এইরূপে প্রেম ফোটে: দমচাপা রোদে বসে কবি কী দেখেন
Published: 26th, February 2025 GMT
একটা রোদের ফালি হয়তো আলগোছে ঢুকে পড়ছে জানালা ডিঙিয়ে। একটা কোনো কয়েন অহেতুকই বাঁই বাঁই করে ঘুরছে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে। আর এক ফালি রোদকে ঠিকরে ছড়িয়ে দিচ্ছে আনাচ–কানাচ। কিংবা একটা কোনো হাঁপরের গল্পই হতে পারে এটা, যে দম ছাড়লেই গনগনে লালের দেখা মেলে অন্ধ কয়লার চোখে।
মানুষও তো এমনই। এমনই তার স্বভাব। কেউ আলোর ফেরিওয়ালা হয়, কেউ–বা আগুনের। অথবা সবাই সবটা। শুধু ক্ষণের অপেক্ষা। সেখানে দেশ ও দ্বেষ কখনো কখনো মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়—‘অথচ দমচাপা রোদে থইথই আলোর বদলে ঢুকে গেল দিশাহীন দ্বেষের সুর।’ প্রশ্ন জাগে—রোদও তবে দমচাপা হতে পারে! অভিজ্ঞতা বলে হয়। এমনকি বৃষ্টিও হতে পারে। এমনকি শীতও। সুজন সুপান্থ কবিতা লেখেন। গদ্য ধাঁচ হোক, কিংবা কবিতার ছোট ছোট পঙ্ক্তিবিন্যাশ, তিনি কবিতাই উপহার দেন আমাদের।
বইটির নামে চোখ আটকে কিছুক্ষণ বসে থাকতে হয়। ‘এইরূপে প্রেম ফোটে’। কত বিচিত্র ভাবনা আসে। ফুলের মতোই তো হবে নাকি? যদিও মাথায় জমাট দৃশ্য এবং প্রচল ভাষ্যগুলো বলে যায়—ফোটার ধর্ম তো বোমারও আছে। কী জানি! প্রমিত–অপ্রমিত মিলে–মিশে একাকার হয়ে যায় এই এক নামের সীথানে দাঁড়িয়ে।
মিছিলেও প্রেমের দেখা তো মেলে। এই কিছুদিন আগের ওলট পালট করা অতিদীর্ঘ দিবসগুলো জানিয়ে গিয়েছিল—প্রেমের বিনাশী বিন্যাস। অথচ, মানুষ আত্মমগ্ন। আর রাষ্ট্র শেষতক সেই ব্যক্তির একার ধ্যানের দরজায় কড়া নেড়ে যায়, করে তাণ্ডবনৃত্যও। অথচ মানুষ ধ্যানও ভাঙে।
সুজন সুপান্থ মানুষের একেবারে ভিতর উঠোনের পা রাখতে ভালোবাসেন। একটা হাহাকার জমাট হয়ে থাকে তার শব্দের ভাঁজে ভাঁজে। গৃহবাসী মানুষের বুকে চেপে থাকা পাথর, তার মনের গহীনে উড়বার অপেক্ষায় থাকা পাখিটি কিংবা তার প্রায় ঝরে যাওয়া পালকটি তার কবিতার উপকরণ। ঘরে ঘুরে তিনি ঢুকে পড়েন সেই শৈশব ও তার আলপথ ধরে ম্যাজিশিয়ানের তাঁবুতে। সেখানে থাকে ক্ষুধা নিবারণী অনুপান। সেখানে চাওয়া ও পাওয়ার মাঝখানে মৃদু কিন্তু অবাক চোখের সেতুবন্ধ আমাদের নজরে আসে। আমরা তার সাথে সাথে সেই সব ভেতর বাড়িতে ঘুরে আসি।
নিখোঁজ মানুষের, রাষ্ট্রীয় মারণাস্ত্রে শুধু সংখ্যা বনে যাওয়া মানুষের খাতা থেকে তিনি টুকে রাখেন দিনলিপির মতো এক একটা চরিত্র। এক একটা দৃশ্য। যেন এই মানুষেরা মানুষ নয় আর। সুজন সুপান্থ লিখছেন—‘তবু এইসব মানুষের মুখ হারিয়ে যাওয়া দেশের মাতৃধারার গল্প শোনায়।’
আমরা সেই মাতৃধারার গল্পের পূর্ণ বৃত্তটি সম্পন্নের আকাঙ্ক্ষায় বসে থাকি। না, সে আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয় না। থমকে যায়। এ এক অনিঃশেষ উপক্রমণিকা যেন। অনেকটা হেঁয়ালির মতো। কবি সেই হেঁয়ালির কোনো সামাধান দিতে রাজি নন। ফলে আমাদের অপেক্ষা ফুরোয় না। যেমনটা এই দেশে, এই জনপদে। একটা নিপাট, ঝঞ্ঝাটহীন, ক্ষুধা ও পীড়নহীন যাপনের হদিস কখনো মেলে না। আশা জাগে। মিলিয়ে যায় আবার। ফের মানুষ আশার খোঁজে নামে। এ যেন এক পৌনপুনিক বাস্তবতার ঘানি। বিজয় আসে, কিন্তু মুক্তি? বিজয়ের সাথে সাথে আসে বিজয়ের ব্যাপারীরাও। সুজন সুপান্থ এই অপ্রতিহত বাস্তবতার কথাই বলে যান।
অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত সুজন সুপান্থ’র কবিতার বই ‘এইরূপে প্রেম ফোটে’ প্রকাশ করেছে স্বপ্ন’৭১ প্রকাশন।
বইমেলায় স্বপ্ন’৭১–এর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে বইটি। বইমেলায় স্টল নম্বর ৭৫৩।
লেখক: নেলসন
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বইম ল স জন স প ন থ
এছাড়াও পড়ুন:
জুয়েলার্স ব্যবসায়ীদের জানমালের নিরাপত্তা চাইলেন বাজুস নেতারা
সরকারের কাছে জুয়েলার্স ব্যবসায়ীদের জানমালের নিরাপত্তা চেয়েছেন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) নেতারা।
জুয়েলার্স সমিতির নেতারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও ব্যবসায়ীদের ওপর সরাসরি আক্রমণের ঘটনা বাড়ছে। পাশাপাশি জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও অপহরণ চেষ্টা তাঁদের জানমালের নিরাপত্তাহীনতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমনকি বাসাবাড়িতেও জুয়েলারি ব্যবসায়ী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা নিরাপদ বোধ করছে না। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়তে পারে—এমন আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
রাজধানীর মগবাজারে জুয়েলার্স সমিতির কার্যালয়ে আজ শুক্রবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনের নেতারা। তাঁরা জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের জানমালের নিরাপত্তা প্রদানে সরকারের আরও সহযোগিতা চান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জুয়েলার্স সমিতির সহসভাপতি মো. নিপনুল হাসান। আরও উপস্থিত ছিলেন জুয়েলার্স সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গুলজার আহমেদ, সহসভাপতি এম এ হান্নান আজাদ, সহসভাপতি মাসুদুর রহমান, জয়নাল আবেদীন, সমিত ঘোষ প্রমুখ। সমিতির পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানা যায়।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত বুধবার (২৬ মার্চ) ভোর ৫টায় জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান অলংকার নিকেতনের কর্ণধার ও জুয়েলার্স সমিতির সহসভাপতি এমএ হান্নান আজাদের বাসায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় ও ছদ্মবেশী ২৫-৩০ জনের একটি সংঘবদ্ধ ডাকাতদল হামলা চালায়। এ সময় তাঁর বাসা ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এমনকি এম এ হান্নান আজাদকে অপহরণের চেষ্টা করে। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাজুসের কার্যনির্বাহী সদস্য মো. ওয়াহিদুজ্জামান সুজনের ওপর ও তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার চেষ্টা হয়, যা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২৬ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ২৩টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ১১টি, আশুলিয়া সাভারে ১টি, মুন্সিগঞ্জে ১টি, খুলনায় ৪টি, কুমিল্লায় ১টি, পটুয়াখালীতে ২টি, ময়মনসিংহে ১টি, সিলেটে ১টি ও হবিগঞ্জে ১টি প্রতিষ্ঠানে চুরি ও ডাকাতি হয়। আশুলিয়া-সাভারে ডাকাতির সময় ডাকাতদের গুলিতে একজন জুয়েলারি ব্যবসায়ী নিহত হয়। বনশ্রীতে সোনা ছিনতাইয়ের ঘটনায় একজন জুয়েলারি ব্যবসায়ী গুরুতর আহত হয়েছেন। বিগত এক বছরে এই চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় দেশের ২৩টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৪৪ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে রিপনুল হাসান বলেন, ‘জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। এ জন্য জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে সরকারের আলাদা দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সশস্ত্র প্রহরার পাশাপাশি রাজধানীসহ দেশের সব জেলার জুয়েলারি মার্কেটে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা দাবি জানাচ্ছি।’ এ ছাড়া জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই হওয়া অলংকার উদ্ধার এবং অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলন থেকে জুয়েলার্স সমিতির নেতারা অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা রোধে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও বাইরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নিশ্চিত, নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠান বন্ধ, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সোনা পরিবহনে প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেন।