অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছে জুলাই আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের একটি অংশ। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে বসে পড়ে তারা।

জুলাই আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের এ অংশের মূলত তিনটি দাবি। এগুলো হলো বৈষম্য নিরসনে আহত ব্যক্তিদের ক্যাটাগরি তিনটির পরিবর্তে দুটি করতে হবে; শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের সুরক্ষার জন্য একটি আইন করা এবং জুলাই আন্দোলনে প্রত্যন্ত অঞ্চলের যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের সেবা নিশ্চিত করতে হটলাইন নম্বর চালু করা।

আন্দোলনকারীদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পর্যাপ্ত সহায়তার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে। স্লোগান ছিল ‘ক্ষমতা না জনতা, জনতা জনতা’, ‘দাবি মোদের একটা, ক্যাটাগরি দুইটা’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’।

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলেও ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। এর আগে বিভিন্ন সময় আন্দোলনে আহত ব্যক্তিরা বিচ্ছিন্নভাবে স্বীকৃতি ও পুনর্বাসনের দাবিতে রাজধানীর শ্যামলী, শাহবাগ, উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অবরোধ করেছিলেন।

আন্দোলনকারীরা জানান, আহত ব্যক্তিদের তিনটি ক্যাটাগরির মধ্যে তাঁদের ‘সি’ ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। তাঁরা বলছেন, ‘এই ক্যাটাগরির বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত স্পষ্ট নয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই ক্যাটাগরিতে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের চাকরি দেওয়া হবে এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। যদি চাকরিই দেওয়া হয়, তাহলে বয়স্ক যেই ব্যক্তিরা আছেন, তাঁদের কীভাবে চাকরি দেওয়া হবে? এ জন্য আমরা চাই, “এ” ও “বি”—এই দুই ক্যাটাগরি রাখতে হবে।’

এদিকে আহত ব্যক্তিদের একটি অংশের এ অবস্থান ঘিরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো.

আলমগীর কবির প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের একটি অংশ কিছু দাবি নিয়ে এসেছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী তাদের দাবিগুলো শুনেছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অবস থ ন দ র একট

এছাড়াও পড়ুন:

তিন শর্তে বাকি জিম্মিদের মুক্তি দিতে চায় হামাস

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরায়েলের প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে হামাস। তারা বরং পাল্টা একটি চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে। ওই প্রস্তাব অনুযায়ী, ইসরায়েল যদি গাজায় না যুদ্ধ করে ফিলিস্তিনি কারাবন্দীদের মুক্তি দেয়, তাহলে গাজায় বন্দী জিম্মিদের ফেরত দেবে তারা। হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।

ওই কর্মকর্তার নাম খলিল আল–হায়া। তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাসের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। টেলিভিশনের সম্প্রচার করা বক্তব্যে আল–হায়া বলেন, ইসরায়েল যে অন্তর্বর্তী যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে, তার সঙ্গে একমত নয় হামাস। কারণ, গত মাসে গাজায় নতুন করে যে ভয়াবহ হামলা শুরু হয়েছে, এই চুক্তির মাধ্যমে তা থামানোর প্রক্রিয়া আরও বিলম্বিত করবে ইসরায়েল।

নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তাঁর সরকার আংশিক চুক্তিকে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন হামাসের এই নেতা। তিনি বলেন, ‘ওই চুক্তির ভিত্তিই হলো (ফিলিস্তিনিদের) ধ্বংস ও অনাহারে রাখার মাধ্যমে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া। এমনকি সব জিম্মির জীবনের বিনিময়ে হলেও তারা তা করতে চায়।’

ইসরায়েল সরকারের হিসাবে, গাজায় এখনো ৫৯ জন জিম্মি হামাসের হাতে বন্দী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র ২৪ জন জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। খলিল আল-হায়া বলেন, যুদ্ধ বন্ধ, ফিলিস্তিনি কারাবন্দীদের মুক্তি এবং গাজা পুনর্গঠন—এই তিন শর্ত বাস্তবায়নের বিনিময়ে হামাসের হাতে বন্দী থাকা বাকি সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে ‘বড় পরিসরে আলোচনার’ জন্য প্রস্তুত রয়েছেন তাঁরা।

২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। পরে ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এই সময়ে মধ্যে ৩৮ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। উপত্যকাটিতে আবার যুদ্ধবিরতির জন্য মিসরের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আলোচনা চলছে। তবে সেই আলোচনায় এখন পর্যন্ত সামান্যই অগ্রগতি দেখা গেছে।

এমন পরিস্থিতিতে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য হামাসের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জেমস হেউইট। তিনি বলেছেন, ‘হামাসের বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, তারা শান্তির প্রতি আগ্রহী নয়, বরং চিরস্থায়ী সহিংসতা চাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যে শর্তগুলো দিয়েছে, তাতে কোনো বদল আসেনি—জিম্মিদের মুক্তি দিন, না হয় নরকের মুখে পড়ুন।’

এদিকে যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে আলোচনার মধ্যেও গাজায় চরম নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল বৃহস্পতিবার গাজায় প্রায় ৪০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে তারা। এদিন উপত্যকাটিতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৩২ জন। স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ১৮ মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলের হামলায় গাজায় অন্তত ৫১ হাজার ৬৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৫০৫ জন। হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

সম্পর্কিত নিবন্ধ