মামলায় জামিন হওয়ার পর আদালত প্রাঙ্গণে মারধর করে আইনজীবীদের সামনে থেকে জামিন পাওয়া দুই ভাইকে ধরে নিয়ে গেছেন বাদী ও তাঁর লোকজন। আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গাজীপুর জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩-এর সামনে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, দুই ভাইকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কিছু সময় পর ছেড়ে দিয়ে হামলাকারীরা পালিয়ে গেছেন।

জামিন পাওয়া ওই দুই ব্যক্তি হলেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি এলাকার আবদুল মালেকের ছেলে বাবুল মিয়া ও তাঁর ছোট ভাই মিলন মিয়া (৩৩)।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আইনজীবীদের সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি এলাকার শহীদুল্লাহর ছেলে নাজমুল হক জমিসংক্রান্ত বিরোধের একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার বেশ কয়েকজন আসামি জামিনের জন্য আদালতে আসেন। জামিন পাওয়ার পর তাঁরা গাজীপুর জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩-এর সামনে অবস্থান করছিলেন। এ সময় মামলার বাদীসহ বেশ কয়েকজন সেখানে উপস্থিত হন। একপর্যায়ে বাদী ও তাঁর লোকজন মামলায় জামিন পাওয়া দুই আসামিসহ অন্যদের মারধর শুরু করেন। এ সময় আইনজীবীরা বাধা দিলে তাঁদের ওপরও চড়াও হন তাঁরা। পরে আরও বেশ কয়েকজন ব্যক্তি বাবুল মিয়া ও মিলন মিয়াকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যান। ঘটনাটি উপস্থিত লোকজন ভিডিও করেন। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ওই মামলার জামিন পাওয়া অপর ব্যক্তি এনামুল হক বলেন, ‘আদালতে আত্মসমর্পণের পর জামিন পাওয়ার পরপরই তাঁর নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালান। আমরা আদালত থেকে বের হওয়ার সময় বাদী ও তাঁর সঙ্গে থাকা কয়েকজন দা, চাকু, লাঠিসহ দেশি অস্ত্র নিয়ে আমাদের পথ রোধ করেন। আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদককে জানালে তিনি আমাদের আনতে দুই কর্মচারী পাঠান। কিন্তু তাঁদের সামনেই আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়।’

গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ওই মামলায় ১৩ জন অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। আজ বাদী তাঁদের জামিন বাতিলের আবেদন করেন। তবে বিজ্ঞ আদালত তাঁদের জামিন বর্ধিত করেন। এতে মামলার বাদী ক্ষুব্ধ হয়ে কিছু সশস্ত্র লোকজন নিয়ে হামলা করেন। পরে হামলাকারীরা জামিন পাওয়া দুই আসামিকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যান। এটি আদালতের জন্য নিরাপত্তাহীনতা। তিনি আরও বলেন, পরে অবশ্য তাঁদের দুই ভাইকে রাজবাড়ী মাঠের পাশে ফেলে রেখে পালিয়ে গেছেন হামলাকারীরা। খবর পেয়ে সেখান থেকে তাঁদের উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

জামিন পাওয়া বাবুল মিয়ার স্ত্রী দোলনা আক্তার বলেন, ‘জামিন হওয়ার পর উকিল আমাদের দাঁড়াতে বলেন। এমন সময় মামলার বাদী নাজমুল হকসহ ১০ থেকে ১২ জন লোক আসেন। এসেই আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে আমরা উকিলের রুমে গিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করি। সেখানে গিয়ে আমার স্বামী ও দেবরকে তুলে নিয়ে গেছেন। এখন তাঁরা কোথায় আছেন, জানি না।’

গাজীপুর মহানগর পুলিশের সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, আসামিদের জামিন হওয়ায় বাদীপক্ষের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে দুই ভাইকে মারধর করে ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য তাঁদের পাওয়া গেছে। যাঁদের ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা এ বিষয়ে একটি অভিযোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম খান সাংবাদিকদের বলেন, আদালতে যাঁরা হামলা চালিয়েছেন, তাঁরা কোনো সাধারণ লোক নন, তাঁরা সন্ত্রাসী। আদালতে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা উদ্বেগের। এটি রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। দুপুরের পর থেকে পুলিশ এটি নিয়ে কাজ করছে। যাঁরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁদের ছাড় দেওয়া হবে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ল কজন আইনজ ব আম দ র র স মন ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

পটুয়াখালীতে কলেজছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলার দুই আসামি তিন দিনের রিমান্ডে

পটুয়াখালীর দুমকীতে জুলাই আন্দোলনে শহীদ বাবার কবর জিয়ারত করে ফেরার পথে কলেজশিক্ষার্থীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলার দুই আসামিকে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শুনানি শেষে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিলুফার শীরিন এ আদেশ দেন।

এর আগে ২২ মার্চ গ্রেপ্তার দুই আসামির বিরুদ্ধে আদালতে তিন দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দুমকী থানার উপপরিদর্শক (তদন্ত) মো. রফিকুল ইসলাম। আজ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মজিবুর রহমান এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি মো. রুহুল আমিন সিকদারসহ আটজন আইনজীবী রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন। অন্যদিকে আসামিদের জামিন চেয়ে শুনানি করেন আইনজীবী শামীম হোসেন।

শুনানি শেষে আদালত দুই আসামির তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি মো. রুহুল আমিন সিকদার রিমান্ডের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

আদালত ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। ১০ দিন পর ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাঁকে দুমকী উপজেলার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় বাবার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়িতে ফেরার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন তাঁর কলেজশিক্ষার্থী মেয়ে। ধর্ষণের সময় এজাহারভুক্ত আসামিরা তাঁর নগ্ন ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলেন। এরপর ভুক্তভোগী তাঁর মা ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ২০ মার্চ দুপুরে থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। সন্ধ্যায় অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু হয়।

মামলার এজাহারে উপজেলার একটি ইউনিয়নের ১৭ ও ১৯ বছর বয়সী দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়। যদিও পুলিশ বলছে, দুজনই কিশোর। মামলা হওয়ার দিন রাতে এজাহারভুক্ত ১৭ বছর বয়সী কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্য আসামিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়। পরে ২১ মার্চ অন্য আসামিকে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁদের যশোর শিশু সংশোধনাগারে পাঠানো হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইসিটির প্রসিকিউটর সিলভিয়ার নিয়োগ বাতিল
  • যুক্তরাষ্ট্রে ৩০০টির বেশি ভিসা বাতিল, অধিকাংশই ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের: মার্কো রুবিও
  • সমালোচনার মুখে আইসিটির প্রসিকিউটর সিলভিয়ার নিয়োগ বাতিল
  • প্রতারণার মামলায় ইথার ফারিয়েলের জামিন আবেদন নাকচ
  • আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও চার নতুন প্রসিকিউটর
  • পটুয়াখালীতে কলেজছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলার দুই আসামি তিন দিনের রিমান্ডে
  • ফিলিস্তিনিদের সমর্থন: যুক্তরাষ্ট্রে তুর্কি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার, ভিসা বাতিল
  • ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলায় নিন্দা নাগরিক সমাজের
  • স্বাধীনতা দিবসে বিজয়স্তম্ভে আইনজীবী সমিতির শ্রদ্ধা নিবেদন 
  • পাঁচ বালুমহাল ইজারা না দিতে ১৩ সরকারি কর্মকর্তাকে আইনি নোটিশ