২৩ ফেব্রুয়ারির জার্মান নির্বাচনে খ্রিষ্টান ডেমোক্র্যাটস (সিডিইউ/সিএসইউ) জয়লাভ করেছে। ২৮.৫ শতাংশ ভোট পেয়ে জার্মানির সম্ভাব্য চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মার্জ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক এসপিডির সঙ্গে জোট চাইবেন বলে নিশ্চিত করেছেন। যদিও গত নির্বাচনে জয়লাভকারী এসপিডি ভোট পেয়েছে মাত্র ১৬.৪ শতাংশ; তারাই সিডিইউ নেতা ফ্রেডরিখ মার্জের জন্য একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য জোটসঙ্গী হিসেবে আবির্ভূত। মার্জের প্রথম কাজের মধ্যে একটি হলো তাঁর সাহসী বিবৃতি, যেখানে তিনি বলেছেন, তাঁর প্রথম অগ্রাধিকার ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইউরোপকে শক্তিশালী করা, যাতে ধাপে ধাপে আমরা সত্যিই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারি।’

মার্জের জন্য বিষয়গুলো অন্য রকমও হতে পারত। যদি একটি ছোট দল (সাহরা ওয়াগেননেচ জোট বা বিএসডব্লিউ) মাত্র ০.

০৩ শতাংশের কম ভোট পেত, তাহলে মার্জকে তৃতীয় একটি জোটসঙ্গী খুঁজতে হতো। এর অর্থ হয়তো গ্রিন পার্টির সঙ্গে কাজের চেষ্টা করা। সে ক্ষেত্রে মধ্য ডানপন্থাকে ঠিকঠাক জায়গায় বসাতে আরও অনেক কঠিন বৃত্তের মধ্যে ঘুরপাক খেতে হতো।
বিশেষত তরুণদের মধ্যে দ্য লেফট পার্টির সাফল্য নির্বাচনে একটি বড় চমক ছিল। একটি উত্তাল সময়ের পরে যা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব সাহরা ওয়াগেননেচ এবং তাঁর অনুসারীদের একটি পৃথক দল গঠনের মধ্য দিয়ে বিভাজন দেখেছিল। এর আগে বামরা সংসদে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় ৫ শতাংশ ভোট পাইনি। ইসরায়েল ও গাজা নিয়ে একটি অভ্যন্তরীণ বিভক্তিও অসুবিধা সৃষ্টি করেছে।
রিফিউজি বা আশ্রয়প্রার্থীদের প্রতি কঠোর নীতি নিয়ে গণভোট আয়োজনে মার্জের সিদ্ধান্ত বামদের সুবিধা করে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে পার্টির যুব যুগ্ম সংসদীয় নেতা হেইডি রেইচিনেকের নেতৃত্বে একটি বুদ্ধিমান সামাজিক মিডিয়া প্রচারাভিযানও কাজে লেগেছিল। 

এদিকে বিএসডব্লিউ জাতীয় ভোটের মাত্র ৪.৯৭ শতাংশ পাওয়ায় সংসদে তাদের কোনো আসন থাকবে না। তবে বিএসডব্লিউর জনপ্রিয়তা সারাদেশে অত্যন্ত অসম ছিল। সেটি ভৌগোলিক বিভাজনের আরেকটি উদাহরণ। যদিও দলটি জাতীয়ভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে, তবে ইউক্রেনের প্রতি সমর্থনের সমালোচনার সঙ্গে এর অভিবাসনবিরোধী, ‘যুদ্ধবাজবিরোধী’ এবং কল্যাণপন্থি নীতিগুলো পূর্বাঞ্চলে একটি জনপ্রিয় প্রস্তাব ছিল। যার ফল হিসেবে ওই অঞ্চলে দলটির ভোট ১০ শতাংশের কাছাকাছি ছিল, যা জাতীয় গড়ের দ্বিগুণ।
এখন ইউরোপের কী হবে? এসপিডি দাবি করেছে, তারা কোনোভাবেই সরকারে যাবে না। দলটি ইঙ্গিত দিয়েছে, জোটের যে কোনো প্রস্তাব নিয়ে তারা মার্জের চেয়ে বেশি গণতন্ত্রী প্রমাণে পার্টির সদস্যদের মধ্যে ভোট করবে। প্রকৃতপক্ষে দলটির আর কোথাও যাওয়ার নেই। সিডিইউ/সিএসইউ-এসপিডি জোটের আগাম নির্বাচন বা এএফডির প্রতি সাবেক পদ্ধতির মৌলিক পুনর্বিবেচনা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এর কোনোটিতে সম্ভাবনা নেই। 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দৃঢ়তা এবং ইউক্রেনকে সমর্থন করার প্রয়োজনীয়তার পরিপ্রেক্ষিতে জার্মানির ওপর একত্রে কাজ করার জন্য অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের প্রচণ্ড চাপ আছে, তা সব দল জানে। ঘরোয়া ফ্রন্টেও মোকাবিলা করার জন্য মার্জের সামনে বিশাল চ্যালেঞ্জ। মার্জ ট্যাক্স কমানো ও উচ্চ প্রতিরক্ষা ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তবে কীভাবে বিপরীতধর্মী এ দুই বিষয় মেলাবেন, তা স্পষ্ট করেননি। কল্যাণমূলক পদক্ষেপ ও অন্যান্য সামাজিক ব্যয় ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনা হয়তো এসপিডির জন্য ‘অসম্ভব ক্ষেত্র’ হবে। একটি বিকল্প হতে পারে জার্মানির ‘ঋণ ব্রেক’ বা সরকারি ঋণ নেওয়ার ওপর সাংবিধানিক বিধিনিষেধ শিথিল করা। এ ব্যাপারে মার্জ অনিচ্ছুক ছিলেন, তবে তিনি ভোটের পরে এটি পুনরায় ভেবে দেখার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এই মৌলিক সংস্কারের জন্য পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন এবং অতিরিক্ত তহবিল শুধু প্রতিরক্ষার জন্য হলে বাম ও এএফডি তাঁকে পরাজিত করতে জোট বাঁধতে পারে। 

তাই জার্মানির নির্বাচন আমাদের দ্বিধায় ফেলে দেয়। কিছু ক্ষেত্রে ফলাফল বরং পরিচিত। কারণ একজন পুরোনো খ্রিষ্টান ডেমোক্র্যাট এসপিডির সঙ্গে জোট বাঁধতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন; এমন একটি দল, যাদের সরকারি দল হিসেবে দীর্ঘদিনের ফলাফল রয়েছে এবং প্রকৃতপক্ষে তাদের মধ্যে ইউরোপে জার্মান নেতৃত্বের কিছু সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এটিও ব্যাপক অনিশ্চিত ফলাফল। কেননা, জার্মানি বিপুল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। মন্থর প্রবৃদ্ধি, ইউরোপে যুদ্ধ এবং একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট যুদ্ধ-পরবর্তী আটলান্টিকের দুই পাশের সম্পর্কের মূলনীতি নিয়ে এখন প্রশ্ন তুলছেন। কীভাবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে এবং যা একটি সম্পূর্ণ বিভক্ত ভোটারদের সন্তুষ্ট করতে পারে, সে বিষয়ে একমত হতে পারে এমন একটি শাসক জোটকে কীভাবে একত্র করা যায়, তা পরিষ্কার নয়। দেশ ও মহাদেশজুড়ে অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে, তবুও ভালোর দিকে এগিয়ে যাক। 

এড টার্নার: অ্যাস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্টন সেন্টার ফর ইউরোপের সহপরিচালক; দ্য কনভারসেশন থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য ইউর প এসপ ড

এছাড়াও পড়ুন:

মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে বিতর্ক, কমতে পারে অংশগ্রহণ

‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বৈশাখের অন্যতম আয়োজন। প্রতিবছর আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের নির্দিষ্ট ব্যাচের তত্ত্বাবধানে এবং শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের যৌথ প্রয়াসে আয়োজিত হয়। এবার ভিন্নতা ঘটায় আয়োজন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ২৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের একাংশ তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। ফলে এবার অংশগ্রহণ কমবে বলে তারা জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চারুকলার ১৩তম ব্যাচের একজন শিক্ষার্থী সমকালকে বলেন, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনের সম্পূর্ণ অর্থ অনুষদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের শিল্পকর্ম বিক্রির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। এখানে কোনো বাণিজ্যিক বিষয় বা স্পন্সর থাকে না। চারুকলার রীতি অনুযায়ী যা এ বছর ২৬তম ব্যাচের দায়িত্ব হওয়ার কথা ছিল। 
কিন্তু এবারের আয়োজনে সেই রীতি মানা হচ্ছে না। এতে শিক্ষার্থীদের সম্মতি ও সম্পৃক্ততা নেই। এটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিশ্বাস ও ধারণার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।’
সীমান্ত ঘোষ নামে চারুকলার এক ছাত্র ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, ‘বৈশাখ ১৪৩২-এ আমাদের ব্যাচ, আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে– ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। তবে এ আয়োজনকে ‘স্বজনপ্রীতিদুষ্ট ও দেশের পরিবর্তনকালীন সময়ে রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী’ আখ্যায়িত করেছে ২৬ ব্যাচ। আয়োজন ও আয়োজক কমিটিকে বর্জন করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার শোভাযাত্রা নিয়ে স্পষ্ট বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘এবারের বৈশাখ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ আয়োজনে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের চাটুকারিতাপূর্ণ মনোভাবের কারণে আমরা শিক্ষকদের আয়োজন করা বৈশাখের আনুষ্ঠানিকতা ও শোভাযাত্রা সমর্থন করছি না।’

ভাটা পড়বে আনন্দ আয়োজনে
প্রাক্তন ও বর্তমান একাধিক শিক্ষার্থী জানান, এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কমবে। চারুকলার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের তৈরি শিল্পকর্ম কেনার লোকও কমবে। সেই সঙ্গে এবার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার শঙ্কা রয়েছে। আয়োজন ঘিরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের একাংশের মধ্যে প্রথম বিতর্ক তৈরি হয় শহীদ আবু সাঈদের মোটিফ তৈরির সিদ্ধান্তে। দ্বিতীয় হচ্ছে, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর আয়োজনের নাম পরিবর্তনের ইঙ্গিতে। তৃতীয় বিতর্ক তৈরি হয়, নির্ধারিত ব্যাচকে দায়িত্ব না দেওয়ায়। এসব কারণে প্রাক্তন-বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে চারুকলা অনুষদের একজন শিক্ষক বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আয়োজন ও কমিটিকে বর্জন করেছে বলে শুনেছি। আর শিক্ষার্থীরা যে অভিযোগ তুলেছেন, সেটা ঠিক আছে। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন অনেক বেশি রাজনৈতিক হচ্ছে। এতে সবার অংশগ্রহণের যে স্বতঃস্ফূর্ততা, তা নষ্ট হয়ে গেছে।’ অনেকে জানান, তাদের ব্যাচ এবং পুরো চারুকলার সাধারণ শিক্ষার্থীরা এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা বর্জন করেছেন।

সার্বিক বিষয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম চঞ্চল সমকালকে বলেন, ১৯৮৯ সালে এই শোভাযাত্রা শুরু হয়। তখন থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এর আয়োজন করে। ২০০৬ সালে প্রতিবছর নির্ধারিত একটি ব্যাচকে আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে একটি ব্যাচ আয়োজন করলেও যে এ নিয়ে বিতর্ক ছিল না, তা নয়। সেখানে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হতো না। এ ছাড়া আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এই আয়োজন একাডেমিক কার্যক্রমের অংশ করা হবে। এ কারণে কোনো ব্যাচকে আলাদাভাবে দায়িত্ব দেওয়া যাচ্ছে না। ২৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা পাস করে বের হয়ে গেছে। তারা এসে কখনও বলেওনি যে, তারা আয়োজন করতে চায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত ৯ ও ১২ মার্চ অনুষদের সিনিয়র শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করি। সেখানে কোনো নির্ধারিত ব্যাচকে দিয়ে আয়োজন না করানোর সিদ্ধান্ত হয়। ১৩ মার্চ ছাত্র-শিক্ষক সমন্বয়ে একটা বৈঠক হয়। সেখানে নানা ধরনের কমিটি ও উপকমিটি গঠন করা হয়। কমিটিগুলোতে বর্তমান ছাত্রদের যুক্ত করা হয়। তবে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এসে কাজ করতে চাইলে তাদেরও যুক্ত করা হচ্ছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ড. ইউনূসকে এক মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চাই: সারজিস
  • বিএমডিএর আরো ২ প্রকৌশলী সাময়িক বরখাস্ত, ব্যাখ্যা তলব
  • লুঙ্গি পরার কারণ ব্যাখ্যা করলেন বুবলী
  • হলান্ড, এমবাপ্পে, ভিনিসিয়ুস—কার বেতন বেশি
  • শখের কলের গান ও একজন আব্দুল আলী
  • বাল্যবিয়ে: সক্ষমতার বিলুপ্তি, সম্ভাবনার অপমৃত্যু
  • প্রকাশ্যে ‘চাঁদ মামা’, নেটিজেনরা বলছেন ‘আগুন’
  • আমাকে কেন বাজে কথা শুনতে হলো, প্রশ্ন কাজী মারুফের
  • মিয়ানমারে ভূমিকম্পে বড় ক্ষতির আশঙ্কা, বিভিন্ন অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা
  • মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে বিতর্ক, কমতে পারে অংশগ্রহণ