রাজশাহীর বারিন্দ মেডিকেল কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চার সমন্বয়ক। এক পর্যায়ে তাঁদের চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে কলেজটিতে অবরুদ্ধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করেন। তবে সমন্বয়করা বলেন, তারা চলমান অপারেশন ডেভিল হান্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তায় আওয়ামী লীগ নেতাদের তথ্য সংগ্রহ করতে বারিন্দ মেডিকেল কলেজে গিয়েছিলেন। পরে তারা আওয়ামীপন্থীদের মবের শিকার হন।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী নগরীর চন্দ্রিমা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত বরিন্দ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটে।

চার সমন্বয়ক হলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী মেসকাত শিশু (২৭), রাজশাহী জেলা কমিটির মুখ্য সংগঠক সোহাগ সরদার (২৬), বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী জেলার যুগ্ম আহবায়ক এমএ বারী (২৫) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব (২৭)। 

জানা গেছে, বারিন্দ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মালিক আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। হাসিনা সরকার পতনের পরে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। তার বাবা শামসুদ্দিন প্রতিষ্ঠানটির এমডি।
 
বারিন্দ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ বেলাল উদ্দিন বলেন, সোমবার তারা এসে অফিসের সচিবের সঙ্গে দেখা করে গেছেন। তাদের দাবি জানতে আজ তাদের সঙ্গে আমার বসার কথা ছিল। তবে তারা আজ মঙ্গলবার এসে সরাসরি এমডির কক্ষে প্রবেশ করে। তারা এসে বিভিন্ন রকম কথা বলেছে। সবার নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। এ সময় তারা ক্ষমা চেয়ে পুলিশের সঙ্গে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছেন। 

রাজশাহী জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আল আশরারুল ইমাম তানিম বলেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাবা ওই মেডিকেল কলেজের এমডি। এখনও কীভাবে সেখানে তিনি এমডি আছেন! এ বিষয় নিয়েই তারা কথা বলতে গিয়েছিল। তবে তাদের কথা বলার অ্যাপ্রোচ ঠিক ছিলো না। যেহেতু ওই কলেজের ছাত্রদের ক্লাস চলছিল, ছাত্ররা মনে করেছিল সেখানে অন্য কিছু বলছে তারা। এই জন্য তাদের অবরুদ্ধ রাখা হয়। এক পর্যায়ে সেখানে মব ক্রিয়েট হয়। পরে শিক্ষার্থীদের সামনে ওই চারজন তাদের অ্যাপ্রোচের জন্য ক্ষমা চায়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী তাদেরকে উদ্ধার করে। 

এদিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী মেশকাত মিশু বলেন, গত কয়েকদিন বারিন্দ মেডিকেল কলেজ থেকে আমাদের কাছে বেশকিছু অভিযোগ আসে। সেখানে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাবার আশ্রয়ে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সেখানে কর্মরত রয়েছেন। চলমান ডেভিল হান্ট অপারেশনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে আমরা সেখানে তথ্য সংগ্রহ করতে যাই। প্রতিষ্ঠানটির সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা প্রিন্সিপাল ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনার এক পর্যায়ে সেখানে কর্মরত বেশ কয়েকজন অফিস স্টাফ এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী ঢুকে পড়েন এবং আমাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির বাইরে মব তৈরি করে আমাদের আটকে ফেলা হয়। অনতিবিলম্বে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ মব জ স ট স ব র ন দ ম ড ক ল কল জ সমন বয়ক আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

আইনের হাত বনাম নিজের হাত  

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বিশেষত বাংলাদেশে গত ২৬ জুলাই-পরবর্তী আট মাসের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী। গণপিটুনি, স্থানীয়ভাবে বিচারকাজ পরিচালনা, মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে ব্যক্তিগত প্রতিশোধ গ্রহণ এসব অনিয়ন্ত্রিত প্রবণতা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে এবং আইনশৃঙ্খলার ভিত্তি দুর্বল করে দিচ্ছে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকারিতা ও বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ব্যাহত হলে জনমনে অবিশ্বাস দানা বাঁধে, যা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রকে ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে। জনগণ যখন ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে না, তখন তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে উদ্বুদ্ধ হয়। এর ফলে সামাজিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হয় এবং অপরাধপ্রবণতা বাড়ে।

এ সমস্যা নিরসনে যথাযথ আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করা, বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে তার কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং মিথ্যা অভিযোগ ও গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। একই সঙ্গে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। কার্যকর ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি সুস্থ, ন্যায়ভিত্তিক ও স্থিতিশীল সমাজ গঠন সম্ভব।

অনেক সময় অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে ভুক্তভোগীদের দীর্ঘ সময় এবং অর্থ ব্যয় করতে হয়। অতীতে বহু অপরাধের বিচার হয়নি; প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে এবং অপরাধীরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব ব্যবহার করে অথবা আইন ও পুলিশি ব্যবস্থার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে বিচার কার্যক্রম প্রভাবিত বা অসম্পূর্ণ করে তোলে। অনেক সময় পুলিশের গাফিলতি ও প্রশাসনিক দুর্নীতির কারণে অনেক অপরাধী বিচারের আওতার বাইরে থেকে যায়, যা জনগণের আইনের প্রতি আস্থা হ্রাস করে। অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত অভিযোগকারীরা ন্যায়বিচার পান না। বরং মিথ্যা অভিযোগকারীরা রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতে সক্ষম হয়। আমরা দেখেছি, পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে জনগণ গণপিটুনির মাধ্যমে বিচার সম্পন্ন করছে। এটি মূলত সমাজে ন্যায়বিচার প্রক্রিয়া ও প্রশাসনের প্রতি মানুষের ক্ষোভের ইঙ্গিত দেয়। 

সাধারণ মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। তারা মনে করে, প্রশাসন বা পুলিশ তাদের কাজ সঠিকভাবে করছে না। ফলে তারা নিজেদের উদ্যোগে শাস্তি দিয়ে প্রশাসনকে শেখাতে চায়– কীভাবে ন্যায়বিচার করতে হয়। প্রশাসনকে বিচার শেখানোর উদ্দেশ্যে এটি করা হলেও যদি বারবার তা ঘটতে থাকে, তা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। এভাবে সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা কোনোভাবেই আইনি বা ন্যায্য পদ্ধতির অংশ নয়।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকারিতা ও বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ব্যাহত হলে জনমনে অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়, যা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রকে ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে। যখন জনগণ ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে না, তখন তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে উদ্বুদ্ধ হয়। ফলে সামাজিক স্থিতিশীলতা ব্যাহত হয় এবং অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

একটি সুস্থ সমাজ গঠনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন অপরিহার্য। জনগণের মধ্যে আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা রোধ এবং মিথ্যা অভিযোগকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সহজ হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধি, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে পারলে দেশ আরও নিরাপদ ও ন্যায়ভিত্তিক হবে। আইনের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরানো এবং বিচার প্রক্রিয়া কার্যকর করার মধ্য দিয়েই একটি আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

উছমান গনি: শিক্ষক
    usmgoni@gmail.com

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভোলাগঞ্জে বিজিবির সদস্যদের ওপর চড়াও অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারীরা
  • অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ২ মাসে আড়াই হাজার গ্রেপ্তার
  • উদ্ধারপ্রক্রিয়ায় এলাকাবাসীকে যুক্ত করুন
  • আইনের হাত বনাম নিজের হাত  
  • জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার চিন্তা ইসির
  • যে প্রলোভনে মিয়ানমারে দুই বছর জেল খাটলেন ২০ কিশোর–তরুণ
  • সিরাজগঞ্জে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে পুরোহিত গ্রেপ্তার
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা হতাশাজনক