বারিন্দ মেডিকেলে গিয়ে অবরুদ্ধ ৪ সমন্বয়ক, মবের শিকার হওয়ার দাবি
Published: 25th, February 2025 GMT
রাজশাহীর বারিন্দ মেডিকেল কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চার সমন্বয়ক। এক পর্যায়ে তাঁদের চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে কলেজটিতে অবরুদ্ধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করেন। তবে সমন্বয়করা বলেন, তারা চলমান অপারেশন ডেভিল হান্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তায় আওয়ামী লীগ নেতাদের তথ্য সংগ্রহ করতে বারিন্দ মেডিকেল কলেজে গিয়েছিলেন। পরে তারা আওয়ামীপন্থীদের মবের শিকার হন।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী নগরীর চন্দ্রিমা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত বরিন্দ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটে।
চার সমন্বয়ক হলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী মেসকাত শিশু (২৭), রাজশাহী জেলা কমিটির মুখ্য সংগঠক সোহাগ সরদার (২৬), বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী জেলার যুগ্ম আহবায়ক এমএ বারী (২৫) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব (২৭)।
জানা গেছে, বারিন্দ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মালিক আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। হাসিনা সরকার পতনের পরে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। তার বাবা শামসুদ্দিন প্রতিষ্ঠানটির এমডি।
বারিন্দ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ বেলাল উদ্দিন বলেন, সোমবার তারা এসে অফিসের সচিবের সঙ্গে দেখা করে গেছেন। তাদের দাবি জানতে আজ তাদের সঙ্গে আমার বসার কথা ছিল। তবে তারা আজ মঙ্গলবার এসে সরাসরি এমডির কক্ষে প্রবেশ করে। তারা এসে বিভিন্ন রকম কথা বলেছে। সবার নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। এ সময় তারা ক্ষমা চেয়ে পুলিশের সঙ্গে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছেন।
রাজশাহী জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আল আশরারুল ইমাম তানিম বলেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাবা ওই মেডিকেল কলেজের এমডি। এখনও কীভাবে সেখানে তিনি এমডি আছেন! এ বিষয় নিয়েই তারা কথা বলতে গিয়েছিল। তবে তাদের কথা বলার অ্যাপ্রোচ ঠিক ছিলো না। যেহেতু ওই কলেজের ছাত্রদের ক্লাস চলছিল, ছাত্ররা মনে করেছিল সেখানে অন্য কিছু বলছে তারা। এই জন্য তাদের অবরুদ্ধ রাখা হয়। এক পর্যায়ে সেখানে মব ক্রিয়েট হয়। পরে শিক্ষার্থীদের সামনে ওই চারজন তাদের অ্যাপ্রোচের জন্য ক্ষমা চায়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী তাদেরকে উদ্ধার করে।
এদিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী মেশকাত মিশু বলেন, গত কয়েকদিন বারিন্দ মেডিকেল কলেজ থেকে আমাদের কাছে বেশকিছু অভিযোগ আসে। সেখানে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাবার আশ্রয়ে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সেখানে কর্মরত রয়েছেন। চলমান ডেভিল হান্ট অপারেশনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে আমরা সেখানে তথ্য সংগ্রহ করতে যাই। প্রতিষ্ঠানটির সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা প্রিন্সিপাল ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনার এক পর্যায়ে সেখানে কর্মরত বেশ কয়েকজন অফিস স্টাফ এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী ঢুকে পড়েন এবং আমাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির বাইরে মব তৈরি করে আমাদের আটকে ফেলা হয়। অনতিবিলম্বে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ মব জ স ট স ব র ন দ ম ড ক ল কল জ সমন বয়ক আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
হবিগঞ্জে ১৩ কিলোমিটার পথে রাতে চলতে মানা পুলিশের, কারণ কী
হবিগঞ্জের সাতছড়ি আঞ্চলিক সড়ক (ঢাকা-সিলেট পুরোনো মহাসড়ক) দিয়ে রাত ১০টার পর জনসাধারণ ও যান চলাচল নিষেধ করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, নিরাপত্তার স্বার্থে এমন ব্যবস্থা। এ সময় মানুষ চলতে পারবে বিকল্প সড়ক দিয়ে। তবে এলাকাসীর দাবি, পুলিশের এই সিদ্ধান্তে মানুষের ভোগান্তি বাড়াবে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জের মাধবপুর ও চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে যাওয়া ঢাকা-সিলেট পুরোনো মহাসড়ক ধরে চুনারুঘাট উপজেলা সদরে যাতায়াত চলে। ওই ১৩ কিলোমিটার এলাকা দিয়ে রাত ১০টার পর যান চলাচল না করার জন্য মাধবপুর থানার পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। গতকাল রোববার রাত ১০টার পর এ সড়কে চলাচলকারী কিছু যানবাহনকে বিকল্প সড়ক ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শায়েস্তাগঞ্জ হয়ে চলাচল করতে বলা হয়।
পুলিশের ভাষ্য, এই ১৩ কিলোমিটার সড়কটি দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় এবং চা-বাগানবেষ্টিত হওয়ায় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। কেউ বিপদে পড়লেও তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না। আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের এ সিদ্ধান্ত।
চুনারুঘাট শহরের বাসিন্দা আইযুব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক হয়ে চুনারুঘাট উপজেলা সদরে যাওয়ার একমাত্র সহজ পথ হলো সাতছড়ি আঞ্চলিক সড়ক। ২০ কিলোমিটার ঘুরে শায়েস্তাগঞ্জ হয়ে চুনারুঘাট যাওয়ার কোনো কারণ নেই। এতে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। তিনি পুলিশের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান।
এ বিষয়ে সোমবার মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গতকাল উপজেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সভায় মাধবপুর উপজেলার শাহজাহান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এই সড়কে নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে ধরেন। এ কারণে পুলিশের পক্ষ থেকে জনসাধারণের নিরাপত্তার স্বার্থে রাত ১০টার পর বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের অনুরোধ করা হয়েছে। তবে রাস্তা বন্ধ রাখার কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। প্রতিদিন পুলিশের ভ্রাম্যমাণ দল দায়িত্ব পালন করছে। মাধবপুরের তেলিয়াপাড়া এলাকায় পুলিশের তল্লাশিচৌকি থাকবে। কেউ চুনারুঘাট যেতে চাইলে পুলিশি পাহারায় যেতে পারবেন।
আইনশৃঙ্খলার স্বার্থ দেখিয়ে পুলিশ সড়কে এভাবে যাতায়াত বন্ধ করতে পারে কি না, জানতে চাইলে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) এ এন এম সাজেদুর রহমান বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয় জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়। এ ধরনের সিদ্ধান্ত পুলিশ থেকে নেওয়া হয়নি। তবে বিষয়টি হলো, এই সড়কে চলাচলে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, বিকল্প সড়ক ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।