মঙ্গলবারের (২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) সৌদি প্রো লিগে আল ওয়েহদার বিপক্ষে আল নাসরের ম্যাচটাকে নিয়ে বহু ভাবেই লিখা যায়। নির্ধারিত সময়ের ১ ঘন্টা পরে শুরু হলো ম্যাচটি। কারণ মক্কায় অতিথী দল আল নাসরের বাস যে দুর্ঘটনার শিকার হয়। বল মাঠে গড়ালে আগের দুই ম্যাচে জয় বঞ্চিত আল নাসর তাদের মহাতারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর গোলে এগিয়ে যায়। পরে সাদিও মানে আরেকটি গোল করেন ম্যাচের অতিম মুহুর্তে।

এই দুই তারকার গোলে সৌদি প্রো লিগের ম্যাচে আল ওয়েহদার বিপক্ষে আল নাসর ২-০ ব্যবধানে জয় লাভ করে। তবে রোনালদো এই ম্যাচে দারুণ এক উদারতার নিদর্শন স্থাপন করেন ম্যাচের অন্তিম মূহুর্তে। এই পর্তুগিজ মহাতারকা নিজের আদায় করা পেনাল্টিটা ছেড়ে দেন সতীর্থ সাদিও মানেকে। স্পট কিক থেকে গোল করতে ভুল করেননি সেনেগালিস তারকা।

মক্কার কিং আবদুল আজিজ স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায়। তবে রোনালদো-মানে-পিওলিরা দুর্ঘটনার শিকার হওয়ায় মাঠে যথা সময়ে পৌঁছাতে পারেননি। তাই রাত ১১টায় বল মাঠে গড়ায়।

আরো পড়ুন:

মিশরকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন সেনেগাল, সালাহকে মানের সান্ত্বনা

ফিলিস্তিনে হামলার প্রতিবাদে সোচ্চার মুসলিম ফুটবলাররা

ম্যাচের প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকার পর ৪৮ মিনিটে আবদুলরহমান ঘারিবের ক্রসে ছুটে গিয়ে দার্শনীয় এক হেডে দলের প্রথম গোলটি করেন রোনালদো। এই গোলের ফলে ৫ বারের ব্যালন ডি-অর জয়ী তারকা ‘১০০০’ গোলের দিকে আরও এক পা এগিয়ে গেলেন। এটি ছিল পর্তুগিজ তারকার ক্যারিয়ারের ৯২৫তম গোল। এই মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে আল নাস্‌রের হয়ে রোনালদোর মোট গোল এখন ২৫টি।

এরপর যোগকরা সময়ের অষতম মিনিটে রোনালদোর ফ্রি-কিক ডি বক্সে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের হাতে লাগলে রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। আল নাসরের হয়ে পর্তুগিজ তারকা নিজেই পেনাল্টি নিয়ে থাকেন। তবে এই মহাতারকা গতরাতে সুযোগ দিলে সতীর্থ মানেকে। সএই ম্যাচের আগে টানা ৯ ম্যাচ গোল খরায় ছিল সেনেগালিস তারকা।

সৌদি প্রো লিগে লিগে ২১ ম্যাচে ১৭ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে আছেন ৪০ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। ১৮ ম্যাচে ১৬ গোল নিয়ে দুইয়ে আছেন তারই সাবেক সতীর্থ কারিম বেনজেমা। 
আল নাসর লিগে ২২ ম্যাচে ৪৭ পয়েন্ট নিয়ে তিনে আছে। সমান ম্যাচে ৫১ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আল হিলাল। এক ম্যাচ কম খেলা আল ইত্তিহাদ ৫৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে।

ঢাকা/নাভিদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল আল ন স

এছাড়াও পড়ুন:

হাত জোড় করছি, ফিরিয়ে দিন সন্তানদের

‘কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন। তবু সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে। আমি হাত জোড় করছি, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন।’

গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এমন আকুতিই জানান অপহৃত দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান। বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে ফেরার পথে গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহৃত হন। এ অপহরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফকে (প্রসীত) দায়ী করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।

পিসিপির কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, ইউপিডিএফ অপহৃতদের অভিভাবকদের একটি স্থানে ডেকেছে। বিকেলে অভিভাবকরা সেখানকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’ তিনি অবিলম্বে অপহৃতদের সুস্থ শরীরে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, অপহরণকারীরা সকালে একটি স্থানের নাম বলেছিল অভিভাবকদের। পরে পরিবর্তন করে আরেকটি স্থানে ডাকে। বিকেল থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। 

অপহৃতরা হলেন– চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও পিসিপির চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো। তাদের মধ্যে রিশন চাকমার বাড়ি রাঙামাটির জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামেরছড়িতে। লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নে; একই জেলায় বাড় অলড্রিন ত্রিপুরার; রাঙামাটির বরকল সদরের চাইল্যাতুলিতে দিব্যি চাকমা ও একই জেলার বাঘাইছড়ির বটতলায় মৈত্রীময় চাকমার।

এর আগে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুদূরে পানছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। গত বুধবার ভোরে কুকিছড়া থেকে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে। 

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ১৮৩ আদিবাসী শিক্ষার্থী যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথী ভুবন চাকমার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হলেও তাদের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থি। অপহৃতদের উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।

ইতোমধ্যে অপহৃতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসলে ঘটনাটি কী, কাদের হেফাজতে তারা রয়েছে। যৌথ অভিযানে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ