খেলাপি ঋণ বেড়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা
Published: 26th, February 2025 GMT
খেলাপি ঋণের পরিমাণ তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে তা সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা ছুঁই ছুঁই করছে।
দেশের ব্যাংকব্যবস্থায় গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা, যা গত সেপ্টেম্বর শেষে ছিল ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকেই শ্রেণিকৃত ঋণ বা খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬০ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে মোট বিতরণ করা ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ খেলাপি হয়ে গেছে।
আজ বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এসব তথ্য দেন। রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বা ওই তিন মাসে ব্যাংকব্যবস্থায় খেলাপি ঋণ বাড়ে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। এর মানে গত ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে যে অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে, তা এখন খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘খেলাপি ঋণ বেড়েছে। আগেই বলেছিলাম, খেলাপি ঋণ বাড়বে। তবে এখনো খেলাপি ঋণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়নি।’ তিনি আশ্বস্ত করেন, ব্যাংক থেকে আমানতকারীদের টাকা পেতে কোনো সমস্যা হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে মোট ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকে মোট বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের হার কিছুটা বেড়েছে। এই হার আগের প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) থেকে কিছুটা বেড়ে ৪২ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে এই হার ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এর পর থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে। অর্থনীতিবিদেরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছেন, তৎকালীন সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট হয়েছে, যার একটা বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র বের হতে শুরু করেছে। সাবেক সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে প্রভাবশালীদের বড় অঙ্কের ঋণ দিতে নানা সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ কাগজে-কলমে কম দেখাতে নেওয়া হয়েছিল একের পর এক নীতি। সরকার পরিবর্তনের পর সেই নীতি থেকে সরে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সূত্রগুলো বলছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ও সমালোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়া ব্যাংকগুলো ঋণের প্রকৃত চিত্র দেখাতে শুরু করেছে। তাদের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেশি বেড়েছে। একইভাবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বেশ বেড়েছে। পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, এস আলমসহ আরও কিছু বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে। এতেও বেড়েছে খেলাপি ঋণ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ড স ম বর শ ষ সরক র র ঋণ র প ঋণ ব ড় পর ম ণ ব যবস ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে পারব: নির্বাচন কমিশনার
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন, “আমরা ডিসেম্বরকে সামনে রেখে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করছি। আমরা প্রস্তুত। ইনশাল্লাহ, আমরা ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে পারব।”
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ-২০২৫ উপলক্ষ্যে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন কর্মকতাদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “আপনারা দেখেছেন আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে ইতোমধ্যে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করেছি। এখন পুরোদমে রেজিস্ট্রেশনের কাজ চলছে। এ দেশের মানুষ ভোট দিতে আগ্রহী বলেই তারা উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে ভোটার হওয়ার জন্য কষ্ট করছেন। মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করছেন। সমন্বিতভাবে ভোটার তালিকার কাজটি শেষ করার জন্য সবাই সচেষ্ট।”
তিনি বলেন, “আপনারা জানেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা গত ১৬ ডিসেম্বর বক্তৃতায় বলেছেন ডিসেম্বর অথবা ২০২৬ সালের জুন নাগাদ নির্বাচন হবে। যদি ডিসেম্বর নির্বাচন হয় তাহলে কিছু সংস্কার হবে। আর যদি বড় ধরনের সংস্কার হয় তাহলে আগামী বছরের জুনে নির্বাচন হবে। আমরা ডিসেম্বরকে সামনে রেখে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং আমরা বিশ্বাস করি ডিসেম্বর নাগাদ নির্বাচন করা সম্ভব হবে।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে গেলে এক বছর সময় লাগবে। তাহলে ডিসেম্বরে (জাতীয় সংসদ) নির্বাচন করার আমাদের যে ঘোষণা, সে টাইমলাইনের মধ্যে করা সম্ভব হবে না। আমরা ডিসেম্বরকে সামনে রেখে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করছি। আমরা প্রস্তুত। ইনশাল্লাহ, আমরা ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে পারব।”
মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাতের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মুহম্মদ শামসুল আলম সরকার, জেলা নির্বাচন অফিসার মো. মোজাম্মেল হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অফিসার মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন অফিসার মোছাম্মদ জোবাইদা খাতুন, গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলমসহ ছয় উপজেলার সকল নির্বাচন অফিসার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
ঢাকা/রতন/এস