চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপির সমাবেশে হট্টগোল, পাশে ককটেল বিস্ফোরণ
Published: 25th, February 2025 GMT
নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও নির্বাচনী রূপরেখা ঘোষণাসহ বিভিন্ন দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপির সমাবেশে হট্টগোল, চেয়ার–ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সমাবেশস্থলের পাশে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় ১৫ মিনিট সমাবেশ বন্ধ ছিল। মঙ্গলবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর পার্কে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিকেল চারটায় শুরু হয় সমাবেশ। এতে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ আশপাশ এলাকা থেকে অসংখ্য নেতা–কর্মী অংশ নেন। সমাবেশ চলাকালে বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটের দিকে মঞ্চে উপজেলা পর্যায়ের এক নেতার বক্তব্য দেওয়া নিয়ে জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম ও সদস্যসচিব রফিকুল ইসলামের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। এ সময় উভয় পক্ষের সমর্থকেরা মাঠেও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। একে অপরের দিকে চেয়ার ছুড়ে মারেন এবং ভাঙচুর করেন।
এ সময় সমাবেশস্থল থেকে নেতা–কর্মীরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। দুয়েকজনের হাতে দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়। মঞ্চের নেতারা বিশৃঙ্খলাকারী নেতা–কর্মীদের বারবার শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ফলে প্রায় ১৫ মিনিটের জন্য সমাবেশের কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
ঘটনার বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান অতিথির বক্তব্যের আগে শিবগঞ্জের একজন বিতর্কিত নেতা সন্ত্রাসী হিসেবে অভিযুক্ত আশরাফুল ইসলামকে বক্তব্য দিতে সুযোগ দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম। এটি ছিল সভার নিয়মনীতির বাইরে। একটু আগেই তিনি বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি (রফিকুল ইসলাম) ওই নেতার উচ্চ পদে অবস্থান করছেন। অথচ তাঁর নিচের পদের নেতাকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। ফলে আশরাফুল ইসলামের সমর্থক নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে হট্টগোল সৃষ্টি করেন। এতে করে কিছুক্ষণ সমাবেশ বন্ধ ছিল।
অভিযোগের বিষয়ে রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশরাফুল ইসলাম শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক। তাঁকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য দর্শকসারি থেকে তাঁর সমর্থকরা চিৎকার চেঁচামেচি করছিল। আমি হট্টগোল এড়াতেই তাঁকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য সদস্যসচিবকে অনুরোধ করছিলাম। এতে প্রটোকল যদি একটু ভঙ্গও হতো হোক। সম্ভাব্য হট্টগোল এড়াতে আমি এ অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তা উপেক্ষা করায় সমাবেশে হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে।’
পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.
বক্তব্য দিতে গিয়ে হট্টগোল প্রসঙ্গে শরীফ উদ্দীন বলেন, ‘এর আগে এমন ঘটনার সম্মুখীন হইনি। এমন ঘটতে পারে কল্পনাতীত ছিল।’ তিনি কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘অন্তর্দ্বন্দ্ব থাকতেই পারে। তবে বিএনপির বিষয়ে, ধানের শীষের বিষয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ইনব বগঞ জ ব এনপ র স
এছাড়াও পড়ুন:
গরুরা কি পরস্পরের সঙ্গে কথা বলতে পারে
গরুরা কীভাবে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তা দেখে মুগ্ধ ডাচ ভাষাবিদ লিওনি কর্নিপস। কিন্তু গরুর এই যোগাযোগপদ্ধতিকে কি সত্যিই ‘ভাষা’ বলা যায়?
কর্নিপস নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামের মিয়ার্টেন্স ইনস্টিটিউটের সমাজভাষাবিদ। ইনস্টিটিউটের অলংকৃত প্রবেশপথ পেরোনো পণ্ডিতদের সাধারণত ডাচ ভাষা ও সংস্কৃতি অধ্যয়নে বিশেষজ্ঞ বলে বিবেচনা করা হয়।
মৃদুভাষী গবেষক কর্নিপস গত শতকের নব্বইয়ের দশকে তাঁর শিক্ষাগত জীবনে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি এখনো নেদারল্যান্ডসের বিভিন্ন উপভাষার মধ্যে বাক্য গঠনের ভিন্নতা নিয়ে গবেষণা করেন। পাশাপাশি প্রাণীর ভাষা নিয়েও কাজ করেন।
বছরের পর বছর ধরে কর্নিপস তাঁর গ্রীষ্মকালীন ছুটি একটি খামারে কাটিয়েছেন। শুরু থেকেই তিনি প্রতিটি গরুর ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিত্ব দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন।
কর্নিপস একজন দার্শনিকের লেখা একটি প্রবন্ধ পড়েছিলেন। যেখানে দার্শনিক প্রশ্ন করেছিলেন, ভাষাবিদেরা কেন কখনো প্রাণীদের নিয়ে গবেষণা করেন না? এই প্রশ্ন কর্নিপসকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।
কর্নিপসের মনে হয়েছিল, গরুর বুদ্ধিমত্তা ও সামাজিক অভ্যাসের বিষয়টি একজন ভাষাবিদের জন্য গবেষণার ভালো বিষয় হতে পারে।
ডাচ নাগরিক হিসেবে কর্নিপস জানতেন, পনিরের প্রতি অনুরাগী একটি জাতির (নেদারল্যান্ডস) জন্য গরু একটি সাংস্কৃতিক প্রতীক। তাই তিনি গরুর ভাষাগত যোগাযোগ নিয়ে কাজের দিকে ঝোঁকেন।
শতাব্দীর পর শতাব্দী মানুষ ধরে নিয়েছে যে ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতা মানবজাতির শ্রেষ্ঠত্বের একটি পরিমাপক। এমনকি এর জন্য একটি একাডেমিক শব্দও আছে—‘লোগোসেন্ট্রিজম’। এর অর্থ, যারা শব্দ (ভাষার ধ্বনি) ব্যবহার করে, তারা সমাজে একটি বিশেষ অধিকারপ্রাপ্ত অবস্থান দখল করে।
অনেক ভাষাবিদ বলেন, ‘ভাষাই আমাদের মানুষ করে তুলেছে। অন্য প্রাণীরা হয়তো ঘোঁত ঘোঁত, ঘেউ ঘেউ, কিচিরমিচির করতে পারে। কিন্তু তাদের এমন কিছু নেই, যা ভাষা হিসেবে গণ্য হয়।’
কর্নিপস এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য দুগ্ধ খামারে গরুর যোগাযোগ নিয়ে কাজ করছেন। অবশ্য প্রাণীর যোগাযোগ নিয়ে কাজ নতুন নয়। গত শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে এ ধরনের কাজ দেখা যাচ্ছে। যেমন শিম্পাঞ্জিদের নিয়ে জেন গুডালের কাজ, রজার পেইনের হাম্পব্যাক তিমির রেকর্ডিং। এসব কাজের মধ্য দিয়ে দেখা যায়, মানুষ হয়তো ভাষাগতভাবে অতটা অনন্য না–ও হতে পারে, যতটা আমরা ধরে নিয়েছিলাম।
কর্নিপস বলেন, সমস্যা হলো, ভাষা সম্পর্কে মানুষের স্পষ্ট ধারণা নেই। তারা যখন ভাষা সম্পর্কে কথা বলে, তখন তারা সব সময় মুখ থেকে যা বের হয়, তার কথা বলে।
গরুর ভাষা নিয়ে বেশির ভাগ গবেষণাই শব্দের ওপর জোর দেয়। উদাহরণস্বরূপ, নেদারল্যান্ডসে ২০১৫ সালে করা একটি গবেষণায় গরুর ডাকের ওঠানামা তাদের আচরণের সঙ্গে সম্পর্কিত কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছিল। গবেষণাটি বলেছিল, এটা তাদের মঙ্গলের একটা উপায় হতে পারে।
২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার এক গবেষণায় দেখা গেছে, গরুর কেবল স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বরই (ডাক) থাকে না, বরং বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে স্বতন্ত্র ডাকগুলো তারা বজায় রাখে।
কর্নিপস তাঁর গবেষণায় গরুর আচরণ ও শব্দের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি দেখতে চান যে তারা কীভাবে যোগাযোগ করে। কর্নিপস বলেন, ‘আমি গরুর ক্ষেত্রে লক্ষ করেছি যে তাদের শরীর হলো অন্যকে জানার একটি উপায়।’
গরুরা যখন একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তখন ধৈর্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। যখন একটা মা গরু তার বাছুরকে ডাকে, তখন কখনো কখনো বাছুরটির সাড়া দিতে ৬০ সেকেন্ড সময় লাগে।
ডাক ও সাড়ার মাঝখানের সময়টিতে গরু নানা অঙ্গভঙ্গি করে থাকে। অস্ট্রিয়ার গবেষণায় দেখা গেছে, কানের অবস্থান ও ঘাড় প্রসারিত করা গরুর ভাষার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
মানুষ আমাদের কান নাড়ানোর ক্ষমতাকে একটা বিনোদনের কৌশল মনে করে। কিন্তু একটি গরুর ক্ষেত্রে তা যোগাযোগের মৌলিক আচরণ বলে মনে হয়। গরুর সঙ্গে গরুর কথোপকথনের প্রথম বাক্যটি সম্ভবত কান নাড়ানো ও তাকানো।
গরুই একমাত্র প্রাণী নয়, যার জটিল যোগাযোগপদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক শাব্দিক প্রতিবেশের বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক মিশেল ফোরনেট জানতে পেরেছেন, তিমি ও সিলের মতো সামুদ্রিক প্রজাতির ওপর মানুষের খেয়ালখুশি চাপিয়ে দেওয়াটা কোনো কাজের কথা নয়।
ফোরনেট বলেন, প্রাণীরা মানুষের চেয়ে একেবারে আলাদাভাবে শব্দ ব্যবহার করে। তিনি বলেন, ‘প্রাণীরা কীভাবে যোগাযোগ করছে এবং কেন তারা যোগাযোগ করছে, তা বুঝতে যদি আমরা ভালোভাবে কাজ করতে চাই, তাহলে আমাদের তাদের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা উচিত।’
যারা মানুষ নয়, তাদের মধ্যে তথ্য আদান–প্রদানকে বর্ণনা করার জন্য ‘ভাষা’ শব্দটি ব্যবহার করেন না ফোরনেট। তিনি বলেন, ‘প্রাণীদের ব্যবস্থা আমাদের চেয়ে কম নয়, বরং অন্য রকম। আমরা মিল খুঁজতে গিয়ে তাদের প্রতি অন্যায্য আচরণ করি।’