মীমাংসায় রাজি নয়, গ্রামছাড়া ৯ পরিবার
Published: 25th, February 2025 GMT
নাটোরের সিংড়ার চলনবিলে হত্যা মামলা করে বিপদে পড়েছেন বাদী ও সাক্ষীরা। মামলা তুলে নিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে তাদের। রাজি না হওয়ায় তাদের ১২০ বিঘা জমিতে ফসল আবাদ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এখানেই ক্ষ্যান্ত হয়নি আসামিরা। তারা বাদীসহ ৯ কৃষক পরিবারকে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও প্রতিকার মিলছে না।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সিংড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শফিকুল ইসলাম শফিক এবং সাবেক সংসদ সদস্য জুনাইদ আহমেদ পলকের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। নাটোর শহর কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল প্রামাণিক, তাঁর ভাই সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহদপ্তর সম্পাদক রেজাউল করিম ও সেন্টু মোল্লা সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের সমর্থক। ডাহিয়া ইউনিয়নের বেড়াবাড়ি গ্রামের রহিদুল ইসলামের ছেলে রেজাউল সরদার পলকের সমর্থক। ২০১৬ সালের ১৩ জুন পলকের সমর্থক রেজাউলকে লোহার ফালা ও শাবল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে সাইফুল প্রামাণিক ও তার লোজন। এই ঘটনায় নিহত কৃষকের বাবা রহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ২০ জনের নামে থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলা চলমান অবস্থায় রহিদুল ইসলামের মৃত্যু হলে বাদী নিযুক্ত হন তাঁর স্ত্রী হামিদা বেগম। সামনেই মামলার রায় হওয়ার কথা।
পাঁচ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পলকের সমর্থকরা এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। এ সুযোগে সাইফুল প্রামাণিকের লোকজন মামলার বাদী হামিদা বেগম ও তাঁর পক্ষের লোকজন মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। এ জন্য তারা ৯ লাখ টাকা দেবে বলেও জানায় বাদীকে। এ প্রস্তাবে রাজি না হলে বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। মামলা প্রত্যাহার না করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে গ্রামছাড়া করে বাদী-সাক্ষীসহ ৯ পরিবারকে। তাদের বোরো আবাদের জন্য প্রস্তুত ১২০ বিঘা জমিতে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। সেচ মোটর ও ইট নষ্ট করে দেওয়া হয়।
মামলার বাদী হামিদা বেগম বলেন, আমার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ২০২২ সালে প্রকাশ্য দিবালোকে আমাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। এতে ২০ জন আহত হয়। এখন মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছে। হামলা করে ভয়ভীতি দেখিয়ে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করেছে। নিজেদের জমিতে চাষাবাদ করতে পারছি না। সব কিছু হারিয়ে আমরা অসহায়। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার মিলছে না।
ভুক্তভোগী কৃষক বিপ্লব সরদার জানান, তাদের ছয় পরিবারের ৬০ বিঘা জমিতে সেচ দিয়ে হালচাষ করা হয়েছিল। সেখানে ধান রোপণ করতে দেওয়া হয়নি। মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। একইভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে কৃষক শাহীন সারোয়ার ও দেলোয়ার হোসেনকে। তাদেরও ৪০ বিঘা জমি পতিত পড়ে আছে। চাষাবাদ করতে না পারলে পরিবার নিয়ে তারাও বিপাকে পড়বেন।
ভুক্তভোগী মর্জিনা বেগম ও খুকি মনি বলেন, আগস্টে আওয়ামী সরকারের পতন হলেও বেড়াবাড়ি গ্রামের কৃষকরা এখনও তাদের পোষা সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি। তারা এই জিম্মিদশা থেকে মুক্তি চান।
কৃষক লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। মামলা নিয়ে বিরোধ থাকলেও কাউকে চাষাবাদে বাধা দেওয়া হয়নি। হত্যা মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। মামলার বিরোধকে পুঁজি করে অন্য কোনো পক্ষ তাদের চাষাবাদে বাধা দিয়ে থাকতে পারে।
আরেক আসামি সেন্টু মোল্লা বলেন, অভিযোগকারীরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। আওয়ামী সরকারের পতনের পর তারা গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। এখন আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে।
এ বিষয়ে গ্রাম্য প্রধান অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ বলেন, দু’পক্ষই আওয়ামী লীগ। এক পক্ষ সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলক সমর্থিত, অন্যপক্ষ শফিকুল ইসলাম সমর্থিত। আসামিরা পলাতক থাকা অবস্থায় তাদের বাড়িতে লুটপাট চালায় বাদীপক্ষ। উভয় পক্ষকে নিয়ে একাধিকবার বসা হলেও আপস করা সম্ভব হয়নি। পলক গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে গেলে তার সমর্থকরা এখন গ্রামছাড়া। কে ভালো, কে মন্দ ব্যাখ্যা দেওয়া কঠিন।
ইউএনও মাজহারুল ইসলাম বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য কৃষি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার ফরিদ বলেন, ইউএনওর নির্দেশে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ১২০ বিঘা
জমি পতিত থাকার সত্যতা মিলেছে। এতে
আড়াই হাজার মণ ধান কম উৎপাদন হবে, যার বাজারমূল্য ৩৫ লাখ টাকা। একটি হত্যা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে এত বড় ক্ষতি কাম্য নয়। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর মকর ত ল ইসল ম পর ব র আওয় ম সমর থ
এছাড়াও পড়ুন:
জিনদের আহার্য
মহানবী (সা.) একবার তার সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.)-কে বললেন কিছু পাথর নিয়ে আসতে। তবে হাড় বা গোবর আনতে নিষেধ করলেন। আবু হুরায়রা (রা.) কাপড়ে করে কিছু পাথর এনে সেগুলো নবীজি (সা.)-এর পাশে রেখে চলে গেলেন। নবীজি (সা.) কাজ সেরে ফিরে আসার পর আবু হুরাইরা জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রাসুল, হাড় ও গোবরে সমস্যা কী? তিনি উত্তরে বললেন, সেগুলো জিনদের খাবার। নাসিবিন শহরে (সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যে আলজাযিরার একটি নগরী) জিনদের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল। তারা সবাই খুব ভালো জিন। আমার কাছে খাবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল। আমি আল্লাহর কাছে তাদের জন্য দোয়া করি। তাই তারা যে হাড় বা গোবরের পাশ দিয়ে যাবে, তাতেই নিজেদের জন্য খাবার খুঁজে পাবে। (বুখারি, হাদিস: ৩,৫৭৮)
আরও পড়ুনইবলিস কি জিন নাকি ফেরেশতা১৬ মার্চ ২০২৫তাই কেউ যদি বিসমিল্লাহ বলে খাবার খায় এবং হাড় থেকে মাংস খাওয়ার পর নাপাক স্থানে না ফেলে, মুমিন জিনেরা সেই হাড় হাতে নিলে তাতে গোশত ফিরে আসবে। (তিরমিজি, হাদিস: ৩,২৫৮)
আর দুষ্ট জিন ও শয়তানরা খায় এমন খাবার, যাতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয় না। যেসব খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা হয়, সেগুলো তারা ছুঁয়েও দেখে না।
গোবরে জিনদের পশুদের জন্য খাবার জমা হয়। তার মানে জিনদের পোষা প্রাণী আছে এবং তারা তাতে আরোহণ করে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘গোবর বা হাড় নাপাকি পরিষ্কারের কাজে ব্যবহার করো না। কারণ এগুলো তোমাদের ভাই জিনদের খাবার।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৮)
আরও পড়ুনকোরআন শুনে একদল জিন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন০৬ আগস্ট ২০২৩