এক সপ্তাহের মধ্যে পদোন্নতি দেওয়া না হলে আগামী মাসে দেশে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য সেবা ও চিকিৎসা শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনে দ্রুততম সময়ে সুপারনিউমারারি পদোন্নতির দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দেন, এর মধ্যে দাবি আদায় না হলে আগামী ৮ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত দৈনিক দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করবেন তারা।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডিরেক্টর কনফারেন্স রুমে আয়োজিত প্রেস কনফারেন্সে তারা এসব কথা বলেন।

চিকিৎসকদের দাবি, তাদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়া নিয়ে বারবার বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হওয়ার পরও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় বাধ্য হয়ে কর্মবিরতির মতো চরম কর্মসূচিতে যাচ্ছেন। তারা বলেন, ঘোষিত কর্মসূচির সময় স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কোনো বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে এর দায় মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে।

বঞ্চিত এসব চিকিৎসকরা বলেন, ছাত্র-জনতার এক অবিস্মরণীয় রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিজমের সমূল ওপড়ে যে নতুন স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি, তার প্রধান মূলমন্ত্র ছিল সমাজের সর্বস্তরে বৈষম্যের বিলোপ করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ। এরই পথ ধরে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর পূর্ণ আস্থা আর সহযোগিতার অঙ্গীকার রেখে সাম্যের এক নতুন দেশ গড়ার দায়িত্ব আমাদের ওপর এসে পড়েছে। এরই অংশীদার বর্তমান স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফোরামও এর অংশ।

তারা বলেন, বাংলাদেশের নানা বিষয়ে কর্মরত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাদের সবটুকু পরিশ্রম ও সততা নিয়ে এ দেশের মানুষকে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি জুলাই-আগষ্টের গণহত্যায় তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে পাহাড়সম দৃঢ়তা নিয়ে চিকিৎসা সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কিন্তু বিগত ১৫ বছরের বেশি সময়ের ফ্যাসিস্ট শাসনে স্বাস্থ্য প্রশাসন স্বাস্থ্য সেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষাকে ভঙ্গুর দশায় পরিণত করেছে। এই অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের ফলে ২৬টি ক্যাডারদের মধ্যে স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত ও অবহেলা সহ্য করতে হয়েছে।

বৈষম্য দূরীকরণে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দাবি-
১.

বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার সময়ে যারা বিভিন্ন কারণে পদোন্নতি বঞ্চিত চিকিৎসকদের ভূতাপেক্ষিকভাবে পদোন্নতি দিতে হবে।
২. পদোন্নতি প্রার্থীর সংখ্যা এত বেশি যে শুধুমাত্র পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে বর্তমান সংকট হতে উত্তরণ সম্ভব নয়।এক্ষেত্রে জনগণের চাহিদাকে বিবেচনায় নিয়ে নানা বিষয়ে পর্যাপ্তসংখ্যক নতুন পদ সৃষ্টি করা।
৩. সম্ভাব্য নতুন পদের জন্য বর্তমানে আবেদনকারীদের মধ্য থেকে অধিক সংখ্যায় ভূতাপেক্ষভাবে পদের অতিরিক্ত পদোন্নতি/সুপারনিউমারারি/ইনসিটু পদোন্নতি দিয়ে বিদ্যমান জট কমিয়ে জনগণের স্বাস্থ্য সেবার পথ সুগম করা।
৪. সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সব বিষয়ে দ্রুত ও জরুরি ভিত্তিতে সব বিষয়ে সহকারী/সহযোগী/অধ্যাপক পদে ভূতাপেক্ষভাবে সুপারনিউমারারি পদোন্নতি ও প্রয়োজনে ইনসিটু পদোন্নতি।
৫. যেহেতু প্রতি বছর অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অবসরে যান এবং মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ গুলোতে মেডিকেল শিক্ষার্থী এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পায়, সেহেতু প্রতি বছর অন্তত দুইবার পদোন্নতির নিয়ম চালুকরা এবং আন্ত ও অন্তঃক্যাডার বৈষম্য কমিয়ে আনতে একটি যুগোপযোগী পদোন্নতি নীতিমালা প্রণয়ন করা।

প্রেস কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফোরামের আহ্বায়ক ডা. মির্জা মো. আসাদুজ্জামান রতন, সদস্য সচিব ডা. মোহাম্মদ আল আমিনসহ আরো অনেকে।
 

ঢাকা/হাসান/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ ক ৎসকদ র

এছাড়াও পড়ুন:

দাদি-নানির সম্মতিতে ‘পহেলা’ নাম

সন্তান জন্মদানের যে তারিখ চিকিৎসকরা দিয়েছিলেন, এর তিন রাত আগেই প্রসব ব্যথা শুরু হয় ময়না বেগমের। প্রথম দুই সন্তানের জন্মও হয়েছিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। সেলাইয়ের জায়গায়ও যন্ত্রণা বাড়তে থাকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। তাই অস্ত্রোপচারে দেরি করতে চাননি চিকিৎসকরা। অবশেষে সোমবার সকাল ৯টার দিকে মাদারীপুরের আচমত আলী খান সেন্ট্রাল হাসপাতালে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন ময়না। পহেলা বৈশাখের সকালে জন্ম বলেই দাদি-নানির সম্মতিতে এই শিশুর নাম রাখা হয় ‘পহেলা’।

ময়না বেগম মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বদরপাশা গ্রামের খালেক আকনের মেয়ে। সদর উপজেলার রাস্তি ইউনিয়নের চরপুটিয়া গ্রামের খবির উদ্দিন মোড়লের ইতালিপ্রবাসী ছেলে লুৎফর মোড়লের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় আট বছর আগে। লুৎফর-ময়না দম্পতির আগেই দুই ছেলেমেয়ে হয়। এদের মধ্যে আব্দুর রহমানের বয়স ৭, রুকাইয়া মোড়লের বয়স ৪ বছর। 

চিকিৎসাধীন ময়না জানান, তাঁর সন্তান প্রসবের জন্য ১৬ এপ্রিল দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ১৩ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে ব্যথা ওঠে। ৯ কিলোমিটার দূরের বাড়ি থেকে দ্রুত তাঁকে এনে ভর্তি করা হয় আচমত আলী খান সেন্ট্রাল হাসপাতালে। পহেলা বৈশাখের দিনে সন্তানের জন্ম দেবেন– এমনটি কল্পনায়ও ছিল না তাঁর। প্রথম দুই সন্তানও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম দেন তিনি। সেলাইয়ের দুটি জায়গায় রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা বাড়তে থাকে। তাই বেশি দেরি করতে চাননি চিকিৎসকরা। 

প্রসূতি ময়নার ভাষ্য, স্বামী প্রবাসে। কিন্তু নিয়মিত খোঁজ রাখেন। প্রসব ব্যথা বাড়তে থাকায় তাঁর মনে শঙ্কা ভর করেছিল। হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সদের আশ্বাস ও আন্তরিকতায় কিছুটা সাহস পান। সন্তান জন্মের পর নববর্ষের শুভেচ্ছা শুরুতে কেউ জানাননি। তবে এক স্বজন ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর পর বিষয়টি বুঝতে পারেন।

জন্মের সঙ্গে সঙ্গে নতুন অতিথিকে কোলে নিতে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নামতে হয় স্বজনদের। এদিনই দাদি-নানির সম্মতিতে শিশুটির নাম রাখা হয় ‘পহেলা’। জন্মের পরপর তার ওজন হয় দুই কেজি ৭০০ গ্রাম। গর্ভে থাকার সময় সন্তানের স্বাস্থ্য নিয়ে আলাদা চিন্তা ছিল ময়নার। তাই কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেননি। ময়না বলেন, দূর থেকে মানসিক সমর্থন জুগিয়েছেন প্রবাসী স্বামী লুৎফর। পাশাপাশি স্বজনরাও তাঁকে কোনো ভারী কাজ করতে দেননি। মেয়েকে তারা মাদ্রাসায় পড়াবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 

হাসপাতালের ওটি ইনচার্জ রাজীব হোসেন বলেন, বাঙালির জীবনে পহেলা বৈশাখ গুরুত্বপূর্ণ। এমন দিনের সুন্দর সকালে শিশুটির জন্ম হয়েছে। নামও রাখা হয়েছে ‘পহেলা’। শিশুটির জীবনের দুটি আনন্দের স্মৃতিই মনে করিয়ে দেবে সমকাল। 

সোমবার সকাল ৯টার দিকেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কন্যাসন্তান আলো দেখে পৃথিবীর। এ অস্ত্রোপচারের নেতৃত্বে ছিলেন ডা. মাহবুবা সুলতানা। তিনি বলেন, সুন্দরভাবে অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। মা ও মেয়ে সুস্থ আছে। নববর্ষের প্রথম দিনে শিশুটির জন্ম, এটা খুবই আনন্দের। দুটি আনন্দ একসঙ্গে উপভোগের সুযোগ হবে শিশুটি ও পরিবারের।

শিশুটি জন্মের পর আত্মীয়স্বজন বাহারি রঙের পোশাক নিয়ে এসেছেন। নববর্ষের প্রথম দিন ভাগনির মেয়ে হওয়ার সংবাদে ছুটে আসেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি সমকালের প্রজন্ম বরণের বিষয়টি শুনে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন। পরিবারের পক্ষ থেকেও ধন্যবাদ জানান। এই উদ্যোগকে ব্যতিক্রমী জানিয়ে প্রশংসা করেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. আলী আকবর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পটুয়াখালী মেডিকেলের বহির্বিভাগে তালা, চিকিৎসক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
  • পবিপ্রবির শিক্ষার্থীর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়, বলছেন চিকিৎসকরা
  • তারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চার দিন পর কর্মবিরতি প্রত্যাহার, চিকিৎসাসেবা শুরু
  • দাদি-নানির সম্মতিতে ‘পহেলা’ নাম
  • শিশুর দাঁতের ক্ষয় রোধে করণীয়