বর্তমান যুগে মানুষের জীবনে ক্রেডিট কার্ড অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি অনুষঙ্গ। এটি কেবল অর্থ আদান-প্রদানের মাধ্যম নয়, বরং সুবিধাজনক ও নিরাপদ লেনদেনের মাধ্যমও বটে। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে সহজে কেনাকাটা থেকে শুরু করে হোটেল বুকিং, বাস-ট্রেন-বিমানের টিকিট কাটা সম্ভব। তাই প্রতিনিয়ত বাড়ছে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা। তবে যাঁরা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন, তাঁদের বেশ কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি।

খরচের সীমা মেনে চলা: ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার সময় যেকোনো ধরনের খরচ সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং সীমা মেনে চলুন। লাগামহীন খরচের কারণে পরবর্তী সময় বিশাল ঋণের বোঝা ঘাড়ে পড়তে পারে।

বিল পরিশোধের নিয়ম: অবশ্যই মাসের নির্দিষ্ট তারিখে বিল পরিশোধ করুন। অন্যথায় অতিরিক্ত সুদ ও চার্জের কবলে পড়তে হতে পারে।

সুদের হার বুঝে নেওয়া: প্রতিটি ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার আলাদা। তাই সুদের হার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন ও বুঝে ব্যবহার করুন।

ফি ও চার্জ সম্পর্কে সচেতন থাকা: ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন ধরনের ফি ও চার্জ থাকতে পারে, যেমন বার্ষিক ফি, বিল পরিশোধে বিলম্বের ফি ইত্যাদি। এসব ফি সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং যথাসময়ে পরিশোধ করুন।

ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখা: ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে এই ব্যাপারে নিয়ে সচেতন থাকা জরুরি। ক্রেডিট কার্ডের নম্বর কিংবা এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য কাউকে শেয়ার করা থেকে সব সময় বিরত থাকুন। ব্যাংকের অনুমোদিত কোনো ব্যক্তি ছাড়া এ ধরনের তথ্য কাউকে দেওয়া যাবে না।

ক্রেডিট কার্ডের যত সুবিধা

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো, এর সাহায্যে দ্রুত লেনদেন করা যায়। এমনকি হাতে টাকা না থাকলেও কোনো কিছু কিনতে মন চাইলে ঝামেলা ছাড়া সহজেই তা কেনা যায় এবং পরে পণ্যটির মূল্য পরিশোধ করে দেওয়া যায়। এ ছাড়া এতে নগদ অর্থের পাশাপাশি অনলাইন বা অফলাইনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুরক্ষিত লেনদেনের সুযোগ রয়েছে। সেই সঙ্গে যখন বড় অঙ্কের কোনো কেনাকাটা বা দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করা হয়, তখন সঙ্গে ক্রেডিট কার্ড থাকলে একসঙ্গে অনেক টাকা হাতে না রেখেও সহজে একাধিক সেবা পাওয়া সম্ভব।

ক্রেডিট কার্ডের ধরন

বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নানা ধরনের ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। সাধারণত ‘সিলভার’, ‘গোল্ড’ এবং ‘প্লাটিনাম’ ক্রেডিট কার্ডগুলো বেশি জনপ্রিয়। এসব কার্ডের একেকটিতে একেক সুবিধা এবং ফিচার থাকে, যা নিজের পছন্দ ও প্রয়োজন অনুযায়ী বাছাই করা যায়।

ভ্রমণপিপাসুদের জন্য ভরসা ক্রেডিট কার্ড

বিদেশে ভ্রমণের সময় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাওয়া যায়। বিদেশে এটি নিরাপদ ও ঝামেলাহীন লেনদেনের একটি সহজ মাধ্যম। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন করা সহজ হয় এবং একাধিক সুবিধাও পাওয়া যায়, যেমন ভ্রমণ বিমা, খরচের রিপোর্ট এবং বিশেষ ডিসকাউন্ট অফার। এ ছাড়া ক্রেডিট কার্ড দিয়ে হোটেল ও ট্রান্সপোর্ট বুকিং করা বর্তমানে সবচেয়ে সুবিধাজনক একটি পদ্ধতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। একইভাবে ফ্লাইট, ট্রেন বা বাসের টিকিটও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সহজেই কেনা সম্ভব।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক র ড ট ক র ড ব যবহ র ব যবহ র কর পর শ ধ ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

পানি ব্যবস্থাপনার জন্য বেইজিংয়ের কাছ থেকে ৫০ বছরের মহাপরিকল্পনা চেয়েছে ঢাকা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল শুক্রবার নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদী ও পানি ব্যবস্থাপনার জন্য চীনের কাছ থেকে ৫০ বছরের মহাপরিকল্পনা চেয়েছেন।

চীন সফরের তৃতীয় দিনে চীনের পানিসম্পদমন্ত্রী লি গোওয়িংয়ের সঙ্গে এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এই অনুরোধ জানান মুহাম্মদ ইউনূস। বেইজিংয়ের একটি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ খবর জানানো হয়।

অধ্যাপক ইউনূস চীনের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করে বলেন, ‘কিছু জটিল পানি সমস্যা মোকাবিলায় চীন আশ্চর্যজনক সাফল্য পেয়েছে। আমাদের সমস্যা আপনাদের মতোই। তাই আপনার অভিজ্ঞতা জানালে আমরা খুশি হব।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি বদ্বীপ, আমাদের দেশে শত শত নদী রয়েছে। পানি আমাদের জীবন-জীবিকার মূল, কিন্তু কখনো কখনো এটি শত্রুতে পরিণত হয়। এখন যেহেতু জনসংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই এটি বাস্তুতন্ত্রের জন্য কী ধরনের ক্ষতি করতে পারে, সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’

চীনকে পানি ব্যবস্থাপনায় দক্ষ কারিগর হিসেবে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশের অনেক কিছু শেখার আছে।’ তিনি পানি ব্যবস্থাপনায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ভিশন বাংলাদেশের সঙ্গে শেয়ার করার আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এখানে আপনার কাছ থেকে শিখতে এসেছি, কীভাবে আমরা পানিসম্পদকে মানুষের জন্য উপযোগী করে তুলতে পারি।’ তিনি আরও বলেন, ‘জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং উন্নয়নের চাহিদার কারণে নদীর ধারে জমি দখল বাড়ছে। উজানের দেশ ভারতও একই ধরনের উন্নয়ন সমস্যায় পড়ছে। পলি জমে নদীর মাঝখানে চর জেগে উঠছে, যা কখনো কখনো নদীগুলোকে সংকুচিত করছে।’

চীনের পানিসম্পদমন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একমত হয়ে বলেন, ‘চীন ও বাংলাদেশের পানি ব্যবস্থাপনা একই রকমের চ্যালেঞ্জ।’ বাংলাদেশের ৮৫ শতাংশ নদী সমতল ভূমিতে, যা দেশের জন্য পানি ব্যবস্থাপনাকে জটিল করে তুলেছে জানিয়ে তিনি বাংলাদেশকে কারিগরি সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট সি চীনের জন্য একটি মহাপরিকল্পনা দিয়েছেন, যার মাধ্যমে চীন পানি ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে পারছে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা তৈরিতে আপনার সাহায্যের প্রয়োজন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সমস্যা কেবল একটি নদী নিয়ে নয়, বরং সামগ্রিক নদী ব্যবস্থাপনায়।’

তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা এবং ঢাকার আশপাশের নদীগুলোর দূষিত পানি পরিষ্কারকরণের বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করে সহায়তা চান প্রধান উপদেষ্টা।

আরও পড়ুনপিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ইউনূসকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান ৫০ মিনিট আগে

চার দিনের সফরে বর্তমানে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সফরে তিনি চীনের নেতা এবং বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। গতকাল শুক্রবার সকালে বেইজিংয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে পরের ধাপে নিতে কাজ করার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন। বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে দুই নেতার মধ্যে ঘণ্টাখানেক দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

অধ্যাপক ইউনূস আজ শনিবার দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুনঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আগ্রহী বেইজিং৫ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ