ফরিদুল ইসলাম বলেন, নিহতের পরিচয় সনাক্তের জন্যা আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেছে পুরিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করবে।
ছয় মাসে নিহত ১১২
মানবাধিকার সংগঠন আসকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১৬ জন গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৭, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট বিভাগে ২ জন করে এবং চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে একজন করে মারা গেছেন।
এর আগে ডিসেম্বরে নিহত ১৪ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১০, চট্টগ্রামে ২ এবং সিলেট ও ময়মনসিংহে একজন করে ছিলেন। নভেম্বরে ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে তিনজন করে, চট্টগ্রামে ২, রংপুর, সিলেট ও বরিশালে একজন করে মারা গেছেন। অক্টোবরে নিহত হন ১৯ জন।
তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৬, খুলনায় ৫, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও বরিশালে ২ জন করে, রংপুর ও ময়মনসিংহে একজন করে মারা গেছেন। ছয় মাসের মধ্যে সেপ্টেম্বরে সর্বাধিক ২৮ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১২, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে পাঁচজন করে, খুলনায় তিনজন এবং রংপুর, বরিশাল ও ময়মনসিংহে একজন করে ছিলেন। আগস্টের ২১ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১০, চট্টগ্রামে ৩, রাজশাহী, রংপুর ও বরিশালে ২ জন করে, খুলনা ও সিলেটে একজন করে নিহত হন। আর ২০২৪ সালে মোট ১৪৬ জন গণপিটুনিতে মারা গেছেন, যা গত চার বছরে সর্বোচ্চ।
আরেক মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত গণপিটুনিতে ১২১ জন নিহত হয়েছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণপ ট ন গণপ ট ন ত ও বর শ ল এল ক য় ছয় ম স বছর র অপর ধ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
ভূমিকম্পের উচ্চঝুঁকিতে দেশের ৪ অঞ্চল, ফায়ার সার্ভিসের ৯ সতর্কবার্তা
মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ভূমিকম্পের পর বাংলাদেশেও ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষত চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকা অঞ্চল উচ্চঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি দেশে ভূমিকম্প মোকাবিলায় সকল পর্যায়ে পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ ও সচেতনতা তৈরির জন্য ৯টি বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে।
এতে বলা হয়েছে, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে শুক্রবার পরপর দুটি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্প দুটি’র মাত্রা ছিল যথাক্রমে ৭ দশমিক ৭ ও ৬ দশমিক ৪। এতে দেশ দুটি বেশ ক্ষতির মুখে পড়েছে। বাংলাদেশেও একই মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষত চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকা অঞ্চল উচ্চঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ অবস্থায় ভূমিকম্প মোকাবিলার জন্য সকল পর্যায়ে পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ ও সচেতনতা তৈরির জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর নিম্নরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
(১) বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ২০২০ অনুযায়ী ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন নির্মাণ
(২) ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরোনো ভবনগুলোর সংস্কার ও শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ
(৩) সকল বহুতল ও বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার
(৪) ইউটিলিটি সার্ভিস যেমন গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের লাইনের সঠিকতা নিশ্চিত
(৫) ভূমিকম্প চলাকালীন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি পর্যায়ে বিভিন্ন করণীয় সম্পর্কে নিয়মিত মহড়া অনুশীলন ও প্রচারের ব্যবস্থা
(৬) জরুরি টেলিফোন নম্বর যেমন ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স, পুলিশ, হাসাপাতাল ও অন্যান্য জরুরি নম্বর ব্যক্তিগত পর্যায়ের পাশাপাশি সকল ভবন বা স্থাপনায় সংরক্ষণ এবং তা দৃশ্যমান স্থানে লিখে রাখা
(৭) ভলান্টিয়ার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দুর্যোগকালীন সময়ে কার্যকর ভূমিকা রাখা
(৮) জরুরি প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য সরঞ্জামাদি যেমন- টর্চলাইট, রেডিও (অতিরিক্ত ব্যাটারিসহ), বাঁশি, হ্যামার, হেলমেট বা কুশন, শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, প্রয়োজনীয় ওষুধ সামগ্রী, ফার্স্ট এইড বক্স, শিশু যত্নের সামগ্রী ইত্যাদি বাসা-বাড়িতে নির্ধারিত স্থানে সংরক্ষণ করা যাতে ভূমিকম্প পরবর্তীতে আটকা পড়লে তা ব্যবহার করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা যায় এবং
(৯) সকল পর্যায়ে তদারকি সংস্থার কার্যক্রমে সহযোগিতা করা
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসব বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভিন্ন কার্যক্রম চালু রেখেছে। যেকোনো তথ্যের জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের এই নম্বর ০১৭২২৮৫৬৮৬৭, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স হটলাইন নম্বরে (১০২) যোগাযোগ এবং ফায়ার সার্ভিসের ওয়েবসাইট www.fireservice.gov.bd থেকে তথ্য সংগ্রহের আহ্বান জানানো হয়েছে।