কামরাঙ্গীরচর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনবহুল জনপদ। সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দল দেখেছে, কামরাঙ্গীরচরে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু ও কিশোর–কিশোরীদের ৫৫ শতাংশ অপুষ্টিতে ভুগছে। বিষণ্নতা ও উদ্বেগ এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে সাধারণ মানসিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানকার নারীরা নিয়মিত যৌন নির্যাতনসহ নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হন।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দল (মেডিসিনস সানস ফ্রন্টিয়ার্স–এমএসএফ) কামরাঙ্গীরচর সম্পর্কে এ তথ্য দেয়। এমএসএফ ২০১৪ সাল থেকে কামরাঙ্গীরচরে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। তাদের কাজের এক দশক পূর্ণ হয়েছে। এখন তারা কাজ গুটিয়ে নিচ্ছে। মূলত সেই উপলক্ষে আজকের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এমএসএফ কামরাঙ্গীরচর হাসপাতালের প্রকল্প সমন্বয়কারী ক্রিস্টফ ফ্রিডল বলেন, ‘কামরাঙ্গীরচরে এমএসএফের উপস্থিতি শেষ হলেও আমরা আশা করি, অন্যান্য সংস্থাগুলো যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা থেকে বেঁচে ফেরাদের যত্ন এবং পেশাগত স্বাস্থ্যসেবার বিদ্যমান ঘাটতি পূরণে এগিয়ে আসবে। আমাদের তৈরি করা ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা মানুষের জন্য সেবার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবে।’

অনুষ্ঠানে বলা হয়, কামরাঙ্গীরচরে প্রায় ১০ লাখ মানুষের বসবাস। এখানে সিটি করপোরেশনের কোনো স্বাস্থ্যসেবা নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখানে ৩১ শয্যার একটি হাসপাতাল করে দিয়েছে। আলীনগর ও মাদবর বাজারে দুটি ক্লিনিক পরিচালনা করে এমএসএফ। এ ছাড়া তারা ৩১ শয্যার হাসপাতালেও সহায়তা করেছে। শিশুপুষ্টি, যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য, সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এবং কারখানার শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে এমএসএফ। ১০ বছরে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করা ৭৭ হাজারের বেশি মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছে এমএসএফ। এর মধ্যে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশু ছিল ১ হাজারের বেশি।

অনুষ্ঠানের প্রথম উপস্থাপনায় ড.

গায়ত্রী ও ইমরান তালুকদার বলেন, কারখানাগুলোর ভেতরে বাস করেন ১৪ শতাংশ শ্রমিক। বয়স্ক শ্রমিকদের মধ্যে ৩১ শতাংশ পেশি ও হাড়ের রোগ, ১৬ শতাংশ চর্মরোগ এবং ১৫ শতাংশ পরিপাকতন্ত্রের রোগে ভোগেন। শিশুদের ২৬ শতাংশের পেশি ও হাড়ের রোগ, ১৬ শতাংশের চর্মরোগ এবং ১২ শতাংশ শ্বাসতন্ত্রের রোগে ভোগে। ৫৫ শতাংশ শিশু ও ১৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক অপুষ্টির শিকার।

দ্বিতীয় উপস্থাপনায় বলা হয়, ২০১৫ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যৌন ও অন্যান্য সহিংসতার শিকার ১১ হাজার ২৯৫ জন ব্যক্তি তাদের সেবা বা সহায়তা নিয়েছেন, তাঁর মধ্যে পুরুষ ৩১ জন। তাঁদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩০ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৩ জন। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫৩ শতাংশ বা ৫ হাজার ৯২৪ জন। নানা ধরনের অপরাধ খুব বেশি হলেও মানুষ পুলিশের কাছে যান না বা অভিযোগ করেন না। এমএসএফ পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলছে, ঘটনার শিকার ৮৩ শতাংশ মানুষ পুলিশকে কিছু জানান না।

প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশ স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের পেশাগত ও পরিবেশগত স্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক এম এইচ ফারুকী বলেন, শ্রমিকদের ব্যাপারে আলোচনায় দুর্ঘটনা বা মৃতের সংখ্যাই শুধু গুরুত্ব পায়। শ্রমিকদের রোগগ্রস্ততা বা দীর্ঘদিন রোগে ভোগার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়। পেশাগত রোগ শনাক্ত হতে ৮ থেকে ১০ বছর সময় লাগে। যখন শনাক্ত হয়, তত দিনে অনেক ক্ষতি হয়ে যায়।

এমএসএফের পক্ষ থেকে বলা হয়, কামরাঙ্গীরচর থেকে কাজ গুটিয়ে নিলেও বাংলাদেশে তাদের কাজ শেষ হচ্ছে না। ঢাকায় তাদের অফিস থাকছে। এ ছাড়া কক্সবাজার এলাকায় তাদের ছয়টি প্রকল্প চলমান আছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন প শ গত

এছাড়াও পড়ুন:

কামরাঙ্গীরচরে ৫৫ শতাংশ শিশু অপুষ্টির শিকার

কামরাঙ্গীরচর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনবহুল জনপদ। সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দল দেখেছে, কামরাঙ্গীরচরে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু ও কিশোর–কিশোরীদের ৫৫ শতাংশ অপুষ্টিতে ভুগছে। বিষণ্নতা ও উদ্বেগ এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে সাধারণ মানসিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানকার নারীরা নিয়মিত যৌন নির্যাতনসহ নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হন।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দল (মেডিসিনস সানস ফ্রন্টিয়ার্স–এমএসএফ) কামরাঙ্গীরচর সম্পর্কে এ তথ্য দেয়। এমএসএফ ২০১৪ সাল থেকে কামরাঙ্গীরচরে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। তাদের কাজের এক দশক পূর্ণ হয়েছে। এখন তারা কাজ গুটিয়ে নিচ্ছে। মূলত সেই উপলক্ষে আজকের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এমএসএফ কামরাঙ্গীরচর হাসপাতালের প্রকল্প সমন্বয়কারী ক্রিস্টফ ফ্রিডল বলেন, ‘কামরাঙ্গীরচরে এমএসএফের উপস্থিতি শেষ হলেও আমরা আশা করি, অন্যান্য সংস্থাগুলো যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা থেকে বেঁচে ফেরাদের যত্ন এবং পেশাগত স্বাস্থ্যসেবার বিদ্যমান ঘাটতি পূরণে এগিয়ে আসবে। আমাদের তৈরি করা ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা মানুষের জন্য সেবার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবে।’

অনুষ্ঠানে বলা হয়, কামরাঙ্গীরচরে প্রায় ১০ লাখ মানুষের বসবাস। এখানে সিটি করপোরেশনের কোনো স্বাস্থ্যসেবা নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখানে ৩১ শয্যার একটি হাসপাতাল করে দিয়েছে। আলীনগর ও মাদবর বাজারে দুটি ক্লিনিক পরিচালনা করে এমএসএফ। এ ছাড়া তারা ৩১ শয্যার হাসপাতালেও সহায়তা করেছে। শিশুপুষ্টি, যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য, সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এবং কারখানার শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে এমএসএফ। ১০ বছরে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করা ৭৭ হাজারের বেশি মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছে এমএসএফ। এর মধ্যে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশু ছিল ১ হাজারের বেশি।

অনুষ্ঠানের প্রথম উপস্থাপনায় ড. গায়ত্রী ও ইমরান তালুকদার বলেন, কারখানাগুলোর ভেতরে বাস করেন ১৪ শতাংশ শ্রমিক। বয়স্ক শ্রমিকদের মধ্যে ৩১ শতাংশ পেশি ও হাড়ের রোগ, ১৬ শতাংশ চর্মরোগ এবং ১৫ শতাংশ পরিপাকতন্ত্রের রোগে ভোগেন। শিশুদের ২৬ শতাংশের পেশি ও হাড়ের রোগ, ১৬ শতাংশের চর্মরোগ এবং ১২ শতাংশ শ্বাসতন্ত্রের রোগে ভোগে। ৫৫ শতাংশ শিশু ও ১৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক অপুষ্টির শিকার।

দ্বিতীয় উপস্থাপনায় বলা হয়, ২০১৫ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যৌন ও অন্যান্য সহিংসতার শিকার ১১ হাজার ২৯৫ জন ব্যক্তি তাদের সেবা বা সহায়তা নিয়েছেন, তাঁর মধ্যে পুরুষ ৩১ জন। তাঁদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩০ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৩ জন। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫৩ শতাংশ বা ৫ হাজার ৯২৪ জন। নানা ধরনের অপরাধ খুব বেশি হলেও মানুষ পুলিশের কাছে যান না বা অভিযোগ করেন না। এমএসএফ পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলছে, ঘটনার শিকার ৮৩ শতাংশ মানুষ পুলিশকে কিছু জানান না।

প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশ স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের পেশাগত ও পরিবেশগত স্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক এম এইচ ফারুকী বলেন, শ্রমিকদের ব্যাপারে আলোচনায় দুর্ঘটনা বা মৃতের সংখ্যাই শুধু গুরুত্ব পায়। শ্রমিকদের রোগগ্রস্ততা বা দীর্ঘদিন রোগে ভোগার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়। পেশাগত রোগ শনাক্ত হতে ৮ থেকে ১০ বছর সময় লাগে। যখন শনাক্ত হয়, তত দিনে অনেক ক্ষতি হয়ে যায়।

এমএসএফের পক্ষ থেকে বলা হয়, কামরাঙ্গীরচর থেকে কাজ গুটিয়ে নিলেও বাংলাদেশে তাদের কাজ শেষ হচ্ছে না। ঢাকায় তাদের অফিস থাকছে। এ ছাড়া কক্সবাজার এলাকায় তাদের ছয়টি প্রকল্প চলমান আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ