অনেকে বাল্যবয়সে মেয়ে বিয়ে দেওয়াকে সুন্নত বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন। তারা বলতে চান, নবীজি (সা.)–ও তো তার কন্যাকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়েছেন। অনেকে আবার আয়েশা (রা.)–র কম বয়সে তাঁর সঙ্গে নবীজি (সা.) বিয়ে নিয়ে সমালোচনার ঝড় তুলতে চান।

নবীজি (সা.)–এর মেয়ে ফাতিমার (রা.) বিয়ে আমাদের সামনে একটি উদাহরণ। নবীজি (সা.)–এর অন্য তিন মেয়ের বিয়ে হয়েছে মক্কায় থাকাকালে, ইসলামের বিধান আসার আগে। তাদের ব্যাপারে এমন প্রমাণও মেলে না যে সাবালক হওয়ার আগেই নবীজি (সা.

) তাদের বিয়ে দিয়েছেন।

বুরাইদাহ (রা.) বলেন, ফাতিমা (রা.)–র জন্য আবু বকর (রা.) এবং ওমর (রা.) বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। নবীজির (সা.) বলেছিন, সে এখনও ছোট। এরপর আলি (রা.) প্রস্তাব পাঠালে নবীজি (সা.) তাঁর সঙ্গে ফাতিমাকে বিবাহ দেন। (নাসায়ি, হাদিস: ৩২২১)

আরও পড়ুনআলহামদুলিল্লাহ সর্বোত্তম দোয়া১০ আগস্ট ২০২৩

এই হাদিস এবং এ বিষয়ে অন্যান্য হাদিসের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, আলির (রা.) প্রস্তাব এসেছে আবু বকর ও ওমরের প্রস্তাবের পরপরই। সময়ের ব্যবধান তেমন ছিল না। তাই ‘সে এখনও ছোট’ নবীজির (সা.) এ-কথার মানে এই নয় যে, ফাতিমা তখনও বিবাহের যোগ্য হননি। তিনি ছোট ছিলেন তাঁর সঙ্গে আবু বকর (রা.) এবং ওমরের (রা.) বয়সের ব্যবধানের তুলনায়। সে তুলনায় আলি (রা.) ও ফাতিমার (রা.) বয়স ছিল কাছাকাছি।

সুতরাং কন্যার জন্য কল্যাণকর দিক কোনটি, সেদিকে লক্ষ রাখা এবং যথাসম্ভব তা বাস্তবায়ন করা প্রত্যেক পিতার কর্তব্য। এটাই সুন্নাহ।

বিয়ের সময় ফাতিমার (রা.) বয়স কত ছিল? ঐতিহাসিক মত হলো তিনি নবীজি (সা.)–এর নবুয়তপ্রাপ্তির পাঁচ বছর আগে জন্ম নেন। এটাই বেশি গ্রহণযোগ্য মত। নবুয়তের পর মক্কায় নবীজি (সা.) নামাজের সেজদায় গেলে কাফেররা একবার তার মাথায় উটের নাড়িভুঁড়ি চাপিয়ে দেয়। ফাতিমা (রা.) তখন দৌড়ে এসে নবীজি (সা.)–এর মাথা থেকে জঞ্জাল সরাতে সাহায্য করেন। বোঝা যায়, তাঁর বয়স তখন অন্তত সাত।

আরও পড়ুনযে ১২টি আমলে রিজিক বাড়ে০৯ আগস্ট ২০২৩

আরেকটি মত হলো, নবীজি (সা.)–এর ৪১ বছর বয়সে তার জন্ম হয়। (আল-মাওয়াহিবুল লাদুনিয়্যাহ, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৬৩)

তবে দ্বিতীয় হিজরিতে আলি (রা.)–র সঙ্গে তাঁর বিয়ের বিষয়ে কারও দ্বিমত নেই। (মিন মায়ীনিস সিরাত, দ্বিতীয় সংস্করণ, পৃষ্ঠা ২২৫)

প্রথম মতানুসারে বিয়ের সময় ফাতিমার (রা.) বয়স ছিল ২০ বছর। এটাই বেশি যুক্তিযুক্ত। দ্বিতীয় মত ধরা হলেও তাঁর বয়স তখন ১৫ বছরের কম হয় না। সে যুগের প্রচলন অনুযায়ী এ বয়স আরব মেয়েদের বিয়ের জন্য অযৌক্তিক ছিল না।

আয়েশা (রা.)–কে বিয়ে করার মতো ফাতিমা (রা.)–কে বিয়ে দেওয়াও ছিল নবীজি (সা.)–র একটি আমল। একটির উল্লেখ করে অন্যটি ভুলে গেলে চলবে না। আয়েশা (রা.)–র বয়স বিয়ের সময় ছিল ছয় বছর এবং বাসর যাপনের নয় বছর। (বুখারি, হাদিস: ৫,১৩৩)

এর বিশেষ এক কারণ ছিল। উপযুক্ত না হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের বেলায় তাড়াহুড়া করে বিয়ের ব্যাখ্যায় আয়েশা (রা.) নিজেই জানিয়েছেন, নবীজি (সা.) আমাকে বলেছেন, আমি স্বপ্নে দেখেছি, একদল ফেরেশতা তোমাকে এক টুকরা রেশমি কাপড়ে জড়িয়ে এনেছে। একজন বলল, এ আপনার স্ত্রী। আমি ওপর থেকে কাপড় সরালাম, দেখি তুমি। আমি বললাম, এ যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, তাহলে আমি বাস্তবায়ন করব। বুখারির বর্ণনায় আছে, দুবার তোমাকে স্বপ্নে দেখেছি। মুসলিমের বর্ণনায় আছে, তিন রাত স্বপ্নে দেখেছি। (বুখারি, হাদিস: ৩,৮৯৫; মুসলিম, হাদিস: ২৪৩৮)

নবীদের স্বপ্নও অহি। একই স্বপ্ন বারবার দেখা দ্রুত আকদ করার নির্দেশ দেয়। অর্থাৎ, এই বিয়ে ছিল আল্লাহ একটি আদেশ।

আরও পড়ুনঅকালমৃত ও গর্ভপাত হয়ে যাওয়া শিশুরা হবে নাজাতের উপায়০৮ আগস্ট ২০২৩

আয়েশা (রা.) বলেন, দুইবার সতীনরা সমবেত হয়ে আমার বিরুদ্ধে নবীজি (সা.)–কে অভিযোগ জানালেও তিনি বিমুখ থাকেন। তৃতীয়বার নবীজি (সা.) বলেন, আয়েশার বিষয়ে আমাকে কষ্ট দিও না। আল্লাহর শপথ, আয়েশার (রা.) ছাড়া তোমাদের কারও সঙ্গে বিছানায় থাকাকালে অহি নাজিল হয়নি। (বুখারি, হাদিস: ৩,৭৭৫)

বোঝা যায়, আয়েশা (রা.)–কে আল্লাহ তায়ালা বিশেষ এই বৈশিষ্ট দিয়েছিলেন।

অহির মাধ্যমে এই বিয়ের আদেশ দেওয়া এবং কেবল তারই ঘরে অহি নাজিলের রহস্য নবীজি (সা.)–এর ইন্তেকালের পর যখন তিনি জ্ঞানবতী মহীয়সীরূপে আবির্ভূত হন, তখন উন্মোচিত হয়। তিনি ছিলেন উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে বড় নারী ফকিহ। বড় বড় সাহাবি তাঁর বক্তব্যে নিজের মত শুধরে নিতেন এবং তাঁর ফতোয়া গ্রহণ করতেন। (যাদুল মাআদ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১০৬)

তাঁর কক্ষ মসজিদে নববী সংলগ্ন হওয়ায় তিনি সহজেই নবীজি (সা.)–এর বক্তব্য, হাদিস ও বিধিবিধান শোনার কাজে লেগে থাকতে পারতেন। কোনো বিষয় ছুটে গেলে নবীজি (সা.)–কে প্রশ্ন করে জেনে নিতেন। এটাই তাকে এই বিরল যোগ্যতা অর্জনের পথ করে দেয়।

আরও পড়ুনসুরা ইয়াসিনে আছে জীবন ও মৃত্যুর কথা১০ আগস্ট ২০২৩

আয়েশা (রা.)–র বর্ণিত হাদিসের সংখ্যার দিকে তাকালেও তাঁর অবস্থান ও যোগ্যতা পরিষ্কার হয়ে যায়। তিনি দুই হাজার দুইশ দশটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। নবীজি (সা.)–র বাকি সব স্ত্রীর বর্ণিত হাদিসের সর্বমোট পরিমাণ এর তিনভাগের একভাগ হবে না। (আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যাতুস সাহিহিয়্যা, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৬৪৯)

প্রায় অর্ধ-শতাব্দি পর্যন্ত ইলম ও ফতোয়ায় সাহাবিদের অনন্য ভরসাস্থল ছিলেন তিনি। আবু মুসা আশয়ারি (রা.) বলেন, আমরা রাসুলের সাহাবিগণ যখনই হাদিস সর্ম্পকিত সমস্যার মুখে পড়ে আয়েশার শরণাপন্ন হতাম, তাঁর কাছে অবশ্যই সমাধান পেতাম। (তিরমিজি, হাদিস: ৩,৮৮৩)

মাসরুক ইবনে আজদা বলেন, অনেক প্রবীণ সাহাবিকেও দেখেছি তাঁর কাছে ‘ফারায়েয’ বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ২৪২)

এসব যোগ্যতা অর্জনের এর একমাত্র কারণ নবীজির (সা.) দীর্ঘ সন্নিধ্য। সাওদার (রা.) পরে তিনিই নবীজি (সা.)–এর নৈকট্য সবচেয়ে বেশি পেয়েছেন। দ্রুত বিবাহ ছাড়া এ সান্নিধ্য কিছুতেই সম্ভব হতো না। আয়েশার (রা.) বিবাহ-ঘনিষ্ঠ ঘটনাবলিও প্রমাণ করে যে এই বিবাহ ছিল একটি বিশেষ ব্যতিক্রম। অনুসরণের ক্ষেত্রে বিশেষকে সাধারণের ওপরে প্রাধান্য দেওয়া যায় না।

তাই পিতার জন্যে নবীজির (সা.) প্রকৃত সুন্নাত হলো কন্যার জন্য পাথির্ব ও পরকালীন উভয় দিক বিবেচনায় রেখে কল্যাণকর সিদ্ধান্ত নেওয়া।

আরও পড়ুনজান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন যে নারী১১ আগস্ট ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র বর ণ আল ল হ আয় শ র র জন য আগস ট র বয়স

এছাড়াও পড়ুন:

পুঁজিবাজারে মূলধন বেড়েছে ৫ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা

বিদায়ী সপ্তাহে (২৩ থেকে ২৭ মার্চ)  দেশের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থান হলেও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) পতনে মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এ সময়ে ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন কমলেও সিএসইতে বেড়েছে। তবে বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসই ও সিএসইতে বাজার মূলধন বেড়েছে ৫ হাজার ৬৮৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

শনিবার (২৯ মার্চ) ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য মতে, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৭.৪৬ পয়েন্ট বা ০.৩৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২১৯ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ২৬.৮১ পয়েন্ট বা ১.৪২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৯১৪ পয়েন্টে, ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১০.০৯ পয়েন্ট বা ০.৮৭ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ১৬৮ পয়েন্টে এবং ডিএসএমইএক্স সূচক (এসএমই ইনডেক্স) ১.৬৩ পয়েন্ট বা ০.১৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯০ পয়েন্টে।

বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৮৬৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৭১ হাজার ৫১৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ২ হাজার ৩৪৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৬২৭ কোটি ১১ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৩৮৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৭৫৭ কোটি ২২ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৯৩টির, দর কমেছে ১৬১টির ও দর অপরিবর্তিত ৪২ রয়েছে টির। তবে লেনদেন হয়নি ১৭টির।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৮ পয়েন্ট বা ০.১২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৫৪১ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসই-৩০ সূচক ০.৮১ শতাংশ বেড়ে ১২ হাজার ২৭ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স সূচক ০.০৮ শতাংশ কমে ৮ হাজার ৮৪২ পয়েন্টে, সিএসআই সূচক ০.১০ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ১১৩ পয়েন্টে এবং এসইএসএমইএক্স (এসএমই ইনডেক্স) ০.৭৭ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৮০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২ হাজার ৩ কোটি ৭ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৬৬৩ কোটি ২ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ৩ হাজার ৩৪০ কোটি ৫ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ৫০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২৮ লাখ  টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ২২ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইতে মোট ১৮২টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১০০টির, দর কমেছে ১৫৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৩টির শেয়ার ও ইউনিট দর।

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ