বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে সদ্য নিয়োগ পেয়েছেন মাসুমা রহমান তানি। যিনি একজন চলচ্চিত্র পরিচালক। সিনেমা নির্মাণের পাশাপাশি নাটকও নির্মাণ করেছেন। মুক্তির অপেক্ষায় তাঁর নির্মিত ‘ভালোবাসার প্রজাপতি’ সিনেমা। এতে অভিনয় করেছেন সাদিকা পারভিন পপি।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবু সালেহ মো.

মাহফুজুল আলম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন অ্যাক্ট, ১৯৫৭ এর ধারা ৯ ও ৯ (ডি) অনুযায়ী মাসুমা রহমান তানিকে অন্য যে কোনো পেশা, ব্যবসা কিংবা সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সংগঠনের সঙ্গে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে যোগদানের তারিখ থেকে তিন বছর মেয়াদে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হলো।

এ নিয়োগের অন্যান্য শর্ত চুক্তিপত্র দ্বারা নির্ধারিত হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পরই নতুন এমডির বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন বৈষম্যহীন চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির ব্যানারে একটি গ্রুপ। এফডিসির মূল ফটকে তারা নতুন এমডির বিরুদ্ধে মানববন্ধনও করেছেন। নতুন এমডি মাসুমা রহমান তানি প্রথম দিনের অফিস করতে এসেই তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখে পড়েন।

৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম বৈষম্যহীন চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির
গত রোববার এফডিসিতে ছিল নতুন এমডি মাসুমা রহমান তানির প্রথম দিনের অফিস। প্রথম দিনেই মুখোমুখি হন এক বিব্রতকর পরিস্থিতির। তাঁকে এমডি পদ থেকে অপসারণের দাবি জানিয়ে এফডিসির মূল ফটকের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যহীন চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটি। সমাবেশে তানিকে এমডির পদ থেকে অপসারণের জন্য ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন সংগঠনের উপদেষ্টা চিত্রনায়ক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জল। এ সময় উজ্জ্বল বলেন, ‘এফডিসিতে প্রশাসনিক কাজে যদি কোনো প্রশাসক আসে, আমাদের তো কোনো আপত্তি নেই। কারণ, এটা সরকারি জায়গা, একটা লোক চাকরি করতে আসবে, সে আসতেই পারে। এখানে চাকরি করতেই পারে। কিন্তু আপনি এমন একজনকে পাঠাচ্ছেন, যিনি অজ্ঞাতনামা আসামি আমাদের চোখে, আমরা তাঁকে চিনি না, জানি না, আমাদের ওপর আপনারা চাপিয়ে দেবেন, সেটা হবে না। আমরা সেটা প্রতিহত করব।’ কারও ভুল সিদ্ধান্তের দায় রাষ্ট্র বা জনগণ নিতে পারে না উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলন শেষে চিত্রনায়ক উজ্জ্বল বলেন, চব্বিশের রক্ত বৃথা যাবে না। রক্তে ভেজা বাংলাদেশে কোনো ফ্যাসিস্ট বা তার দোসরদের স্থান নেই। ভুল সিদ্ধান্তে ভুল মানুষকে এফডিসির এমডি নিয়োগ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। যোগ্য ও চলচ্চিত্রবান্ধব কাউকে এমডি নিয়োগ দিতে হবে। এ সময় বক্তব্য দেন বৈষম্যহীন চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক ও চলচ্চিত্র পরিচালক বদিউল আলম খোকন, চিত্রনায়ক হেলাল খান, শিল্পী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আরমান, অভিনয়শিল্পী এ বি এম সোহেল রশিদ, কেয়া চৌধুরী, শারমিন, চলচ্চিত্র পরিচালক নাসির উদ্দিন, জয়নাল আবেদিন, শাওন আশরাফ, শফিকুল ইসলাম, কাহিনিকার ও চিত্রনাট্যকার কাসেম আলী, ফিল্ম ক্লাবের সভাপতি নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

ফুলের মালা দিয়ে এমডিকে বরণ 
নানা অভিযোগ চলচ্চিত্র কলাকুশলীদের এক পক্ষ যখন নতুন এমডির অপসারণে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে; তার মধ্যেই গতকাল চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কলাকুশলীদের একটি পক্ষ নতুন এমডিকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন। মঙ্গলবার এফডিসির প্রশাসনিক ভবনে মাসুমা রহমান তানির অফিসে গিয়ে তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন তারা। এ সময় সেখানে ছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমিতির ২০২৩-২৪ মেয়াদের মহাসচিবের দায়িত্বে থাকা শাহীন সুমন।  এ সময় পরিচালক সমিতির কার্যকরি পরিষদের অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।  শাহিন সুমন সমকালকে বলেন, আমি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা। পরিচালকদের প্রাণের সংগঠনের ২০২৩-২৪ মেয়াদের পরিচালকের ভোটে নির্বাচিত হয়ে মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছি। তাই দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে এফডিসির নতুন এমডিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করে নিয়েছি আমরা।  এর পেছনে ভিন্ন কোনো কারণ নেই। সরকার যাঁকে ভালো মনে করে দায়িত্ব দেবেন আমরা তাঁকেই ফুল দিয়ে ওয়েলকাম করব। আমরা মূলত এফডিসিতে কাজের পরিবেশ চাই। আমরা তো সিনেমা নির্মাণ করি। প্রত্যাশা থাকবে যে-ই দায়িত্ব নিক, এফডিসিতে যেন কাজের পরিবেশ বজায় থাকে। সিনেমার শুটিংয়ের যাবতীয় সুযোগসুবিধা বাড়ানো হয়। 

নতুন এমডির ভাষ্য
এফডিসির এমডির দায়িত্ব নেওয়ার আগে তাঁর প্রধান পরিচয় হচ্ছে মাসুমা রহমান তানি একজন নির্মাতা। চলচ্চিত্র ও নাটক দুই মাধ্যমেই কাজ করতেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে এফডিসির এমডি পদ থেকে অপসারণের দাবিতে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটামের বিষয়ে ভাবতে চাইছেন না তিনি। মাসুমা রহমান তানির ভাষ্য, আমি এ দায়িত্বে একেবারেই নতুন। এখনও কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ নিয়ে একের পর এক মিটিং করছি। এখানে কী কী প্রক্রিয়ায় কাজ হয়, একজন এমডির দায়িত্ব কী, তা বোঝার চেষ্টা করছি। আশা করছি, দ্রুত সবকিছু আয়ত্তে আসবে। এফডিসিকে শতভাগ চলচ্চিত্রবান্ধব করতে পারব।

তবে তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে সে সম্পর্কে মুখ খুলেছেন তিনি। জানিয়েছেন, এসব অযৌক্তিক অভিযোগ। একেবারেই মিথ্যে। এসব নিয়ে না ভেবে আমার কাজটা করতে চাই। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এফড স রহম ন ত ন এফড স ত এফড স র ত র পর সরক র এ সময়

এছাড়াও পড়ুন:

তিন স্তরে কমছে ইন্টারনেটের দাম

নতুন তিনটি স্তরে ইন্টারনেটের মূল্য কমছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব।

সোমবার (২১ এপ্রিল) সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ তথ্য জানান তিনি।

ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব লিখেছেন, “নতুন তিনটি স্তরে ইন্টারনেটের মূল্য কমছে। ফাইবার অ্যাট হোমের ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করেছেন যে- আইটিসি পর্যায়ে ১০ শতাংশ, আইআইজি পর্যায়ে ১০ শতাংশ এবং এনটিটিএন বা ন্যাশনাল ট্রান্সমিশন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ মূল্য হ্রাস করবেন তারা। ”

এর আগে আইএসপি লাইসেন্স প্রাপ্ত কোম্পানিগুলোর অ্যাসোসিয়েশন থেকে পাঁচ এমবিপিএসের পরিবর্তে ৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএস ইন্টারনেট প্রদানের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।  

তারও আগে আন্তর্জাতিক গেটওয়ে পর্যায়ে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি সকল আইআইজি এবং আইএসপি গ্রাহকদের জন্য ১০ শতাংশ এবং পাইকারি গ্রাহকদের জন্য অতিরিক্ত ১০ শতাংশসহ মোট ২০ শতাংশ দাম কমিয়েছে।  

এ নিয়ে ইন্টারনেট লাইসেন্স রেজিমের মোট তিন থেকে চারটি স্তরে ইন্টারনেটের মূল্য কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাকি আছে শুধু মোবাইলসেবা দাতা ৩টি বেসরকারি কোম্পানির দাম কমানোর ঘোষণা। এরইমধ্যে সরকার মোবাইল কোম্পানিগুলোকে বিডব্লিউডিএম এবং ডার্ক ফাইবার সুবিধা দিয়েছে। 

তিনি আরো লিখেছেন, “এমতাবস্থায় বেসরকারি মোবাইল কোম্পানিগুলোর ইন্টারনেটের দাম না কমানোর কোনো ধরনের যৌক্তিক কারণ কিংবা অজুহাত অবশিষ্ট থাকে না।  সরকার মোবাইল সেবাদাতা কোম্পানিগুলোকে পলিসি সাপোর্ট দিয়েছে এবং সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় স্তরগুলোতে পাইকারি পর্যায়ে ইন্টারনেটের দামও কমিয়েছে। এখন তাদের জাতীয় উদ্যোগে শরিক হওয়ার পালা।” 

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী জানিয়েছেন, মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমানোর পদক্ষেপে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিও সামান্য কিছুটা কমে আসবে বলে আশা করি।  

ঈদুল ফিতরের দিন থেকে সরকারি মোবাইল সেবা দাতা কোম্পানি টেলিটক ১০ শতাংশ মূল্য ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছিল। সরকার আশা করে অতি দ্রুতই তিনটি বেসরকারি মোবাইল কোম্পানি অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে মোবাইল ইন্টারনেটের মূল্য পতনের ঘোষণা দেবে।  

সরকার এখানে দুই ধরনের মূল্য ছাড় আশা করে- প্রথমত, মার্চ মাসে এসআরও অ্যাডজাস্টমেন্ট বাবদ মোবাইল কোম্পানিগুলো যে মূল্য বাড়িয়েছিল সেটা কমাবে। (সরকার শুল্ক বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়ে তা থেকে সরে এসেছে, কিন্তু সেই মতে বর্ধিত মূল্য কমায়নি মোবাইল কোম্পানিগুলো। )

দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক গেটওয়ে/আইটিসি, আইআইজি এবং ন্যাশনাল ট্রান্সমিশন পর্যায়ে যতটুকু পাইকারি দাম কমানো হয়েছে তার সমানুপাতিক হারে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমাবে। বাংলাদেশের মোবাইল ইন্টারনেটের মানে ব্যাপক প্রশ্ন রয়েছে। মানের তুলনায় দাম অনেক বেশি। এমতাবস্থায় গ্রাহকস্বার্থে যৌক্তিক পদক্ষেপ নিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ঢাকা/হাসান/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ