রিমান্ডে তাঁর শরীরে অ্যাসিড ছুড়ে মারেন ইসরায়েলি সেনারা, বললেন মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি
Published: 26th, February 2025 GMT
ইসরায়েলের সেনা হেফাজতে রিমান্ড চলাকালে দেশটির সেনারা তাঁর শরীরে অ্যাসিডসহ অন্যান্য দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ ছুড়ে নির্যাতন করেছেন বলে জানিয়েছেন মুক্তি পাওয়া এক ফিলিস্তিনি বন্দী।
ইসরায়েলি সেনাদের এমন নৃশংসতার বর্ণনা দেওয়া এই ফিলিস্তিনি হলেন মোহাম্মদ আবু তাবিলা। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরুর পর আবু তাবিলাকে অপহরণ করা হয়েছিল।
আবু তাবিলা বলেন, তাঁকে ভীষণভাবে মারধরও করা হয়েছে। তা থেকে বাদ যায়নি তাঁর চোখও। ইসরায়েলি সেনা হেফাজতে নিজের নির্মম অভিজ্ঞতার কথা স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তুলে ধরার সময় এসব কথা বলেন তিনি।
আবু তাবিলা আরও বলেন, গাজা সিটির সিভিল অ্যাফেয়ার্স অফিসের কাছের একটি এলাকা থেকে ইসরায়েলি সৈন্যরা তাঁকে অপহরণ করে আল-ইয়াজ্জি পরিবারের একটি বাড়িতে নিয়ে যান।
অ্যাসিড ও অন্যান্য রাসায়নিকের প্রভাবে তাঁর আঘাত পাওয়া চোখ আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কাপড় দিয়ে তাঁর চোখ শক্ত করে বাঁধতেন একজন সেনা। এতে রাসায়নিকের প্রভাবে আক্রান্ত স্থানে জ্বালা-যন্ত্রণা চলতেই থাকত।এ বাড়িতে অ্যাসিড, ক্লোরিন, থালাবাটি পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহৃত তরল পদার্থ, কাপড় ধোলাইয়ে ব্যবহার করা রাসায়নিক দ্রব্য, সাবান ও এয়ার ফ্রেশনার রাখা ছিল। সেনারা এসব দাহ্য রাসায়নিকে তাঁর শরীর ঝলসে দেন বলে জানান আবু তাবিলা।
আবু তাবিলা বলেন, শরীর ঝলসে দেওয়ার পর সেনারা তাঁর অবস্থা দেখে অধিকৃত পশ্চিম তীরে পাঠিয়ে দেন তাঁকে। নিষ্ঠুর নির্যাতনে পিঠ, হাত, মুখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে তৈরি হওয়া ক্ষতচিহ্ন সাংবাদিকদের দেখান তিনি।
‘আমার চোখও বাদ যায়নি (নির্যাতন থেকে)। সেনাদের একজন শক্ত কিছু দিয়ে মোড়ানো দস্তানা হাতে আমার চোখে ঘুষি মারতেন। মারধরের এক পর্যায়ে পড়ে যেতাম মাটিতে’, বলেন এই ফিলিস্তিনি।
আবু তাবিলা বলেন, অ্যাসিড ও অন্যান্য রাসায়নিকের প্রভাবে তাঁর আঘাত পাওয়া চোখ আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি আরও বলেন, কাপড় দিয়ে তাঁর চোখ শক্ত করে বাঁধতেন একজন সেনা। এতে রাসায়নিকের প্রভাবে আক্রান্ত স্থানে জ্বালা-যন্ত্রণা চলতেই থাকত।
আরও পড়ুনইসরায়েলের কারাগার: কেউ বেরোচ্ছেন নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে, কেউ ধর্ষণের শিকার বা মানসিক রোগী হয়ে০১ জানুয়ারি ২০২৫ওই বাড়িতে ছাড়াও অধিকৃত পশ্চিম তীরের বিভিন্ন স্থানে তাঁর ওপর নির্যাতন চালানো হতো বলে জানান আবু তাবিলা। নির্যাতনের ধরনগুলোর মধ্যে ছিল—মারধর থেকে শুরু করে অপমান ও ঠাট্টা-বিদ্রূপ। ক্ষুধা ও কনকনে ঠান্ডায় বসে থাকার সাজা তো ছিলই, জানান তাবিলা।
আমার চোখও বাদ যায়নি (নির্যাতন থেকে)। সেনাদের একজন শক্ত কিছু দিয়ে মোড়ানো দস্তানা হাতে আমার চোখে ঘুষি মারতেন। মারধরের এক পর্যায়ে পড়ে যেতাম মাটিতে।মোহাম্মদ আবু তাবিলা, সাবেক ফিলিস্তিনি বন্দীএই ফিলিস্তিনি বলেন, সেনা হেফাজতে থাকার সময় তাঁকে কোনো জামাকাপড় দেওয়া হয়নি। ঠান্ডা থেকে বাঁচতে দেওয়া হয়নি কোনো কম্বলও। এভাবে দেড় মাস বন্দী রেখে আহত অবস্থায় আল-রামলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে।
দু-তিন সপ্তাহ হাসপাতালে রেখে সেখান থেকে কুখ্যাত ওফার সামরিক কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় আবু তাবিলাকে।
আরও পড়ুনইসরায়েলের কারাগারে নির্যাতনের কথা বললেন মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিরা০২ ডিসেম্বর ২০২৩ইসরায়েলি কারাগারে ব্যাপক নির্যাতনইসরায়েলের কারাগারে আটক থাকা ফিলিস্তিনি ও মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীদের সাক্ষ্যে দেশটির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও ব্যাপক বন্দী নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
নির্যাতনের কিছু ধরনের মধ্যে রয়েছে দিনে ২৪ ঘণ্টা ও সপ্তাহের ৭ দিনই হাতকড়া পরিয়ে ও শিকলবন্দি করে রাখা। এমনকি ঘুম, খাওয়া ও শৌচাগারে যাওয়ার সময়ও বাঁধন খুলে না দেওয়া।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইসরায়েলের কট্টর-ডান রাজনীতিবিদ ইতামার বেন গেভির একটি ভিডিও পোস্ট করেন। এতে নেগেভ মরু এলাকায় অবস্থিত কেজিয়ত কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দীদের ওপর নির্যাতন চালাতে ও অপমানজনক আচরণ করতে দেখা যায়।সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইসরায়েলের কট্টর-ডান রাজনীতিবিদ ইতামার বেন গেভির একটি ভিডিও পোস্ট করেন। এতে নেগেভ মরু এলাকায় অবস্থিত কেজিয়ত কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দীদের ওপর নির্যাতন চালাতে ও অপমানজনক আচরণ করতে দেখা যায়।
ভিডিওর একটি দৃশ্যে এক বন্দীকে হাঁটু গেঁড়ে বসে কারাগারের দেয়ালে রং করতে দেখা যায়। এ সময় তাঁর দিকে অস্ত্র তাক করে ছিলেন একজন ইসরায়েলি সেনা।
বেন গেভির এ দৃশ্য নিয়ে এক্সে লেখেন, ‘কারাগারের দেয়ালটিতে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের স্লোগান লেখা ছিল। সেই লেখা এভাবে রং করে ঢাকতে বাধ্য করা হয় ওই বন্দীকে।’
আরও পড়ুননিউইয়র্ক টাইমসের তদন্তে ফিলিস্তিনি বন্দী নির্যাতনের যে রোমহর্ষ চিত্র উঠে এল১০ জুন ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ক আম র চ খ র একট অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে বিতর্ক, কমতে পারে অংশগ্রহণ
‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বৈশাখের অন্যতম আয়োজন। প্রতিবছর আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের নির্দিষ্ট ব্যাচের তত্ত্বাবধানে এবং শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের যৌথ প্রয়াসে আয়োজিত হয়। এবার ভিন্নতা ঘটায় আয়োজন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ২৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের একাংশ তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। ফলে এবার অংশগ্রহণ কমবে বলে তারা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চারুকলার ১৩তম ব্যাচের একজন শিক্ষার্থী সমকালকে বলেন, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনের সম্পূর্ণ অর্থ অনুষদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের শিল্পকর্ম বিক্রির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। এখানে কোনো বাণিজ্যিক বিষয় বা স্পন্সর থাকে না। চারুকলার রীতি অনুযায়ী যা এ বছর ২৬তম ব্যাচের দায়িত্ব হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু এবারের আয়োজনে সেই রীতি মানা হচ্ছে না। এতে শিক্ষার্থীদের সম্মতি ও সম্পৃক্ততা নেই। এটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিশ্বাস ও ধারণার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।’
সীমান্ত ঘোষ নামে চারুকলার এক ছাত্র ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, ‘বৈশাখ ১৪৩২-এ আমাদের ব্যাচ, আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে– ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। তবে এ আয়োজনকে ‘স্বজনপ্রীতিদুষ্ট ও দেশের পরিবর্তনকালীন সময়ে রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী’ আখ্যায়িত করেছে ২৬ ব্যাচ। আয়োজন ও আয়োজক কমিটিকে বর্জন করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার শোভাযাত্রা নিয়ে স্পষ্ট বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘এবারের বৈশাখ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ আয়োজনে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের চাটুকারিতাপূর্ণ মনোভাবের কারণে আমরা শিক্ষকদের আয়োজন করা বৈশাখের আনুষ্ঠানিকতা ও শোভাযাত্রা সমর্থন করছি না।’
ভাটা পড়বে আনন্দ আয়োজনে
প্রাক্তন ও বর্তমান একাধিক শিক্ষার্থী জানান, এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কমবে। চারুকলার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের তৈরি শিল্পকর্ম কেনার লোকও কমবে। সেই সঙ্গে এবার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার শঙ্কা রয়েছে। আয়োজন ঘিরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের একাংশের মধ্যে প্রথম বিতর্ক তৈরি হয় শহীদ আবু সাঈদের মোটিফ তৈরির সিদ্ধান্তে। দ্বিতীয় হচ্ছে, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর আয়োজনের নাম পরিবর্তনের ইঙ্গিতে। তৃতীয় বিতর্ক তৈরি হয়, নির্ধারিত ব্যাচকে দায়িত্ব না দেওয়ায়। এসব কারণে প্রাক্তন-বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে চারুকলা অনুষদের একজন শিক্ষক বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আয়োজন ও কমিটিকে বর্জন করেছে বলে শুনেছি। আর শিক্ষার্থীরা যে অভিযোগ তুলেছেন, সেটা ঠিক আছে। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন অনেক বেশি রাজনৈতিক হচ্ছে। এতে সবার অংশগ্রহণের যে স্বতঃস্ফূর্ততা, তা নষ্ট হয়ে গেছে।’ অনেকে জানান, তাদের ব্যাচ এবং পুরো চারুকলার সাধারণ শিক্ষার্থীরা এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা বর্জন করেছেন।
সার্বিক বিষয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম চঞ্চল সমকালকে বলেন, ১৯৮৯ সালে এই শোভাযাত্রা শুরু হয়। তখন থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এর আয়োজন করে। ২০০৬ সালে প্রতিবছর নির্ধারিত একটি ব্যাচকে আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে একটি ব্যাচ আয়োজন করলেও যে এ নিয়ে বিতর্ক ছিল না, তা নয়। সেখানে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হতো না। এ ছাড়া আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এই আয়োজন একাডেমিক কার্যক্রমের অংশ করা হবে। এ কারণে কোনো ব্যাচকে আলাদাভাবে দায়িত্ব দেওয়া যাচ্ছে না। ২৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা পাস করে বের হয়ে গেছে। তারা এসে কখনও বলেওনি যে, তারা আয়োজন করতে চায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ৯ ও ১২ মার্চ অনুষদের সিনিয়র শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করি। সেখানে কোনো নির্ধারিত ব্যাচকে দিয়ে আয়োজন না করানোর সিদ্ধান্ত হয়। ১৩ মার্চ ছাত্র-শিক্ষক সমন্বয়ে একটা বৈঠক হয়। সেখানে নানা ধরনের কমিটি ও উপকমিটি গঠন করা হয়। কমিটিগুলোতে বর্তমান ছাত্রদের যুক্ত করা হয়। তবে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এসে কাজ করতে চাইলে তাদেরও যুক্ত করা হচ্ছে।’