রাজধানীতে ২৪ ঘণ্টায় পুলিশের ৫০০ দলের টহল, গ্রেপ্তার ২৪৮
Published: 25th, February 2025 GMT
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং সার্বিক পরিস্থিতি আরও উন্নত করতে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর (অব.) সভাপতিত্বে কোর কমিটির এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে গত রোববার রাত ১২টা থেকে সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর ৫০টি থানা এলাকায় জননিরাপত্তা নিশ্চিতে ডিএমপির ৫০০টি টহল দল দায়িত্ব পালন করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত স্থানে ৫৪টি চেকপোস্ট পরিচালনা করা হয়। ডিএমপির ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
ডিএমপির টহল দলের পাশাপাশি মহানগরীর বিভিন্ন অপরাধপ্রবণ স্থানে সিটিটিসির সাতটি, অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) চারটি ও র্যাবের ১০টি টহল দল দায়িত্ব পালন করে। এপিবিএন ৩১টি চেকপোস্ট পরিচালনা করে। মঙ্গলবার পুলিশ সদরদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে অপারেশন ডেভিল হান্টে আরও ৬৩৯ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। অন্য মামলা ও পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন ৯৯৯ জন।
২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ২৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপি। তাদের মধ্যে রয়েছে ১৪ ডাকাত, ১৬ পেশাদার সক্রিয় ছিনতাইকারী, ৭ চাঁদাবাজ, ১১ চোর, ২২ চিহ্নিত মাদক কারবারি, ৪৪ জন পরোয়ানাভুক্ত আসামিসহ অন্য অপরাধে জড়িতরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক সমকালকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে ডিবি। ছিনতাইকারী, ডাকাত, চাঁদাবাজসহ কোনো অপরাধী রেহাই পাবে না।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে কোর কমিটির সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তল্লাশিচৌকি বাড়ানো, অপরাধপ্রবণ এলাকায় টহল বাড়ানো এবং যৌথ বাহিনী গঠন করে নির্দিষ্ট এলাকায় জোরদার অভিযান পরিচালনা করা হবে। রাজধানীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের একটি করে অতিরিক্ত প্যাট্রল নিয়োজিত থাকবে। ডিএমপির পুলিশ সদস্য, বিজিবি, আনসার ও কোস্ট গার্ডের সদস্যদের জন্য মোটরসাইকেল কেনা হবে, যাতে তাৎক্ষণিকভাবে অলিগলিতে টহল দিয়ে অপরাধীদের ধরা যায়। ৫০০ এপিবিএন সদস্য ডিএমপিতে যুক্ত হয়ে পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে। থানাভিত্তিক সন্ত্রাসীদের হালনাগাদ তালিকা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের আইনের আওতায় আনতে তড়িৎ পদক্ষেপ নেবে।
সভায় অন্যদের মধ্যে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বক্স চৌধুরীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, ২৪ ঘণ্টায় মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ২৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে তিনটি ছুরি, চারটি চাকু, একটি চাপাতি, একটি দাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ৪৯ কেজি ৮৭০ গ্রাম গাঁজা ও ৭০৪ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: টহল ড এমপ র উপদ ষ ট টহল দ অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
আইনের হাত বনাম নিজের হাত
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বিশেষত বাংলাদেশে গত ২৬ জুলাই-পরবর্তী আট মাসের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী। গণপিটুনি, স্থানীয়ভাবে বিচারকাজ পরিচালনা, মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে ব্যক্তিগত প্রতিশোধ গ্রহণ এসব অনিয়ন্ত্রিত প্রবণতা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে এবং আইনশৃঙ্খলার ভিত্তি দুর্বল করে দিচ্ছে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকারিতা ও বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ব্যাহত হলে জনমনে অবিশ্বাস দানা বাঁধে, যা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রকে ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে। জনগণ যখন ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে না, তখন তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে উদ্বুদ্ধ হয়। এর ফলে সামাজিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হয় এবং অপরাধপ্রবণতা বাড়ে।
এ সমস্যা নিরসনে যথাযথ আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করা, বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে তার কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং মিথ্যা অভিযোগ ও গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। একই সঙ্গে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। কার্যকর ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি সুস্থ, ন্যায়ভিত্তিক ও স্থিতিশীল সমাজ গঠন সম্ভব।
অনেক সময় অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে ভুক্তভোগীদের দীর্ঘ সময় এবং অর্থ ব্যয় করতে হয়। অতীতে বহু অপরাধের বিচার হয়নি; প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে এবং অপরাধীরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব ব্যবহার করে অথবা আইন ও পুলিশি ব্যবস্থার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে বিচার কার্যক্রম প্রভাবিত বা অসম্পূর্ণ করে তোলে। অনেক সময় পুলিশের গাফিলতি ও প্রশাসনিক দুর্নীতির কারণে অনেক অপরাধী বিচারের আওতার বাইরে থেকে যায়, যা জনগণের আইনের প্রতি আস্থা হ্রাস করে। অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত অভিযোগকারীরা ন্যায়বিচার পান না। বরং মিথ্যা অভিযোগকারীরা রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতে সক্ষম হয়। আমরা দেখেছি, পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে জনগণ গণপিটুনির মাধ্যমে বিচার সম্পন্ন করছে। এটি মূলত সমাজে ন্যায়বিচার প্রক্রিয়া ও প্রশাসনের প্রতি মানুষের ক্ষোভের ইঙ্গিত দেয়।
সাধারণ মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। তারা মনে করে, প্রশাসন বা পুলিশ তাদের কাজ সঠিকভাবে করছে না। ফলে তারা নিজেদের উদ্যোগে শাস্তি দিয়ে প্রশাসনকে শেখাতে চায়– কীভাবে ন্যায়বিচার করতে হয়। প্রশাসনকে বিচার শেখানোর উদ্দেশ্যে এটি করা হলেও যদি বারবার তা ঘটতে থাকে, তা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। এভাবে সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা কোনোভাবেই আইনি বা ন্যায্য পদ্ধতির অংশ নয়।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকারিতা ও বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ব্যাহত হলে জনমনে অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়, যা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রকে ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে। যখন জনগণ ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে না, তখন তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে উদ্বুদ্ধ হয়। ফলে সামাজিক স্থিতিশীলতা ব্যাহত হয় এবং অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
একটি সুস্থ সমাজ গঠনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন অপরিহার্য। জনগণের মধ্যে আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা রোধ এবং মিথ্যা অভিযোগকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সহজ হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধি, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে পারলে দেশ আরও নিরাপদ ও ন্যায়ভিত্তিক হবে। আইনের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরানো এবং বিচার প্রক্রিয়া কার্যকর করার মধ্য দিয়েই একটি আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
উছমান গনি: শিক্ষক
usmgoni@gmail.com