ভলিবল খেলাকে কেন্দ্র করে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের (রবি) ম্যানেজমেন্ট ও বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় বিভাগের অন্তত আটজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন-২-এর খেলার মাঠে অনুশীলনী ম্যাচে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ভলিবল টুর্নামেন্টে চূড়ান্ত পর্বে ওঠেছে বাংলা বিভাগ ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। মঙ্গলবার বিকেলে একাডেমিক ভবন-২-এর খেলার মাঠে বিভাগ দুইটির শিক্ষার্থীরা অনুশীলনী করছিলেন। অনুশীলনী চলাকালে পাল্টাপাল্টি কটূক্তি করা নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ নিয়ে উভয় বিভাগের শিক্ষার্থীদের একে-অপরকে দোষারোপ করতে দেখা গেছে।

এ সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় বিভাগের অন্তত আটজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুইজনকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

প্রত্যক্ষদর্শী বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, “খেলার মধ্যে স্লেজিং করা নিয়ে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এক শিক্ষার্থী আক্রমণাত্মকভাবে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের দিকে তেড়ে আসে। আমি বাংলা বিভাগের সবাইকে আটকানোর চেষ্টা করি। এ সময় ম্যানেজমেন্টের অন্য শিক্ষার্থীরা তেড়ে আসলেও কেউ কাউকে আঘাত করেনি। পরে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এক শিক্ষক আমাদের কাছে এসে অনেক বিনয়ের সঙ্গে সরি বললে আমরা মেনে নেই।”

তিনি বলেন, “এ সময় হঠাৎ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের আরেক শিক্ষক উগ্রভাবে এসে জিজ্ঞেস করতে থাকেন, ‘কে কুকুর বলছে’? এটা নিয়ে আমাদের সঙ্গে ওই শিক্ষকের বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এটা দেখে ম্যানেজমেন্টের শিক্ষার্থীরা মনে করে ওই শিক্ষককে হেনস্তা করা হচ্ছে। তাই তারা বাংলার শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করে বসে। এতে বাংলা বিভাগের বেশকিছু শিক্ষার্থী আহত হয়।”

তিনি আরো বলেন, “এ ঘটনার পর ম্যানেজমেন্টের শিক্ষার্থীরা বলছে, তাদের শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ম্যানেজমেন্টের শিক্ষার্থীরাই আমাদের এক শিক্ষকের দিকে চেয়ার নিক্ষেপ করছে।”

সংঘর্ষে আহত ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, “খেলা চলাকালে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা আমাদের কুকুর বলে গালি দেয়। খেলা শেষে ম্যানেজমেন্টের কয়েকজন শিক্ষার্থী এ নিয়ে কথা বলতে গেলে তাদের দিকে তেড়ে আসে বাংলার শিক্ষার্থীরা। তখন আমরা সবাই গেলে ধাক্কাধাক্কি হয়। আমাদের এক শিক্ষক ওখান থেকে আমাদের সরিয়ে নিয়ে বাংলার এক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে যান। এ সময়  বাংলার শিক্ষার্থীরা স্যারের ওপর আক্রমণ করে এবং চড়াও হয়।”

তিনি বলেন, “আমরা ঠেকাতে গেলে তারা স্যারের দিকে চেয়ার ছুঁড়ে মারে এবং দুইজন শিক্ষার্থী ম্যামকে আঘাত করতে যায়। ম্যামকে সেভ দিতে গিয়ে আমার বুকে ও মাথায় আঘাত লাগে। এতে আমার বুকের হাড়ে ফ্যাকচার হয়েছে এবং কানের পিছনে আঘাত লেগেছে। আমাদের আরো তিনজন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর।”

এদিকে, মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড.

সুমন কান্তি বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার ও বৃহস্পতিবার সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া ক্রীড়া প্রতিযোগিতা স্থগিত করা হয়েছে।

শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচারণ করায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপ-উপাচার্যকে আহ্বায়ক করে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া প্রক্টরকে আহ্বায়ক ও আইন কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে অনাকাঙ্ক্ষিত, শান্তি ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের শাস্তি দিতে সাত সদস্য বিশিষ্ট আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ঢাকা/হাবিবুর/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ভ গ র এক শ ক ষ আম দ র স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

যুদ্ধাপরাধীর বাবার নামে আবাসিক হলের সিদ্ধান্ত স্বাধীনতাবিরোধী: ছাত্র ইউনিয়ন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য নবনির্মিতব্য হলের নামকরণ ফজলুল কাদের চৌধুরী করার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। আগামী এক মাসের মধ্যে তারা এই নাম পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া হলটির নাম পরিবর্তন করে বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলামের নামে নামকরণ করার দাবিও জানানো হয়েছে।

বুধবার বিকেলে সাড়ে চারটায় এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান তারা। নগরের ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশনে এই সম্মেলন হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ইফাজ উদ্দিন আহমদ।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ফজলুল কাদের চৌধুরী ও তার ছেলে রাজাকার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রধানতম দালাল হয়ে কাজ করেছিলেন। চট্টগ্রামে শান্তি কমিটি, রাজাকার বাহিনী, আল বদর ও আল শামস বাহিনী গঠনে তিনি ভূমিকা পালন করেন। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী গণহত্যা শুরু করার পর মুসলিম লীগের শীর্ষনেতা মানিক মোহাম্মদ কাসিমকে সঙ্গে নিয়ে ফজলুল কাদের চৌধুরী গভর্নর টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করেন। এতে তিনি কীভাবে পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনীকে সহযোগিতা করা যায় এবং তৎকালীন পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার সংগ্রাম ধূলিসাৎ করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করেন।’

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ফজলুল কাদের চৌধুরীর গুডস হিলের বাড়িটি চট্টগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের নির্যাতনের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো। ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর নৌযানে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় আনোয়ারা উপজেলায় গহীরা উপকূলে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে তিনি। পরে তাকে বাঙালির বিরুদ্ধে ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠনের অভিযোগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী করা হয়।’

এই হল তার নামে না করে বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলামের নামে করার দাবি জানিয়ে নেতারা বলেন, ‘যে মানুষটা কখনও চায়নি বাংলাদেশ নামে একটা রাষ্ট্রের জন্ম হোক, যিনি সরাসরি মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল তার নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নির্মিতব্য আবাসিক হলের নামকরণের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অবিলম্বে স্বাধীনতাবিরোধী ফজলুল কাদের চৌধুরীর নাম বাতিল করতে হবে। এই হলের নাম বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম ঘোষণা করতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি সুদীপ্ত চাকমা, সাধারণ সম্পাদক ইফাজ উদ্দিন আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক নয়ন কৃষ্ণ সাহা, শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সোহেল রানা এবং চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক শুভ দেবনাথ প্রমুখ। 

নেতারা জানান, তারা এই হলের নাম পরিবর্তনের জন্য প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছেন। তারা প্রশাসনকে এক মাসের সময় দিয়েছেন। এর মধ্যে দাবি মানা না হলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে তারা কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দেবেন।

এর আগে শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫৯তম সিন্ডিকেট সভায় ছাত্রদের নামে নতুন এক হল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সভায় পুরোনো শামসুন নাহার হলের জায়গায় করা এই হলের নামকরণ করা হয় ফজলুল কাদের চৌধুরী হল। সভায় শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের পাঁচ জনের নামে থাকা চবির পাঁচটি স্থাপনাসহ মোট ছয়টি স্থাপনার নাম পরিবর্তন করা হয়। পাশাপাশি এই সভায় আরও ছয়টি স্থাপনার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ