Samakal:
2025-03-29@05:28:51 GMT

সন্তানকে দায়িত্বশীল করে তুলতে

Published: 25th, February 2025 GMT

সন্তানকে দায়িত্বশীল করে তুলতে

ছোট্ট রিমের বয়স সবে আট। একদিন তার মা তাকে একটা ছোট চারাগাছ দিলেন, বললেন, এটির যত্ন নেওয়া আজ থেকে তোমার দায়িত্ব। 
প্রথম কয়েকদিন সে গাছের খুব যত্ন নিল। নিয়ম করে পানি দিল, আলোতে রাখল। ধীরে ধীরে স্কুল, কার্টুন, খেলা– এসবের ভিড়ে গাছটির কথা ভুলে গেল। এক সপ্তাহ পর সে একদিন খেয়াল করল গাছটি একেবারে শুকিয়ে গেছে। 
মা এটি দেখে রাগলেন না, বরং রিমকে বললেন, দায়িত্ব মানে শুধু শুরু করা নয়, বরং প্রতিদিন যত্ন নেওয়া। এখন এই গাছ নিয়ে কী করা যায়? 
রিম নিজেই বলল, মা, আমি এবার নিয়ম মেনে এই গাছের যত্ন নেব! 
এরপর সে অ্যালার্ম সেট করল, নিয়মিত গাছে পানি দিল। কয়েক দিন পর চারাটি সতেজ হয়ে উঠল। রিম খুশিতে মাকে দেখিয়ে বলল, মা গাছটা সতেজ হয়ে গেছে! 
মা তখন বললেন, এটাই দায়িত্বশীলতা– কারও ওপর ভরসা রাখা আর নিজের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করা। 
রিমের গাছের মতোই সন্তানের দায়িত্ববোধও যত্ন আর ধৈর্যের মধ্য দিয়েই গড়ে ওঠে। 
কীভাবে আপনার সন্তানদের দায়িত্ববান করে তুলবেন? আসুন, দেখে নিই কিছু সহজ উপায়। 
ছোট থেকেই দায়িত্ব দিন 
শিশুদের বয়স অনুযায়ী ছোট ছোট দায়িত্ব দিন। ৩-৪ বছর বয়সে খেলনা গোছানো, ৬-৭ বছর বয়সে নিজের জামা-জুতা ঠিক জায়গায় রাখা, আর ১০-১২ বছর বয়সে নিজের বইপত্র সাজানো বা ঘর গোছানোর দায়িত্ব দিন। এতে তারা বুঝতে শিখবে নিজের কাজ নিজে করা মানেই দায়িত্বশীল হওয়া। 
নিয়ম তৈরি করুন, কিন্তু চাপ দেবেন না 
একটি সহজ রুটিন বানিয়ে দিন– যেমন, স্কুল থেকে ফিরেই ব্যাগ গুছিয়ে রাখা বা পড়ার টেবিলে বসা। ভুল করলে শাস্তি দেবেন না, বরং বুঝতে দিন ভুল করলে তার প্রভাব কী হয়। যেমন– হোমওয়ার্ক না করলে পরদিন ক্লাসে শিক্ষককে জবাবদিহি করতে হবে। এটিই তার শিখে নেওয়ার সুযোগ। 
সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিন 
ছোটখাটো ব্যাপারে তার মতামত নিন। কোন রঙের জামা পরবে বা সন্ধ্যায় কী খাবে– এসব সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে দিন। এতে তারা শেখে, নিজের কাজ নিজেকেই করতে হয়। 
টাকার মূল্য বোঝান 
অল্প বয়স থেকে টাকা ব্যবহারের অভ্যাস করান। মাসিক পকেটমানি দিয়ে পছন্দমতো জিনিস কিনতে দিন। যদি নতুন খেলনা চায়, তাহলে তাকে বলুন নিজের সঞ্চয় থেকে কিনতে। এতে সে বুঝবে ধৈর্য ধরে পরিকল্পনা করলে ইচ্ছেপূরণ হয়। 
শুধু নিজের না, সমাজের দায়িত্বও শেখান 
বয়স্ক আত্মীয়দের খোঁজ নেওয়া, প্রতিবেশীর বিপদে পাশে দাঁড়ানো বা ছোটখাটো সামাজিক কাজে অংশ নেওয়া– এসব শেখালে তারা বুঝবে, দায়িত্ব শুধু নিজের জন্য নয়, সমাজের জন্যও। 
যা বলবেন, তা নিজেও মানুন 
সন্তানের সামনে দায়িত্বশীল আচরণ করুন। সময়মতো বিল পরিশোধ, প্রতিশ্রুতি রক্ষা, কাজের প্রতি আন্তরিকতা– এসব তারা আপনাকে দেখেই শিখবে। আপনি যদি দায়িত্ব এড়িয়ে যান, তাহলে তারাও শিখবে দায়িত্ব ফাঁকি দিতে। 
ভুল থেকে শিখতে দিন 
ভুল করলেই বকাঝকা করবেন না। বরং তাকে ভাবতে দিন, ভুলটা কীভাবে নির্ভুল করা যায়। যেমন– গাছের যত্ন না নিয়ে মেরে ফেললে তাকে বলুন নতুন চারা লাগাতে। এতে সে বুঝবে ভুল করা দোষের কিছু নয়, বরং শোধরানোর সুযোগ। 
প্রচেষ্টা ও অগ্রগতির প্রশংসা করুন। 
শুধু সফল হলে নয়, চেষ্টার জন্যও প্রশংসা করুন। বলুন, ‘তোমার চেষ্টা দেখে আমি গর্বিত!’ এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে, দায়িত্ব নিতে আরও উৎসাহিত হবে। 
ধৈর্য ধরুন 
দায়িত্বশীলতা রাতারাতি আসে না। ধাপে ধাপে শেখে। মাঝেমধ্যে আপনার সন্তান ভুল করতে পারে। ধৈর্য হারাবেন না, বরং পাশে থেকে উৎসাহ দিন। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ভ ল কর যত ন ন ল করল র বয়স

এছাড়াও পড়ুন:

পবিত্র রমজানের শিক্ষা বিস্তৃত হোক জীবনব্যাপী

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ হলো সালাত বা নামাজ। ইমানের পরেই নামাজ। পবিত্র রমজান মাস হলো নামাজের মাস, যেমন তারাবিহর নামাজ ও কিয়ামুল লাইল নামাজের পাশাপাশি পবিত্র রমজানে সাহ্‌রির বদৌলতে তাহাজ্জুদ নামাজের অভ্যাস গড়া সহজ হয়; এশা ও ফজরের নামাজ জামাতে পড়ার সুযোগ বৃদ্ধি পায়। ফজরের নামাজ আগেভাগে পড়ে ঘুমানোর কারণে সকালে ইশরাক নামাজ পড়ার সুবিধা হয়।

পবিত্র রমজানের কারণে কাজের চাপ কম থাকায় চাশত নামাজ ও জোহরের আগে আওয়াবিন নামাজ আদায়ের সুযোগ হয়। বিকেলে অফিস বা কর্মস্থল থেকে আগে ফেরার কারণে আসরের নামাজ জামাতে পড়া যায়। একসঙ্গে ইফতার করার সুবাদে মাগরিবের নামাজের জামাতও পাওয়া যায়। অন্যান্য নফল নামাজও বেশি পড়া হয়। পবিত্র রমজানেই নামাজের পূর্ণতা আসে।

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের তৃতীয় স্তম্ভ হলো জাকাত। সাহাবায়ে কিরাম পবিত্র রমজানেই জাকাত প্রদান করতেন। পবিত্র রমজানে জাকাত প্রদানে চান্দ্রবর্ষের হিসাব অনুযায়ী সঠিকভাবে জাকাত প্রদান করা সহজ হয়।

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের চতুর্থ স্তম্ভ হলো হজ। পবিত্র রমজানে ওমরাহ পালন করলে নবীজি (সা.)–এর সঙ্গে হজ করার সমান সওয়াব পাওয়া যায়। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের পঞ্চম স্তম্ভ হলো সিয়াম বা রোজা। রোজা হলো পবিত্র রমজানের প্রধান অনুষঙ্গ। আগুন যেমন সোনাকে বিশুদ্ধ করে, তেমনি রোজা ইমানদারের কামনা–বাসনাকে দহন করে তাঁকে খাঁটি বান্দায় পরিণত করে।

রোজার ফিদইয়া পবিত্র রমজানেরই অংশ। রোজা একটি শারীরিক ও মানসিক ইবাদত। কিন্তু অসুস্থ ও দুর্বল ব্যক্তির জন্য কাজার পাশাপাশি অপারগতায় ফিদইয়ার বিধান রাখা হয়েছে, যা আর্থিক ইবাদত। এতে বোঝা যায় রোজার পরিধি কত ব্যাপক।

রোজার কাফফারা পবিত্র রমজানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। রোজা শারীরিক ইবাদত হওয়া সত্ত্বেও দুর্বলচিত্তের ব্যক্তি যদি রোজা ভঙ্গ করেন, তবে তাঁর জন্য কাফফারার বিধান রয়েছে। এটি হলো দাস মুক্তি দেওয়া অথবা ৬০ জন গরিবকে দুই বেলা পরিপূর্ণ আহার করানো অথবা একাধারে ৬০টি রোজা রাখা। অর্থাৎ যদি কেউ রমজান মাসের একটি রোজা ভঙ্গ করেন, তবে তাঁকে ৬০ দিনের রোজা রাখতে হবে অথবা কাফফারা আদায় করতে হবে। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, দান–খয়রাত ও সমাজকল্যাণই পবিত্র রমজানের অন্যতম উদ্দেশ্য।

রোজা শেষে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হয়। দাতা ও গ্রহীতার সুবিধার্থে পবিত্র রমজানেও এটি প্রদান করা যায়। ঈদের সঙ্গে ফিতরার সম্পৃক্ততার কারণে এর নাম হয়েছে ঈদুল ফিতর। সদকাতুল ফিতর হলো ঈদের আনন্দ সর্বজনীন করার উপায়। ধনী–গরিব সবাই যেন ঈদের আনন্দে শামিল হতে পারেন, সে জন্য এই ব্যবস্থা। সদকাতুল ফিতর পবিত্র রমজানে রোজা পালনের শুকরিয়াস্বরূপ এবং এটি রোজাকে পূর্ণতা দেয়।

পবিত্র রমজানের বিশেষ উপহার হলো ইতিকাফ। মানবজীবনে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের অন্যতম মাধ্যম হলো ইতিকাফ। পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকে ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। এখান থেকেও পবিত্র রমজানের মহিমা বোঝা যায়। এক দশকের কম সময়ের ইতিকাফ নফল হলেও এই ইতিকাফ অন্য সময়ের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি ফজিলতের। ইতিকাফ বছরের যেকোনো সময় করা যায়, তবে সর্বনিম্ন সীমা হলো এক দিন অর্থাৎ সূর্যাস্তের আগে থেকে পরের দিনের সূর্যাস্ত পর্যন্ত।

পবিত্র রমজানের অনন্য উপহার হলো শবে কদর। এটি এমন এক রাত, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। হাজার মাস মানে প্রায় ৮৩ বছর ৪ মাস, যা একটি মানবজীবনের সময়ের সমান। সুতরাং পবিত্র রমজানের সুফল জীবনব্যাপী।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ