রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীল হতে হবে
Published: 26th, February 2025 GMT
এটা স্বীকার করতে হবে যে অপরাধ দমনে সরকারের নেওয়া আগের পদক্ষেপগুলো যথাযথ ছিল না। এমনকি বহু ঢাকঢোল পিটিয়ে যে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ বা দুষ্কৃতীবিরোধী অভিযান চালানো হলো, গত দুই সপ্তাহেও সেটা ইতিবাচক বার্তা দিতে পারেনি।
এত দিন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক বলে দাবি করে আসছেন, বাস্তবের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। পুলিশের বরাতে ডেইলি স্টার-এর প্রতিবেদনে ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের অপরাধের তুলনামূলক পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে।
এতে দেখা যায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ডাকাতি ঘটেছে ৩৯টি আর ২০২৫ সালে ৭১টি। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ছিনতাই হয়েছে ১১৪টি আর একই সময়ে ২০২৫ সালে হয়েছে ১৭১টি। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে খুনের ঘটনা ছিল ২৩১টি। ২০২৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৯৪টি। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অপহরণের সংখ্যা ছিল ৫১, ২০২৫ সালে ১০৫।
এখানে বলা জরুরি যে উল্লিখিত তথ্যের কোনোটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। ১৭ কোটি মানুষের দেশে অপরাধের মাত্রা এত কম হলে তো জননিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হতো না। এত অভিযানেরও দরকার পড়ত না। মামলা কম হওয়ার কারণ পুলিশ ও বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থার অভাব। তাঁরা মনে করেন, থানা-পুলিশের কাছে গিয়ে তেমন লাভ হবে না। দ্বিতীয়ত, থানায় মামলা করতে গেলেও নানা রকম হয়রানির শিকার হতে হয়। অনেক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, তঁারা থানায় ছিনতাইয়ের ঘটনার মামলা করতে গেলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা মামলা নেননি। বলেছেন, ছিনতাই লেখা যাবে না, বলতে হবে চুরি হয়েছে। থানায় কম মামলা হলে পুরস্কার পাওয়া যায়, বেশি হলে তিরস্কার। তাহলে কর্মকর্তারা কেন তিরস্কৃত হতে যাবেন?
রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকে পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল—এই যুক্তি সরকারের সাড়ে ছয় মাস পর খাটে না। পুলিশের পাশাপাশি আরও কয়েকটি বাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত আছে। বিচারিক ক্ষমতা নিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত আছেন। এরপরও কেন এত খুন, ডাকাতি, ছিনতাই ও নারী নিগ্রহের ঘটনা?
সর্বশেষ গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও নৌবাহিনী যৌথ টহল শুরু করেছে। ঢাকা শহরে অনেক জায়গায় তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে। এর আগে সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকে পরিস্থিতি টের পাবেন।’
এর আগে সচিবালয়ে সরকার আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক কোর কমিটির বৈঠক হয়। এই তল্লাশি কেবল ঢাকায় সীমিত থাকবে, না দেশের অন্যান্য স্থানেও চলবে, সেটি পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। কোনো অভিযান বিশেষ এলাকায় সীমিত থাকলে আইনশৃঙ্খলার সার্বিক উন্নতি আশা করা যায় না।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজটি এতটাই জটিল যে কেবল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে না। এই কাজে নিয়োজিত বাহিনীগুলোর সব সদস্যকেই সততা, নিষ্ঠা ও সক্ষমতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এই অবনতির পেছনে রাজনৈতিক দলগুলোরও দায় কম নয়। চাঁদাবাজি, দখলবাজির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে। দল থেকে বহিষ্কার করার পরেও পরিস্থিতি উন্নতি হয়নি। এ পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে সাধারণ অপরাধীরা। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকেও আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
অপরাধীদের পাকড়াও করতে সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলেছে। এগুলো ইতিবাচক বলে ধারণা করি। কিন্তু অভিযান শুরু করার আগেই যদি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ‘আত্মতৃপ্তিতে’ ভোগেন, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা কম। আর যদি অপরাধ দমনকে ‘কর্তব্য’ হিসেবে নেন, তাহলে ইতিবাচক ফল পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০২৪ স ল র জ ন য় র ত ২০২৫ স ল র জন ত ক পর স থ ত অপর ধ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘মৃত্যুর দিন গুনতে থাক গুলি করুম ঠিক মাথায়’
আধিপত্য বিস্তার ও স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এইচ এম সুমন হালদারকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২০২৪ সালের ৭ জুলাইয়ের এ ঘটনায় পদটি শূন্য হওয়ায় ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবু সিদ্দিক বেপারিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কয়েক মাস যেতেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকেও গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়ে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে দেয়ালে দেয়ালে।
পোস্টারে লেখা হয়েছে, ‘মৃত্যুর দিন গুনতে থাক, মৃত্যু খুব কাছে তোর। এবার আমি তোরে গুলি করুম, ঠিক মাথায়। আইতাছি কিছুদিন পরে প্রস্তুতি নে মরার জন্য আপ্পু বেপারি।’ এমন হুমকি পেয়ে পাঁচগাঁও ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবু সিদ্দিক বেপারি ওরফে আপ্পু বেপারি ইউএনওকে বিষয়টি জানান। তাঁর পরামর্শে টঙ্গিবাড়ী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তিনি। পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এতে কারা জড়িত, তা শনাক্ত করতে পারেনি।
এ পরিস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকলেও ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে হত্যার হুমকির পর আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই গত মঙ্গলবার রাতে কাপড় পেঁচিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের বৈদ্যুতিক মিটারে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার সকালে ইউপি সচিব এ দৃশ্য দেখে ইউএনওকে জানান। পরে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরিষদের নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এসব ঘটনায় কারা জড়িত, তা কেউ বলতে পারছেন না।
এমন পরিস্থিতিতে ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, সচিব, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উদ্বেগে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবু সিদ্দিক বেপারি বলেন, ‘আমাকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়ার পর ইউনিয়ন পরিষদের বৈদ্যুতিক মিটারে কাপড় পেঁচিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে মিটারের চারপাশ আগুনে
পুড়ে গেছে। বুধবার সকালে পরিষদে গিয়ে ইউপি সচিব আগুন দেওয়ার ঘটনা দেখতে পেয়ে আমাকেসহ উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন। খবর পেয়ে ইউএনও মহোদয় সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।’
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৭ জুলাই বেলা দেড়টার দিকে আধিপত্য ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাঁচগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান এইচ এম সুমন হালদারকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরদিন ৮ জুলাই তাঁর ছোট ভাই ইমন হালদার বাদী হয়ে সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মিলেনুর রহমান মিলনসহ সাতজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চারজনকে আসামি করে মামলা করেন। এ মামলায় তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অন্যরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।
টঙ্গিবাড়ী থানার ওসি মো. মহিদুল ইসলাম বলেন, গুলি করে হত্যার হুমকির ঘটনায় করা জিডির তদন্ত করছে পুলিশ। মিটারে আগুন দেওয়ার ঘটনার বিষয়টিও জেনেছেন। ঘটনার নিবিড় তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৈদ্যুতিক মিটারে আগুন এবং হত্যার হুমকির বিষয়টি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অবহিত করেছেন বলে জানান ইউএনও মো. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, থানায় সাধারণ ডায়েরির পাশাপাশি নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ইউনিয়ন পরিষদে দ্রুত সিসি ক্যামেরা স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।