সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

বিগত ১৫ বছর দেশের শেয়ারবাজারকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই ভবনে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ক‍্যাপিটাল মার্কেটের বর্তমান অবস্থা ও এগিয়ে যাওয়ার উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।

আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশের কেউ কখনো স্টক মার্কেটকে বরণ করতে পারেনি। স্টক মার্কেট যে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি, এটা কেউ বোঝেনি। অর্থনীতি চালাতে স্টক মার্কেট যে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে সেটা আমরা ধারণ করতে পারিনি। আমরা দেখেছি, গত ১৫ বছর কীভাবে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে স্টক মার্কেটকে ব্যবহার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, আগামীতে যদি নির্বাচিত সরকার আসে, আর আমরা সেই সুযোগ পাই, তাহলে আমরা স্টক মার্কেটকে ধারণ করবো।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, স্টক মার্কেট যদি স্বচ্ছভাবে চলে তাহলে সাধারণ মানুষও মনে করবে এখানে বিনিয়োগ করা যায়। সবাই তাদের পরিবারের ভবিষ্যৎ সঞ্চয়ের জন্য বিনিয়োগ করবে। স্টক মার্কেটের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকটা ব্রোকারেজ হাউজে শিক্ষিত ছেলে-মেয়েদের অনেক বড় চাকরির সুযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, আমি বক্তৃতার জন্য বলছি না। আমাদের দলে অভ্যন্তরীণ আলাপ হয়েছে। আমরা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে সিরিয়াসভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি। নিয়ন্ত্রণমুক্ত ছাড়া পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করবে।

আমীর খসরু বলেন, যারা পুঁজিবাজার লুটপাট করেছে তাদের চিহ্নিত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে তারাই ঘুরেফিরে আবারও পুঁজিবাজারে এসব কর্মকাণ্ড চালাবে। কারণ, দিন শেষে টাকা কথা বলে। তাদের লুটপাটের কারণে অনেকে আত্মহত্যা করেছে, অনেকে নিঃস্ব হয়েছে। তাই, তাদের আইনের আওতায় আনতে ডিবিএকেও ভূমিকা রাখতে হবে।

বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, বিএসইসিতে কোনো সরকারের নাক গলানোর সুযোগ নেই। তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার কথা। বিগত দিনে যা হয়েছে, বিএসইসি কমিশন হিসেবে নয় বরং রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ করেছে।

ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে শেয়ারবাজার অনেক সমস‍্যায় জর্জরিত হয়েছে। এর মধ‍্যে ২০১০ সালের ধসের পর অলিখিতভাবে ফোর্সড সেল বন্ধ করে ও করোনা মহামারিকে কেন্দ্র করে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি করা হয়েছে।

ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ফোর্সড সেল বন্ধ করে নেগেটিভ ইক‍্যুইটি তৈরি করা হয়েছে। এতে করে অনেক প্রতিষ্ঠান ঋণ প্রদানের সক্ষমতা হারিয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে।

অন‍্যদিকে ফ্লোর প্রাইস দিয়ে শেয়ারবাজারকে দেড় বছর স্থবির করে রাখা হয়েছিল দাবি করে বিএসইসির সাবেক এ চেয়ারম্যান আরও বলেন, বিগত দুটি কমিশনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ শোনা যায়। এখন তো দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, যা আগে কখনো হয়নি। এর মাধ্যমে বাজারে আস্থা নষ্ট হয়েছে। এছাড়া কারসাজির অনেক ঘটনা ঘটেছে। আর বিতর্কিত রোড শো করা হয়েছে। এসবের মাধ্যমেও আস্থা নষ্ট করা হয়েছে।

বিএইচ

.

উৎস: SunBD 24

কীওয়ার্ড: র জন ত ক ব এসইস

এছাড়াও পড়ুন:

সমস্যা সবই জানা, সমাধানে মানসিকতার বদল জরুরি

শেয়ারবাজার সমস্যা বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও শেয়ারবাজার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, শেয়ারবাজারের সমস্যা সবই জানা। এগুলোর সমাধানে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি।

শেয়ারবাজারের সমস্যা এবং উত্তরণের পথ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মতামত জানতে ড. আনিসুজ্জামান গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কার্যালয়ে যান। সেখানে বিএসইসি কর্মকর্তা এবং বাজার অংশীজনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম বিএসইসি কার্যালয়ে যান তিনি।

শেয়ারবাজারকে অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে উন্নয়নের লক্ষ্যে গত ১৯ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) ড. আনিসুজ্জামানকে প্রধান করে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে। গতকালের বৈঠকে কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদেকুল ইসলাম এবং অপর সদস্য এফআইডির অতিরিক্ত সচিব মো. সাঈদ কুতুব উপস্থিত ছিলেন।

ড. আনিসুজ্জামান প্রথমে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে বাজার অংশীজন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। বৈঠকে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান, সিডিবিএলের এমডি এবং ডিএসই ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংক, সম্পদ ব্যবস্থাপক, নিরীক্ষক, ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। উভয় বৈঠকে বিএসইসির চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদসহ তিন কমিশনার অংশ নেন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিএসইসি বা বাজার অংশীজনের কেউই বাজারের জানা সমস্যার বাইরে নতুন কিছু জানাতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আপনারা যেসব কথা বলেছেন, তার সবটাই জানা। সমস্যার কথা সবাই জানে। তবে সমাধান কীভাবে চান, সে বিষয়ে শুনতে চাই।’ তিনি সবার কাছে সমাধানের লিখিত প্রস্তাব চেয়েছেন।

শেয়ারবাজার বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণের আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পরিদর্শন এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যালয়ের বাইরে ব্রোকারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কমিটির বৈঠকের প্রস্তাব করেন ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম। বিএসইসির চেয়ারম্যান ডিএসইর পরিবর্তে তা সিএসইতে করার পক্ষে মত দেন। তাঁর কথা, ডিএসইতে এ ধরনের বৈঠক বহু হয়, সে তুলনায় সিএসইতে কম হয়।

সূত্র জানায়, বিএসইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে কমিটিকে শেয়ারবাজারের বর্তমান আকার এবং এর কাঠামোগত বিষয়ে ধারণা দেন কর্মকর্তারা। তারা জানান, এ বাজার বর্তমানে বড় ধরনের যেসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে, সেগুলোর অন্যতম হলো– নেগেটিভ ইক্যুয়িটি ইস্যু, সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিতে সুশাসনের অভাব, ভালো আইপিওর অভাব, বিনিয়োগ পণ্যের ঘাটতি এবং বাজার কারসাজিসহ শেয়ারবাজার ইস্যুতে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট। 

আলোচনায় ডিএসইর চেয়ারম্যান জানান, শেয়ারবাজারের লেনদেন ব্যাপক হারে কমায় লেনদেনে উৎসে কর বেশি থাকায় ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ব্যবসা করে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই উৎসে কর কমানো দরকার। সিএসইর চেয়ারম্যান জানান, আগামী এক মাসের মধ্যে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের পরীক্ষামূলক লেনদেন চালু হবে। প্রাথমিকভাবে কমোডিটি এক্সচেঞ্জে স্বর্ণ, তুলা, পাট বা কমিশন যেসব পণ্য কেনাবেচার অনুমোদন দেবে, সেগুলো কেনাবেচা হবে।

তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রূপালী চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ভালো মূল্য ও কর সুবিধা না থাকায় দেশের বড় ও স্বনামধন্য কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায় না। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সভাপতি মাজেদা খাতুন বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ে আলোচনা হলে সবাই সেকেন্ডারি শেয়ারবাজার নিয়ে আলোচনা করেন, যেখানে আইপিও নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়া উচিত।

বৈঠকে অন্যরা স্টক এক্সচেঞ্জসহ লেনদেনে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে বলে জানান। তারা নগদ লভ্যাংশ বিতরণে বিলম্ব বা না দেওয়া ঠেকাতে তৃতীয় পক্ষের সম্পৃক্ততা এবং আইপিওতে ভালো কোম্পানিকে আকৃষ্ট করতে কর রেয়াত সুবিধা বাড়ানোর সুপারিশ করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হামি ইন্ডাস্ট্রিজের চার বছরের আর্থিক হিসাব তদন্তে কমিটি
  • সরকার পুঁজিবাজারের সমস্যা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছে: আনিসুজ্জামান
  • সালমান, শায়ানসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
  • সমস্যা সবই জানা, সমাধানে মানসিকতার বদল জরুরি
  • সরকারি টাকা আত্মসাৎ: সালমান-শিবলীসহ ৩০ জনের না‌মে দুদকের মামলা
  • ড. আনিসুজ্জামান বিএসইসি পরিদর্শনে যাচ্ছেন আজ
  • ব্যবসা শুরু করতে ব্যর্থ এসকিউ ব্রোকারের বিরুদ্ধে তদন্তে কমিটি
  • ড. আনিসুজ্জামানের সঙ্গে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের বৈঠক বুধবার