ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১০০টি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছে জোরপূর্বক গুমের শিকার ভুক্তভোগী পরিবারের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’। ১০০ জনকে গুমের ঘটনায় এই অভিযোগগুলো করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯৫ জন এখনো ফিরে আসেননি।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে অভিযোগ জমা দেয় মায়ের ডাক। পরে সংগঠনটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসব অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদসহ র‌্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) সাবেক ৬০ জন কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম বলেন, মায়ের ডাকের নেতারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দেওয়ার পর ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাজুল ইসলাম তাঁদের বলেন, অপরাধী যত শক্তিশালী হোক না কেন, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় হত্যা, বাবার লাশ রেখে মেয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে

রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকার ১৬ বছরের কিশোরী রাকিয়া আলফি। নগরীর অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের এবারের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার্থী সে। এলাকার কিছু বখাটে মাঝেমধ্যেই তাকে বিরক্ত করছিল। গত বুধবার উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বখাটেরা তার বাবা আকরাম আলীকে (৫২) পিটিয়ে হত্যা করে। বৃহস্পতিবার ছিল আলফির ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা। বাবার নিথর দেহ বাড়িতে রেখেই পরীক্ষায় বসেছে আলফি। 

হত্যার ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রী আলফির বড় ভাই ইমাম হাসান অনন্ত বাদী হয়ে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় সাতজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। মামলায় আসামিরা হলেন– তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকার কালু মিয়ার ছেলে নান্টু, বিশাল, খোকন মিয়া, তাসিন হোসেন, অমি, নাহিদ ও শিশির। প্রধান অভিযুক্ত নান্টু আকরামের স্ত্রীর মামাতো ভাই।

প্রত্যক্ষদর্শী, ভুক্তভোগীর পরিবার ও মামলা সূত্রে জানা যায়, আলফিকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল নান্টু ও তার সহযোগীরা। গত বুধবার বিকেলে আলফি কোচিং করে বাসায় ফেরার পথে নান্টু আবার তাকে উত্ত্যক্ত করে। এ ব্যাপারে বাসায় এসে ঘটনা বাবাকে জানায় আলফি। পরে আকরাম নান্টুর বাসায় বিচার দেয়। এতে ক্ষুব্ধ নান্টু ও তার সহযোগীরা রাতেই লোহার রড, লাঠি, ইট নিয়ে আলফির বড় ভাই ইমাম হাসানের ওপর আক্রমণ করে। এ সময় ছেলেকে বাঁচাতে আকরাম এগিয়ে যান। এক পর্যায়ে ইট দিয়ে আকরামের মাথার পেছনে আঘাত করা হয়। পরে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে পরিবারের কাছে লাশ‌ হস্তান্তর করা হয়। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় টিকাপাড়া গোরস্তানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়। 

আলফি বলে, ‘বখাটেরা অনেকদিন ধরেই আমাকে উত্ত্যক্ত করছিল। নান্টুর‌ বাসায় আমার পরিবারের পক্ষ থেকে বিচার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের পরিবার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। যারা আমার‌ বাবাকে হত্যা করেছে, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’

বাসচালক আকরামের স্ত্রী মুক্তি বেগম বলেন, ‘মেয়ের এসএসসি পরীক্ষা চলছে। সারারাত বাবার জন্য কান্না করেছে। বাবার লাশ রেখে মেয়ে পরীক্ষা দিতে যেতে চায়নি। স্বজনরা অনেক বুঝিয়ে তাকে পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠায়। আমরা স্বামীকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই।’ 

অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আলফি ভালো ছাত্রী। তাদের পরীক্ষা শিরোইল উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুনেছি উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় তার বাবাকে মারধর করে মেরে ফেলা হয়েছে। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’

রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি মোস্তাক হোসেন বলেন, হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।

এদিকে আকরাম আলীর খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে তাঁর লাশ সামনে রেখে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। মানববন্ধন থেকে এলাকাবাসী জানান, দোষীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ