‘চাঁদের অমাবস্যা’ অঞ্জনকে ছাড়াই দেখতে হবে
Published: 26th, February 2025 GMT
অঞ্জনের সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৯৬ সালের দিকে, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আমাদের অফিসে। আলাপের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আমরা ‘আপনি’ থেকে ‘তুমি’তে নেমে পড়ি। বক্তা মূলত অঞ্জনই ছিল, আমি ছিলাম মুগ্ধ শ্রোতা। শিল্প–সাহিত্যের নানা বিষয়ে আমাদের আড্ডা জমে ওঠে। অঞ্জন পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে পরিচালনা নিয়ে পড়ে এসেছে জেনে ওর প্রতি আরও আগ্রহী হয়ে উঠলাম।
অঞ্জন তখন জাদুঘরের চাকরি ছেড়ে বোহেমিয়ান জীবনযাপন করছে। আমাদের ধানমন্ডির অফিসে তখন আড্ডার সঙ্গে সঙ্গে থাকা–খাওয়ারও সুবন্দোবস্ত ছিল। অঞ্জন থেকে গেল অফিসে, দিনের পর দিন আড্ডা চলতে থাকল। তারেক শাহরিয়ার, পুলক গুপ্ত, আদিত্য কবির, নূরুল আলম আতিক, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, আকরাম খানসহ তখনকার সময়ের তুর্কি তরুণেরা এই আড্ডার নিয়মিত সদস্য। আড্ডার মূল বিষয় চলচ্চিত্র। আকিরা কুরোসাওয়া, তারকোভ্স্কি, ব্রেসোঁ, কিম কি–দুক, আব্বাস কিয়ারোস্তামি, মজিদ মাজেদি, সত্যজিৎ, ঋত্বিক হয়ে আদুর গোপালকৃষ্ণন পর্যন্ত ঠেকত। এই যে আমার সিনেমার বিশ্বদর্শন, অঞ্জন তার প্রথম সূত্র। আমার স্ত্রী নাসরিন তখন অন্তঃসত্ত্বা। উনি তখন এক মাস ঢাকায় থাকেন তো দুই মাস থাকেন বাবার বাড়িতে। বাসা খালি পড়ে থাকে। অঞ্জনকে প্রস্তাব দিলাম, আমার বাসায় এসে থাকতে। অঞ্জনও রাজি হয়ে গেল।
আমার বাড়িতে আসার পর অঞ্জনের আরেক প্রতিভা আবিষ্কার করলাম। সেটা হলো রান্না। এত ভালো রান্নার হাত আমি আমার জীবনে খুব কম দেখেছি। সে বছর খুব বড় বড় ইলিশ পড়েছিল পদ্মায়। ওর কাছ থেকে ভালো ইলিশ এবং মন্দ ইলিশ চেনা শিখেছি। ইলিশ কাটা নিয়েও ওর ছিল ভীষণ খুতখুতানি। কেমন করে ইলিশ কাটতে হবে, কাটার লোককে সেই নির্দেশনা সে নিজেই দিত। একদিনের কথা মনে আছে, মাছ কাটার লোকটা কাটতে গিয়ে সামান্য ভুল করে ফেলে, এই নিয়ে অঞ্জনের কী রাগ!
সে সময় প্রায় টানা ছয় মাস আমরা একসঙ্গে ছিলাম। আমার চলচ্চিত্র নির্মাতা হয়ে ওঠার পেছনে এই ছয় মাসের ভূমিকা বিরাট। অঞ্জন পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে তিন বছর ধরে যে জ্ঞান অর্জন করে এসেছিল, মাত্র ছয় মাসে সেই জ্ঞান আমাকে দান করে গেছে। পরবর্তী সময়ে অঞ্জন শাহীন আপাকে বিয়ে-থা করে থিতু হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্রের পাঠদানকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। এ তো গেল বন্ধু শিক্ষক অঞ্জনের কথা।
চলচ্চিত্রকার হিসেবে অঞ্জন সম্পর্কে দু–চার কথা বলতে চাই। পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটের খুব চৌকস ছাত্র ছিল অঞ্জন। তার ডিপ্লোমা ফিল্ম সে সময় পুরো ক্যাম্পাসে হইচই ফেলে দিয়েছিল। ছবিটা দেখার আমার সৌভাগ্য হয়েছিল। সে এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা। কোনোভাবেই ছবিটা স্টুডেন্ট ফিল্ম ছিল না। দক্ষ নির্মাতার ছোঁয়া ছিল ছবিটার পরতে পরতে। কাগজের ফুল নামে একটা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বানিয়েছিল অঞ্জন; সেটিও বেশ চমৎকার নির্মাণ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র
এছাড়াও পড়ুন:
ক্ষমতার প্রথম ১০০ দিনে ট্রাম্পের যত আলোচিত উক্তি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে ফেরার প্রথম ১০০ দিনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আবারও প্রমাণ করেছেন, প্রচণ্ড ধাক্কা দেওয়ার পাশাপাশি মানুষকে আমোদিত করার তাঁর বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। তিনি যা বলেন, তাতে কখনোই কোনো কিছুর ঘাটতি রাখেন না।
নিজের প্রশংসা থেকে শুরু করে মিত্রদেশগুলোকে অপমান করা—হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকে ট্রাম্পের কিছু আলোচিত কথা নিচে তুলে ধরা হলো:
ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমেরিকাকে আবার মহান করার জন্য ঈশ্বর আমাকে বাঁচিয়েছেন।’
ক্ষমতায় ফেরার প্রথম দিনেই ট্রাম্প নিজেকে একজন ‘মেসিহ’ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। তিনি আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে বলেছিলেন—গত বছর পেনসিলভানিয়ায় এক নির্বাচনী সভায় তিনি কীভাবে হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টর দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, ‘নির্বাচন ছাড়া এক স্বৈরশাসক।’
ভলোদিমির জেলেনস্কিকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই অভাবিত মন্তব্যটি যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। জেলেনস্কি অভিযোগ করেছিলেন, রুশদের ‘ভুয়া তথ্যের’ শিকার হয়েছেন ট্রাম্প।
পরে ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেব্রুয়ারিতে তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এই মন্তব্য থেকে সরে আসেন এবং এক সাংবাদিককে উল্টো প্রশ্ন করে বসেন, ‘আমি কি এটা বলেছিলাম?’
আবার ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘এসব দেশ আমাদের ফোন করছে, আমাকে তেল দিচ্ছে।’
চলতি এপ্রিলে রিপাবলিকানদের এক সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের নিয়ে এই কটাক্ষমূলক মন্তব্য করেছিলেন ট্রাম্প। বিভিন্ন দেশের ওপর তাঁর পাল্টা শুল্ক আরোপের ব্যাপারে যখন বিশ্বনেতারা তাঁকে শান্ত করার জন্য যোগাযোগ করছিলেন, তখন তিনি এই মন্তব্য করেন। পরে ট্রাম্পে এই শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন।
গাজাকে মালিকানা নিজেদের করে নেওয়ার পরিকল্পনা জানাতে গিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের দর্শনীয় উপকূলীয় অবকাযাপনকেন্দ্র’।
ইসরায়েলি নৃশংস ও নির্বিচার হামলায় গাজার বিধ্বস্ত অঞ্চলে একটি বিলাসবহুল অবকাশযাপনকেন্দ্র বানানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করার সময় ট্রাম্পের এমন বক্তব্য সবাইকে চমকে দেয়। এটি তিনি ফেব্রুয়ারিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন।
শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, প্রতিবেশি কানাডাকে নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘কানাডাকে আমাদের লালিত–পালিত ৫১তম রাজ্য হওয়া উচিত।’
গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া পোস্টে এই মন্তব্য করেছিলেন। তাঁর এই মন্তব্যে কানাডায় তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। অনেকেই আশঙ্কা করেন, এটি যেন মার্কিন দখলদারত্বের চেষ্টার কোনো ইঙ্গিত না হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও ছেড়ে কথা বলেননি ট্রাম্প। তিনি বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে রাখার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন তৈরি হয়েছে।’
গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প তাঁর মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে এই বক্তব্য দেন। এর মাধ্যমে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক দশকের ইতিবাচক সম্পর্ককে সম্পূর্ণ উল্টে দেন এবং একধরনের বাণিজ্যযুদ্ধের ইঙ্গিত দেন।
দেশের বিচার বিভাগকে আক্রমণ করতেও পিছু হটেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘এই বিচারক, আর পাঁচজন দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারকের মতোই। যাঁদের সামনে আমাকে হাজির হতে হয়, তাঁকে অভিশংসন করা উচিত।’
মামলায় অভিযুক্ত এমনকি আর্থিকভাবে দণ্ডিত প্রথম ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। গত মার্চে তিনি ‘ট্রুথ সোশ্যাল’–এ এক পোস্টে বিচারক জেমস বোয়াসবার্গকে আক্রমণ করে এই মন্তব্য করেন। পরে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ট্রাম্পের এই মন্তব্যের নিন্দা জানান, যা অনেকটা বিরল।
বোয়াসবার্গ ছিলেন সেসব বিচারকের একজন, যাঁরা অভিবাসী বহিষ্কারের বিষয়ে ট্রাম্পের নির্বাহী ক্ষমতার সীমা টেনেছেন, প্রশাসনের কাজের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।