বার্সেলোনার মাঠ লুইস কম্পানিসে যেন ফুটবল ম্যাচ নয় মিলল এক থ্রিলার সিরিজের দেখা। যার শুরু ‘চক্ষু চড়কগাছ’ হওয়া ঘটনা দিয়ে। কোপা দেল রে’র সেমিফাইনালের প্রথম লেগের ম্যাচ। প্রথম মিনিটেই গোল অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার হুলিয়ান আলভারেজের। অ্যান্তোনিও গ্রিজম্যানের গোলে ষষ্ঠ মিনিটে অ্যাথলেটিকোর লিড ২-০!

গল্পের কিন্তু ওটা শেষ নয়। কেবল শুরু। কারণ খানিক বাদেই, দুই মিনিটের ব্যবধানে বার্সার জোড়া গোল এবং ম্যাচে সমতা। ১৯ মিনিটে গোল করেন বার্সার স্প্যানিশ মিডফিল্ডার পেদ্রি। ২১ মিনিটে গোল করেন তরুণ ডিফেন্ডার পাও কুবার্সি। ম্যাচে ২-২ গোলের সমতা! 

প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগেই দুই গোলে পিছিয়ে থেকে শুরু করা বার্সেলোনার লিড। ম্যাচের ৪১ মিনিটে গোল করেন বার্সার আরেক স্প্যানিশ ডিফেন্ডার ইনিগো মার্টিনেজ। ম্যাচে বার্সা ৩-২ গোলের লিড নিয়ে শেষ করে প্রথমার্ধ। এরপর দ্বিতীয়ার্ধের ৭৪ মিনিটে গোল করেন বার্সার পোলিশ স্ট্রাইকার রর্বাট লেভানডভস্কি। ম্যাচে বার্সা ২-০ গোলে পিছিয়ে থেকে শুরু করে ৪-২ গোলের লিডে পৌঁছে যায়! 

বার্সার নামের পাশে তখন দুর্দান্ত এক কামব্যাকের গল্প লেখার অপেক্ষা। ৪-২ গোলের লিড নেওয়ার পর ম্যাচ ওখানেই শেষ ধরে নেওয়া স্বাভাবিক। তাও আবার ম্যাচটা বার্সার ঘরের মাঠে। কিন্তু থ্রিলার ম্যাচে কামব্যাকের গল্প লিখেছে ডিয়াগো সিমিওনের অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ। ম্যাচের ৮৪ মিনিটে মার্কোস লরিয়েন্তে গোল করে ব্যবধান ৪-৩ করে ফেলেন। যোগ করা সময়ে নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার অ্যালেক্সজান্ডার সরলর্থ ম্যাচ ৪-৪ গোলের সমতায় শেষ করেন। 

প্রথম লেগে থ্রিলার কোন সিনেমার যেন দুই কিস্তি শেষ হলো। এখন সিকুয়েল আনার অপেক্ষা। গল্পের শেষ টানার অপেক্ষা। কামব্যাক থ্রিলারের যে সিকুয়েল ম্যাচ মঞ্চস্থ হবে অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের ঘরের মাঠ ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানোয়। ম্যাচটি হবে ৩ এপ্রিল। গল্পের পট প্রস্তুতের জন্য পাওয়া যাচ্ছে বেশ সময়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ ল কর ন ক মব য ক প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

পবিত্র রমজানের শিক্ষা বিস্তৃত হোক জীবনব্যাপী

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ হলো সালাত বা নামাজ। ইমানের পরেই নামাজ। পবিত্র রমজান মাস হলো নামাজের মাস, যেমন তারাবিহর নামাজ ও কিয়ামুল লাইল নামাজের পাশাপাশি পবিত্র রমজানে সাহ্‌রির বদৌলতে তাহাজ্জুদ নামাজের অভ্যাস গড়া সহজ হয়; এশা ও ফজরের নামাজ জামাতে পড়ার সুযোগ বৃদ্ধি পায়। ফজরের নামাজ আগেভাগে পড়ে ঘুমানোর কারণে সকালে ইশরাক নামাজ পড়ার সুবিধা হয়।

পবিত্র রমজানের কারণে কাজের চাপ কম থাকায় চাশত নামাজ ও জোহরের আগে আওয়াবিন নামাজ আদায়ের সুযোগ হয়। বিকেলে অফিস বা কর্মস্থল থেকে আগে ফেরার কারণে আসরের নামাজ জামাতে পড়া যায়। একসঙ্গে ইফতার করার সুবাদে মাগরিবের নামাজের জামাতও পাওয়া যায়। অন্যান্য নফল নামাজও বেশি পড়া হয়। পবিত্র রমজানেই নামাজের পূর্ণতা আসে।

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের তৃতীয় স্তম্ভ হলো জাকাত। সাহাবায়ে কিরাম পবিত্র রমজানেই জাকাত প্রদান করতেন। পবিত্র রমজানে জাকাত প্রদানে চান্দ্রবর্ষের হিসাব অনুযায়ী সঠিকভাবে জাকাত প্রদান করা সহজ হয়।

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের চতুর্থ স্তম্ভ হলো হজ। পবিত্র রমজানে ওমরাহ পালন করলে নবীজি (সা.)–এর সঙ্গে হজ করার সমান সওয়াব পাওয়া যায়। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের পঞ্চম স্তম্ভ হলো সিয়াম বা রোজা। রোজা হলো পবিত্র রমজানের প্রধান অনুষঙ্গ। আগুন যেমন সোনাকে বিশুদ্ধ করে, তেমনি রোজা ইমানদারের কামনা–বাসনাকে দহন করে তাঁকে খাঁটি বান্দায় পরিণত করে।

রোজার ফিদইয়া পবিত্র রমজানেরই অংশ। রোজা একটি শারীরিক ও মানসিক ইবাদত। কিন্তু অসুস্থ ও দুর্বল ব্যক্তির জন্য কাজার পাশাপাশি অপারগতায় ফিদইয়ার বিধান রাখা হয়েছে, যা আর্থিক ইবাদত। এতে বোঝা যায় রোজার পরিধি কত ব্যাপক।

রোজার কাফফারা পবিত্র রমজানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। রোজা শারীরিক ইবাদত হওয়া সত্ত্বেও দুর্বলচিত্তের ব্যক্তি যদি রোজা ভঙ্গ করেন, তবে তাঁর জন্য কাফফারার বিধান রয়েছে। এটি হলো দাস মুক্তি দেওয়া অথবা ৬০ জন গরিবকে দুই বেলা পরিপূর্ণ আহার করানো অথবা একাধারে ৬০টি রোজা রাখা। অর্থাৎ যদি কেউ রমজান মাসের একটি রোজা ভঙ্গ করেন, তবে তাঁকে ৬০ দিনের রোজা রাখতে হবে অথবা কাফফারা আদায় করতে হবে। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, দান–খয়রাত ও সমাজকল্যাণই পবিত্র রমজানের অন্যতম উদ্দেশ্য।

রোজা শেষে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হয়। দাতা ও গ্রহীতার সুবিধার্থে পবিত্র রমজানেও এটি প্রদান করা যায়। ঈদের সঙ্গে ফিতরার সম্পৃক্ততার কারণে এর নাম হয়েছে ঈদুল ফিতর। সদকাতুল ফিতর হলো ঈদের আনন্দ সর্বজনীন করার উপায়। ধনী–গরিব সবাই যেন ঈদের আনন্দে শামিল হতে পারেন, সে জন্য এই ব্যবস্থা। সদকাতুল ফিতর পবিত্র রমজানে রোজা পালনের শুকরিয়াস্বরূপ এবং এটি রোজাকে পূর্ণতা দেয়।

পবিত্র রমজানের বিশেষ উপহার হলো ইতিকাফ। মানবজীবনে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের অন্যতম মাধ্যম হলো ইতিকাফ। পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকে ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। এখান থেকেও পবিত্র রমজানের মহিমা বোঝা যায়। এক দশকের কম সময়ের ইতিকাফ নফল হলেও এই ইতিকাফ অন্য সময়ের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি ফজিলতের। ইতিকাফ বছরের যেকোনো সময় করা যায়, তবে সর্বনিম্ন সীমা হলো এক দিন অর্থাৎ সূর্যাস্তের আগে থেকে পরের দিনের সূর্যাস্ত পর্যন্ত।

পবিত্র রমজানের অনন্য উপহার হলো শবে কদর। এটি এমন এক রাত, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। হাজার মাস মানে প্রায় ৮৩ বছর ৪ মাস, যা একটি মানবজীবনের সময়ের সমান। সুতরাং পবিত্র রমজানের সুফল জীবনব্যাপী।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ