পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম প্রধান উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এ বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যঘেরা এ বিদ্যাপীঠ দক্ষিণবঙ্গের শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষার দুয়ার উন্মুক্ত করেছে এবং দেশের সার্বিক কৃষি, প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, ব্যবসায় শিক্ষা, কম্পিউটার বিজ্ঞানসহ আধুনিক বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ প্রদান করে পবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করছে।
বাংলাদেশের কৃষি ও প্রযুক্তিক্ষেত্রে উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে পবিপ্রবি তার পথচলা অব্যাহত রেখেছে। দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরির মাধ্যমে এটি দেশের কৃষি ও প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে। দক্ষিণবঙ্গের গর্ব পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সত্যিই এক সম্ভাবনাময় বিদ্যাপীঠ।
এই প্রতিষ্ঠান প্রথমে ছিল জনতা কলেজ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এর পর হয় বেসরকারি কৃষি কলেজ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক কাঠামো এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এফিলিয়েশনের আওতায়। অতঃপর পটুয়াখালী কৃষি কলেজ নামে বিএসসি এজি.
পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে ১৫ কিমি উত্তরে এবং বরিশাল বিভাগীয় শহর থেকে ২৮ কিমি দক্ষিণে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের লেবুখালী থেকে ৫ কিমি পূর্বে পটুয়াখালী জেলার দুমকী উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস অবস্থিত। বরিশাল ক্যাম্পাসটি বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জে অবস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আয়তন ১১০ একরের মধ্যে মূল ক্যাম্পাস ৯৭ একর ও বরিশাল ক্যাম্পাস ১৩ একর।
বর্তমানে আটটি অনুষদ ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে মোট ৪ হাজার ২৯৬ জন ছাত্রছাত্রী (স্নাতক, মাস্টার্স ও পিএইচডি), ২৪৭ জন শিক্ষক (অধ্যাপক ১৩৯, সহযোগী অধ্যাপক ৪১, সহকারী অধ্যাপক ৫১, প্রভাষক ১৬ জন)। ২২০ জন কর্মকর্তা ও ৪৮৯ জন কর্মচারী (তৃতীয় শ্রেণি ৭৮, চতুর্থ শ্রেণি ৪১১) রয়েছেন।
শুধু কৃষি অনুষদ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে দেশ ও জাতির সময়োপযোগী চাহিদা পূরণে এখানে আটটি অনুষদের অধীনে ৯টি ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে আটটি হল। কৃষি গবেষণা খামার রয়েছে তিনটি। সমৃদ্ধ ডিজিটাল লাইব্রেরি একটি। লাইব্রেরি ভবনে রয়েছে ৫৫ হাজারের বেশি বিভিন্ন ধরনের বই, ইন্টারনেট ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক ভলিউম ও সাময়িকী। ক্যাম্পাসের সব হলসহ সর্বত্র হাইস্পিড ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়াইফাই নেট চালু করা হয়েছে। অটোমেশন প্রক্রিয়ার কাজ চলমান।
বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যানসহ ফিজিক্যাল মাস্টারপ্ল্যান তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। সমুদ্র সম্পদের যথাযথ ব্যবহার ও গবেষণার জন্য কুয়কাটায় মেরিন ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট স্থাপনের নিমিত্তে ৬০০ কোটি টাকার ডিপিপি জমা দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সব স্থাপনা দৃষ্টিনন্দন ও পরিকল্পনামাফিক করার লক্ষ্যে মূল ক্যাম্পাস, বরিশালের এএনএসভিএম অনুষদ এবং কুয়াকাটায় প্রস্তাবিত মেরিন ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট অন্তর্ভুক্ত করে ফিজিক্যাল মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করার জন্য একটি ডিপিপি তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে।
আজ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। উপাচার্য মহোদয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের প্রত্যেক সদস্য এবং দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
মুহাম্মদ ইমাদুল হক প্রিন্স: ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও শাখাপ্রধান, জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
prince@pstu.ac.bd
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
হাত জোড় করছি, ফিরিয়ে দিন সন্তানদের
‘কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন। তবু সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে। আমি হাত জোড় করছি, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এমন আকুতিই জানান অপহৃত দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান। বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে ফেরার পথে গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহৃত হন। এ অপহরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফকে (প্রসীত) দায়ী করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।
পিসিপির কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, ইউপিডিএফ অপহৃতদের অভিভাবকদের একটি স্থানে ডেকেছে। বিকেলে অভিভাবকরা সেখানকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’ তিনি অবিলম্বে অপহৃতদের সুস্থ শরীরে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, অপহরণকারীরা সকালে একটি স্থানের নাম বলেছিল অভিভাবকদের। পরে পরিবর্তন করে আরেকটি স্থানে ডাকে। বিকেল থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
অপহৃতরা হলেন– চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও পিসিপির চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো। তাদের মধ্যে রিশন চাকমার বাড়ি রাঙামাটির জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামেরছড়িতে। লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নে; একই জেলায় বাড় অলড্রিন ত্রিপুরার; রাঙামাটির বরকল সদরের চাইল্যাতুলিতে দিব্যি চাকমা ও একই জেলার বাঘাইছড়ির বটতলায় মৈত্রীময় চাকমার।
এর আগে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুদূরে পানছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। গত বুধবার ভোরে কুকিছড়া থেকে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে।
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ১৮৩ আদিবাসী শিক্ষার্থী যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথী ভুবন চাকমার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হলেও তাদের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থি। অপহৃতদের উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।
ইতোমধ্যে অপহৃতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসলে ঘটনাটি কী, কাদের হেফাজতে তারা রয়েছে। যৌথ অভিযানে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।