রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে (সাজেক ভ্যালি) আগুন লাগার পর টানা আড়াই ঘণ্টা ধরে জ্বলেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে পৌঁছানোর আগেই পুড়ে যায় ৩৪টি রিসোর্ট, ৩৫টি বসতবাড়ি, ২০ দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ৭টি রেস্তোরাঁ।

দেশের অন্যতম ব্যস্ত এই পর্যটন এলাকায় কোনো ফায়ার স্টেশন না থাকায় আগুনে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বেশি। এ ছাড়া অপরিকল্পিত রিসোর্ট-কটেজ নির্মাণ, কটেজ-রিসোর্টে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকার কারণেও আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো অগ্নিমহড়া হয়নি এই পর্যটনকেন্দ্রে।

সাজেকের বাসিন্দা ও রিসোর্ট-কটেজ মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সোমবার বেলা পৌনে একটার দিকে প্রথমে রুইলুই ভ্যালির হেডম্যানের বাসভবনের পাশে অবস্থিত ইকো ভ্যালি রিসোর্টে আগুন লাগে। সেখানকার গ্যাসের সিলিন্ডারের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর পাশে অবকাশ রিসোর্টেও আগুন ধরে যায়। পরে একের পর এক স্থাপনায় আগুন ছড়ায়।

বেলা পৌনে একটার দিকে আগুন লাগলেও সাজেক থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দীঘিনালা ফায়ার স্টেশন থেকে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এসে পৌঁছায় বেলা তিনটার দিকে। এর আধা ঘণ্টা পর ৫৭ কিলোমিটার দূরের খাগড়াছড়ি ফায়ার স্টেশনের গাড়ি আসে। এরপর রাঙামাটি, বান্দরবান ও মাটিরাঙ্গা ফায়ার স্টেশন থেকেও গাড়ি আসে সন্ধ্যার আগে। সব মিলিয়ে ১১টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে যুক্ত হয়। বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।

তীব্র পানির সংকটের কারণে সাজেকে আগুন নেভানোর জন্য পর্যাপ্ত পানি পাননি বাসিন্দারা। তাই দীর্ঘ সময় ধরে আগুন জ্বলতে দেখা ছাড়া তাঁদের আর কিছুই করার ছিল না। পর্যটনকেন্দ্রের শিবমন্দির এলাকা থেকে গির্জা পর্যন্ত প্রায় আড়াই শ মিটার এলাকায় রিসোর্ট-কটেজ, বসতঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সড়কের দুই পাশে কোনো কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। সব মিলিয়ে আগুনে ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি টাকার মতো বলে দাবি করেন রিসোর্টের মালিকেরা।

সাজেকে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পর্যটনকেন্দ্রটিতে ১২৬টির মতো রিসোর্ট গড়ে উঠলেও কোনোটিতে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র (ফায়ার এক্সটিংগুইশার) নেই। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো অগ্নিমহড়াও হয়নি এখানে। আগুন নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে জরুরি পরামর্শও কখনো তাঁরা পাননি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। এ কারণে এই কেন্দ্রে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকবার আগুন লেগেছে। গত ২০১৭, ২০২১ ও ২০২৩ সালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে সাজেকে।

আগুনে পুড়ে বিরানভূমিতে পরিনত হয়েছে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক রুইলুই পর্যটন কেন্দ্র।গতকাল দুপুরে তোলা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

সাজেকের পর্যটনকেন্দ্রে আগুন, কারণ জানতে পাঁচ সদস্যের কমিটি

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে (রুইলুই ভ্যালি) আগুনের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে আগুনের ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে পাঁচজন সদস্য থাকবেন। তাঁরা কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেবেন। এ ছাড়া সাজেক এলাকায় এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়েও সুপারিশ করবে তদন্ত কমিটি।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মো. মোবারক হোসেনকে আহ্বায়ক করা হয়েছে তদন্ত কমিটিতে। বাকি চার সদস্য হলেন বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আক্তার, বাঘাইছড়ি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম এবং রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিসের একজন সহকারী পরিচালক।

গতকাল সোমবার সাজেক ইউনিয়নের রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রের রিসোর্ট-কটেজ ও বসতঘরে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। বেলা ১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা চার ঘণ্টা ধরে জ্বলতে থাকা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় ৯৪টির অধিক রিসোর্ট-কটেজ ও বসতঘর। সাজেকে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন না থাকায় খাগড়াছড়ি থেকে অন্তত ১১টি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আগুন লাগার প্রায় তিন ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পর্যটনকেন্দ্রে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করুন
  • ধ্বংসস্তূপে তন্নতন্ন করে খুঁজেও অক্ষত কোনো জিনিস পেলেন না থাংয়া লুসাই
  • সাজেকের পর্যটনকেন্দ্রে আগুন, কারণ জানতে পাঁচ সদস্যের কমিটি
  • সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে আগুন