গুলবাদিনের সেই পেশিতে ‘টান নাটক’, বললেন ‘হলিউডেও কাজ করতে পারি’
Published: 26th, February 2025 GMT
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ঘটনা। সুপার এইটের ম্যাচে বাংলাদেশ আফগানিস্তানকে হারালে সেমিফাইনালে যাওয়ার সুযোগ হতো অস্ট্রেলিয়ার। আর রান রেটের মারপ্যাঁচে আফগানিস্তান বাংলাদেশকে কঠিন সমীকরণে হারিয়ে দিলে সহজেই চলে যাবে সেমিফাইনালে।
আফগানিস্তানকে ১১৫ রানে আটকে দিয়েও বাংলাদেশ ম্যাচটা জিততে পারেনি। ৮ রানে হেরে নিজেরা হতাশায় পুড়েছে, অস্ট্রেলিয়াকেও পুড়িয়েছে। অন্যদিকে আফগানিস্তান প্রথমবার নিশ্চিত করে বৈশ্বিক আসরের সেমিফাইনাল।
বৃষ্টিবিঘ্নিত সেই ম্যাচে রোমাঞ্চের কমতি ছিল না। বিশেষ করে আফগান অলরাউন্ডার গুলবাদিন নাইবের পেশিতে ‘টান’ নিয়ে কম কথা হয়নি। আসলেই তা চোট ছিল নাকি অভিনয়, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এখনো। বৃষ্টি আইনে সেন্ট ভিনসেন্টে ১১৩ রানের তাড়ায় ছিল বাংলাদেশ। বৃষ্টির আভাস। ডিএলএস পদ্ধতিতে বাংলাদেশ পিছিয়ে তখন ২ রানে। ডাগআউট থেকে আফগানিস্তানের প্রধান কোচ জোনাথন ট্রট সংকেত দিচ্ছিলেন, সময় নিতে।
ওই ইশারা দেখেই স্লিপে ফিল্ডিং করা নাইব হঠাৎ পায়ে টান পড়ার ভান করে শুয়ে পড়েন। এমন একটা ভঙ্গি করেন যেন ভয়ংকর চোটে পড়েছেন তিনি। ফিজিও ও সতীর্থ নাভিন উল হকের কাঁধে ভর করে মাঠ ছাড়া নাইব কিছুক্ষণের মধ্যে মাঠে নেমে বোলিং করেন। জয়ের পর দৌড়ে করেছেন উদযাপন।
নাইবের এই কাণ্ডে বিতর্ক ও সমালোচনার ঝড় উঠেছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। লম্বা সময় পর নাইব সেই ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেন। তার সঙ্গে ছিলেন আফগান ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজও।
আইসিসির ফটোশুটে নেওয়া ভিডিওতে রহমানউল্লাহ বলেছেন, ‘‘আমি আসলে নিশ্চিত নই, সত্যিই চোট ছিল নাকি অভিনয়। সেটা আসলে ক্র্যাম্প ছিল তাই না? গুলবাদিন বলেছেন, ক্র্যাম্প হয়েছিল তার। আমরা কেউই নিশ্চিত নই। লোকে এ নিয়ে মজা নিচ্ছে। হয়তো তিনি চোটই পেয়েছিলেন। কারণ এটা তার শরীর। আমরা কিছু জানি না। কিছুটা অভিনয়ও হতে পারে। মাঝেমধ্যে ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং ছাড়াও দলের প্রয়োজন পড়ে আপনার।’’
রহমানউল্লাহ যখন ওই মুহূর্ত নিয়ে কথা বলছিলেন তখন গুরবাজ ক্যামেরার পেছনে ছিলেন। হাসতে হাসতে ক্যামেরার সামনে গিয়ে তাকে বলতে দেখা যায়, ‘‘ম্যাচটি খুবই উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। তবে, আমার কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু, লোকে সেটাকে বড় ইস্যু বানিয়েছে। আমার জন্য ভালোই হয়েছে তা। ম্যাচ শেষে অনেক তারকা অভিনেতা আমাকে বার্তা পাঠিয়েছিল। সবাই বলছিল, আমি হলিউডে কাজ করতে পারি।’’
রহমানউল্লাহ এরপর যোগ করেন, ‘‘মজার বিষয় হলো, ক্র্যাম্প হওয়ার ৩-৪ মিনিট পর গুলবাদিন বাকি সবার চেয়ে দ্রুতগতিতে দৌড়াচ্ছিলেন। এ এক আশ্চর্যজনক ঘটনা। আমিও সেই একই চিকিৎসকের কাছে যেতে চাই। আমারও চোট পেয়েছিল, কিন্তু চিকিৎসক আমাকে দৌড়ানোর জন্য তৈরি করতে পারেননি।’’
ঢাকা/ইয়াসিন/রাজীব
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আফগ ন স ত ন
এছাড়াও পড়ুন:
গুদাম উন্নত করা দরকার
বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে কিনা, তা নিয়ে নানা শঙ্কার খবর আসছে। প্রতি বছর এই শঙ্কা থাকে, লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয় না। এর পেছনে কিছু সাধারণ কারণ থাকলেও এলাকাভেদে এর ভিন্নতা আছে। তবে দিনের শেষে ফলাফল– চাষির দীর্ঘশ্বাস।
দেশে বোরো ধানের ৪৭ শতাংশ উৎপাদন করেন ক্ষুদ্র চাষিরা। ৩৩ শতাংশ চাষি নগদ টাকায় জমি ভাড়া নিয়ে চাষ করেন, আর ২৬ শতাংশ ভাগচাষি। উৎপাদন খরচ বেশি আর দাম কম হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এই তিন ধরনের চাষি। তারা মূলত ঋণ করে ও পারিবারিক অর্থ বিনিয়োগ করে ধান চাষ করেন। এর পর উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে ধান বেচে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। সরকার প্রতি বছর যে চাল সংগ্রহ করে, তাতে মূলত চালকল মালিকরা লাভবান হন।
এসব কারণে প্রতি বছর ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন তলানিতে থাকে। উপজেলা শহরের খাদ্যগুদামে গিয়ে কৃষকরা ধান বিক্রির ধকল পোহাতে চান না। তাই সরকার নির্ধারিত মূল্যের অনেক কম দামে ব্যবসায়ীদের কাছে ধান বিক্রি করে দেন। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে রাজ্যভেদে কৃষিপণ্যের সরকারি সংগ্রহের পরিমাণ হচ্ছে মোট উৎপাদনের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। উৎপাদন খরচের ওপর তারা ২০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা যোগ করে সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। যদিও কৃষকদের দাবি থাকে ৫০ শতাংশ মুনাফার।
আমাদের দেশে কৃষিকাজে খরচ বেশি, মুনাফা কম। মূল্যস্ফীতির চাপও গ্রামেই বেশি, এতে নাকাল অবস্থায় কৃষক। তাদের চিকিৎসার অভাব, শিক্ষার অভাব। মাঠে তাদের সাপে ছোবল দেয়, বজ্রপাতেও মারা যায়। কিন্তু তার কোনো প্রতিবিধান সচরাচর হয় না। সরকারি সাহায্য-সহায়তার ক্ষেত্রেও তাদের হিস্যা কম। বাংলাদেশের একজন কৃষক বছরে কৃষি উপকরণ ভর্তুকি পায় মাত্র ৯০০ টাকা। চীনে এর পরিমাণ ২০ হাজার টাকা। ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও বলিভিয়ায় কৃষকপ্রতি ভর্তুকির পরিমাণ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। এ বঞ্চনার কথা সবার অনুধাবন করা দরকার। বৈষম্যবিরোধী নীতিমালা প্রণয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসা দরকার আমাদের গরিব ও নিরীহ কৃষকদের।
সরকার যদি খাদ্য সংগ্রহের পুরোটা ধান হিসেবে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি কিনে নেয়, তাহলে তা কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের জন্য ভালো হবে। সরকারি গুদামগুলোতে কৃষক ধান বিক্রি করতে গেলে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় ধানের আর্দ্রতা নিয়ে। কৃষকের বড় অংশ সাধারণত ভেজা ধান বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। কিন্তু সরকার ১৪ শতাংশের বেশি আর্দ্রতা থাকলে তা কিনতে চায় না। এ সমস্যার সমাধান হিসেবে স্থানীয় পর্যায়ে আর্দ্রতা অনুযায়ী ধানের দাম ঠিক করা যেতে পারে।
সরকার চালকলগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ধান সেখানে ভাঙাতে পারে। দেশের বেশির ভাগ বড় চালকলে ধান শুকানোর আধুনিক ব্যবস্থা আছে। ধানের আর্দ্রতা বেশি হলে চালকল মালিক দ্রুত তা সরকারি গুদাম থেকে নিয়ে যাবেন। আর আর্দ্রতা কম থাকলে সরকার তা গুদামে রেখে দিয়ে সুবিধামতো সময়ে ভাঙানোর ব্যবস্থা করবে।
কৃষকের কাছ থেকে ধান সরাসরি কিনতে পারলে সেটা খুবই ভালো কাজ হবে। তাহলে কৃষক দাম পাবেন। কিন্তু তার আগে এত ধান, এত কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি কেনার মতো অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রথমেই গুদামগুলোকে উন্নত করতে হবে। ভবিষ্যতে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে অটোরাইস মিলেও বিনিয়োগ করার কথা ভাবতে হবে।
লেখখ : ড. জাহাঙ্গীর আলম খান, কৃষি অর্থনীতিবিদ