মুরগির দাম বাড়িয়ে প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে ৯ কোটি টাকা
Published: 26th, February 2025 GMT
আসন্ন রোজা ও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে আবারো করপোরেট কোম্পানির সিন্ডিকেট চাঙ্গা হচ্ছে। অযৌক্তিকভাবে বাড়ানো হচ্ছে মুরগির বাচ্চা ও ফিডের দাম। এ সিন্ডিকেট দৈনিক গ্রাহকের পকেট থেকে মুনাফার অতিরিক্ত আরো ৯ কোটি হাতিয়ে নিচ্ছে। যার প্রভাব শিগগির পড়তে পারে খুচরা বাজারেও।
প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এসব অভিযোগ করা হয়েছে। বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে এ বিবৃতি পাঠান সংগঠনটির সভাপতি মো.
বিবৃতিতে বলা হয়, করপোরেট সিন্ডিকেটের কবলে ফের দেশের পোল্ট্রি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের বিভিন্ন অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের কারণে প্রান্তিক খামারিরা ধ্বংসের পথে। লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সংকটের মধ্যে পড়েছে। এ সিন্ডিকেটের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে পোল্ট্রি বাজারে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের ব্যবসা ও মুনাফা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং তাদের অস্তিত্ব সংকটে ফেলছে।
মো. সুমন হাওলাদার বলেন, ব্রিডার কোম্পানি ও ফিড ইন্ডাস্ট্রি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। এসব করপোরেট সিন্ডিকেটের প্রধান হাতিয়ার ব্রিডার অ্যাসোসিয়েশন ও ফ্রিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন। ব্রিডার কোম্পানিগুলো কৃত্রিমভাবে মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে ফেলছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার জন্য ৪৯ টাকা নির্ধারণ করলেও কোম্পানিগুলো তা ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করছে। লেয়ার মুরগির বাচ্চা ৫৭ টাকা নির্ধারণ হলেও তা ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ কৌশলের মাধ্যমে প্রতিদিন তারা মুরগির বাচ্চা বিক্রি করে প্রায় ৯ কোটি টাকা আয় করছে।
আসন্ন রোজা ও ঈদে এর প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামনে ঈদ ও অন্য বড় উৎসবগুলোর দিকে লক্ষ্য রেখে এ সিন্ডিকেট মুরগির বাচ্চার দাম আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। পোল্ট্রি খামারিদের জন্য এটি একটি বড় চাপ। কারণ, বড় উৎসবের সময় যখন খামারিরা সবচেয়ে বেশি লাভের আশা করেন, তখন এ সিন্ডিকেট নিজেদের মুনাফা বাড়ানোর জন্য দাম বাড়িয়ে দিয়ে খামারিদের পকেটে হাত দেয়। এ কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে এবং খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
কারসাজির সঙ্গে ফিড ইন্ডাস্ট্রিও জড়িত এমন অভিযোগ করে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, ফিড ইন্ডাস্ট্রির সিন্ডিকেটও একইভাবে খামারিদের ওপর চাপ তৈরি করছে। বিশ্ববাজারে ফিডের দাম কমলেও বাংলাদেশে কমছে না। ২০২২ সালে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অজুহাতে ফিডের দাম অতিরিক্ত বাড়ানো হয়েছিল, যা আর কমানো হয়নি। ২০২২ সালের শেষের দিকে প্রতি বস্তা ফিডের দাম ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩ হাজার ৬০০ টাকা হয়ে যায়। যা ছিল অযৌক্তিক। ডিম বা মুরগি উৎপাদনে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ খরচই ফিডে চলে যায়। তাছাড়া ফিড ও মুরগির বাচ্চার গুণগত মানও নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে এবং খামারিদের বাধ্য করা হচ্ছে কোম্পানির নির্দিষ্ট ফিড কিনতে।
সুমন হাওলাদার আরো অভিযোগ করেন, সিন্ডিকেটের আরও একটি ভয়ঙ্কর কৌশল হলো কন্ট্রাক্ট ফার্মিং। এর মাধ্যমে নীল চাষের মতো খামারির স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। বড় কোম্পানিগুলো এখন ক্ষুদ্র খামারিদের সঙ্গে চুক্তি করে উৎপাদন করিয়ে নিচ্ছে। এ চুক্তির শর্তগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয় যে খামারিরা শুধু উৎপাদন করলেও প্রকৃত মুনাফা চলে যাচ্ছে বড় কোম্পানির পকেটে। এছাড়া সরকারি মিটিংগুলোতে প্রান্তিক খামারিদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না। সরকারি সিদ্ধান্তগুলো সাধারণত বড় করপোরেট কোম্পানির প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নেওয়া হয়। এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। পোল্ট্রি শিল্পে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হলে ব্রিডার অ্যাসোসিয়েশন এবং ফিড ইন্ডাস্ট্রির কার্যক্রম কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
একই সঙ্গে সঠিক বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা, খামারিদের জন্য খাদ্য ও বাচ্চা সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং কন্ট্রাক্ট ফার্মিং পদ্ধতি বন্ধ করার বিষয়েও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানও জানান সুমন হাওলাদার।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ ড ইন ড স ট র করপ র ট র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
আ.লীগ নেতাদের চাঁদায় এনসিপির ব্যানারে ইফতার
খুলনার কয়রায় আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা চাঁদায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ব্যানারে ইফতার মাহফিল আয়োজনের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী সমাজ ও সচেতন মহলে চলছে সমালোচনা।
কয়রা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী ও তাঁর অনুসারী আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছেন একই কমিটির সদস্য সচিব এস কে গালিবসহ একাধিক নেতাকর্মী।
শুক্রবার কয়রা উপজেলা পরিষদের মাঠে বিশাল প্যান্ডেল করে কয়রা উপজেলা নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ব্যানারে ইফতার মাহফিল করা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী। ওই ইফতার মাহফিলে স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব গালিব বলেন, কয়রায় এখন পর্যন্ত এনসিপির কমিটি হয়নি। এ জন্য গ্রহণযোগ্য ও ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদের সংগঠিত করার কাজ চলছে। দলের কমিটিই হয়নি অথচ তার ব্যানারে ইফতার আয়োজন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এতে উপস্থিত থাকার কথা উল্লেখ করে ছাপানো দাওয়াতপত্র দিয়ে চাঁদা তুলেছেন গোলাম রব্বানী ও আব্দুর রউফ। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী এবং সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে কয়রা উপজেলার আমাদী ইউপি চেয়ারম্যান, যুবলীগ নেতা জিয়াউর রহমান জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক রব্বানী ও তাঁর অনুসারী আব্দুর রউফ এনসিপির ইফতার আয়োজনের কথা বলে তাঁর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলার মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, গোলাম রব্বানী, রউফসহ কয়েকজন এসে ইফতার অনুষ্ঠানের জন্য ৫০ হাজার টাকা দাবি করলে তিনি টাকা দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামীপন্থি আরেক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ইফতার মাহফিলে চাঁদা না দিলে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে তাঁকে। একপর্যায়ে বাধ্য হয়েই তিনি চাঁদা দিয়েছেন।
ইফতার মাহফিলের দাওয়াতপত্রে আয়োজকদের কারও নাম না থাকলেও যোগাযোগের জন্য দুটি ফোন নাম্বার দেওয়া আছে; যার একটিতে কল করলে কথা হয় গোলাম রব্বানীর সঙ্গে। অপর নাম্বারটি আব্দুর রউফের। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী বলেন, হিতাকাঙ্ক্ষী ও নিজেদের অর্থে ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। তাদের ভালো কাজ দেখে নিজ দলের অনেকেরই হিংসা হচ্ছে। তারাই এসব মিথ্যাচার করছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়রা উপজেলার মুখ্য সংগঠক ইমদাদুল হক বলেন, ৫ আগস্টের আগে ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে থেকেছেন তারা। কৌশলে গোলাম রব্বানী আহ্বায়কের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। ইফতার আয়োজনে খরচের উৎস সম্পর্ক জানতে চাইলে সে নিজ মুখে চাঁদা আদায়ের কথা স্বীকার করেছেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) খুলনার সংগঠক হামীম আহম্মেদ রাহাত বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির লোকজনই এনসিপির কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত এনসিপির খুলনা জেলা কমিটি গঠন হয়নি, উপজেলা কমিটির তো প্রশ্নই আসে না। কয়রায় এনসিপির সাইনবোর্ড ও নাম ভাঙিয়ে আওয়ামীপন্থিদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।