রাজশাহীতে অভিযান চালিয়ে ১১ জনকে আটক করেছে র‍্যাব। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়। তাঁদের ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে আটক করা হয়েছে বলে র‍্যাব জানিয়েছে।

আজ বুধবার রাজশাহী র‍্যাব অধিনায়কের কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ডাকাতির অভিযোগের আটক ব্যক্তিরা হলেন রাজশাহী নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানার হোসনিগঞ্জ এলাকার মো.

আবদুল আউয়াল ওরফে ডাকু আউয়াল (৪৫) ও তাঁর সহযোগী দামকুড়া থানার ধুতরাবনা এলাকার মো. সম্রাট (৩৮)।

র‍্যাব জানিয়েছে, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির অভিযোগে চন্দ্রিমা থানার আসাম কলোনির মো. শান্ত ইসলাম (২২), বোয়ালিয়া থানার মোন্নাফের মোড়ের মো. জিসান হোসেন (২৩), মতিহার থানার কাজলা এলাকার মো. মাইন হোসেন ওরফে আলিফ (১৯), চন্দ্রিমা থানার মেহেরচন্ডী কড়ইতলা এলাকার মো. শাকিল খান (২৩), বোয়ালিয়া থানার পাঠানপাড়া এলাকার মো. নাইম ইসলাম (২৫), একই এলাকার মো. শরিফুল ইসলাম ওরফে সনি (৩২), কাশিয়াডাঙ্গা থানাধীন কাঁঠালবাড়িয়া এলাকার মো. আকাশ হোসেন (২৩), চারঘাট থানার চকমোক্তারপুর গ্রামের মো. সোহাগ আলীকে (২৮) আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া কিশোর গ্যাং দলের অন্যতম সক্রিয় সদস্য কাশিয়াডাঙ্গা থানাধীন কাঁঠালবাড়িয়া এলাকার মো. জীবন ইসলামকে (১৬) আটক করেছে র‍্যাব।

র‍্যাব জানিয়েছে, বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশে ও র‍্যাব সদর দপ্তরের নির্দেশনায় দেশজুড়ে ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ রোধে র‍্যাব-৫–এর অধীন রাজশাহী নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দিনে-রাতে রোবাস্ট প্যাট্রল ও সাদাপোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তল্লাশিচৌকি স্থাপন, ঢাকা–রাজশাহী হাইওয়েতে যানবাহনে তল্লাশিসহ ছিনতাইকারী, ডাকাত ও অন্যান্য সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্রকে ধরতে র‍্যাব-৫–এর কার্যক্রম চলমান। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রাতে অভিযান চালিয়ে এই ১১ জনকে আটক করা হয়েছে।

র‍্যাব জানিয়েছে, এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ডাকাতি ও ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত হিসেবে ৪টি মুঠোফোন, ৪টি মানিব্যাগ, নগদ ১ হাজার ৬৪৫ টাকা, ১টি ধারালো টিপ চাকু, ১টি চাঁদা আদায়ের রসিদ বই ও ১টি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে র‍্যাব জানিয়েছে, আবদুল আউয়াল ও তাঁর সহযোগী সম্রাটের নামে আগে থেকে একাধিক ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মামলা আছে। ছিনতাই ও চাঁদাবাজ প্রত্যেকের নামেই একাধিক মাদক, ছিনতাই ও চুরির মামলা আছে। তাঁরা রাজশাহী নগরে নামধারী ছিনতাইকারী ও রাজশাহী মহানগর পুলিশের তালিকাভুক্ত। জীবন ইসলাম এলাকার কথিত কিশোর গ্যাং লিডার নামে পরিচিত। এই চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে র‍্যাব-৫–এর এই অভিযান চলমান থাকবে।

আটক সবার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া আজ তাঁদের বিভিন্ন থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে র‍্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এল ক র ম ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

হাত জোড় করছি, ফিরিয়ে দিন সন্তানদের

‘কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন। তবু সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে। আমি হাত জোড় করছি, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন।’

গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এমন আকুতিই জানান অপহৃত দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান। বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে ফেরার পথে গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহৃত হন। এ অপহরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফকে (প্রসীত) দায়ী করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।

পিসিপির কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, ইউপিডিএফ অপহৃতদের অভিভাবকদের একটি স্থানে ডেকেছে। বিকেলে অভিভাবকরা সেখানকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’ তিনি অবিলম্বে অপহৃতদের সুস্থ শরীরে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, অপহরণকারীরা সকালে একটি স্থানের নাম বলেছিল অভিভাবকদের। পরে পরিবর্তন করে আরেকটি স্থানে ডাকে। বিকেল থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। 

অপহৃতরা হলেন– চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও পিসিপির চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো। তাদের মধ্যে রিশন চাকমার বাড়ি রাঙামাটির জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামেরছড়িতে। লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নে; একই জেলায় বাড় অলড্রিন ত্রিপুরার; রাঙামাটির বরকল সদরের চাইল্যাতুলিতে দিব্যি চাকমা ও একই জেলার বাঘাইছড়ির বটতলায় মৈত্রীময় চাকমার।

এর আগে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুদূরে পানছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। গত বুধবার ভোরে কুকিছড়া থেকে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে। 

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ১৮৩ আদিবাসী শিক্ষার্থী যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথী ভুবন চাকমার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হলেও তাদের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থি। অপহৃতদের উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।

ইতোমধ্যে অপহৃতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসলে ঘটনাটি কী, কাদের হেফাজতে তারা রয়েছে। যৌথ অভিযানে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ