সমস্যাগ্রস্ত কিছু ব্যাংকের বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ
Published: 25th, February 2025 GMT
দেশের সমস্যাগ্রস্ত কিছু ব্যাংকের বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। গভর্নর বলেন, তিনি চেষ্টা করছেন সুশাসনের মাধ্যমে সব ব্যাংককে বাঁচিয়ে রাখতে, কিন্তু সব ব্যাংক যে বেঁচে যাবে, তা নয়। কারণ, কোনো কোনো ব্যাংকের আমানতের ৮৭ শতাংশ একটি পরিবারকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘রিকমেন্ডেশনস বাই দ্য টাস্কফোর্স অন রিস্ট্র্যাটেজাইজিং দ্য ইকোনমি’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের শেষ দিনের এক কর্ম অধিবেশনে অনলাইনে যুক্ত হয়ে গভর্নর এ কথা বলেন। রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে আজ মঙ্গলবার এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অধিবেশনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, সমস্যায় থাকা ব্যাংকগুলোর অর্ধেকের বেশি ঠিক করা যাবে। বাকিগুলোকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাদের সম্পদের মান পর্যালোচনার কাজ চলছে। সুখবর হচ্ছে, ইসলামী ব্যাংক ও ইউসিবি নতুন করে আর্থিক সহায়তা চাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন ঠিক করার পাশাপাশি আদালতে রিট আবেদন কীভাবে কমানো যায়, সেই চিন্তা করা হচ্ছে বলেও জানান গভর্নর। তিনি বলেন, ‘যে গর্তে আমরা পড়েছি, সম্পূর্ণভাবে সমস্যার বাইরে নই। আর মূল্যস্ফীতি কমার বিষয়ে শুরু থেকে যে বলে আসছিলাম ১২ থেকে ১৮ মাস লাগবে, এখনো সে কথাতেই আছি।’
দেশে নতুন করে আর কোনো ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে না জানিয়ে গভর্নর বলেন, বরং মোবাইলে আর্থিক লেনদেনকে (এমএফএস) আন্তলেনদেনযোগ্য করার বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, এ বিভাগ যদি টিকেও থাকে, ব্যাংকে কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না—এমন নীতিমালা করা হচ্ছে। বিভাগটি বিমা খাতের দেখভাল (টেককেয়ার) করতে পারে, ব্যাংক খাতের নয়।
অধিবেশনে নির্ধারিত আলোচকদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘অর্থনীতিবিদেরা তত্ত্ব দিলেও আমরা সেসব তত্ত্বের দৈনন্দিন চর্চাকারী। টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে দেখা গেল, অর্থনীতি থেকে রাজনীতিকে বের করে দেওয়া হয়েছে। অথচ রাজনীতিকে আলাদা করলে টাস্কফোর্সের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা যাবে না।’
আবদুল আউয়াল মিন্টু গভর্নরের বক্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, ‘সবাই বলেন যে বাংলাদেশ ব্যাংক একটু বেশি কথা কয়। গভর্নর বিজ্ঞজন। তাঁকে শ্রদ্ধা করি। তবে তাঁকে অনুরোধ করব, এটা দুর্বল ব্যাংক, ওটা নিচে নেমে গেছে—এগুলো বলা বন্ধ না করলে ব্যাংক খাত ঠিক হবে না।’
টাকা ছাপানোর প্রসঙ্গে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ শতাংশ টাকা ছাপানো উচিত। ১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত কত টাকা ছাপানো হয়েছে, তা জানার ইচ্ছা তাঁর। তিনি প্রশ্ন করেন, যে দেশে প্রায় সবকিছুই আমদানি করতে হয়, সে দেশে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি নিয়ে মূল্যস্ফীতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে?
অনুষ্ঠানে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংক খাতে ঋণ দেওয়া, সুদ মওকুফ করা, এমনকি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও রাজনীতিকীকরণ হয়েছিল। রাজনীতিকীকরণের অন্যতম উৎস আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। তাই একে বন্ধ করা উচিত। আর ব্যাংক কোম্পানি আইন বারবার সংশোধন করা হয়েছে পরিবারতন্ত্রের সুবিধার জন্য। ব্যাংকের ঋণ নীতিমালা ভাঙা হয়েছে। লঙ্ঘন করা হয়েছে একক গ্রাহকের ঋণসীমা। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা, যা স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের বাজেট বরাদ্দের চেয়েও ২ দশমিক ৭ গুণ বেশি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক মনজুর হোসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক মাইন উদ্দিন।
আলোচনা পর্ব
অনুরোধ জানানোর পরও টাস্কফোর্সে ব্যাংক খাতের কাউকে রাখা হয়নি বলে দুঃখপ্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার। তিনি বলেন, পলাতক ব্যক্তিরা প্রতিনিধিদের মাধ্যমে আদালতে রিট করছেন, যা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘২০১৭ সালে মধ্য রাতে যখন ইসলামী ব্যাংক দখল করা হলো, তখন থেকেই ব্যাংক খাতে সমস্যা আরও বড় হলো। ২০২০ সালের এপ্রিলে বলা হলো, ৯ শতাংশের বেশি সুদ আরোপ করা যাবে না। আমরা ভুলে গেলাম ব্যাংক খাত ঝুঁকিভিত্তিক সুদহার নির্ধারণের খাত। এরপর এল বিনিময় হারে একের পর এক চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত। যার কাজ যা নয়, তাই তখন করা হচ্ছিল। সাতটা ব্যাংক যে এস আলমের নিয়ন্ত্রণে চলে গেল, তা আমরা সবাই জানতাম।’
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, এরপর আরও খারাপ জিনিস এল। স্বতন্ত্র পরিচালকেরা কোথায় আমানতকারীদের স্বার্থ দেখবেন, তার পরিবর্তে তাঁরা স্বার্থ দেখা শুরু করলেন উদ্যোক্তাদের। এক ব্যাংকের কাছে বন্ধক দেওয়া সম্পদ আবার আরেক ব্যাংকে বন্ধক দেওয়ার উদাহরণও দেখা গেল।
ব্যাংকারদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে সৈয়দ মাহবুবুর আরও বলেন, ‘ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে কেউ হয়তো বিদেশে চলে গেলেন। আমাদের সুরক্ষা কোথায়? আমরা তো শাহবাগে দাঁড়াতে পারছি না। মাঠেও নামতে পারছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক মাইন উদ্দিন মালিকানা নেই, এমন ব্যক্তিদের ব্যাংকের চেয়ারম্যান করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ব্যাংকের পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালকদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। নাম উল্লেখ না করে মাইন উদ্দিন বলেন, একটি ব্যাংক নিজে বলেছিল, তার খেলাপির হার ৫ শতাংশ। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক দেখেছে এর হার ৯৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক (টাস্কফোর্সের সদস্য) মনজুর হোসেন ২০২০ সালে ঋণ ও আমানতের সুদের হার ৯ ও ৬ শতাংশ করার প্রভাব নিয়ে বলেন, এতে কি বিনিয়োগ বাড়ল? খেলাপি ঋণ তো আরও বেড়ে গেল। এ ছাড়া শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক র রহম ন ব যবস থ অন ষ ঠ আর থ ক ন বল ন আবদ ল আরও ব সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
মিয়ানমারে নিহত হাজার ছাড়াল, নিখোঁজ ৩০
মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। নিহতের সরকারি সংখ্যা ১০০২ জনে পৌঁছেছে। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। খবর-বিবিসি
নিহতদের বেশিরভাগই মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের। মান্দালয় ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের সবচেয়ে কাছের শহর।
ভূমিকম্পে আহতের সংখ্যা ২,৩৭৬ জন। এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন ৩০ জন। মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের উদ্ধারকর্মীরা এখনও জীবিতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে মিয়ানমারে। এর কেন্দ্রস্থল ছিল দেশটির উত্তর-পশ্চিমের শহর সাগাইং থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে। এলাকাটি রাজধানী নেপিদো থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে। ভূমিকম্পটির তীব্র প্রভাব অনুভূত হয় প্রতিবেশী বাংলাদেশ, চীন, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে।
ভূকম্পন এতটাই শক্তিশালী ছিল, প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে জোরালো কম্পন অনুভূত হয়। মিয়ানমারের জান্তা সরকারের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি জানায়, দেশটিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রাজধানী নেপিদোতে। সেখানে কমপক্ষে ৯৬ জন নিহত হয়েছেন। সাগাইংয়ে ১৮ জন ও মান্দালয়ে ৩০ জন নিহত হন। এর মধ্যে জুমার নামাজের সময় দুটি মসজিদ ধসে পড়ে কমপক্ষে ৩৪ জন নিহত হয়েছেন।
থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, তাদের একটি নির্মাণাধীন ভবনে শতাধিক শ্রমিক কাজ করছিলেন। এটি ধসে পড়লে অন্তত ৯০ জন নিখোঁজ আছেন। ৬ জন নিহত ও ২২ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে রাজধানী ব্যাংককের কর্তৃপক্ষ। শক্তিশালী ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত মিয়ানমারের সামরিক সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আবেদন করেছে।
সামরিক শাসক মিন অং হ্লাইং ভূমিকম্পের পর বলেন, ‘মিয়ানমারের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করতে চাওয়া যে কোনো দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে সহায়তা গ্রহণ করতে আমরা প্রস্তুত।’ সামরিক শাসনের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া মিয়ানমারের জন্য এটি একটি বিরল ঘোষণা। সেনা মুখপাত্র জাও মিন তুন বলেছেন, ‘আমরা চাই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যত দ্রুত সম্ভব মানবিক সহায়তা দিক।’
ভয়াবহ এ ভূমিকম্পের পর জাতিসংঘ তাদের আঞ্চলিক সহায়তা কার্যক্রম সক্রিয় করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দুবাই থেকে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। ভূমিকম্প-পরবর্তী সর্বাত্মক সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল বারো নিশ্চিত করেছেন, সহায়তা পাঠাতে প্রস্তুত ফ্রান্স। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাও ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা করছে। তবে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রবেশের সীমাবদ্ধতায় ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার কার্যক্রম।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ফুটেজে দেখা যায়, ভূমিকম্প শুরুর পর ব্যাংককে নির্মাণাধীন ভবন ধসে পড়ে। আশপাশের লোকজন আতঙ্কে পালাচ্ছেন; ধুলোয়-ধোঁয়ায় ছেয়ে যাচ্ছে আশপাশ। হোটেলে থাকা অনেকে গোসলের পোশাক ও সুইমিংয়ের পোশাক পরে দৌড়ে বেরিয়ে আসেন। থাইল্যান্ডের চিয়াং মাইয়ের বাসিন্দা ৭৬ বছরের সাই ভূমিকম্পের সময় একটি দোকানে কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি দ্রুত অন্য গ্রাহকদের সঙ্গে দোকান থেকে বের হয়ে যাই। এটা আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প।’
থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা এক্সে লেখেন, তিনি ভূমিকম্পের পর জরুরি বৈঠক করতে দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ ফুকেটে তাঁর নির্ধারিত সরকারি সফর স্থগিত করেছেন। বিকেলে ব্যাংকক থেকে আলজাজিরার ইমরান খান জানান, ভূমিকম্পের কারণে শহরটিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। লোকজন রাস্তায় নেমে আসেন। কোনো মেট্রোরেল চলাচল করছে না। শহরজুড়ে যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে।
মিয়ানমারের অনেক স্থানে ভূপৃষ্ঠে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। অনেক সড়কে ফাটল ও মাটি দেবে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক ভবনের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারে তৎপরতা চলছে। মান্দালয় উদ্ধারকারী দলের এক সদস্য বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা শুধু এটুকু বলতে পারি, মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। এ সংখ্যা কয়েকশ হতে পারে। উদ্ধার অভিযান চলছে।’ মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার জানিয়েছে, ছয়টি অঞ্চল– সাগাইং, মান্দালয়, ম্যাগওয়ে, বাগো, ইস্টার শান রাজ্য ও নেপিদো অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
মিয়ানমার দমকল বিভাগের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, তারা অনুসন্ধান শুরু করেছেন। হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যাচাইয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে মিয়ানমারের ইয়াংঙ্গুনে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘সবকিছু কাঁপতে শুরু করলে আমরা সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে আসি। চোখের সামনে পাঁচতলা ভবন ধসে পড়তে দেখেছি। আমার শহরের সবাই রাস্তায় নেমে এসেছে। কেউ ভবনের ভেতরে ফিরে যেতে সাহস পাচ্ছে না।’
বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, ভূকম্পন মিয়ানমার সীমান্ত লাগোয়া চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রদেশ ইউনান ও সিচুয়ান প্রদেশেও অনুভূত হয়েছে। সেখানেও ভবন ধসে কয়েকজন আহত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত দুই দশকে মিয়ানমারে এমন শক্তিশালী ভূমিকম্প আর হয়নি। বৈশ্বিক ভূকম্পন ঝুঁকির ‘রেড জোনে’ রয়েছে মিয়ানমার। সাগাইং ফল্ট লাইনের মধ্যে এর অবস্থান। এর আগে সাগাইং ফল্টেই ১৯৩০ ও ১৯৫৬ সালে শক্তিশালী ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ২০১৬ সালে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে মিয়ানমারে তিনজন নিহত হন।