পবিত্র হজ যাত্রা সহজ, সুন্দর ও নিরাপদ করতে ‘হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার’ চালু করে হজযাত্রীদের সার্বক্ষণিক সেবা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় হজ ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভায় প্রধান উপদেষ্টা এই নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, দেশেই একটি ‘হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার’ স্থাপন করতে হবে, যাতে করে বাংলাদেশে বসে সার্বক্ষণিক তদারকির (মনিটরিং) মাধ্যমে সেবা নিশ্চিত করা যায়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কল সেন্টারে যেসব অভিযোগ আসবে, সেগুলো এখান থেকে যেন সঙ্গে সঙ্গে তদারকি করা যায়। একটি ওয়েবসাইট করে দিতে হবে, যেখানে হজযাত্রীরা সবাই যুক্ত থাকবেন। তাঁরা তাঁদের অভিযোগ জানাতে পারবেন। কেউ হারিয়ে গেলে সেই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তাঁর অবস্থান খুঁজে পাওয়া যাবে। ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করার জন্য কলসেন্টারে কী ধরনের অভিযোগ আসছে, সেগুলো তদারকি করতে হবে। কী ধরনের অভিযোগ আসছে, সেগুলো লিপিবদ্ধ করে ফেলতে হবে। এর মধ্যে কতগুলো সুরাহা হলো, কতগুলো হলো না, সে তথ্য থাকতে হবে। এই অভিযোগগুলো যেন পরের বছর না আসে, সে জন্য আলোচনা করে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পবিত্র হজ পালন সহজ করার জন্য মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে একটি সুযোগ দিয়েছেন। এই সুযোগ যেন আমরা সর্বোচ্চ কাজে লাগাই। একজন হজযাত্রীও যেন কোনো ধরনের ভোগান্তির শিকার না হন, সে প্রচেষ্টা থাকতে হবে।’

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, কেউ হারিয়ে গেলে, অসুস্থ হয়ে পড়লে, লাগেজ হারিয়ে গেলে বা অন্য কোনো ধরনের সমস্যায় করণীয় কী, কাকে জানাবে, এটার সুস্পষ্ট নির্দেশমালা (গাইডলাইন) থাকতে হবে। হজযাত্রীদের প্রত্যেকের কাছে এই বুকলেট দিতে হবে। নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সেটাও উল্লেখ থাকতে হবে।

দেশে লাইসেন্স পাওয়া হজ এজেন্সির সংখ্যা ১ হাজার ২৭৫টি। এর মধ্যে হজ কার্যক্রমের জন্য যোগ্য এজেন্সি ৯৪১টি। আর হজযাত্রী নিবন্ধনকারী এজেন্সি ৭৫৩টি এবং প্রধান এজেন্সি ৭০টি। এই এজেন্সিগুলোর দায়িত্ব কী হবে, সেটা সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করে বুকলেট আকারে ও অনলাইনে প্রকাশের নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকারের দায়িত্ব হলো এজেন্সিগুলোর দায়িত্ব পালন যেন সঠিকভাবে হয়, তা নিশ্চিত করা, দায়িত্ব পালন না করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। পুরো হজ প্রক্রিয়া হতে হবে সহজ ও স্পষ্ট। সরকারের দায়িত্ব কী, এজেন্সির দায়িত্ব কী—এসব সুস্পষ্টভাবে লিখিত থাকতে হবে।

একই সঙ্গে কোনো এজেন্সি দায়িত্ব পালন না করলে, তার লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, হজযাত্রীদের অভিজ্ঞতা থেকে এজেন্সিগুলো পর্যালোচনা করতে হবে। এজেন্সির প্রশিক্ষণ আছে কি না, সেটা তদারকি করতে হবে। কর্মীদের প্রশিক্ষণের ভিত্তিতে এজেন্সিগুলোকে ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ ও ‘ডি’ শ্রেণিতে ফেলতে হবে। এই শ্রেণিগুলোর মান পূরণে যে এজেন্সিগুলো ব্যর্থ হবে, তাদের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে।

হজযাত্রীরা যেন যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেদের করণীয় সম্পর্কে অবগত থাকতে পারেন এবং কেউ যাতে বিভ্রান্ত না হন, সে জন্য বিষয়ভিত্তিক ভিডিও তৈরিরও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘প্রবলেম সলভিং (সমস্যা সমাধান) ভিডিও’ হতে হবে। অসুস্থ হয়ে পড়লে, হারিয়ে গেলে, কোরবানি দিতে গিয়ে কোনো সমস্যা হলে করণীয় কী—এমন ভিডিও যাত্রীদের দেখিয়ে দিলে তাঁরা মনোবল পাবেন, প্রস্তুত থাকতে পারবেন।

এ ছাড়া পরের বছর থেকে হজ ক্রেডিট কার্ড চালু ও লাগেজ ব্যবস্থাপনার জন্য ‘ট্যাগ কপি’ করে তালিকা করে রাখার পরামর্শ দেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, হজ ক্রেডিট কার্ড চালু করে দিলে হজযাত্রীদের ভোগান্তি কমে যাবে। দেশে ফেরার পর যে কার্ডে যে অর্থ থেকে যাবে সেটি নগদ ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে। লাগেজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। সে জন্য বিমানবন্দরে চেক-ইনের পরে ট্যাগটা কপি করে রাখা যেতে পারে। ম্যানেজমেন্ট সেন্টারে লাগেজ ট্যাগের তালিকা থাকবে।

এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫ হাজার ২০০ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮১ হাজার ৯০০ জন হজের জন্য নিবন্ধন করেছেন। এ বছর সরকারি খরচে কাউকে হজে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এবং ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হজয ত র দ র র জন য ধরন র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ঈদে ফাঁকা ঢাকায় নাশকতার হুমকি নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ফাঁকা ঢাকায় কোনো ধরনের নাশকতার হুমকি নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম।

এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এখানে কোনো ধরনের নাশকতার হুমকি নাই। কোনো হুমকি থাকলে সেটা সবাইকে নিয়ে মোকাবিলা করা হবে। জনগণ ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করলে কেউ নাশকতা করতে পারবে না।

শনিবার (২৯ মার্চ) বেলা ১১টার পর রাজধানীর প্রবেশ ও বাহিরমুখ গাবতলী বাস টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে এসব বলেন তিনি।

এদিন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এবার ঈদে সবাই ছুটি ভোগ করছে কিন্তু পুলিশ বিজিবি আনসার ছুটি কাটাচ্ছে না। তারা কিন্তু নিশ্চিদ্রভাবে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ঢাকায় কাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন ভালো থাকে এজন্য তারা কাজ করে যাচ্ছে। আপনারা যেন ভালোভাবে যেতে পারেন। আপনাদের বাসা বাড়ি ভালো থাকে। এজন্য তারা সব ধরনের কাজ করে যাচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি এখানে এসেছিলাম টিকিটের দাম বেশি আদায় করা হচ্ছে কি না বিষয়টি দেখার জন্য। প্রত্যেকটি কাউন্টারে ভাড়ার চার্ট ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি কেউ বেশি ভাড়া আদায় করে তবে আপনারা বিআরটিএ ভিজিলেন্স টিমের কাছে অভিযোগ করবেন। এ ছাড়াও পুলিশ কন্ট্রোল রুমে অভিযোগ করবেন।

তিনি আরো বলেন, দুই একটা ছোটখাটো অভিযোগ রয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। সবাই আপনারা দোয়া করবেন যাত্রীরা যেন ভালোভাবে যেতে পারে। রাস্তাঘাটে যেন কোনো ধরনের সমস্যা না হয়। আমি চালকদের সাথে কথা বলেছি, তারা রেস্ট পায় কি না কারণ রেস্ট না পেলে সড়কে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। এজন্য চালকরা যেন রেস্ট পায়, বিষয়টি মালিকদের বলা হয়েছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, সরকারের উদ্যোগ ছিল বলেই মানুষ এবার স্বস্তিতে বাড়ি যেতে পারছে। আমরা চেষ্টা করছি তারা যেন ভালোভাবে বাড়ি যেতে পারে এবং ভালোভাবে আবার ঢাকায় ফিরে আসতে পারে।

ঢাকা/মাকসুদ/এনএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ