রাজশাহীর বারিন্দ মেডিকেল কলেজে সাবেক এক কেন্দ্রীয় সমন্বয়কসহ চার ছাত্রনেতাকে অবরুদ্ধ করার কারণ জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। 

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মেডিকেল কলেজে সংবাদ সম্মেলন করে তারা জানিয়েছেন, অন্য কোনো বিষয় তাদের জানা নেই। শুধু শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করার কারণেই ওই চারজনকে অবরুদ্ধ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা।

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন বারিন্দ মেডিকেল কলেজের বারিন্দ ডক্টর সেবা’র সভাপতি ডা.

সাদিক। তার সঙ্গে- সাধারণ সম্পাদক আতিক শাহরিয়ার শামস, সহ-সাধারণ সম্পাদক রবিন হকসহ বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

ডা. সাদিক বলেন, ‘‘গতকাল কিছু ব্যক্তি আমাদের স্যারদের কাছে এসেছিলেন। তাদের সাথে হয়ত একটু অসৌজন্যমূলক কথাবার্তা হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসে। কারা এসেছিল, এটা তারা দেখেননি। যে কোনো মানুষ এসে যদি আমাদের শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে, তাহলে শিক্ষার্থীদের আচরণ তাদের সাথে এ রকমই হওয়া উচিত।’’

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এই প্রতিষ্ঠানটিকে এখন রাজনৈতিক ট্যাগ লাগানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু আমাদের এখানে কোনো ধরনের রাজনীতি হয় না। রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো জনবলও নিয়োগ হয় না। সব নিয়োগ হয় মেধার ভিত্তিতে। কলেজ কর্তৃপক্ষের কেউ কোনোদিন আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো ধরনের রাজনৈতিক আলাপ করেননি।’’

ডা. সাদিক দাবি করেন, জুলাই আন্দোলনের সময় ডক্টর সেবা সংগঠনের ব্যানারে এই প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে আহতদের সেবা দেওয়া হয়েছে। এটা এখনও চলমান। প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারি নিয়ম মেনে মেধাবীদের বিনামূল্যে পড়ানো হয়। সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ও অলাভজনক এই প্রতিষ্ঠান।

এর আগে মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জি কে এম মেশকাত চৌধুরী মিশু, সংগঠনের জেলা কমিটির মূখ্য সংগঠক সোহাগ সরদার, যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল বারী ও ছাত্রনেতা আল-সাকিব প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের উদ্ধার করে। 

সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, তারা প্রতিষ্ঠানটিতে চাঁদাবাজি করতে গিয়েছিলেন। ছাত্রনেতাদের দাবি, প্রতিষ্ঠানটিতে কিছু তথ্য নিতে গেলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ‘মব’ সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন।

বারিন্দ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মালিক আওয়ামী সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। আত্মগোপনের আগে তিনি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তার বাবা মো. শামসুদ্দিন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বর্তমানে তিনি চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

ঢাকা/কেয়া/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ড ক ল কল জ র জন ত ক অবর দ ধ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

গাইবান্ধায় সাংবাদিককে দাপট দেখালেন শিক্ষিকা

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের সাহাবাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার অশালীন আচরণের শিকার হয়েছেন স্থানীয় একজন সাংবাদিক।

বুধবার ((২৬ মার্চ) মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়টিতে গিয়ে এক ফাঁকে প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা আক্তার মিলির কাছে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চান সাংবাদিকরা। তখন মেজাজ হারান; সাংবাদিকদের ‘তুই, তোকারি’ করে লাঞ্চিত করার হুমকি দিতে থাকেন তিনি।

এই ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তাতে দেখা যায় শিক্ষিকা মিলির মুখোমুখি ছিলেন সাংবাদিক মামুনুর রশীদ। এক পর্যায়ে মামুনুর রশীদকে হুমকি দিতে দেখা যায়; তাকে জুতা পেটা করার হুমকি দেওয়া হয়।

রাইজিংবিডি ডটকমের হাতে আসা ভিডিওতে অন্য সাংবাদিকদের দেখা যায়নি। তবে শিক্ষিকা মিলি শুধু মামুনুর রশীদের দিকেই নন, তাদের কাছাকাছি আরো কয়েকজনের উদ্দেশে অশালীন বাক্য ছুড়ছিলেন।

মামুনুর রশীদের দাবি, “নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে এই প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া বিদ্যালয়টির শিক্ষক ও ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নিতে গেলে সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন তিনি। এক পর্যায়ে গালিগালাজসহ পায়ের স্যান্ডেল খুলে মারাপিট করার হুমকিও দেন তিনি।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষিকা মিলি বলছেন, তুই এখান থেকে যা, তোকে আমি স্যান্ডেল খুল মারব। যদি ভালো চাস এখান থেকে যা। অপমান আরো করব আমি। স্যান্ডেল খুলে মারব।”

তখন মামুনুর রশীদ বলেন, আপনি আমাকে মের দেখান দেখি। মারেন, হিট মি।”

শিক্ষিকা মিলি বলেন, “লেট মি, তুই এখান থেকে যা।”

এরপর স্কুল ভবনের প্রবেশ গেটের গ্রিলের ওপার থেকে মামুনুর রশীদকে আবার অশালীন ভাষায় আক্রমণ করেন ফাতেম আক্তার মিলি। তিনি বলেন, তোর মতো মামুনের স্যান্ডেল দিয়ে মুখ ফাঁটাব আমি।”

তখন মামুন বলেন, আপনি যদি আমার একটা চুল ছিড়তে পারেন, তাহলে… আপনার মতো ফাতেমাকে আমি গুনি না; আপনি তো মহিলা বলে বেঁচে গেলেন।”

মামুনুর রশীদ দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার সাংবাদিক। ঘটনার পর কোনো আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন কি না, সে বিষয়ে জানতে চাইলে মামুনুর রশীদ বলেন, “আমি এ ঘটনায় স্থানীয় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করব।”

অভিভাবক ও স্থানীয়দের বরাত দিয়ে মামুনুর রশীদ বলছেন, তার কাছে অভিযোগ রয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর খোঁজ ছিল না প্রধান শিক্ষিকা মিলির। এমন কী ১৬ ডিসেম্বর, ২১ ফেব্রুয়ারিতে পতাকা উত্তোলন করেননি তিনি।

মামুনুর রশীদের বলছেন, সাহাবাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মিলি সুন্দরগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতা মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের শ্যালিকা। তার দুলাভাইয়ের দাপটে চলতেন তিনি। অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা বাবলু মন্ডল বলেন, একজন সাংবাদিকের সঙ্গে এত নোংরা ভাষায় কথা বলাটা দুঃখজনক। আমি সামনে থেকে যা দেখেছি, তাতে মনে হয়েছে, উনি কোনোভাবেই শিক্ষক হওয়ার যোগ্য না।

নুরুজ্জামান নামে আরেক অবিভাবক বলেন, এই প্রধান শিক্ষকের প্রতিষ্ঠানে আমার বাবা  নৈশপ্রহরী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। চাকরি শেষের দিকে এলে এনআইডি কার্ডে বয়সের ভুল ধরে বেতন বন্ধ করে দেন।

“আমার বাবা আব্দুর রহমান মারা গেছেন চার বছর হলো অথচ এখনো তিনি (প্রধান শিক্ষিকা) বেতন উত্তোলনে কোনো ব্যবস্থাই নেননি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও সুরাহা হয়নি,” অভিযোগ নুরুজ্জামানের।

ঘটনার ভিডিও হাতে আসার পর প্রধান শিক্ষিকা মিলির বক্তব্য নিতে মোবাইল ফোনে কলা দিলে তিনি তা কেটে দেন। ফলে তার বক্তব্য নিতে পারেনি রাইজিংবিডি ডটকম।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, “গণমাধ্যম কর্মীর সঙ্গে এমন আচরণ একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। অবশ্যই তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে ব্যাখ্যা চাইব। আর তার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আছে, সেগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

ঢাকা/লুমেন/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক-নিন্দনীয়, কাজী হায়াৎ প্রসঙ্গে ডিপজল
  • গাইবান্ধায় সাংবাদিককে দাপট দেখালেন শিক্ষিকা
  • বেতন-ভাতা নিয়ে হয়রানি বন্ধের দাবি ঢাবি ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের