স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে সরকার। আশা করি, খুব দ্রুতই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

বুধবার রাত পৌনে একটার দিকে রাজধানীর বিজয় সরণির নভোথিয়েটারের সামনে ঢাকা মহানগর এলাকায় জননিরাপত্তা জোরদারে চলমান বিশেষ কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো.

খোদা বখস চৌধুরী, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। 

আসিফ মাহমুদ বলেন, ছিনতাই নিয়ে মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, এ অবস্থা থেকে দ্রুতই উত্তরণ হবে। যেসব জায়গায় ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটছে এবং যারা ঘটায়, তাদের আটক করার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।
  
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, দেশের ক্রান্তিলগ্নে জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার জন্য যদি কেউ চেষ্টা করে, সেটা রাজনৈতিক হোক বা নিতান্তই ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা হোক, তা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। 

বড় ধরনের অপরাধ কমলেও ছোটখাটো অপরাধ, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা সরকার অ্যাড্রেস করছে। আশা করা যায়, খুব দ্রুতই সুফল পাওয়া যাবে। ঘটনাগুলো যথাসম্ভব কমে আসবে।

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, কোনো সোসাইটি (সমাজ) বা কোনো দেশ পাওয়া যাবে না, যেখানে অপরাধ হয় না। অপরাধ থাকবে, সেটাকে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা, জনমনে যাতে আতঙ্ক সৃষ্টি না হয়, সেটা দেখা সরকারের দায়িত্ব।

এর আগে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সাংবাদিকদের বলেন, তারা ব্যাপক অভিযান শুরু করেছেন। চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের তালিকা করে অভিযান পরিচালনা করছেন। ঢাকায় মোট ৬৫টি চেকপোস্ট (তল্লাশিচৌকি) বসানো হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, পরিস্থিতি গত দু–তিন দিন খারাপ হলেও আগে ভালো ছিল। অপরাধ যে কখনো ছিল না, বিষয়টি তা নয়। আগেও অপরাধ হতো তবে এতটা প্রচার হতো না। এখন ছিনতাইয়ের ঘটনা মানুষ প্রতিহত না করে ভিডিও করছে। তিনি সবাইকে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর স থ ত উপদ ষ ট অপর ধ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আইনের হাত বনাম নিজের হাত  

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বিশেষত বাংলাদেশে গত ২৬ জুলাই-পরবর্তী আট মাসের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী। গণপিটুনি, স্থানীয়ভাবে বিচারকাজ পরিচালনা, মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে ব্যক্তিগত প্রতিশোধ গ্রহণ এসব অনিয়ন্ত্রিত প্রবণতা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে এবং আইনশৃঙ্খলার ভিত্তি দুর্বল করে দিচ্ছে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকারিতা ও বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ব্যাহত হলে জনমনে অবিশ্বাস দানা বাঁধে, যা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রকে ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে। জনগণ যখন ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে না, তখন তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে উদ্বুদ্ধ হয়। এর ফলে সামাজিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হয় এবং অপরাধপ্রবণতা বাড়ে।

এ সমস্যা নিরসনে যথাযথ আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করা, বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে তার কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং মিথ্যা অভিযোগ ও গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। একই সঙ্গে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। কার্যকর ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি সুস্থ, ন্যায়ভিত্তিক ও স্থিতিশীল সমাজ গঠন সম্ভব।

অনেক সময় অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে ভুক্তভোগীদের দীর্ঘ সময় এবং অর্থ ব্যয় করতে হয়। অতীতে বহু অপরাধের বিচার হয়নি; প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে এবং অপরাধীরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব ব্যবহার করে অথবা আইন ও পুলিশি ব্যবস্থার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে বিচার কার্যক্রম প্রভাবিত বা অসম্পূর্ণ করে তোলে। অনেক সময় পুলিশের গাফিলতি ও প্রশাসনিক দুর্নীতির কারণে অনেক অপরাধী বিচারের আওতার বাইরে থেকে যায়, যা জনগণের আইনের প্রতি আস্থা হ্রাস করে। অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত অভিযোগকারীরা ন্যায়বিচার পান না। বরং মিথ্যা অভিযোগকারীরা রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতে সক্ষম হয়। আমরা দেখেছি, পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে জনগণ গণপিটুনির মাধ্যমে বিচার সম্পন্ন করছে। এটি মূলত সমাজে ন্যায়বিচার প্রক্রিয়া ও প্রশাসনের প্রতি মানুষের ক্ষোভের ইঙ্গিত দেয়। 

সাধারণ মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। তারা মনে করে, প্রশাসন বা পুলিশ তাদের কাজ সঠিকভাবে করছে না। ফলে তারা নিজেদের উদ্যোগে শাস্তি দিয়ে প্রশাসনকে শেখাতে চায়– কীভাবে ন্যায়বিচার করতে হয়। প্রশাসনকে বিচার শেখানোর উদ্দেশ্যে এটি করা হলেও যদি বারবার তা ঘটতে থাকে, তা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। এভাবে সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা কোনোভাবেই আইনি বা ন্যায্য পদ্ধতির অংশ নয়।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকারিতা ও বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ব্যাহত হলে জনমনে অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়, যা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রকে ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে। যখন জনগণ ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে না, তখন তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে উদ্বুদ্ধ হয়। ফলে সামাজিক স্থিতিশীলতা ব্যাহত হয় এবং অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

একটি সুস্থ সমাজ গঠনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন অপরিহার্য। জনগণের মধ্যে আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা রোধ এবং মিথ্যা অভিযোগকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সহজ হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধি, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে পারলে দেশ আরও নিরাপদ ও ন্যায়ভিত্তিক হবে। আইনের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরানো এবং বিচার প্রক্রিয়া কার্যকর করার মধ্য দিয়েই একটি আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

উছমান গনি: শিক্ষক
    usmgoni@gmail.com

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভোলাগঞ্জে বিজিবির সদস্যদের ওপর চড়াও অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারীরা
  • অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ২ মাসে আড়াই হাজার গ্রেপ্তার
  • উদ্ধারপ্রক্রিয়ায় এলাকাবাসীকে যুক্ত করুন
  • আইনের হাত বনাম নিজের হাত  
  • জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার চিন্তা ইসির