বিরল এক মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী হচ্ছে বিশ্ববাসী। পৃথিবী থেকে একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে সৌরজগতের সাতটি গ্রহ। জোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘প্ল্যানেটারি প্যারেড’ বা গ্রহের কুচকাওয়াজ। গতকাল মঙ্গলবার, আজ বুধবার ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার সূর্যাস্তের পর এই দৃশ্য দেখা যাওয়ার কথা। এরপর ২০৪০ সাল পর্যন্ত এমন দৃশ্য অবলোকনের সুযোগ পাবেন না এ গ্রহের বাসিন্দারা।

সৌরজগতের যে সাত গ্রহ এককাতারে এসেছে সেগুলো হলো মঙ্গল, বৃহস্পতি, ইউরেনাস, শুক্র, নেপচুন, বুধ ও শনি। এর মধ্যে বুধ, শুক্র, বৃহস্পতি ও মঙ্গল গ্রহ দেখা যাবে খালি চোখে। দিগন্তের নিম্নরেখায় অবস্থান করার কারণে খালি চোখে শনি গ্রহ দেখা হবে কঠিন। আর ইউরেনাস ও নেপচুনকে দেখতে হলে প্রয়োজন হবে টেলিস্কোপের।

মেঘমুক্ত আকাশ থাকলে এ দৃশ্য ভালোভাবে দেখা যাবে। তবে এককাতারে সাত গ্রহের দেখা মিলবে খুবই অল্প সময়ের জন্য। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে শনি ও বুধও অস্ত যাবে বলে এই দুই গ্রহের দেখা পাওয়াটা হবে কঠিন।

লন্ডনভিত্তিক রয়্যাল অবজারভেটরি গ্রিনউইচের জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড ব্লুমার বলেন, এক সারিতে সাতটি গ্রহের দেখা পাওয়ার এ এক বিরল সুযোগ। এ দৃশ্য দেখার জন্য সূর্যাস্তের পর কয়েক মিনিট মাত্র সময় পাওয়া যাবে। কারণ, এরপরই তারা দিগন্তে মিলিয়ে যাবে। তবে এরপরও শুক্র, বৃহস্পতি ও মঙ্গল—এই তিন গ্রহকে বেশ খানিকটা সময় ধরে দেখা যাবে।

পৃথিবীসহ সৌরজগতের আটটি গ্রহ একই কক্ষপথে থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। তবে তাদের প্রদক্ষিণ করার গতি ভিন্ন ভিন্ন হয়। গ্রহগুলোর গতি ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় কখনো কখনো কিছু গ্রহ সূর্যের একই পাশে সারিবদ্ধ হয়ে প্রদক্ষিণ করতে থাকে। গ্রহগুলো যদি সূর্যের ডানদিকে থেকে প্রদক্ষিণ করতে থাকে, তখন সেগুলো পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান হয়।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

লিটারে ১৮ টাকা দাম বাড়াতে চান আমদানিকারকরা

কর ছাড়ের সুবিধা শেষ হওয়ায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে চায় এ খাতের আমদানিকারক পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারে ১৮ এবং খোলা সয়াবিন লিটারে ১৩ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। বাজারে এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় বিক্রেতাদের মধ্যে তেল সংগ্রহ ও মজুত বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। অন্যদিকে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। 

ছোট ব্যবসায়ীরা বলছেন, তেলের দাম বাড়ানোর আগে কোম্পানিগুলো সরবরাহ কমিয়ে দেয়। এতে খুচরা ব্যবসায়ীরা পড়েন বিপদে। কারণ তেল না থাকলে অন্য পণ্য বিক্রি কমে যায়। 

রমজান উপলক্ষে ভোজ্যতেলে কর ছাড়ের সুবিধার মেয়াদ শেষ হবে আগামী সোমবার। এর পরদিন ১ এপ্রিল থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৮ টাকা বাড়িয়ে ১৯৩ টাকা আর পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৮৩ টাকা বাড়িয়ে ৯৩৫ টাকা করার ঘোষণা দিয়েছেন ভোজ্যতেলের ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেল ও পাম অয়েল লিটারে ১৩ টাকা বাড়িয়ে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করেছেন তারা। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই চিঠিতে শুল্ককর অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় মূল্য সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, আগামী ১ এপ্রিল থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে সয়াবিন ও পাম অয়েল বাজারজাত করতে হবে। 

ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ানোর এমন প্রস্তাব নিয়ে নিত্যপণ্যের বাজারে বেশ আলোচনা চলছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মালিবাগ, তেজকুনিপাড়া ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ছোট ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ তেল সংগ্রহ ও মজুত বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে খোলা তেলের ক্ষেত্রে এ প্রবণতা দেখা গেছে। তবে বাজারে পাঁচ লিটারের বোতলের সরবরাহ দুই-তিন মাস ধরেই কম। 
তেজকুনিপাড়ার মায়ের দোয়া স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. হেলাল সমকালকে বলেন, কয়েক মাস ধরেই কোম্পানি বোতলজাত তেল খুব কম দিচ্ছে। দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিলে সরবরাহ আরও কমিয়ে দিবে তারা। 
কারওয়ান বাজারের আব্দুর রব স্টোরের বিক্রয়কর্মী রায়হান মিয়া বলেন, তেল না থাকলে ক্রেতা অন্য পণ্য কিনতে চান না। দাম বাড়ানোর আগে কোম্পানি তেল ছাড়ে না বাজারে। এ জন্য হয়তো কেউ কেউ মজুত বাড়ানোর চেষ্টা করে। 

তবে দাম বাড়ানোর এমন প্রস্তাবে বেশ উদ্বিগ্ন ক্রেতা। গতকাল কারওয়ান বাজারে বিল্লাল হোসেন নামের এক ক্রেতা সমকালকে বলেন, এবার রমজানে জিনিসপত্রের দাম কিছুটা কম ছিল। এখন ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর বাহানা করছে। এক লাফে লিটারে ১৮ টাকা বাড়লে গরিব মানুষের কষ্ট হবে। 

রোজার আগে দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ভোজ্যতেলের শুল্ককরে যে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হয়েছিল, তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩১ মার্চ। এই অব্যাহতির মেয়াদ বাড়বে কিনা, এখনও সেই ঘোষণা দেয়নি সরকার। এর আগেই দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের দাবি, ভ্যাট অব্যাহতির এই সুবিধা উঠে গেলে আমদানির খরচ বাড়বে। ফলে তখন তাদের দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকবে না। 

সর্বশেষ গত ৯ ডিসেম্বর বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে প্রতি লিটার ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর পাঁচ লিটারের দর ৮৫২ এবং খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলের লিটার ১৫৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যদিও রোজার শুরুতে বাজারে এর চেয়ে বেশি দরে বিক্রি হয়েছিল ভোজ্যতেল। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ