গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ২০২ মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামির মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে পুলিশ। এখনো ১৪৯ জন আসামি পালাতক রয়েছে। পালিয়ে বেড়ানো এসব আসামির মধ্যে বুয়েটের বহুল আলোচিত আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিও আছে। এ কারণেই বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। তার বন্দি নম্বর ছিল ৫১৭৭। 

তবে এখনো যারা পালিয়ে আছে তাদের মধ্যে আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমি ছাড়া আলোচিত আর কোনো মামলার আসামি নেই বলে কারা কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।

মুনতাসির আল জেমির পালিয়ে যাওয়ার খবর সোমবার গণমাধ্যমে আসার পর রাতে বুয়েটে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে একদল শিক্ষার্থী। রাতেই এক সংবাদ সম্মেলনে তারা পালিয়ে যাওয়া আসামিকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছে।

বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ তৈরি করেছিল।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের (নিষিদ্ধ সংগঠন) একদল নেতাকর্মীর নির্মম নির্যাতনে নিহত হন আবরার ফাহাদ। তখন ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থীকে হত্যার ঘটনায় বুয়েটসহ সারা দেশে তুমুল অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল।

ওই ঘটনায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত।

বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মুনতাসির আল জেমিসহ আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত সবাই বর্তমান সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল।

পুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৬ আগস্ট কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থানরত বিভিন্ন ধরনের দুর্ধর্ষ বন্দি দাঙ্গা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বিশৃঙ্খলা ও দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে কারা বিধি অনুযায়ী প্রথমে সতর্ক করা হলেও তারা দাঙ্গা-হাঙ্গামা চালিয়ে ২৫-৩০ কারারক্ষীকে গুরুতর আহত করে। এক পর্যায়ে তারা কারাগারের দেয়াল ভেঙে ফেলে এবং বৈদ্যুতিক পোল উপড়ে ফেলে মই বানিয়ে কারাগারের দেয়াল টপকে ২০২ জন বন্দি পালিয়ে যায়। এ সময় বিশৃঙ্খলা ও দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে কারা বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে ৬ জন বন্দি নিহত হয়। কারাগার থেকে আসামি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ১৫ আগস্ট কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের জেলার মো.

লুৎফর রহমান বাদী হয়ে মহানগরীর কোনোবাড়ি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। 

আবরার ফাহাদকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমি কারাগার থেকে পালিয়েছেন—এমন খবরে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ।

আবরার হত্যার আসামি পালানোর খবর

আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি ২৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়েছে। এখন রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছে হাইকোর্ট।

এর মধ্যেই সোমবার ওই মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামির কারাগার থেকে পালানোর খবর ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, যার জের ধরে রাতে বুয়েটে বিক্ষোভে নামে একদল শিক্ষার্থী।

আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ এবং ওই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরদিন গত ৬ আগস্ট ওই আসামি জেল থেকে পালিয়েছে। 

আবরারের বাবা জানান, সোমবার শুনানির শেষ পর্যায়ে বিচারপতি জানতে চান, কোন কোন আসামির পক্ষে কোন কোন আইনজীবী আছেন। তখন সেখানেই জানানো হয় যে, কাশিমপুর কারাগার থেকে মুনতাসির আল জেমি পালিয়েছে।

তিনি জানান, গত ৬ আগস্ট ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমি কারাগার থেকে পালালেও সোমবারই প্রথম তিনি তা জানতে পারেন আদালতে মামলার শুনানির সময়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জসীমউদ্দিন জানিয়েছেন, জেমির সাথে জেলে থাকা আরেক আসামির মাধ্যমেই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে যে গত অগাস্টে পালিয়েছেন তিনি। আইনজীবী জসীমউদ্দিন আরো জানান, আসামি পক্ষের আইনজীবী ও কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেও বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন তিনি।

সোমবার সন্ধ্যায় এ নিয়ে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে আবরার ফাহাদের ছোট ভাই বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাইয়াজ লেখেন, ‘‘আবরার ফাহাদ হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি জেমি জেলখানা থেকে পালিয়ে গেছে ৫ আগস্টের পরে। অথচ আমাদের জানানো হচ্ছে আজকে, যখন ওর আইনজীবী কোনো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে আসেনি তখন। ফাঁসির আসামির তো কনডেম সেলে থাকার কথা ছিল, সে পালায় কীভাবে!’’

মুনতাসির আল জেমি

মুনতাসির আল জেমি কীভাবে পালালো

কাশিমপুর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ-আল-মামুন জানিয়েছেন, ওই কারাগার থেকে যে ২০২ জন পালিয়েছিলো তাদের মধ্যে ৮৮ জন ফাঁসির আসামির পাশাপাশি ১১ জন ছিলো বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। আর বাকী ১০৩ জন বিভিন্ন মামলায় বিচারাধীন ছিল।

কারা কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ওই কারাগার কমপ্লেক্সের ভেতরে মোট চারটি কারাগার আছে, যার একটি নারী আসামিদের জন্য।

এর মধ্যে হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বিডিআর বিদ্রোহ মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি, জঙ্গি, ফাঁসি ও যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া আসামিদের পাশাপাশি কিছু রাজনৈতিক মামলার আসামিদেরও রাখা হয়।

আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট এই হাই সিকিউরিটি কারাগারের কারারক্ষীদের জিম্মি করে একদল কয়েদী তাদের মুক্তি দাবি করে। তখন কারাগারের নিরাপত্তায় সেনাসদস্যরাও নিয়োজিত ছিলেন। তারাও বন্দিদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে বিদ্রোহী বন্দিরা একটি দেয়াল ভেঙে ফেলে এবং মই ব্যবহার করে দেয়ালের ভাঙা অংশ নিয়ে বেরিয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারারক্ষীরা গুলি করে। পরে হেলিকপ্টারে করে আরো সেনা সদস্য সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন। ওই ঘটনার সময় গুলিতে হোলি আর্টিজান হত্যাকাণ্ডের মামলার দুজন আসামিসহ মোট ছয় জন নিহত হয়।

ওই দিনের এ ঘটনায় যারা পালিয়েছিলেন তাদেরই একজন হলেন আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার আসামি মুনতাসির আল জেমি।

কোনাবাড়ি থানায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম জানান, আমরা এখন পযন্ত ৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি। অন্যদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মামলা দায়েরের পর কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেনি বা কেউ স্বেচ্ছায় কারাগারে ফিরে এসেছে কি না, সেটিও জানায়নি।

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘‘পুলিশ ৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করলেও তাদের কারাগারে ফিরে এসেছে ৪৭ জন। অন্যদের হয়তো আদালত ভিন্ন কারাগারে পাঠিয়ে থাকতে পারে।’’

ঢাকা/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ র প ত র কর র আইনজ ব ৬ আগস ট স মব র ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

নোভারটিসের বাংলাদেশের শেয়ার স্থানান্তরের ওপর স্থিতাবস্থা

নোভারটিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের শেয়ার স্থানান্তরের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি কে এম রাশেদুজ্জামান রাজার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার রুলসহ এ আদেশ দেন। নোভারটিস বাংলাদেশের কয়েকজন কর্মী ক্ষতিপূরণ ও অন্য সুবিধাদি পেতে নির্দেশনা চেয়ে ওই রিটটি করেন।

রিট আবেদনকারীপক্ষের তথ্যমতে, নোভারটিস বাংলাদেশ লিমিটেড তাদের পুরো শেয়ার রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের কাছে স্থানান্তরের বিষয়ে ই–মেইলের মাধ্যমে গত ৫ ডিসেম্বর অভিমত জানিয়ে একটি চিঠি পাঠায়। এরপর আবেদনকারীরা ক্ষতিপূরণ ও চাকরির সুবিধাদি দাবি করে গত ১৩ ডিসেম্বর নোভারটিস বাংলাদেশ লিমিটেডের কাছে ই–মেইল পাঠান। এতে দৃশ্যমান ফল না পেয়ে মো. মিসকাতুর রহমানসহ নোভারটিস বাংলাদেশের কয়েকজন কর্মী ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য সুবিধা পেতে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের ১০ তারিখে শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব বরাবর আবেদন দেন। এ আবেদন নিষ্পত্তিতে নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে এবং ক্ষতিপূরণ পেতে নির্দেশনা চেয়ে মিসকাতুর রহমানসহ ১২ কর্মী গত সপ্তাহে ওই রিটটি করেন।

আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোকছেদুল ইসলাম, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মলয় কুমার রায় ও সৈয়দ রুবাইয়াত। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শামীমা সুলতানা দিপ্তি।

রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মোকছেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নোভারটিস আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। রিট আবেদনকারীরা চাকরিতে আন্তর্জাতিক সুবিধাদি ভোগ করেন। কোম্পানিটির শেয়ার স্থানীয় রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের কাছে স্থানান্তর হচ্ছে বলে নোভারটিস তাদের জানিয়েছে। এ অবস্থায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে সব সুবিধাসহ ৮৪ মাসের বেতন দাবি করে প্রথমে নোভারটিস এবং পরে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন রিট আবেদনকারীরা। এতে ফল না পেয়ে ১২ কর্মী ওই রিটটি করেন। শুনানি নিয়ে আদালত রুল দিয়ে নোভারটিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের শেয়ার স্থানান্তরের ওপর দুই মাসের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন। অর্থাৎ শেয়ার যে অবস্থায়, যে কোম্পানির কাছে আছে, সে অবস্থায় থাকবে।

রিটের প্রার্থনায় দেখা যায়, রিট আবেদনকারীদের দাবি/ক্ষতিপূরণ দিতে নোভারটিস বাংলাদেশ লিমিটেডকে কেন নির্দেশ দেওয়া না—এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়। রিট আবেদনকারীদের ১০ ফেব্রুয়ারি (শ্রম ও কর্মসংস্থানসচিবের কাছে) করা আবেদন নিষ্পত্তিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না—এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়। রুল বিচারাধীন অবস্থায় শেয়ার স্থানান্তর এবং আবেদনকারীদের চাকরির ক্ষেত্রে স্থিতাবস্থার আদেশ চাওয়া হয় রিটে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৮৫ জন নির্বাচন কর্মকর্তাকে চাকরি ফেরত দেয়ার নির্দেশ
  • পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড:মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায়
  • চট্টগ্রামে পেশাজীবীদের নির্বাচন লেজেগোবরে
  • নোভারটিসের বাংলাদেশের শেয়ার স্থানান্তরের ওপর স্থিতাবস্থা
  • বইমেলায় ঝুমকি বসুর তৃতীয় গল্পগ্রন্থ ‘ছাতিম ফুলের গন্ধ’
  • সারা রাত রাজধানী ঢাকায় যা ঘটলো
  • ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ
  • ধানমন্ডিতে সশস্ত্র মহড়া, ডাকাত আতঙ্কে মসজিদে মাইকিং
  • অস্ত্র হাতে বাজারে গিয়ে হুমকি, যুবদল নেতা বহিষ্কার