চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আজ মুখোমুখি ইংল্যান্ড ও আফগানিস্তান। এই সেই ম্যাচ, যে ম্যাচটি বয়কট করতে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলকে অনুরোধ করেছিলেন দেশটির রাজনীতিবিদেরা।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কয়েক শ সদস্য লিখিত চিঠি লিখে করেছিলেন সেই অনুরোধ। কেন, সেটি তো জানাই। আফগানিস্তানে নারীদের চাকরি-বাকরি, পড়াশোনা ও খেলাধুলা থেকে বিরত রাখার তালেবান শাসনের নীতির বিরুদ্ধে বার্তা দিতেই এমন আহ্বান জানিয়েছিলেন তাঁরা।

সেই দুই দেশ যখন মুখোমুখি ক্রিকেট মাঠে, ক্রিকেটের চেয়ে মাঠের বাইরের ঘটনা নিয়েই তো বেশি কথাবার্তা হওয়ার কথা। বাস্তবে হয়েছেও তাই। ম্যাচ–পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে আফগানিস্তানে নারীদের দুর্দশা, নারী ক্রিকেট দল কেন নেই, এ ব্যাপারে ক্রিকেটারদের কী অবস্থান—সেসব নিয়েই বেশি প্রশ্ন হলো।

আফগানিস্তান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদির কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনি কি আফগান মেয়েদের ক্রিকেট মাঠে দেখতে চান? মতামত জানাতে দ্বিধা না করলেও তাঁদের যে কিছুই করার নেই, সেটিও বললেন শহীদি, ‘সবাই খেলুক, এটা তো সবারই চাওয়া। তবে এখানে রাজনীতি একটা বিষয়, আর যেটি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। আমরা তো সামান্য ক্রিকেটার, আমরা শুধু মাঠের বিষয়গুলোই নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখি।’

আফগানিস্তানের ব্রিটিশ কোচ জোনাথন ট্রটকেও কথা বলতে হয়েছে এ নিয়ে। বিবিসিকে ট্রট বলেছেন, আফগান খেলোয়াড়দের হাত-পা বাঁধা এ ব্যাপারে, ‘ছেলেগুলো দারুণ সাহসী। কোনটা ঠিক আর কোনটা ঠিক নয়, সেটি তারা জানে। ওদের জন্য পুরো ব্যাপারটা খুবই বিব্রতকর।’

ট্রট অবশ্য আশাবাদী একদিন আফগানিস্তানে অবস্থা বদলাবে, ‘পুরো বিশ্ব যে উদ্বিগ্ন, সেটি আমি জানি। আমি নিজেও এ নিয়ে চিন্তিত। আমার মেয়েরা তো ক্রিকেট খেলে। আশা করছি, একদিন আফগানিস্তানেও এমন কিছু দেখতে পাব।’

ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলারও কথা বলেছেন এ নিয়ে। ট্রটের মতো বাটলারও আশা করছেন একদিন বদলাবে পরিস্থিতি, ‘আফগানিস্তানে নারী ও শিশুদের দুর্দশায় আমরা মর্মাহত। তবে আশা করছি কঠিন এই সময়ে এই ম্যাচ একটু হলেও আশা ও বিনোদন জোগাবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘বাইচ্চান্তরে লইয়া বড়া ও হান্দেশ খাইমু, ইলাই আমরার ঈদ’

দলা পাকানো চালের গুঁড়া চ্যাপটা করে ছোট ছোট বড়া বানানোর পর সেগুলো কড়াইয়ে দিচ্ছিলেন লাভলী বেগম (২৫)। চুলায় খড়ের আগুন কমে আসছিল বারবার। মাথা নিচু করে চুলার নিচ দিকে ফুঁ দিতে দিতে ধোঁয়ায় নাস্তানাবুদ অবস্থা। কুলায় যে পরিমাণ চালের গুঁড়া, তাতে ২০ থেকে ৩০টা বড়া হবে।

ঈদের আয়োজন বলতে কি শুধু এই কয়টি বড়া? লাভলী বলেন, ‘মাইয়ে (মা) কিছু গুড় আনছিলা। গুড়ের হান্দেশ (সন্দেশ) করছি। আর কিতা করমু। সকালে বাইচ্চান্তরে লইয়া বড়া ও হান্দেশ খাইমু। ইলাই আমরার ঈদ।’ কথা শেষের সঙ্গে সঙ্গে লাভলী বেগমের একটা দীর্ঘশ্বাস যেন হাওরের বাতাসে মিশে গেল। তাঁর পাশে তখন পাখির ছানার মতো বসা দুই সন্তান সাহানা (৫) ও আবির (৩)। তাদের চোখ কড়াইয়ে, তেলের ওপর ভাসতে থাকা বড়ার দিকে।

লাভলী বেগমের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওরপারের কান্দাহাটি গ্রামে। গতকাল রোববার পড়ন্ত বিকেলে ওই গ্রামে গিয়ে কথা হয় লাভলী ও তাঁর পরিবারের অন্যদের সঙ্গে। এর আগে গত বছরের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে বন্যার সময় ওই গ্রামের যাওয়ার পর প্রথম দেখা হয়েছিল। বন্যা সব শেষ করে দিয়ে গেছে তাঁদের। হাওরের ঢেউয়ে তখন ঘরটি ভেঙে পড়ে।

লাভলী তিন সন্তান নিয়ে মা সবুরা বেগমের সংসারে আছেন। বাবা নেই; নেই মানে অন্য আরেকজনকে বিয়ে করে চলে গেছেন বহু আগে। লাভলীরও একই অবস্থা, স্বামী আরেকটা বিয়ে করে আলাদা থাকেন। এখন সবুরার আটজনের সংসার। ছেলে জহুরুল ইসলামের (২০) স্ত্রী ও এক মেয়ে আছে। এই সংসার মূলত সবুরা বেগম ও ছেলে জহুরুল ইসলামের শ্রম-ঘামে চলে। সবুরা, জহুরুল দুজনই শ্রমিক। যখন যে কাজ পান, সেটাই করেন, কিন্তু অভাব যায় না।

ঘরের চুলায় তেলের বড়া ভাজছেন লাভলী বেগম। সুনামগঞ্জের দেখার হাওরপারের কান্দিগাঁও গ্রাম থেকে গতকাল রোববার বিকেলে

সম্পর্কিত নিবন্ধ