মাইক্রোবাসের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যু
Published: 25th, February 2025 GMT
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহমিদা রাইয়াদ জিনতুর (২২) জীবিত বাসায় ফেরা হলো না। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোডে বেপরোয়া গতির মাইক্রোবাসের চাপায় নিহত হন তিনি।
ফাহমিদা রাজধানীর বসুন্ধরায় অবস্থিত ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
পুলিশের ক্যান্টনমেন্ট অঞ্চলের সহকারী কমিশনার মনজুরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, আজ বেলা দুইটার দিকে কুড়িল রেললাইনের কাছে একটি মাইক্রোবাসের চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। এ সময় মাইক্রোবাসটি পেছন থেকে ফাহমিদাকে বহন করা একটি রিকশাকে চাপা দেয়। এতে ফাহমিদা ও রিকশাচালক রাস্তায় ছিটকে পড়ে আহত হন। মাইক্রোবাসটি ফাহমিদার রিকশাকে চাপা দিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়ানো আরও চারটি রিকশাকে ধাক্কা দেয়। এতে চারজন আহত হন। ফাহমিদাসহ আহত পাঁচজনকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফাহমিদাকে মৃত ঘোষণা করেন। অন্যরা ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, চালকসহ হাইয়েস মাইক্রোবাসটি আটক করা হয়েছে। ফাহমিদার লাশ কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আছে।
যোগাযোগ করা হলে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন ফাহমিদার বাবা গাজীপুরের কালিয়াকৈর ডিগ্রি কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মফিজুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দুই মেয়ের মধ্যে ফাহমিদা ছোট। তিনি ফার্মগেটে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন এবং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে ফাহমিদা পড়াশোনা করতেন।
মফিজুর রহমান বলেন, আজ বেলা তিনটার দিকে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি থেকে তাঁকে মেয়ের মৃত্যুর খবর জানানো হয়। পরে তিনি জানতে পারেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শেষে ফাহিমদা রিকশায় কুড়িল রেললাইনের দিকে যাচ্ছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল রেললাইন পার হয়ে বাসে চড়ে ফার্মগেটের বাসায় আসার।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সেতুর অভাবে দুর্ভোগ তিন জেলার মানুষের
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীর দীঘিরপাড়ে পদ্মার শাখা নদীতে একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন লাখো মানুষ। উপজেলার দীঘিরপাড় বাজার ও দীঘিরপাড় চরের সঙ্গে একটি সেতু নির্মাণ হলে টঙ্গিবাড়ীর বাসিন্দাদের পাশাপাশি উপকৃত হবে পার্শ্ববর্তী চাঁদপুর ও শরীয়তপুর জেলার সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ।
জানা গেছে, সেতু না থাকায় এসব এলাকার বাসিন্দাদের জন্য পদ্মার শাখা নদী পারাপারে ট্রলারই একমাত্র ভরসা। ট্রলারের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষাসহ নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের।
উপজেলার দীঘিরপাড় গ্রামের বাসিন্দা আউয়াল মিয়াসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, দীঘিরপাড় বাজারের পূর্বপাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মার শাখা নদী। এই নদীর ওপারে রয়েছে দীঘিরপাড় চর। নদী পারাপারে একমাত্র বাহন ট্রলার। একই শাখা নদী পাড়ি দিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা শরীয়তপুরের নওপাড়া, চরআত্রা, কাঁচিকাটা, কুণ্ডেরচর ও কোরবি মনিরাবাদ ঘড়িশাল এবং চাঁদপুর জেলার হাইমচরের বাসিন্দারা যাতায়াত করেন। সহজ যোগাযোগের কারণে শরীয়তপুর ও চাঁদপুরের এসব এলাকার বাসিন্দারা রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এ পথে যাতায়াত করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। তারা মূল পদ্মা পাড়ি দিয়ে দীঘিরপাড় চরে আসেন। এর পর চর থেকে ট্রলারে পদ্মার শাখা নদী পার হয়ে দীঘিরপাড় বাজারে যান। সেখান থেকে সড়কপথে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতে তাদের সময় কম লাগে। মূল পদ্মা নদী ট্রলারে পাড়ি দিলেও দীঘিরপাড় বাজারের পদ্মার শাখা নদী পাড়ি দিতে ট্রলারের জন্য তাদের অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়। আবার মোটরসাইকেল নিয়ে পারাপার হতে খরচ পড়ে যায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা। রাতে ভাড়া বেড়ে যায় কয়েকগুণ। অথচ এখানে প্রায় ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু হলে তাদের দুর্ভোগ লাঘব হতো।
একটি সেতু তাদের জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কার্যক্রমও গতিশীল হবে। একই সঙ্গে পদ্মার শাখা নদী পারাপারে একমাত্র ট্রলারের ওপর ভরসা করতে হবে না। দীর্ঘ বছরের ভোগান্তি নিরসন হবে পদ্মাপারের মানুষের।
কথাগুলো বলছিলেন শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মাসুদ জমাদ্দার। তাঁর মতো এই পথ দিয়ে প্রতিদিন চলাচলরত হাজার হাজার মানুষের একই মত বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা আলী আক্কাস।
শরীয়তপুরের কাঁচিকাটা ইউনিয়নের বাসিন্দা ইয়াসিন ব্যাপারী বললেন, আমরা শরীয়তপুরের মানুষ হলেও আমাদের সব কাজকর্ম করতে মুন্সীগঞ্জেই সুবিধা। আমাদের হাট-বাজার করতে হয় দীঘিরপাড় বাজারে। ঢাকায় যাই এ পথ দিয়ে। রাতে ট্রলার পাওয়া যায় না। ট্রলার পেলেও ৫০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকা গুনতে হয়। নদীপথে সময় লাগে বেশি। যদি দীঘিরপাড় বাজার এলাকায় একটি সেতু নির্মাণ হতো, তাহলে আমাদের এত ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হতো না। খুব সহজে সড়কপথে ঢাকা ও মুন্সীগঞ্জ যেতে পারতাম।
সম্প্রতি দেখা যায়, পদ্মার শাখা নদীর পূর্বপার থেকে ট্রলারভর্তি মানুষ আসছে। ট্রলার থেকে নেমে মানুষ দীঘিরপাড় বাজার, টঙ্গিবাড়ী উপজেলা পরিষদ, মুন্সীগঞ্জ শহর ও রাজধানী ঢাকার দিকে ছুটছেন। একইভাবে ট্রলার ভর্তি করে নদীর পশ্চিম পারে যাচ্ছেন। এ ছাড়া নদীর উত্তর এবং দক্ষিণ পাশ থেকে ট্রলার ভর্তি করে দীঘিরপাড় হাটে কেউ মালপত্র বিক্রি করতে আসছেন, কেউবা এ হাট থেকে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গৃহস্থালির জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে বাড়ি ফিরছেন। সবকিছুই হচ্ছে ট্রলারের ওপর ভরসা করে।
দীঘিরপাড় ইউনিয়নের মূলচর গ্রামের বাসিন্দা মাসুম জমাদ্দার বলেন, ‘রাতে ট্রলার পাওয়া যায় না। পেলেও ভাড়া দিতে হয় ১০ গুণ। আমাদের মুন্সীগঞ্জের দিকে যাতায়াত বেশি, কিন্তু এ নদী পার হতে প্রতিদিন নানা সমস্যায় পড়তে হয়।’
স্থানীয়দের ভাষ্য, পদ্মার শাখা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মিত হলে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীর দীঘিরপাড়, কামারখাড়াসহ আশপাশ এলাকা, শরীয়তপুরের নওপাড়া, চরআত্রা, চাঁদপুরের হাইমচরসহ সীমান্তবর্তী গ্রামের মানুষ উপকৃত হবেন।
টঙ্গিবাড়ী উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী শাহ মোয়াজ্জেম বলেন, দীঘিরপাড় বাজার লাগোয়া পদ্মার শাখা নদীর ওপর ১০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ এবং নদীর পশ্চিম পাশে ৪ কিলোমিটারের একটি আরসিসি সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রাথমিক মাটি পরীক্ষা ও সার্ভে সম্পন্ন করেছে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল। নকশা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হবে।