শেষ রক্ষা হচ্ছে না খুবির সাবেক উপাচার্যের
Published: 25th, February 2025 GMT
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গত বছরের ২০ আগস্ট পদত্যাগ করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মাহমুদ হোসেন। তার আগে তিন বছর দায়িত্বে থাকাকালে নিয়োগ, পদোন্নতি ও আপগ্রেডেশন দিয়েছেন শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। এসব প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে অধ্যাপক মাহমুদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থার সমন্বিত জেলা কার্যালয় খুলনার উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদকে প্রধান করে চার সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে। উন্নয়ন কাজের বিষয়েও পৃথক তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক সাইফুদ্দিন শাহ। ২০১২ সালের ১ নভেম্বর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পান অধ্যাপক মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান। পরে ২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত দুই মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০২১ সালের ২৫ মে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক মাহমুদ হোসেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ২০ আগস্ট পদত্যাগ করেন তিনি। অধ্যাপক মাহমুদের বাবা মোজাম্মেল হোসেন ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের বিগত সাড়ে ১৫ বছরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে পাঁচ শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ হয়। অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি হয়েছে। খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক এবং সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন ও শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েলের নির্দেশেই দলীয় কর্মী ও তাদের স্বজনদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। উপাচার্য ও প্রভাবশালী কর্মকর্তারাও তাদের স্বজনদের নিয়োগ দিয়েছেন। এর বাইরে আগে নিয়োগ পাওয়া ছাত্রলীগ নেতারাও অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি ও আপগ্রেডেশন নিয়েছেন।
দুদক সূত্র জানায়, হত্যা মামলায় সাজা পাওয়ার পরও অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক মুজিবুর রহমানকে পদোন্নতি দিয়েছেন সাবেক উপাচার্য মাহমুদ। উপাচার্যের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সঞ্জয় সাহাসহ অন্তত ১৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রকৌশলীকে অনিয়মের মাধ্যমে আপগ্রেডেশন দেওয়া হয়। তাদের নিয়োগ ও পদোন্নতির নথি তলবের প্রক্রিয়া শুরু করেছে দুদক। দু-একর দিনের মধ্যে খুবিতে এ-সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হতে পারে।
এর বাইরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলা উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে প্রকৌশল শাখার কয়েক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক অনুসন্ধান করছে দুদক। বিশেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসান অ্যান্ড সন্সের পাওয়া কাজের প্রক্রিয়া খুঁজতে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুবির কয়েক শিক্ষক বলেন, আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের মধ্যে ১০ বছরই উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক ফায়েক উজ্জামান। তাঁর সময়েই চার শতাধিক নিয়োগ সম্পন্ন হয়। প্রতিটি নিয়োগেই অনিয়ম ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্তে শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগে অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের ভবন নির্মাণে অনিয়মের ব্যাপারে ফায়েক উজ্জামানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন ৪৫ শিক্ষক। ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত তদন্ত কমিটিও ভবন নির্মাণে অনিয়ম পেয়েছিল। এসব নিয়ে অসংখ্য সংবাদও প্রকাশ হয়েছে। অথচ তাঁকে বাদ দিয়ে মাত্র তিন বছর দায়িত্ব পালন করা উপাচার্যের অনিয়ম তদন্তের বিষয়টি সবাইকে অবাক করেছে।
এ বিষয়ে দুদক খুলনার উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, গত ২০ ফেব্রুয়ারি কমিশন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মাহমুদ হোসেনের সময়কার অনিয়ম অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছে। এর পর ২৪ ফেব্রুয়ারি চার সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে। অনুসন্ধানে অধ্যাপক ফায়েক উজ্জামানের অনিয়মের তথ্য-প্রমাণ পেলে সেটিও কমিশনকে জানানো হবে।
সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মাহমুদ হোসেন বলেন, ইচ্ছে করলে কাউকে নিয়োগ বা পদোন্নতি দেওয়া যায় না। প্রতিটি নিয়োগেই কমিটি ছিল, তারা যাচাই-বাছাই করেছে, পরীক্ষা নিয়েছে, সব বিবেচনায় নিয়ে নিয়োগ দিয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ব ক উপ চ র য উপ চ র য র কর মকর ত তদন ত আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ায় অপহরণ মামলায় ডিবির ৫ সদস্যসহ ৬ জনের রিমান্ড মঞ্জুর
বগুড়ায় দুই তরুণকে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে করা মামলায় রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি-আরএমপি) পাঁচ সদস্য এবং তাঁদের গাড়িচালকের এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বগুড়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এ বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন।
বগুড়ার আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ধুনট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হায়দার আলী বগুড়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গ্রেপ্তার ছয় আসামিকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন। বিচারক আজ দুপুরে শুনানি শেষে প্রত্যেকের এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আসামিরা হলেন রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই শাহিন মোহাম্মদ অনু ইসলাম, কনস্টেবল রিপন মিয়া, আবুল কালাম আজাদ, মাহবুব আলম, বশির আলী, ওহাব আলী ও মাইক্রোবাসের চালক মেহেদী হাসান।
পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন আরও বলেন, একই মামলায় গ্রেপ্তার ডিবি-আরএমপির কনস্টেবল ওহাব আলীকে (২৮) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছেন। আদালতে এটি শুনানির অপেক্ষায় আছে।
আরও পড়ুনবগুড়ায় দুই তরুণকে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে মামলা, ডিবির ৫ সদস্য গ্রেপ্তার২৪ মার্চ ২০২৫গত মঙ্গলবার রাজশাহী মহানগরী এলাকা থেকে ওহাব আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওহাব আলী ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের দিঘলকান্দি গ্রামের আলতাব হোসেনের ছেলে। অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে মামলা করার পর রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের একজন উপপরিদর্শকসহ ছয় সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
বগুড়ার ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের দীঘলকান্দি গ্রামের কলেজছাত্র মো. রাব্বীর বাবা সেলিম শেখ বাদী হয়ে গত সোমবার ধুনট থানায় অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে পুলিশের ছয় সদস্যসহ সাতজনকে আসামি করে এ মামলা করেন।
আরও পড়ুনবগুড়ায় দুই তরুণকে অপহরণ: পুলিশের গোয়েন্দা শাখার আরও এক সদস্য গ্রেপ্তার২৬ মার্চ ২০২৫এর আগে সোমবার ভোরের দিকে বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের নন্দীগ্রাম উপজেলার বীরগ্রাম এলাকায় হাইওয়ের কুন্দারহাট থানা-পুলিশের একটি দল মাইক্রোবাস থামিয়ে ডিবির ওই পাঁচ সদস্য ও গাড়িচালককে আটক করে। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের দুই লাখ টাকা, ডিবির পোশাক ও পরিচয়পত্র জব্দ করা হয়।