হামলা চালিয়ে আদালত চত্বর থেকে দুই আসামিকে তুলে নিয়ে গেল বাদীর লোকেরা
Published: 26th, February 2025 GMT
জমি সংক্রান্ত একটি মামলায় আগেই অস্থায়ী জামিনে ছিলেন নারী-পুরুষসহ ১৩ জন। স্থায়ী জামিনের জন্য মামলার সব আসামি বুধবার সকালে আদালতে হাজির হয়ে ছিলেন। আদালত তাদের স্থায়ী জামিনের আবেদন মঞ্জুরও করেন। এতেই ঘটে বিপত্তি। আগে থেকে হাতে ধারালো দা, চাপাতি, ছুরি ও লাঠি নিয়ে আদালত চত্বরে ওত পেতে থাকে মামলার বাদী। জামিন নিয়ে আদালত থেকে বের হওয়ার পরই আসামিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মামলার বাদী ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। পুলিশ, আইনজীবীদের সামনে কোপাতে ও পেটাতে থাকে। পুরো আদালতপাড়া আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে আত্মরক্ষার জন্য আসামিরা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অফিস কক্ষে গিয়ে আশ্রয় নেন। দ্বিতীয় দফায় সেখানে গিয়ে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। পরে আসামি মিলন মিয়া ও বাবুল মিয়া নামে সহোদর দুই ভাইকে অপহরণ করে নিয়ে যায় মামলার বাদী ও তার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গাজীপুর আদালত প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, জমি সংক্রান্ত ঘটনায় শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটী গ্রামের মো.
গাজীপুর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আদালতের বিচারক সেলিনা আক্তার তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এ সময় আদালতের বাইরে দেশিয় অস্ত্র নিয়ে ওত পেতে থাকে মামলার বাদী নাজমুল হক ও তার ভাড়াটে একদল সন্ত্রাসী। আসামিরা বের হওয়ার পরপরই তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কাউকে কোপানো হয়, কাউকে দেওয়া হয় বেদম পিটুনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আসামিরা আত্মরক্ষার জন্য আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে আশ্রয় নেন। সেখানে দ্বিতীয় দফায় হামলা চালানো হয়। এ সময় অফিসের তিন কর্মচারী মতিউর রহমান, নাঈম হাসান ও আইয়ূব আলীকে ছুরিকাঘাত করা হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গাজীপুর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, মিলন মিয়া ও বাবুল মিয়াকে দুপুর ১২টার দিকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অজ্ঞাত কোনো স্থানে নিয়ে তাদের ওপর চালানো হয় নির্যাতন। পরে বিকেল ৩টার দিকে আইনজীবী সমিতির ফটকের সামনে অচেতন অবস্থায় দুই ভাইকে ফেলে রেখে তারা পালিয়ে যায়। তিনি বলেন, এ ঘটনার পর পুরো আদালত পাড়ায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করে।
মামলার প্রধান আসামি এনামুল হক বলেন, ‘জামিন পাওয়ার পর আমরা আদালত থেকে বের হয়ে বাদী নাজমুল ও তার লোকজনকে দেখতে পাই। তাদের প্রত্যেকের হাতেই ছিল দেশিয় অস্ত্র। হামলায় আমরা ১৩ জনই আহত হয়েছি। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রত্যেকেই চিকিৎসাধীন রয়েছি। আইনজীবী সমিতির অফিসের কর্মচারী আইয়ুব আলীর মাথায় কুপিয়েছে সন্ত্রাসীরা। তার মাথায় সাতটি সেলাই দিতে হয়েছে।’
এ ঘটনার ২৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যায় পুলিশের দুজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বলেন, ঘটনার পর থেকেই পুলিশ ওই সন্ত্রাসীদের ধরতে মাঠে কাজ করছে। তাদেরকে গ্রেপ্তারে পুলিশকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদেরকে ধরতে না পারলে কেউ নিরাপদ নয়।
মহানগরের সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, এ ঘটনার কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলেই মামলা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অপহরণ দ র ওপর আইনজ ব র জন য এ ঘটন ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিবেশী যুবক মাস্টারদা সূর্য সেন নিয়ে মা-বাবার বলা সেই সব গল্প
১৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখ মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ৯৫তম বার্ষিকী। দিনটি সামনে রেখে জাতির কাছে আমি প্রশ্ন রাখছি: আমরা কি মাস্টারদা সূর্য সেনকে যথাযোগ্য সম্মান দিতে পেরেছি?
১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রামে মাস্টারদার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম শহরের নিয়ন্ত্রণ বিপ্লবী বাহিনীর কাছে চলে যাওয়ার পর চার দিন চট্টগ্রাম শহর স্বাধীন ছিল। ১৯৩০ সালের ২২ এপ্রিল সংঘটিত ঐতিহাসিক জালালাবাদ যুদ্ধের পর ব্রিটিশ শাসকেরা আবার চট্টগ্রাম শহরের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছিল।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ৫৪ বছর পরও ওই জালালাবাদ পাহাড়ে সেই ঐতিহাসিক যুদ্ধের স্মৃতি-স্মারক স্থাপিত হয়েছে কি? ওই যুদ্ধে কারা শহীদ হয়েছিলেন, কারা আহত হয়েছিলেন, তাঁদের নাম আমরা কজনে জানি? যতই ক্ষণস্থায়ী হোক, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে বাংলাদেশের কোনো একটি শহরের প্রথম স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাসকে কেন আমরা বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যেতে দিলাম? স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৪ বছরের শাসকদের এহেন অবহেলা কি অক্ষম্য অপরাধ নয়?
আমার গ্রামের বাড়ি নোয়াপাড়ায়, যেটা মাস্টারদা সূর্য সেনেরও গ্রাম। আমাদের গ্রামের ভিটেবাড়ি থেকে মাস্টারদা সূর্য সেনদের সেনবাড়ির দূরত্ব ৫০০ গজের কম। মাঝখানে শুধুই ধানখেত, যার স্থানীয় নাম ‘চাঁদরা বিল’।
আমার কৈশোর বয়স থেকেই মা–বাবার কাছ থেকে আমি মাস্টারদা সূর্য সেনের কাহিনি শুনে বড় হয়েছি। তাঁরা দুজনই ছিলেন মাস্টারদার সমসাময়িক প্রতিবেশী। আজ তার কিয়দংশ আমি পাঠকদের সঙ্গে শেয়ার করছি। আমার বাবা মাস্টারদার চেয়ে কয়েক বছরের ছোট, কিন্তু ১৯২৫ সালে আইএ পাস করে তিনি রেলওয়ে বিভাগে চাকরি গ্রহণের সুবাদে চট্টগ্রাম শহর থেকে চাক্তাই হয়ে সাম্পানে গ্রামে যাওয়ার কারণে বেশ কয়েকবার মাস্টারদার সঙ্গে একই সাম্পানে নোয়াপাড়া চৌধুরী ঘাট পর্যন্ত তাঁর যাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে।
মাস্টারদা তাঁকে চিনতেন পার্শ্ববর্তী মুসলিম পাড়ার একজন শিক্ষিত যুবক হিসেবে, বাবাও তাঁকে চিনতেন শহরের একটি স্কুলের একজন শিক্ষক হিসেবে। কিন্তু ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিলের আগে বাবার কোনো ধারণাই ছিল না মাস্টারদার বিপ্লবী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে। ওই ঐতিহাসিক ঘটনার পরও তাঁরা বেশ কয়েকবার একই সাম্পানে নোয়াপাড়া চৌধুরী ঘাট পর্যন্ত যাতায়াত করেছেন।
এ প্রসঙ্গে একটি কাহিনি আমি পাঠকদের সঙ্গে শেয়ার করছি। মাস্টারদার বাড়ির সবচেয়ে কাছের মুসলিম বাড়ির একজন সাম্পান-মাঝি ছিলেন আহমদ আলী, তখন তিনি ছিলেন তরতাজা যুবক। মাস্টারদা তাঁর সাম্পানে করে দিনে-রাতে কর্ণফুলী পাড়ি দিয়ে তাঁর বিপ্লবী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। আহমদ আলী মাঝির বাড়ি ছিল মাস্টারদার বাড়ি এবং নিকটবর্তী কর্ণফুলী নদীর ঘাট বাইন্যাঘাটার সবচেয়ে কাছের পাড়ায়, আহমদ আলী তাঁর সাম্পানও নোঙর করতেন বাইন্যাঘাটায়।
১৯৩০ সালের পর মাস্টারদাকে গ্রেপ্তার করার জন্য ব্রিটিশ শাসকদের জোর তৎপরতা শুরু হয়, কিন্তু তিন বছরের বেশি সময় তা সফল হয়নি। কিংবদন্তি রয়েছে যে ব্রিটিশদের কাছে মাস্টারদার কোনো ছবি ছিল না। উপরন্তু মাস্টারদা নাকি খুব ভালো ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারতেন। তাঁর দাড়ি-গোঁফ না থাকায় তিনি নাকি অনায়াসে নারীর ছদ্মবেশও ধারণ করতে পারতেন।
বাবার কাছ থেকে শোনা কাহিনিটি খুবই চাঞ্চল্যকর। একদিন বিকেলে মাস্টারদা এবং বাবা আহমদ আলীর সাম্পানে চড়েছেন নোয়াপাড়া আসার জন্য, কিন্তু সাম্পান ছাড়ার পূর্বক্ষণে সাম্পানে চড়ে বসে পাঁচ-ছয়জন পুলিশ, তারাও নোয়াপাড়া যাবে মাস্টারদাকে ধরার জন্য। তখন মাস্টারদাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষিত হয়েছিল। (ওই পুরস্কার যে কত বড় ছিল, সেটা বোঝা যাবে ওই সময় একজন মাঝি সারা দিনে এক টাকাও আয় করতে পারতেন না)।
মার বয়স তখন নয়-দশ বছর। আমার নানাবাড়ি আমাদের একই পাড়ায়। একদিন তাঁরা বাড়ির উঠানে খেলা করছিলেন। রব উঠল, পুলিশ আসছে সবাই পালাও। কিন্তু পালানোর আগে মা দেখলেন মাস্টারদা দৌড়ে এসে আশ্রয় নিয়েছেন মার জেঠার দোতলা মাটির দেউড়ির দোতলায়। ভয়ে কুঁকড়ে গিয়ে সবাই দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরে ঠাঁই নিলেন। পুলিশ চলে যাওয়ার প্রায় আধা ঘণ্টা পর সবাই বাইরে বেরিয়ে মাস্টারদাকে খুঁজতে শুরু করলেন, কিন্তু কোনো এক ফাঁকে তিনিও দোতলা থেকে নেমে চলে গেছেন।সাম্পানে কেবল দুজন ব্যক্তি মাস্টারদাকে চিনতেন—বাবা এবং আহমদ আলী মাঝি। সাম্পানে মাস্টারদা এবং পুলিশরা তাস খেলায় মেতে উঠলেন। সাম্পান নোয়াপাড়া চৌধুরী ঘাটে আসার পর বাবা এবং মাস্টারদা সাম্পান থেকে নেমে পড়লেন, আর পুলিশরা সাম্পানে চড়ে চলে গেলেন বাইন্যাঘাটার পথে। বাবা এই ঘটনা বারবার বলার কারণ ছিল, আহমদ আলী মাঝি চাইলে পুলিশের কাছে মাস্টারদাকে ধরিয়ে দিয়ে ওই ১০ হাজার টাকা পুরস্কারটি দাবি করতে পারতেন। কিন্তু লোভের কাছে পরাভূত হয়ে নোয়াপাড়ার কেউ মাস্টারদাকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়নি। তাঁকে ধরিয়ে দিয়েছিল পটিয়ার ধলঘাটের বিশ্বাসঘাতক নেত্র সেন। অবশ্য সে-ও পুরস্কার ভোগ করতে পারেনি, ওই অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল।
আরেকটি কাহিনি আমার মায়ের কাছ থেকে শোনা। মার বয়স তখন নয়-দশ বছর। আমার নানাবাড়ি আমাদের একই পাড়ায়। একদিন তাঁরা বাড়ির উঠানে খেলা করছিলেন। রব উঠল, পুলিশ আসছে সবাই পালাও। কিন্তু পালানোর আগে মা দেখলেন মাস্টারদা দৌড়ে এসে আশ্রয় নিয়েছেন মার জেঠার দোতলা মাটির দেউড়ির দোতলায়। ভয়ে কুঁকড়ে গিয়ে সবাই দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরে ঠাঁই নিলেন। পুলিশ চলে যাওয়ার প্রায় আধা ঘণ্টা পর সবাই বাইরে বেরিয়ে মাস্টারদাকে খুঁজতে শুরু করলেন, কিন্তু কোনো এক ফাঁকে তিনিও দোতলা থেকে নেমে চলে গেছেন।
আরও পড়ুনআলোর পথযাত্রী ১২ মার্চ ২০২৫এ ঘটনাটিও প্রমাণ করে, মাস্টারদাকে গ্রেপ্তার করার জন্য দিনে-রাতে পুলিশ বারবার গ্রামে হানা দিলেও হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে তাঁর গ্রামবাসীরা তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। উল্লিখিত আহমদ আলী মাঝি বৃদ্ধ বয়সে কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাট-নোয়াপাড়া পথে আমাদের পরিবারেরও যাতায়াতের বিশ্বস্ত সারথিতে পরিণত হয়েছিলেন। ওই সময়ে যদি বাবার কাছ থেকে মাস্টারদার কাহিনি শুনতাম, তাহলে হয়তো তাঁর জীবদ্দশায় তাঁকে একবার হলেও শ্রদ্ধা জানাতাম। ওই সুযোগ আমি পেয়েছিলাম আশির দশকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর।
১৯৮৪ সালে আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক থাকার সময় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক হয়ে এসেছিলেন ওমর ফারুক নামের একজন আমলা, পরে তিনি স্বরাষ্ট্রসচিবও হয়েছিলেন। তিনি শত্রু সম্পত্তি আইন প্রয়োগের মাধ্যমে মাস্টারদা সূর্য সেনের ভিটে জনৈক দুবাইওয়ালার কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু তাঁর ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল চট্টগ্রামের সুধী সমাজ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও আন্দোলনের মূল শক্তি হিসেবে মাঠে নেমেছিল। সভা-সমাবেশ-মিছিলে চট্টগ্রাম নগরীর রাজপথ প্রকম্পিত করেছিলাম আমরা। মাস্টারদার ভিটিতে অনুষ্ঠিত এক সভায় আমি প্রয়াত আহমদ আলী মাঝির কাহিনিটি বর্ণনা করে গ্রামবাসীকে তাঁদের দায়িত্ব সম্পর্কে সোচ্চার করেছিলাম।
যাক, প্রবল আন্দোলনের ফলে কিছুদিনের মধ্যেই স্বৈরাচার এরশাদ সরকার ওই সিদ্ধান্ত বাতিল করেছিল। এরপর ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর মন্ত্রী হয়েছিলেন আবদুল্লাহ আল নোমান। তাঁর প্রচেষ্টায় ওই আমলেই মাস্টারদা সূর্য সেনের ভিটেবাড়িতে একটি সরকারি ‘মা ও শিশু সদন’ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল, যা এখনো চালু রয়েছে।
২০১৪ সালে ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি এসেছিলেন মাস্টারদার ভিটেবাড়িতে। যাতায়াতের ইটের রাস্তা দেখে তিনি চরম অসন্তোষ জ্ঞাপন করেছিলেন। তাঁর অভিযোগ পেয়ে হাসিনা সরকার তড়িঘড়ি করে সড়কটি পাকা করার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল, যার সুবিধা আমরা এখনো ভোগ করে চলেছি। প্রণব মুখার্জি মাস্টারদার বাড়ির ভিটায় একটি বকুল ফুলের চারা রোপণ করেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে জানাতে চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টারদা সূর্য সেন হল নামকরণের বিষয়টি। ওই হলের নাম ছিল জিন্নাহ হল, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ওই হলের আবাসিক ছাত্র ছিলাম। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যখন স্বাধীন বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়েছিল, তখন প্রথম দিনেই ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে হলের নাম পাল্টে ‘মাস্টারদা সূর্য সেন হল’ করে নামফলক টাঙিয়ে দিই। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সার্জেন্ট জহুরুল হক হল থেকে মিছিল এসে ওই নামফলক ভেঙে দিয়ে যায়। তাদের দাবি, পাকিস্তানের জাতির পিতা জিন্নাহর নামের হলের নাম বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর নামেই হতে হবে।
ওরা চলে যাওয়ার পর আমরা আবার মাস্টারদা সূর্য সেন হল নামটি লিখে আরেকটি নামফলক তৈরি করে টাঙিয়ে দিলাম এবং সেটি দিনরাত পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করলাম। পরদিন সকালেই বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্ত এসে গেল, ‘মাস্টারদা সূর্য সেন হলই’ হবে হলের নাম। এভাবেই বাংলাদেশে প্রথম কোনো স্থাপনার নাম মাস্টারদার নামে হয়েছিল।
মইনুল ইসলাম অর্থনীতিবিদ এবং অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়