৭২ ঘণ্টার আলটিমেটামের পরই এফডিসির এমডিকে বরণ
Published: 26th, February 2025 GMT
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে সদ্য নিয়োগ পেয়েছেন মাসুমা রহমান তানি। যিনি একজন চলচ্চিত্র পরিচালক। সিনেমা নির্মাণের পাশাপাশি নাটকও নির্মাণ করেছেন। মুক্তির অপেক্ষায় তাঁর নির্মিত ‘ভালোবাসার প্রজাপতি’ সিনেমা। এতে অভিনয় করেছেন সাদিকা পারভিন পপি।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবু সালেহ মো.
এ নিয়োগের অন্যান্য শর্ত চুক্তিপত্র দ্বারা নির্ধারিত হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পরই নতুন এমডির বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন বৈষম্যহীন চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির ব্যানারে একটি গ্রুপ। এফডিসির মূল ফটকে তারা নতুন এমডির বিরুদ্ধে মানববন্ধনও করেছেন। নতুন এমডি মাসুমা রহমান তানি প্রথম দিনের অফিস করতে এসেই তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখে পড়েন।
৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম বৈষম্যহীন চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির
গত রোববার এফডিসিতে ছিল নতুন এমডি মাসুমা রহমান তানির প্রথম দিনের অফিস। প্রথম দিনেই মুখোমুখি হন এক বিব্রতকর পরিস্থিতির। তাঁকে এমডি পদ থেকে অপসারণের দাবি জানিয়ে এফডিসির মূল ফটকের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যহীন চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটি। সমাবেশে তানিকে এমডির পদ থেকে অপসারণের জন্য ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন সংগঠনের উপদেষ্টা চিত্রনায়ক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জল। এ সময় উজ্জ্বল বলেন, ‘এফডিসিতে প্রশাসনিক কাজে যদি কোনো প্রশাসক আসে, আমাদের তো কোনো আপত্তি নেই। কারণ, এটা সরকারি জায়গা, একটা লোক চাকরি করতে আসবে, সে আসতেই পারে। এখানে চাকরি করতেই পারে। কিন্তু আপনি এমন একজনকে পাঠাচ্ছেন, যিনি অজ্ঞাতনামা আসামি আমাদের চোখে, আমরা তাঁকে চিনি না, জানি না, আমাদের ওপর আপনারা চাপিয়ে দেবেন, সেটা হবে না। আমরা সেটা প্রতিহত করব।’ কারও ভুল সিদ্ধান্তের দায় রাষ্ট্র বা জনগণ নিতে পারে না উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলন শেষে চিত্রনায়ক উজ্জ্বল বলেন, চব্বিশের রক্ত বৃথা যাবে না। রক্তে ভেজা বাংলাদেশে কোনো ফ্যাসিস্ট বা তার দোসরদের স্থান নেই। ভুল সিদ্ধান্তে ভুল মানুষকে এফডিসির এমডি নিয়োগ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। যোগ্য ও চলচ্চিত্রবান্ধব কাউকে এমডি নিয়োগ দিতে হবে। এ সময় বক্তব্য দেন বৈষম্যহীন চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক ও চলচ্চিত্র পরিচালক বদিউল আলম খোকন, চিত্রনায়ক হেলাল খান, শিল্পী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আরমান, অভিনয়শিল্পী এ বি এম সোহেল রশিদ, কেয়া চৌধুরী, শারমিন, চলচ্চিত্র পরিচালক নাসির উদ্দিন, জয়নাল আবেদিন, শাওন আশরাফ, শফিকুল ইসলাম, কাহিনিকার ও চিত্রনাট্যকার কাসেম আলী, ফিল্ম ক্লাবের সভাপতি নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
ফুলের মালা দিয়ে এমডিকে বরণ করে নিয়েছেন পরিচালকরা
নানা অভিযোগ চলচ্চিত্র কলাকুশলীদের এক পক্ষ যখন নতুন এমডির অপসারণে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে; তার মধ্যেই গতকাল চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কলাকুশলীদের একটি পক্ষ নতুন এমডিকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন। মঙ্গলবার এফডিসির প্রশাসনিক ভবনে মাসুমা রহমান তানির অফিসে গিয়ে তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন তারা। এ সময় সেখানে ছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমিতির ২০২৩-২৪ মেয়াদের মহাসচিবের দায়িত্বে থাকা শাহীন সুমন। আরও ছিলেন নির্মাতা কবিরুল ইসলাম রানা ও সাইফ চন্দনসহ একাধিক নির্মাতা। বিষয়টি নিয়ে শাহিন সুমন সমকালকে বলেন, আমি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা। পরিচালকদের প্রাণের সংগঠনের ২০২৩-২৪ মেয়াদের পরিচালকের ভোটে নির্বাচিত হয়ে মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছি। তাই দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে এফডিসির নতুন এমডিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করে নিয়েছি আমরা। এর পেছনে ভিন্ন কোনো কারণ নেই। সরকার যাঁকে ভালো মনে করে দায়িত্ব দেবেন আমরা তাঁকেই ফুল দিয়ে ওয়েলকাম করব। আমরা মূলত এফডিসিতে কাজের পরিবেশ চাই। আমরা তো সিনেমা নির্মাণ করি। প্রত্যাশা থাকবে যে-ই দায়িত্ব নিক, এফডিসিতে যেন কাজের পরিবেশ বজায় থাকে। সিনেমার শুটিংয়ের যাবতীয় সুযোগসুবিধা বাড়ানো হয়।
নতুন এমডির ভাষ্য
এফডিসির এমডির দায়িত্ব নেওয়ার আগে তাঁর প্রধান পরিচয় হচ্ছে মাসুমা রহমান তানি একজন নির্মাতা। চলচ্চিত্র ও নাটক দুই মাধ্যমেই কাজ করতেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে এফডিসির এমডি পদ থেকে অপসারণের দাবিতে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটামের বিষয়ে ভাবতে চাইছেন না তিনি। মাসুমা রহমান তানির ভাষ্য, আমি এ দায়িত্বে একেবারেই নতুন। এখনও কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ নিয়ে একের পর এক মিটিং করছি। এখানে কী কী প্রক্রিয়ায় কাজ হয়, একজন এমডির দায়িত্ব কী, তা বোঝার চেষ্টা করছি। আশা করছি, দ্রুত সবকিছু আয়ত্তে আসবে। এফডিসিকে শতভাগ চলচ্চিত্রবান্ধব করতে পারব।
তবে তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে সে সম্পর্কে মুখ খুলেছেন তিনি। জানিয়েছেন, এসব অযৌক্তিক অভিযোগ। একেবারেই মিথ্যে। এসব নিয়ে না ভেবে আমার কাজটা করতে চাই।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এফড স এফড স র এমড রহম ন ত ন এফড স ত ত র পর সরক র এমড ক
এছাড়াও পড়ুন:
রমজানে বিশেষ অভিযান চালাবে বিএসটিআই
শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান জানিয়েছেন, পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্যে ভেজাল রোধে নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি পবিত্র রমজান মাসে বিশেষ অভিযান চালাবে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)।
তিনি বলেছেন, রমজান শুরুর এক মাস আগেই বিএসটিআইর সার্ভিল্যান্স কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এ কার্যক্রমের আওতায় পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, ভেজাল প্রতিরোধ এবং পণ্যের ওজন ও পরিমাপে কারচুপি রোধে মোবাইল কোর্ট ও সার্ভিল্যান্স কার্যক্রমে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মতিঝিলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন শিল্প উপদেষ্টা। পবিত্র রমজানে মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ভেজাল প্রতিরোধ ও মান নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে বিএসটিআইর বিশেষ কার্যক্রম সম্পর্কে এ প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।
এ সময় শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান, বিএসটিআইর মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম, শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিএসটিআই’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, পবিত্র রমজানে ঢাকা মহানগরীতে বিএসটিআইর নিজস্ব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় প্রতিদিন তিনটি করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। সারা দেশে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বিএসটিআইর সব বিভাগীয়, জেলা ও আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে প্রতিদিন একাধিক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পাশাপাশি দেশব্যাপী বিএসটিআইর সার্ভিল্যান্স টিমের অভিযান ও বাজার মনিটরিং কার্যক্রম আরো জোরদার করা হবে।
বিএসটিআইর পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থা যেমন: বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এসব অভিযানে অংশ নেবে।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে ৪৭১টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। মামলা করা হয় ৪২৮টি। জরিমানা করা হয় ২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। কারাদণ্ড দেওয়া হয় তিন জনকে। কারখানা সিলগালা করা হয় ২৩টি। ওজনে কারচুপির কারণে ৩৮২টি কোর্ট পরিচালনা করে ৬১৫টি মামলা করা হয়। জরিমানা করা হয় ২ কোটি ৩৭ লাখ ২৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৩৯২টি পেট্রোল পাম্পের ইউনিট সিলগালা করা হয়।
অনলাইনে নকল ও অবৈধ পণ্য বিক্রয়, বিতরণ ও সরবরাহ বন্ধে অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে অনলাইনে বিক্রি বা বিতরণ করতে না পারে, সেজন্য ইতোমধ্যে বিটিআরসিকে চিঠি দিয়েছে বিএসটিআই। বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে প্রায় ১৫টি অনলাইন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ক্রেতা ও ভোক্তাদের প্রতি বিএসটিআইর অনুরোধ, অনলাইনে পণ্য কেনার আগে বিএসটিআইর অনুমোদন নিশ্চিত হয়ে পণ্যের অর্ডার করুন। প্রয়োজনে বিএসটিআইর হটলাইন নম্বরে (১৬১১৯) ফোন করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম তথ্য-উপাত্ত ও ভিডিওসহ পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্যে ভেজাল রোধে বিএসটিআইর কার্যক্রম উপস্থাপন করেন।
ঢাকা/এএএম/রফিক